আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাদুয়া দখল করে নিয়েছে ভারত

মত প্রকাশের মুক্ত মাধ্যম তৈরী হোক
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের বহুল আলোচিত পাদুয়া দখল করে নিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। গতকাল সন্ধ্যায় তিন শতাধিক বিএসএফ ও দুই শতাধিক ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশের আধা কিলোমিটার অভ্যন্তরে ঢুকে ১২৭০ ও ১২৭১ নম্বর পিলারসংলগ্ন ২৩০ একর বাংলাদেশের ভূমি নিজেদের দখলে নিয়ে যায়। এ নিয়ে সেখানে তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বিডিআর-বিএসএফ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। শত শত বাংলাদেশী নাগরিক বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন।

সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বিএসএফ এক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। সেখানে বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ ভূমিজরিপ কার্যক্রম চলছে। গতকাল বাংলাদেশ জরিপ দল সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পাদুয়া এলাকা পরিদর্শন করে। জানায়, গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তিন শতাধিক বিএসএফ সদস্য ও দুই শতাধিক ভারতীয় নাগরিক আকস্মিকভাবে সীমান্তের ১২৭০ ও ১২৭১ নম্বর পিলার অতিক্রম করে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের প্রায় ৫০০ মিটার ভেতরে ঢুকে পড়ে। তারা সীমান্তে লাল পতাকা উত্তোলন করে ভারী অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেয়।

বিষয়টি দেখতে পেয়ে সীমান্তবাসী পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের কয়েক শ’ লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিএসএফকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে সীমান্তে কর্তব্যরত বিডিআর জওয়ানরাও সেখানে ছুটে যান। তারা মাইকযোগে বিএসএফ সদস্যদের পেছনে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু বিএসএফ সদস্যরা বাংকার খুঁড়ে সেখানে অবস্থান নেয়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিডিআর ২১ রাইফেল ব্যাটালিয়নের সেকেন্ড ইন কমান্ড মেজর আব্দুলাহ আল মামুন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে সিলেট থেকে অতিরিক্ত ফোর্স পাঠানো হয় পাদুয়া সীমান্তে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সীমান্তে বিডিআর ও বিএসএফ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে গুলিবিনিময়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিডিআর’র একটি সূত্র জানিয়েছে, বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে বিডিআর’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিএসএফ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও বিএসএফ তাতে সাড়া দেয়নি। উল্লেখ্য, পাদুয়া সীমান্তের ২৩০ একর জমি নিয়ে ১৯৯৮ সালে বিডিআর ও বিএসএফ’র মধ্যে তিন দিনব্যাপী গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছিল। পরে একাধিকবার বিএসএফ’র অপতৎপরতায় সীমান্তে উত্তেজনা দেখা দেয়।

দেশের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে পদুয়া দখল করে নেয়াকে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছেন সাবেক বিডিআর কর্মকর্তারা। তাদের মতে এটি আগ্রাসন ছাড়া আর কিছূ নয়। মেজর জেনারেল (অব সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম বলেন, বিএসএফ কর্তৃক পদুয়ায় আগ্রাসনের ফলে ওই অঞ্চলে আমাদের ভৌগোলিক নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। দু’টি দেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী তথা বিএসএফ ও বিডিআর মুখোমুখি হোক তা কারো কাম্য নয়। তথাপি বিএসএফ’র আগ্রাসী ভূমিকার কারণে আজ সে ধরনের একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

জরুরি ভিত্তিতে দুই দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পর্যায়ে বৈঠকে বসা উচিত। এও বলে রাখা ভালো যে, ওই স্খান নিয়ে বিতর্ক পুরনো। তাই চূড়ান্তভাবে এই বিতর্কের অবসান হওয়া উচিত এবং সে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। বিডিআর’র সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব আ ল ম ফজলুর রহমানের সময় তার নেতৃত্বে পদুয়া উদ্ধার হয়েছিল ভারতের দখল থেকে। গতকাল সন্ধ্যায় আবার ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কর্তৃক পদুয়া দখলে নেয়া বিষয়ে মেজর জেনারেল (অব আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, পদুয়া বাংলাদেশের ভূমি।

ভারতের দখল করার কোনো অধিকার নেই। স্বাধীনতার পর থেকে ওটি ভারত অবৈধভাবে দখল করেছিল। আমরা ১৯৯৮ সালে তা উদ্ধার করেছিলাম এবং সেখানে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তখন ভারতের সাথে একটি চুক্তি হয়েছিল তারা ওখান থেকে তাদের ক্যাম্প সরিয়ে নেবে। অন্যান্য বিষয়ে দুই দেশের সরকার আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবে।

কিন্তু পদুয়া উদ্ধারের পর আমাকে অপসারণ করা হলো। তারপর ভারত আর সে ক্যাম্প সেখান থেকে সরায়নি। মেজর জেনারেল (অব ফজলুর রহমান বলেন, ভারতকে আমরা সব বিষেয় অতিরিক্ত ছাড় দিচ্ছি একতরফাভাবে। এটা উচিত নয়। ঢাকার ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এ বিষয়ে কঠোর প্রতিবাদ জানানো উচিত।

তারা যদি অবিলম্বে সেখান থেকে সরে না যায় তাহলে পদুয়ার মতো পরিণতি হবে বলে হুঁশিয়ার করা উচিত। মেজর জেনারেল (অব রুহুল আলম বলেন, এটা অবশ্যই আগ্রাসন। অবিলম্বে এটা আমাদের উদ্ধারের জন্য পদক্ষেপ নেয়া উচিত। ওটা আমাদের ভূমি। ভারতের এ পদক্ষেপের ফলে আমাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি হয়েছে।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।