আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিলেতে তারেক রহমানের রাজনৈতিক আশ্রয় : কী বার্তা বয়ে আনবে?

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব। বিদেশী পত্রপত্রিকা মারফত জানা গেলো যে, ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয় পেলেন তারেক রহমান। তারেক রহমান বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জে. জিয়াউর রহমান ও বর্তমানে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র। তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। কিন্তু এসব পরিচয় ছাপিয়ে জনগণের কাছে তিনি ‘হাওয়া ভবনের’ কেন্দ্রীয় ব্যক্তি বলে পরিচিত।

পরিচিতি যাই হোক নিজের দলের মধ্যে তার প্রভূত শক্তি ও প্রভাব। যেহেতু বিএনপি বর্তমানে প্রধান বিরোধী দল এবং যেহেতু তিনবার ক্ষমতায় ছিল তাই এটি একটি বিশাল দল বলে পরিচিত। এইসব কারণে তারেক রহমানকে বাংলাদেশের একজন বড় নেতা হিসেবে গণ্য করা হয়। কয়েকদিন আগে একজন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক তাকে বাংলাদেশের পাঁচজন নেতার একজন বলে বর্ণনা করেছেন। এহেন নেতার বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়ার বিষয়টা সংবাদ মাধ্যমে খুব একটা গুরুত্ব পেয়েছে তা বলা যাবে না।

এটা একটা খবর ব্যস এই পর্যন্ত। এ নিয়ে খুব একটা আলোচনার ঝড় বয়ে যায়নি। টকশোগুলোতে কথার ফোয়ারা বয়ে যায়নি। তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা তেমন কিছু বলেননি। নিজের দলের পক্ষ থেকেও তেমন কোনো মন্তব্য করেনি কেউ।

বিএনপির সিনিযয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়া; তার রাজনৈতিক জীবনে দেউলিয়াত্ব প্রকাশের সূচনা সংগীত এটি। ভবিষ্যতে ১৮ দলীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রীত্বের আসনেও ঘৃতাহুতি দিয়েছেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তার অক্ষমতাও প্রকাশ পেয়েছে। লন্ডনে তারেক রহমান নিজে ড্রাইভ করেন, তিনি অসুস্থ নন এই প্রতিক্রিয়াহীনতা কিছুটা আশ্চর্যজনক। কিছুদিন থেকে কোনো কোনো পত্রিকায় বলা হচ্ছে যে, পরের নির্বাচনে বিএনপি জিতে যাবে।

সাধারণভাবে ভারতের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন না হলেও একটি ভারতীয় পত্রিকায় নির্বাচনে বিএনপির জিতবার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করার থেকে দলটিকে বেশ উৎসাহিত মনে হয়েছে। আমাদের দেশে নির্বাচনের ফলাফল ‘ইয়ো ইয়োর’ মতো হয়েছে। একবার এদল অন্যবার আর ওদল জিতেছে। কাজেই পরেরবার বিএনপি জিতবার আশা করে। কাজেই বিজয়ী দলের নেতা হিসেবে তাদের নেতা দেশে ফিরবে এমনটাই সবাই আশা করে।

একজন প্রাক্তন ভাইস চ্যান্সেলর তো বলেই ফেলেছেন যে, তারেক দেশে ফিরবার সময় বিমানবন্দরে ২০ লাখ লোক আসবে। এরকম জনসমাগম হবে কিনা তা ভবিষ্যতে দেখা যাবে তবে এতে করে বুঝা যায় কী ধরনের লোক আজকাল ভাইস চ্যান্সেলর নিযুক্ত হন। সে যাই হোক, দলের সমর্থকরা বিমানবন্দরে জমায়েত হবে সেটা আশা করা স্বাভাবিক। কাজেই তারেক সাহেব বিজয়ীর বেশে দেশে ফিরবেন এমনটা আশা করা তার জন্য স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা শুনলাম দুটি খবর যা আশ্চর্যজনক।

