!!!
১৮৫৬ সাল। সিলেটে গড়ে ওঠে চা-বাগান। চা রপ্তানী করার জন্য ইঞ্জিন চালিত জাহাজ সিলেটে আসতে শুরু করে। শ্বেতাঙ্গরা জাহাজের খালাসির কাজ করতে চাইতেন না বলে এই কাজগুলো পেয়ে যেতেন সিলেটের সাধারণ লোকরা। সিলেটীরা জাহাজে করে চলে আসতেন কলকাতায় এবং সেখান থেকে কেউ কেউ চলে আসতেন বিলেত পর্যন্ত।
সিলেটের লস্কররা (জাহাজের খালাসি) উনিশ শতক থেকেই কলকাতার খিদিরপুর ডক এলাকায় আস্তানা তৈরি শুরু করেন। এই ডকে এসেই জাহাজ ভিড়তো, এখান থেকে যাত্রী, মালামাল এবং লস্কর নিয়ে জাহাজগুলো সাগর পাড়ি দিতো। জাহাজ মালিকরা ঘাট সারেংদের কাছে খালাসির চাহিদা দিতো। সারেংরা কমিশনের মাধ্যমে খালাসিদের মধ্যে কাজ ভাগ করে দিতেন। যারা কাজ পেতেন তারা বেতন পেতেন জাহাজ অন্য বন্দর থেকে কলকাতায় ফিরে আসার পর।
মূলত খালাসিরা যাতে পালিয়ে না যান সেজন্য এই ব্যবস্হা ছিল।
শিল্পীর তুলিতে কলকাতার খিদিরপুর ডকইয়ার্ড
যারা নগদ টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরতেন, জমি কিনতেন তাদের দেখে অথবা বিদেশ থেকে মানি অর্ডারে টাকা পাঠাতেন, তা দেখে প্রলুব্ধ হয়ে খিদিরপুরে ছুটে গিয়েছিলেন হাজার হাজার সিলেটের লোক। খিদিরপুরে বাড়িওয়ালা, সারেং অনেকেই ছিলেন সিলেটের। তাদের দৌলতে খিদিরপুরে সিলেটী লস্করদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। সিলেটীদের মধ্যে কিনশিপ বা আত্মীয়তা ও স্বজনের বন্ধন এই সকল লোকদের কাজ পাইয়ে দিতে সহায়তা করেছে।
খিদিরপুরের মতো দেশীদের সহায়তায় জাহাজ থেকে পালিয়ে গিয়ে খালাসিরা বসতি গড়ে তুলেন বিলেতে। নবাগতদের থাকা- খাওয়াসহ কাজ জুটিয়ে দিতেন পূর্বে আগত সিলেটীরা। ১৯৬৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২০ তারিখ সুজন মিয়া পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে। ধীরে ধীরে সেখানে গড়ে তোলেন ৩টা রেস্টুরেন্ট। কিন্তু তার ২ ছেলে ও ১ মেয়ে ভিন্ন পেশায় চলে যাওয়ার তিনি রেস্টুরেন্ট ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।
দেশে চলে আসেন স্ত্রীসহ। বর্তমানে তিনি মৌলভীবাজারের সদর উপজেলার মনুমুখ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। ইংল্যান্ডে নিয়মিত আসা-যাওয়া করেন। সুজন মিয়ার প্রায় ৪০ বছর আগে ইংল্যান্ডে এসেছিলেন আইয়ূব আলী মাস্টার। লেখাপড়া জানতেন বলে তাকে মাস্টার সম্বোধন করা হতো।
অল্ডগেইট অঞ্চলের ১৩ নম্বর স্যান্ডিরো’তে তিনি একটা আস্তানা গড়ে তোলেন যেখানে আশ্রয় দিতেন যে কোন সিলেটী লস্করকে।
সুজন মিয়া। জব ভাউচারের মাধ্যমে ইংল্যান্ডে বসতি গড়া সিলেটীদের একজন প্রতিনিধি
বিলেতে প্রথম শিক্ষিত সিলেটী
১৯৫১ সালে ব্রিটেনে পাকিস্তানী ও পূর্বপাকিস্তানীদের সংখ্যা ছিল ৫০০০। ১৯৭১ সালে সেই সংখ্যা দাড়ায় ১২৭৫৬৫’তে। ২০০১ সালে ব্রিটেনে বাংলাদেশীদের সংখ্যা ছিল ২৭৫২৫০।
তথ্য সমীক্ষায় দেখে গেছে, বাংলাদেশ থেকে আগত অভিবাসীদের সংখ্যা অদূর ভবিষ্যতে কমে গেলেও বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে বাঙালিদের সংখ্যা সামনের দশ পনেরো বছর পর্যন্ত বাড়বে।
তথ্যসূত্র: কালাপানির হাতছানি- বিলেতে বাঙালির ইতিহাস, লেখক: গোলাম মুরশিদ, প্রকাশক: অবসর, প্রকাশকাল: ফ্রেব্রুয়ারি ২০০৮
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।