গত ১২ ডিসেম্বর,আমরা দেখলাম চট্টগ্রামে শ্রমিকেরা যখন কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে,ন্যায্য মজুরী ও বকেয়া বেতনের দাবীতে রাজপথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছিল,তখন সরকারের লেলিয়ে দেয়া পুলিশ বাহিনী কি নির্মমতায় ও বর্বরতায় অপুষ্টিতে ভোগা হাড় সর্বস্ব নিরীহ শ্রমিকদের বুকে গুলি ছুড়ল,সেখানে চারজনকে গুলি করে হত্যা ও নিখোজের নাম করে কয়েকজনকে গুম করা হল। ১২ডিসেম্বরের ঠিক একদিন পর ১৪ডিসেম্বর আশুলিয়ায় হামিম গ্রুপের কারখানায় আগুনে পুড়িয়ে মারা হল শ্রমিকদের(মৃতের প্রকৃত সংখ্যা কত কে তা নিশ্চত করে বলতে পারে)। এর মাস দুয়েক আগে রুপগঞ্জের জনগন যখন তাদের ভিটে-মাটি রক্ষার জন্য পথে নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছিল,সেখানেও তিন জনকে গুলি করে হত্যা ও নিখোজের নাম করে কয়েক জনকে গুম করা হল। এর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন তাদের বেতন ফি বাড়ার প্রতিবাদে আন্দোলন করছিল সেখানেও পুলিশ সর্বশক্তি নিয়ে কি বর্বরতায় তাদের উপর পৈশাচিক নির্যাতন চালাল। কিছুদিন আগে শ্রমিক আন্দোলনে উসকানি দেয়ার বানোয়াট অভিযোগে শ্রমিক নেত্রী মোশারেফা মিশুকে গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি পুলিশ।
এই হল বর্তমান সরকারের ফ্যাসিবাদী চেহারা,যাকে আড়াল করতে চায় গনতন্ত্রের আদলে।
এই যে শ্রমিক-কৃষক মেহনতি মানুষের উপড় ফ্যাসিবাদী কায়দায় দমন-নিপিড়ন,হত্যা,গুম ক্রসফায়ার,এর কারণ জানতে এই শাসকগুষ্টির মুখোশ উম্মোচন জরুরী। এখানকার শাসকগুষ্টি মুক্টিযুদ্ধের পর আজ অবধি দীর্ঘ চল্লিশ বছর যাবত এখানে যে শোষন-লুন্ঠন ও জুলুম-নিপীড়ন নির্যাতন চালিয়েছে,তারই ধারাবাহিকতায় শ্রমিক-কৃষক মেহনতি মানুষের উপড় বৃটিশ ও পাকিস্তানি শাসক গুষ্টির মতই আজও বুকে গলি ছুড়ে,আগুনে পুড়িয়ে,গুম করে হত্যা করে। এই লুটেরা শাসক গুষ্টি বৃটিশ কিংবা পাকিস্তানি থেকে আলাদা কিছু নয়। পরিবর্তন শুধু শাসকগু্ষ্টির।
শোষনের মাত্রা এক ও অভিন্ন। এই শাসক গুষ্টি আওয়ামীলীগ,বিএনপি,জাতীয় পার্টি,জামায়েতী ইসলাম ও তাদের সকল দোসর মুখে কি বুলি আওড়ায় আর কাজে কি প্রমাণ করে তা উম্মোচন করি। এরা মুখে গনতন্রের বুলি আওড়ায়,মুক্তি যুদ্ধের চেতনার কথা বলে,জাতীয়তাবাদের কথা বলে,ন্যায্য মজুরীর কথা বলে,দেশ প্রেমের কথা বলে,আইনের শাসনের কথা বলে,দারিদ্র্য বিমোচনের মহাকাব্য আওড়ায়,বলে মানবাধিকারেরে কথা। কিন্তু এর বিপরীতে এরা কি কাজ করে তা প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করছে জনগন। এরা গনতন্ত্রের আদলে ফ্যাসিবাদী কায়দায় মেহনতি মানুষের উপড় জুলুম-নির্যাতন চালায়,মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী কাজ করে,১৯৭১-এ ৩০ লক্ষ শহীদ তাদের জীবন ও দু'লক্ষ মা-বোন তাদের সম্ভ্রম এমন একটি দেশের জন্য উৎসর্গ করেন নি যে দেশে শ্রমিকদের গুলি ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়,যেখানে