ঈদের পর নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবির পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। দুই ইস্যুতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হরতাল; সড়ক, রেল ও নৌ পথ অবরোধ; রাজপথে অবস্থান; নির্বাচন কমিশন ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি নিয়ে ভাবছে তারা। কিন্তু বিএনপি জোটের চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হবে অক্টোবর থেকে। সরকারের মেয়াদের শেষ দিন পর্যন্ত অসহযোগ আন্দোলনে যাওয়ার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা রয়েছে জোটের। তবে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনার দরজাও খোলা রাখা হবে।
সরকার চাইলে যে কোনো স্থানে বিএনপি আলোচনায় বসতে রাজি। এদিকে দলের অস্তিত্ব রক্ষায় জোট ছাড়াও ঈদের পর পৃথক কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামবে জামায়াত। এরই মধ্যে তারা ১৩ ও ১৪ আগস্ট টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে সদ্য হাইকোর্ট কর্তৃক নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত এ দলটি।
পবিত্র ওমরাহ পালন শেষে মঙ্গলবার দেশে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
আজকালের মধ্যে দলের সিনিয়র নেতাদের পাশাপাশি ১৮ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে ঈদ-পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে বৈঠক করবেন তিনি। মূলত সে বৈঠক থেকেই পরবর্তী কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে সংলাপ-সমঝোতার পক্ষে বিএনপি। কিন্তু এখন আর সংলাপের কোনো সম্ভাবনা না থাকায় আন্দোলন করেই দাবি আদায় করতে চান তারা। নেতারা বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া এর আগে কয়েকবার সংলাপের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তাতে সাড়া না দিয়ে উল্টো সরকার এ নিয়ে তাচ্ছিল্য মনোভাব ব্যক্ত করেছে। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী-এমপিদের প্রচারণার সুযোগ, সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন, প্রার্থিতা বাতিলে নিজেদের ক্ষমতা হ্রাস ও বিএনএফ নামে নতুন একটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। গমের শীষ নামে বিএনএফকে নিবন্ধন দেওয়ার চিন্তাভাবনা বিএনপিকে ভাঙার ষড়যন্ত্র বলে মনে করেন নেতারা। তাই এ ইস্যুতেও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে বিএনপি জোট।
এই প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্দলীয় সরকারের দাবি না মানলে ঈদের পর সরকারকে এক দফার আন্দোলন মোকাবিলা করতে হবে। শুভবুদ্ধির উদয় হলে সরকার দাবি মেনে নেবে। নইলে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে। আগামী অক্টোবর থেকে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে 'সড়ক, রেল ও নৌ পথ অবরোধ এবং লাগাতার হরতাল দিয়ে দেশ অচল করে দেওয়া হবে। দলীয় সরকারের অধীনে এ দেশে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
এতে হয় গণতন্ত্র থাকবে নতুবা থাকবে না। তবে এর দায় নিতে হবে সরকারকে। স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, ঈদের পর শুধু নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুই নয়, নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবিতেও আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। মূলত এ দুই ইস্যুতেই হরতাল, অবরোধ, রাজপথে অবস্থান, ঘেরাওসহ নানা কর্মসূচি দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্টের অভিযোগ এতে তিনি বলেন, তারা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশসহ আচরণ বিধিমালায় পরিবর্তন আনছে শুধু ক্ষমতাসীন দলকে খুশি করার জন্য।
তারা চাইলে সব দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এসব সংশোধন করতে পারত। কিন্তু একতরফাভাবে তারা আওয়ামী লীগকে খুশি করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এতে আন্দোলনে সব দল পাশে থাকবে বলে আশা করেন তিনি। সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনের বিধান পৃথিবীর কোনো দেশেই নেই বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। তিনি বলেন, এটা বড় ধরনের চক্রান্ত।
তাই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প আমাদের হাতে নেই। ঈদের পর সরকার ও নির্বাচন কমিশন হঠাতে প্রয়োজনীয় সব কর্মসূচি দেওয়া হবে। জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, জোটের পাশাপাশি দলীয়ভাবেও তারা হরতালসহ নানা কর্মসূচি পালন করবে। দলের নিবন্ধন বাতিল, শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদণ্ডসহ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, সারা দেশে কার্যালয় বন্ধসহ নেতা-কর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে আলাদাভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। দলের নেতারা মনে করেন, নানা ইস্যুতে সরকারের কঠোর অবস্থানে জনসম্মুখে কোনো কর্মসূচি পালন করতে না পারায় তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।
এ কারণেই ১৩ আগস্ট থেকে টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচির পরই নিবন্ধন বাতিলের প্রতিবাদ, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত দলের নেতাদের মুক্তি দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে দেশকে অস্থির করে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। আর সরকারের মেয়াদ শেষের দিকে হওয়ায় সরকারকে ক্ষমতা থেকে না নামানো পর্যন্ত এসব কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে। আন্দোলন কর্মসূচি সম্পর্কে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জানান, আমরা অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে মাঠে নেমেছি। নেতাদের অন্যায়ভাবে ফাঁসির রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
এখন দেখছি দলকেই ফাঁসি দিয়ে দিচ্ছে। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে নাস্তিকরা রাজনীতি করতে পারবে আর মুসলমানরা রাজনীতি করতে পারবে না, এটা এ দেশের জনগণ কখনই হতে দেবে না। আমরা দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিকভাবে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলব। ১৩ তারিখ থেকে আমাদের টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি আছে। পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে তা দলীয় ফোরামে ঠিক করা হবে।
দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ এমপি বলেন, সরকার বিচারের নামে যা করছে তা দেশের জনগণ এবং আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্নবিদ্ধ। সরকারি নিপীড়নের কারণে জামায়াতের প্রতি জনগণের সহানুভূতি অনেক গুণ বেড়েছে এবং সরকারের প্রতি ঘৃণা ও নিন্দা জন্ম দিয়েছে। জামায়াত জনগণের সমর্থন নিয়ে এগিয়ে যাবে। অত্যাচারী, ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হবে এবং অন্যায়ভাবে আটক থাকা নেতারা নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে সসম্মানে জনতার মাঝে ফিরে আসবেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।