আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈদের খাবারে সতর্কতা প্রয়োজন

বাংলাদেশের খাদ্যে প্রায় এক দশক ধরে ভেজালের ক্রমবর্ধমান ব্যাপকতার পটভূমিতে এর নিরসনে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগগুলো দেখে ভালো লাগছে। বেসরকারি পর্যায়ে পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশন সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে। সরকার গৃহীত উদ্যোগগুলোর মধ্যে প্রধান হিসেবে দেখা যাচ্ছে ঘন ঘন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ‘বিশুদ্ধ খাদ্য আইন’ ও ‘ভোক্তা অধিকার আইন’ ব্যবহার এবং সরকারনিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন ও বেতারে ভেজালের বিরুদ্ধে ঘন ঘন সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সরকারি-বেসরকারি এসব উদ্যোগ কিছুটা সুফল দিচ্ছে বলে মনে হয়। খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে মানুষের সচেতনতা ধীরে ধীরে বাড়ছে।

তারই অংশ হিসেবে এবারের ঈদের খাদ্যসামগ্রী কেনার সময়ও আপনি কেনাকাটায় সতর্ক হয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে পারেন। অবশ্য এসব সতর্কতা ঈদের পরেও কাজে লাগবে।  ঈদের অবশ্যম্ভাবী অনুষঙ্গ সেমাই কেনার সময় আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, ভাজা সেমাই না কিনে কাঁচা সেমাই কিনুন। এরপর ঘরে নিয়ে ভেজে নিন। কারণ, অধিকাংশ সেমাই তৈরির কারখানা অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় সেমাই তৈরি করে থাকে।

তৈরির প্রক্রিয়া ছাড়াও বিশেষ করে এগুলো শুকানোর পরিবেশ ও পদ্ধতি অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। ড্রায়ারের বদলে খোলা আকাশের নিচে রোদে শুকানো এসব সেমাইয়ে মাছি বসে প্রচুর, ধুলাবালিও পড়ে। এসব জীবাণু সেমাই রান্নার পদ্ধতিতে সব মরে যায় না, কিন্তু কাঁচা সেমাই কিনে ঘরে ভেজে নিলে ভাজার তাপে জীবাণুগুলো নিশ্চিতভাবে মারা যায়।  তবে কাঁচা সেমাইও কেনার সময় ধবধবে সাদা না কেনাই ভালো। কারণ, এগুলো ধবধবে সাদা করার জন্য হাইড্রোজ ব্যবহার করা হয়, যা ক্ষতিকর।

স্বাভাবিক সাদা অর্থাৎ কম সাদা কাঁচা সেমাই কেনা তাই সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর। হাইড্রোজ নিয়ে অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি আছে। অনেকে মনে করেন হাইড্রোজ মানে সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড, কিন্তু আসলে তা নয়। হাইড্রোজ মানে সোডিয়াম হাইড্রোসালফাইড বা সোডিয়াম ডাইথায়োনাইট। এটি ব্লিচিং এজেন্ট বলে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার জন্য সেমাইয়ের স্বাভাবিক সাদা রংকে এ দিয়ে আরও সাদা করা হয়।

দেখতে সুন্দর হলেও এটি মুখগহ্বর ও পাকস্থলীর জন্য ক্ষতিকর। এ ছাড়া হাইড্রোজ কাশি, হাঁপানি, পালমোনারি ইডিমা বা ফুসফুসে পানি জমা, এমনকি নিউমোনাইটিস বা ফুসফুসের জটিল সংক্রমণ ঘটাতে পারে।  যদি লাচ্ছা সেমাই কিনতে চান, তাহলে রঙিনগুলো না কিনে সাদা লাচ্ছা কিনুন। এটাই লাচ্ছার স্বাভাবিক রং। রঙিনগুলোতে টেক্সটাইল রং ব্যবহার করা হয়।

এই রং মারাত্মক বিষাক্ত বলে নানা রকম সমস্যা তৈরি করে, যার মধ্যে রয়েছে চর্মরোগ, অ্যালার্জি, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, পাকস্থলীর গোলযোগ, পেপটিক আলসার, রক্তকণিকার গোলযোগ, লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যানসার, লিভারের নানা গোলযোগ, লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যানসার, কিডনির মারাত্মক ক্ষতি ইত্যাদি। তাই সাদা লাচ্ছাই কিনুন এবং তা যেন অবশ্যই কম তেল-চর্বিযুক্ত হয়। কারণ, এসব চর্বি সহজে হজম হয় না।  চিনি কেনার সময়ও সাবধানতা প্রয়োজন। বেশি সাদা চিনি কেনা অনুচিত।

কারণ, চিনিকে ধবধবে সাদা করতেও ব্যবহূত হয় ক্ষতিকর হাইড্রোজ। দেশি চিনি দেখতে লালচে হলেও এতে হাইড্রোজ দেওয়া হয় না বলে স্বাস্থ্যসম্মত। তা ছাড়া দেশি চিনির মিষ্টত্বও বেশি। ফলে বিদেশি চিনির বদলে দেশি চিনি ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি কম থাকার পাশাপাশি অর্থও সাশ্রয় হয়।  গরম মসলার দারুচিনি কেনার সময় পাতলা ছাল দেখে কিনবেন, মোটা ও গন্ধহীনগুলো নয়।

দারুচিনিতে ভেজাল দেওয়া হয় লালচে দেখতে গজারি বা অন্যান্য ছাল দিয়ে। গজারির ছাল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়, তবে সতর্ক থাকলে এ ফাঁকিটুকু পরিহার করা সম্ভব। এলাচ ও লবঙ্গে এখনো কোনো ভেজাল পাওয়া যায়নি। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.