বাংলাদেশ সরকার খ্যাতনামা গ্রামীণ ব্যাংককে জাতীয়করণ করার ও ভেঙে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। এ ব্যাংকটি ব্যবসায় আগ্রহী দরিদ্র নারীদের ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে থাকে। আইনপ্রণেতাদের উচিত এ ধরনের ধ্বংসাত্মক চিন্তা বাদ দেওয়া এবং আট কোটি ৪০ লাখ গ্রামীণ নারীর সেবায় নিয়োজিত গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানটিতে অকারণে হস্তক্ষেপের চেষ্টা প্রতিহত করা।
গত দু বছরে শেখ হাসিনার সরকার গ্রামীণ ব্যাংক ও এর প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে। ইউনূস ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল জিতেছিলেন।
তাঁর প্রতি হাসিনার আচরণ থেকে এটি প্রতীয়মান হয়েছে যে, ২০০৭ সালে ইউনূস ক্ষমতায় যাওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছিলেন, সেটির প্রতিক্রিয়া হিসেবে হাসিনা এসব করছেন। যদিও ইউনূস এরপর সে পথ আর মারাননি।
২০১১ সালে তাঁর (হাসিনার) লোকেরা ইউনূসকে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণে চেষ্টা শুরু করেন। তাঁদের অজুহাতে ছিল ইউনূস অনেক অগেই অবসরে যাওয়ার বয়সে (৬০ বছর) পৌঁছে গেছেন, তাই তাঁর পদত্যাগ করা উচিত। যদিও ব্যাংক নিয়ন্ত্রকেরা (বাংলাদেশ ব্যাংক) এর আগে ইউনূসকে ওই বয়সসীমা পেরোনোর পরও দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন।
এরপর সরকার ব্যাংকটিতে তদন্ত শুরু করে। সরকার এখন ব্যাংকটিকে অধিগ্রহণ করে ১৯টি আঞ্চলিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানে বিভক্ত করতে চাইছে। অথচ ব্যাংকটির অধিকাংশ শেয়ারের মালিক এর ঋণগ্রহীতারা।
ইউনূস সত্তরের দশকে ক্ষুদ্রঋণের মডেলটি প্রবর্তন করেন। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রামীণ ব্যাংকের বাইরে বেশকিছু ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের বিতর্কিত আচরণের কারণে ক্ষুদ্রঋণের বিষয়টি খ্যাতি হারিয়েছে, তবুও এটি বাংলাদেশের দারিদ্র্য মোচনে এখনো গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বব্যাংকের মতে, এ প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের, বিশেষত বাংলাদেশের লাখ লাখ দরিদ্র নারীকে তাঁদের ব্যবসা শুরু ও অব্যাহত রাখায় সাহায্য করেছে।
গ্রামীণের জাতীয়করণে এতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি হবে। ফলে ব্যাংকটি অস্থিতিশীল হয়ে যাবে এবং মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হবে। ব্যাংকটি ভেঙে দিলে এর কর্মসূচিও ব্যাহত হবে এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটি বিলুপ্ত করার মধ্য দিয়ে সরকারের কর্মকৌশলই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
স্থানীয় পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, গ্রামীণ ব্যাংকের তদারককারী সরকারি প্রতিষ্ঠানটি সম্ভবত আসছে সপ্তাহে সরকারের কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দেবে এবং তাতে তিনটি ভিন্ন সুপারিশ থাকবে।
এর অন্যতম হলো ব্যাংকটি জাতীয়করণ করে ভেঙে দেওয়া। কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষকের ধারণা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বছরের শেষ অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের আগে এসব সুপারিশ অনুযায়ী কোনো পদক্ষেপ নেবেন না। কারণ তাতে অনেক ঋণগ্রহীতা ও ব্যাংক কর্মচারী ক্ষেপে গিয়ে তাঁর (হাসিনার) বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করতে পারেন এবং ভোটও দিতে পারেন তাঁর বিরুদ্ধে।
এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী তাঁর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এ কথা পরিষ্কার করে জানাননি, যে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি থেকে দেশের লাখ লাখ নারী উপকৃত হয়েছে, তিনি কেন এটিকে তুলে দিতে চান। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।