আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইভটিজিংকে উৎসাহ নয়



মানবদেহের কোনো ক্ষত-যন্ত্রণা বৃদ্ধি পেলে মানুষ তার দ্রুত চিকিৎসার চেষ্টা করে, যেন তার বৃদ্ধি ঘটতে না পারে, অন্যথায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কষ্ট-যন্ত্রণার মাত্রাও বৃদ্ধি পাবে। বিভিন্ন চিকিৎসায় কাজ না হলে সেই ক্ষতটি গ্যাংগ্রীন-এ পরিণত হয়ে সারাদেহে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিলে শেষ পর্যন্ত দক্ষ চিকিৎসকের পরামর্শে মানুষ তার দেহের আক্রান্ত অংশটি কেটে ফেলতেও দ্বিধা করে না। কারণ, তারপরও যন্ত্রণামুক্ত হয়ে অবশিষ্ট সুস্থ দেহ নিয়ে সে বেঁচে থাকতে চায়। এদিক থেকে আমাদের সমাজ দেহে আজ অন্যান্য যন্ত্রণাদায়ক মারাত্মক ব্যাধির পাশাপাশি ইভটিজিং ব্যাধির ক্রমবর্ধমান যন্ত্রণা যেভাবে জাতির দেহসত্তাকে তছনছ করে দিচ্ছে এর ফলে যেভাবে সমাজের যুবতী নারীরা বিশেষ করে শিক্ষাঙ্গনের ছাত্রীরা নারী উত্ত্যক্তকারীদের হাতে নির্যাতিত ও সম্ভ্রম হারাচ্ছে, এমনকি কোথাও কোথাও এতে বাধাদানকারী তাদের মা-বাবা, খালা, দাদী-নানীরাও প্রাণ হারাচ্ছে, তাতে গোটা সমাজ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। কারণ প্রতিদিনই ভোরে সংবাদপত্রের পাতা উল্টাতেই দেশের কোনো না কোনো এলাকায় যুবতী মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা ও তাদের সম্ভ্রম বিনষ্টের এক বা একাধিক খবর পাওয়াই যাবে।

পাওয়া যাবে কু-প্রস্তাবে কোনো মেয়ে রাজি না হলে, হয় তাকে গুন্ডা বখাটেরা দলবল নিয়ে হত্যা করেছে বা এসিড মেরে তার চেহারা শরীর বিকৃত করে ফেলেছে কিংবা ধর্ষণ করে হত্যা করে রেখে চলে গেছে। আর কিছু না হোক হুমকি ধমকি দিয়ে তার ঘর থেকে বের হওয়া, শিক্ষাস্থলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ইভটিজিংয়ের দৌরাত্ম্য কি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে, তা গত কয়েক মাসের সংবাদ পত্রের পাতা উল্টালেই দেখা যাবে। এছাড়া নানা কারণে ও ভয়-লজ্জার দরুন এরূপ আরো কত সংবাদ যে অপ্রকাশিত থাকে তার কোনো সীমা নেই। ইভটিজিংয়ের ক্রমবর্ধমান এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে যেখানে তা রোধে দেশের প্রধান কর্তব্য হলো এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং ইভটিজিংসহ এ জাতীয় আপত্তিকর ঘটনাবলীর কার্যকারণসমূহ দেশ থেকে উচ্ছেদে সচেষ্ট হওয়া।

কিন্তু তা না করে সরকার কর্তৃক ইভটিজিংয়ের ব্যাপারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্মতি বা উসকানিমূলক অনুসৃত ভূমিকা, গোটা জাতিকে আলোড়িত ও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। গত ১০ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ভারতের শিল্পী শাহরুখ খানের লাইভ কনসার্ট অনুষ্ঠানে অশ্লীল নাচ-গানের আয়োজনকে সমাজের সকল স্তরের সচেতন রুচিবান মানুষ এদেশের সমাজ দেহের দুষ্টক্ষত ইভটিজিংকে আরো উসকিয়ে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়েদা লুটার লক্ষ্যে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্নদিকে ফিরাবার ষড়যন্ত্র মনে করে, তেমনি তারা এ ঘটনাকে সরকারের ছত্রছায়ায় এদেশ থেকে ইসলামী শিক্ষা সংস্কৃতি নির্মূলের মূল ষড়যন্ত্রের আরেকটি অংশ বলেও মনে করে। আমাদের বিশ্বাস তাদের এই মনে করার পেছনে যথেষ্ট যুক্তিও রয়েছে। কেননা, মাত্র কিছুদিন আগে সম্পূর্ণ অকল্পনীয় ঘটনা হিসাবে দেশের শীর্ষপর্যায়ের ইসলামী প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশনে খোদ মসজিদের প্রশিক্ষণরত ইমামদের সামনে অশ্লীল নারী নৃত্য অনুষ্ঠানের জন্য ইফার ডিজিকে অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে যখন সারাদেশ উত্তপ্ত, ঠিক সেই মুহূর্তে ভারতীয় শিল্পীদের দ্বারা আরেকটি অশ্লীল নৃত্যানুষ্ঠান, মূলত দেশবাসীর এ প্রতিবাদকে বৃদ্ধাঙ্গুল প্রদর্শনেরই নামান্তর ছাড়া আর কি হতে পারে? সরকার সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জানা উচিত, একটি জাতির আসল পতন তার রণাঙ্গনে ঘটে না, ঘটে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরাজয়ে। আমাদের মুসলিম ঐতিহ্যবাহী এদেশে এমনিতেই এর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন থেকে ভারতীয় অপসংস্কৃতির ষড়যন্ত্রমূলক আগ্রাসন নেপথ্যে সক্রিয় রয়েছে, যার পরিণতিতে আজ আমাদের স্বকীয়তা এক নাজুক অবস্থার সম্মুখীন, এছাড়া ভৌগোলিক সীমান্তের ন্যায় আমাদের সাংস্কৃতিক সীমান্ত সম্পূর্ণ উন্মুক্ত, এই পরিস্থিতিতে আমরা এহেন অপসংস্কৃতিকে যদি নির্লজ্জের মতো এভাবে স্বাগত জানাতে থাকি, তাহলে এটা যে, সার্বিক দিক থেকে আমাদের জন্যে দ্রুত আত্মহননের কাজ করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

পৃথিবীর ছোটবড় সকল জাতিই নিজ জীবনবোধ কেন্দ্রিক কৃষ্টি-সংস্কৃতি লালন করতে যত্নবান, সেক্ষেত্রে আমাদের কি হলো যে, আমরা তার পরোয়া না করে বিদেশী অপসংস্কৃতিকে এভাবে স্বাগত জানিয়ে নিজেদের আত্মঘাতী পথে ঠেলে দিচ্ছি? দেশ জাতি ধর্মের ইচ্ছা বিরোধী বিজাতীয় অপসংস্কৃতির দুর্গন্ধে এবং তার অকল্যাণকারিতায় জাতি যেখানে অতিষ্ঠ সেক্ষেত্রে প্রাণঘাতি ব্যাধি এইডসবাহীরূপে পরিচিত ভারতীয় এহেন অপসংস্কৃতির অনুষ্ঠান আয়োজনের আমরা নিন্দাই করি না, যারা এর আয়োজক-উদ্যোক্তা, সেসব উৎসাহীর উপযুক্ত শাস্তিও আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।