ষাট শতাংশ লোক দু'বেলা পেট পুড়ে খেতে পায় না,এরা দেশপ্রেমের কথা বলে উন্নয়নের বুলি আওড়িয়ে দেশের জাতীয় সম্পদ বিদেশি প্রভূদের হাতে তুলে দেয়,লুটেরাদের শোষন-লুন্ঠনের অবাধ বিচরন ভুমি বানাতে চায় দেশকে,ন্যায্য মজুরীর কথা বলে কি নির্মম পরিহাসে মানবেতর জীবনের দিকে ঠেলে দেয় শ্রমিকদের,শান্তি মিশনে গৌরবময় অংশ গ্রহনের কথা বলে যারা দেশে দেশে শোষিত-নিপীড়ত জাতি ও জনগনের জীবনকে অতিষ্ট করে সারাবিশ্বকে ঠেলে দেয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দিকে সেই সাম্রাজ্যবাদীদের হাতকে প্রশস্ত করে,সার্বভৌমত্বের কথা বলে সীমান্তের জনপদ,সমুদ্র,সমুদ্র বন্দরকে অরক্ষিত ও অনিরাপদ করে তোলে,প্রতিবেশী বন্ধুপ্রতিম দেশ বলে ভারতের বেঁধে দেয়া হাজার শর্তে তাদেরই স্বার্থে ঋন নিয়ে এদেশের মেহনতি মানুষের মাথায় পাহাড়সম ঋনের বোঝা চাপিয়ে দেয়।
এই হল এখানকার শাসকগুষ্টি আওয়ামীলীগ,বিএনপি ও তাদের সকল দোসরদের আসল চেহারা। এরা পালাক্রমে শোষন-লুন্ঠন চালায় এই দেশের শ্রমিক-কৃষক মেহনতি মানুষের উপর। কারণ এরা ক্ষমতায় আসে
সাম্রাজ্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদীদের সাথে চুক্তি করে,এরা স্বার্থ রক্ষা করে চলে ধনীকবুর্জোয়া শ্রেণীর,এরা ব্যতিব্যস্ত থাকে হিংসা-প্রতিহিংসার রাজনীতিতে,ব্যস্ত থাকে নিজেদের আখের গোছাতে। কাজেই ধনীক শ্রেণী ও কারখানা মালিকদের স্বার্থ রক্ষায়,এরা শ্রমিকের বুকে গুলি ছুড়বে,এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। যদি এই লুটেরাদের হাত থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে হয়,যদি বাঁচতে হয়,যদি ঠিকে থাকতে হয়,তবে এই লুটেরাদের রুখে দিতে হবে।
এদের রুখে না দিলে এখানে শ্রমিক-কৃষক মেহনতি মানুষ দিনের পর দিন মার খাবে,দিনের পর দিন মারা পড়বে
শোষন-লুন্ঠনের মাত্রা আরও বাড়বে। কিন্ত কানসাট,ফুলবাড়ী,রুপগঞ্জের বীর জনগন প্রমাণ দিয়েছে যে দেশের জনগন রুখে দেয়,রুখে দাড়ায়। আমাদের নতুন পথে দিশা দেয় ফুলবাড়ী ,রুপগঞ্জ। দিশা দেয় শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরীর অব্যহত আন্দোলন। যদি আমাদের একটি জনগনের গনতান্ত্রিক সরকার ও রাষ্ট্র প্রতিষ্টা করতে হয়,যেখানে শ্রমিকদের হত্যা করা হবে না তবে সেখনে অনিবার্যভবে লুটেরা শাসক গুষ্টির উৎখাতের প্রশ্ন হাজির হয়।
লুটেরা শাসক গুষ্টির উৎখাত না করে এখানে শ্রমিক-কৃষক মেহনতি মানুষের সরকার ও রাষ্ট্র প্রতিষ্টা সম্ভব নয়। কিন্তু এই উৎখাতে সাধারন জনগনের সক্রিয় অংশগ্রহণ অতি জরুরী। এ জন্য অসংগঠিত জনগনকে সংগঠিত করা হয়ে দাড়ায় প্রধান ও জরূরী কাজ। কেবল এবং কেবল মাত্র সংগঠিত জনগনই পারে এই লুটেরাদের উৎখাত করতে। তাই এই উৎচ্ছেদ ও উৎখাতের লড়াইকে আসুন সংগঠিত করি।
ইতিহাস নির্ধারিত কর্তব্য কাধে তুলে নিয়ে দেশ ও জনগনের মুক্তির লড়াইকে বেগবান ও তড়ান্বিত করি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।