হঠাৎ, ঘুম ভাংল মুঠোফোনের শব্দে । ওটি বন্ধ করে সাধের ঘুমটা কে প্রলম্বিত করার প্রচন্ড ইচ্ছা সত্তেও কেন জানি হাতটা বাড়িয়ে মুঠোফোনটিকে আর বন্ধ করা হল না । বরং ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখি বাজে রাত ২টা ।
এবার বুঝলাম কেন এত রাতে মুঠোফোনটা বেরসিক এর মত বেজে যাচ্ছে, য়্যালার্ম দেয়া ছিল । নিত্যদিনের মত আমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে হাজারো কাজ-অকাজের কথা ।
সে বেচারির বোঝার কিবা সাধ্য যে তুমি আজ আর নেই সেই আমার তুমি । কিভাবে বুঝবে বেচারি, যে -আমার রাত্রিগুলো এখন বড়ই নিঃসঙ্গ । আজকাল আর আগের মত তাকে সময় দেয়া হয় না । আগে যেমন রাত-বিরাতে,কাজে-আকাজে,কারণে-অকারণে তোমায় ফোন দেবার বাহানায় মুঠোফোনটা কে পরম মমতায় কানে চেপে ধরে রাখতাম,এখন আর তা হয় নাহ, ও বেচারি বড়ই অবহেলায় পড়ে থাকে প্যান্ট এর পকেট এর এক কোনায়,কিংবা টেবিল এর পাশে । আগে যেখানে আমার সাথে সবখানেই তার উপস্থিতি আর ক্ষণিক পর পর ব্যবহার ছিল অবধারিত এখন ত তাকে পরম অযত্নে ফেলে রেখে যাই বিছানায় ,আধা-খাওয়া সিগ্রেট স্তুপ এর মাঝে , এমনকি মেঝেতেও মাঝে মাঝে গড়াগড়িরত অবস্থায় তাকে আমার রুম্মেট আবিষ্কার করেছে ।
ভালবাসায় অভ্যস্ততা বড়ই বাজে জিনিস । এটা জানি বলেই,মুঠোফোন বেচারির কষ্টটা আমি বুঝি, হাত বাড়িয়ে টেনে নেই । আলতো হাত চালাই তার নরম কী-প্যাডে, কখন যে সেই ১১ টি সংখ্যা ভেসে উঠেছে , খেয়াল করিনি । যখন করলাম, তখন অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম কোনো এক অজানা দেয়াল দাড়িয়ে গিয়েছে আমাদের মাঝে আজ, কোনো এক অচেনা জড়তা কাজ করছে আজ,কোনো এক অবুঝ অভিমান জমাট বেধেছে আজ,গতকাল,পরশু,ইদানীং..................
কতক্ষণ কেটেছে জানি না । বৃদ্ধাংগুলী এখনো সেই সবুজ বাটনে স্থির;কিন্তু মন ছুটে চলেছে , ছুটে চলেছে হাজার পাওয়া-না পাওয়ার হিসাবের খেরোখাতার পাতায় ।
পাতার পর পাতা হাতড়ে বেড়াই,খাতার পৃষ্ঠা অতীত ছাপিয়ে বর্তমানের দোড়গোড়ায়,কিন্তু হিসাব মেলে না । ভবিষ্যতেও আদৌ কখনো মিলবে কিনা ভাবতে ভাবতে নির্বিকার ভঙ্গিতে বৃদ্ধাংগুলী সরিয়ে লাল বাটনেই চাপ দেই,বেপরয়া ভাবে ছুড়ে ফেলি মুঠোফোনটা ।
বারান্দায় দাড়াতেই শীতের ঝাপ্টা আসে,বেশ জাকিয়ে পড়েছে শীত । এমন এক শীতের রাতে ধূমায়িত কফি হাতে ঠক-ঠক কাপ্তে কাপ্তে তোমার গলায় শুনেছিলাম গুণের কবিতা -
শিশুরা খেলাঘর করে ।
তারা হাঁড়ি-পাতিল, বাসন-কোসন নিয়ে
বড়দের মতো সংসার সংসার খেলে ।
তারপর একসময় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে
ঘুমভাঙ্গার পর শুরু হয় তাদের অন্যখেলা ।
বড়োরাও খেলাঘর করে ।
তাদের বাসন-কোসনগুলো আকৃতিতে বড়ো,
তাদের কামনা বাসনার মতো ।
শিশুদের মতো তারাও ক্লান্ত হয় ,
তারাও সংসার ভাঙ্গে, কিন্তু শিশুদের মতো
তারা ঘুমুতে পারে না ।
আমারও ঘুম আসে না ।
তুমি বলছিলে "টারম ফাইনাল টা ভালভাবে দাও, আমার থেকে বেশী খুশী কেউ হবে নাহ ! " আমি পারিনি, পারিনি তোমায় ধরে রাখতে, পারিনি তোমায় খুশি করতে, ইলেক্ট্রনিক্স পরীক্ষাটা স্মরণ কালের সব চাইতে খারাপ দিয়েছি। বাকিগুলোও সুবিধার হবে না বুঝতে পারছি । আর ইচ্ছে করছে না অদৃশ্য-অস্পৃশ্য তোমায় খুশী করতে ।
অনেকদিন আকাশ দেখিনা , আজ দেখব,বুক ভরে দেখব সেই আকাশ যা একসময় তোমার সাথে ভাগাভাগি করে নেবার কথা দিয়েছিলাম । আজ তোমার আর আমার আকাশের বিস্তর দুরত্ব, তীব্র বেগে ছুটে চলা বিমান ১১ঘন্টা ১৫ মিনিটে যতটা দুরত্ব যেতে পারে ততটা,ব্যবধান এক মহাদেশের , ফারাক দুই দৃষ্টিভঙ্গির , ব্যপ্তি তিন মাসের ।
এই বিশাল দুরত্ব নিমেষে পার করে ফেল্লেও, ঐ সবুজ বাটন টেপার দুরত্বটাকে আর পার করতে পারি না ।
তুমি আমার নওতো সুখ, তুমি সুখের বেদনা । সেই বেদনা নিয়ে আজ আমি আকাশ দেখব,আকাশ দেখবে ভালবাসা আর ইলেক্ট্রনিক্স এ জর্জরিত একজন ঊনমানুষ ।
বিঃদ্রঃ সকল চরিত্র ঘটনা কিঞ্চিত কাল্পনিক, বেশীরভাগ ধ্রুব সইত্য ।
আমার জীবনের সাথে মিল্যা গেলে, আমার কুনু দোষ নাইক্যা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।