বিশেষত পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাশাপাশি আরব জগত সম্পর্কে গোপন চাঞ্চল্যকর কূটনৈতিক তথ্য উদঘাটন ও পরিবেশনের মাধ্যমে সারা বিশ্বে শোরগোল তুলেছে ওয়েবসাইট উইকিলিকস্। কিন্তু উইকিলিকসের তৎপরতার সুবাদে বহু অজানা তথ্য সম্বন্ধে অবহিত ও পরিতুষ্ট হওয়ার পাশাপাশি অনুসন্ধানী সমাজ বিস্ময় প্রকাশ করছেন যে, উইকিলিকসের প্রকাশিত তথ্যবহরে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও মান্য সমস্ত নীতি ও আইনের লঙ্ঘনকারী ইসরাইলের নাম অনুপস্থিত থেকে যাচ্ছে কেন। বিশেষজ্ঞ মহল আরো বিস্মিত হচ্ছেন এই দেখে যে আরব দেশগুলো ও আরব রাজনৈতিক কূটনীতিক ব্যক্তিত্বদের নামোল্লেখের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য সমস্যার মূল হোতা ও ঘটকের ভূমিকায় তৎপর ইসরাইলের নাম স্বতঃসিদ্ধভাবে যেখানে শামিল হয়ে যাবার কথা সেখানেও ইসরাইলের নাম গরহাজির থেকে যায় কীভাবে? আরো লক্ষণীয় উইকিলিকসের দলিলে ঐ সমস্ত আরব দেশ সর্বশেষ চর্চিত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অভিন্ন স্বার্থের সম্পর্কে যারা জড়িত। যুক্তরাষ্ট্র ও ঐ আরব দেশগুলোর মধ্যকার সম্পর্কে স্বার্থসংশ্লিষ্ট টানাপোড়েনের খবরগুলো দেখা যায়, বেশ গুরুত্ব পেয়েছে উইকিলিকসের দলিলে। নি:সন্দেহে সবচেয়ে বেশি বিপাকে ফেলেছে উইকিলিকস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে।
কিন্তু একথাও সত্য যে স্বদেশের অজস্র শিল্পসংস্থার ও বিশেষত সফর সংক্রান্ত, শিল্পস্থাপনার প্রয়োজনে আত্ম সংরক্ষণে অসমর্থ বিভিন্ন দেশে ঠুনকো অজুহাতে সশস্ত্র হামলা চালানো ও দখলদারী কায়েমের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র দেশগুলোর মূল্যবান রসদ সম্পদ লুটে নিয়ে যাচ্ছে এবং একই প্রক্রিয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সামাজিক রাজনৈতিক অশান্তি ও অস্তিতিশীলতা সৃষ্টি করে যাচ্ছে, মার্কিন নেতৃত্ব স্বয়ং স্বীকার না করলেও বিশ্বের শিক্ষিত সচেতন মহল তা ঠিকই বোঝেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক লুটেরাও তস্করের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একাকী নয়। ইউরোপীয় ভূভাগে গ্রেট বৃটেন ও অন্য অনেককে যেমন, মধ্যপ্রাচ্যে তেমনি তার অপকর্মের দোসর হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্থাপিত রয়েছে ইসরাইলকে। ইসরাইল এ পর্যন্ত অনুপস্থিত রয়েছে উইকিলিকসের দলিলে। ভবিষ্যতের দলিলে তার নাম থাকবে কী? মন্তব্য শোনা যাচ্ছে, শীর্ষ পর্যায়ে মার্কিন নীতি নির্ধারণে নিয়ামকের ভূমিকা নিভিয়ে থাকে যে শক্তিশালী ইহুদি লবি, তারাই হয়তো উইকিলিকসের প্রকাশিতব্য তথ্যাবলী যাচাই-বাছাই করে দেখছে পরে কোনো এক সময় ইসরাইল সংক্রান্ত তথ্যগুলো দিনের আলো দেখবে ইহুদি লবির অনুমোদন সাপেক্ষে।
এমন প্রশ্নও সজোরে উচ্চরিত হচ্ছে যে যাবতীয় দলিল রচনার ও প্রকাশের মূল কলকাঠি ঘুরাচ্ছে স্বয়ং ইসরাইল নয়তো?
২০০৬ সালে উইকিলিকসের যাত্রা শুরু। সংস্থার সমাগম ঘটেছে অত্যন্ত তৎপর মানবাধিকার আন্দোলন কর্মীদের এবং সাংবাদিক ও আইটি বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের। ওয়েবসাইটের দাবি রয়েছে তাথ্যের সত্যতা যাচাই না করে এবং তথ্যের উৎস সম্বন্ধে নিশ্চিত না হয়ে তারা দলিল প্রকাশ করে না। ন্ধএদের হেড অফিস সুইডেনে অবস্থিত হওয়ার সুবাদে তথ্যসংগ্রহের অবাধ সুযোগ এদের জন্য লভ্য- কারণ সুইডিশ কর্তৃপক্ষ তথ্যসংগ্রহের উৎস জানাতে সাংবাদিকদের ওপর চাপ প্রয়োগে অনাগ্রহী। প্রায় ১২ হাজার স্বেচ্ছাসেবী ওয়েব সাইটে কর্মরত রয়েছেন।
বিশ্বজুড়ে যত বিরোধ ও দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন কর্মীদের মঞ্চে পরিণত হয়েছে চার বছর ধরে।
অবশেষে ওয়েবসাইটটির পেছনে লেগেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে পন্থায় হোক উইকিলিকসকে হেনস্থা করতে তৎপর দেখা যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। খুব স্বাভাবিক। বিশ্বে মার্কিন পরিচিত প্রতিষ্ঠা ও মর্যাদা এভাবে ভূলুন্ঠিত হওয়ার ঘটনা এর আগে আর কোনো সময় ঘটেনি। স্বভাবতই ক্ষুব্ধ মার্কিন কর্তৃপক্ষ উইকিলিকসের ওপর।
আশা করা যায়, উইকিলিকসের তথ্য ভান্ডারে ইসরাইলী দুষ্কর্মের দলিলও সংরক্ষিত রয়েছে এবং সময়ান্তরে তা প্রকাশিত হবে। এমনও তো হতে দেখা যেতে পারে, ইসরাইল সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ও সংবাদ যাচাই বাছাই করার পর মার্কিনস্থ ইহুদি লবি এখন কিছু তথ্য প্রকাশের উইকিলিকস কে অনুমতি দিয়ে দেবে, যেখানে ইসরাইলকে তেমন কোনো গুরুতর কেলেংকারিতে জড়িত দেখা যাবে না। অস্বাভাবিক কিছু নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।