পত্রিকা মারফত জানা গেলো যে, তাকে ভোটার করার জন্য তার দল কিছু করেনি কাজেই পরবর্তী নির্বাচনে তিনি ভোট দিতে পারবেন না। এ জন্য তিনি ক্ষুব্ধ এমনটা লিখেছে পত্রিকায়। দ্বিতীয় খবরটি তো চোখ কপালে তোলবার মতো। তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে দরখাস্ত করেছেন এটা কি কেউ জানতেন? যেখানে দলের নেতাকর্মীরা তার অনুপস্থিতে তাকে দলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বানিয়েছে ভবিষ্যতে দলের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য সেখানে তিনি কিনা বিদেশে থেকে যাওয়ার চিন্তা করছেন। অবশ্য রাজনৈতিক আশ্রয় পেলেই যে বিদেশে থেকে যেতে হবে এমন কোনো কথা নেই।

‘অনুকূল সমীরণ ভরে’ তিনি দেশে ফিরতে পারেন। কিন্তু সুবাতাস না বইলে তিনি বিদেশে থেকে যেতে পারেন। দুটো পথ খোলা থাকলো। একটি টকশোতে বিএনপির সাবেক মন্ত্রী তানভীর সিদ্দিকি বলেছিলেন যে, অবস্থা ভালো হলে তারেক সাহেব দেশে ফিরবেন। ততোদিন দলের সবাইকে সরকারের লাঠিপেটা খেতে হবে।

এমনটা ভাবা কারো কারো জন্য অত্যন্ত স্বাভাবিক। এটা ঠিক যে, দুর্দিনে তারেক রহমানের কাছ থেকে নেতৃত্ব পাওয়া যাবে না এমন বার্তা কেউ কেউ পেতে পারেন তার রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার সংবাদের মাধ্যমে। যদি তারেক রহমান না ফিরেন তবে দলটির নেতৃত্ব দেবেন কে? পত্রিকান্তরে জানা যায় যে, বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। এক মাস ব্যবধানে তিনি দুবার ওমরা করতে গিয়েছিলন। একটি পত্রিকার খবর অনুযায়ী এ সময়গুলোতে তিনি সৌদিতে মেডিকেল বোর্ড দ্বারা চিকিৎসা করিয়েছেন।

এই মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ। অসুখ-বিসুখ ছাড়াও বয়সের ব্যাপারও রয়েছে। আর কতোদিন তিনি নেতৃত্ব দিতে পারবেন এটা অনুমানের বিষয়। দলের সাধারণ সম্পাদক ভারপ্রাপ্ত। তাকে কেন ভারমুক্ত করা হচ্ছে না এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখা হয়েছে।

একটি মত হচ্ছে এই যে, দলের অনেক প্রভাবশালী নেতা নাকি তাকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেখতে চান না। এগুলো অবশ্য অনুমান মাত্র। তবে এটা ঠিক যে, এতোদিন ধরে দলের সাধারণ সম্পাদক ভারপ্রাপ্ত থাকলে নানা জল্পনা-কল্পনার জন্ম হবে। ঈদুল ফিতরের পরে আন্দোলনের কথা বলে পিছিয়ে যাওয়াটাকে অনেকে সংগঠনিক দুর্বলতার কারণ বলে মনে করেছেন। এমনি অবস্থায় শোনা যাচ্ছে যে, তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান নাকি দেশে ফিরছেন।

এ নিয়ে স্বভাবতই জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। শোনা যাচ্ছে যে, তিনিই নাকি দলের নেতৃত্বভার গ্রহণ করবেন। এ নিয়ে অবশ্য জিয়া পরিবারের কেউ কোনো মন্তব্য করেননি। রাজনীতিতে মন্তব্য না করারও কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। অনেকে ধরে নিতে পারে যে, গুজবটি তবে সত্য।

সত্য না হলে তো প্রতিবাদ করা হতো। ডা. রহমান স্বামী সন্তানদের নিয়ে প্রবাসে থাকবেন না ক্ষমতার মোহে মোহিত হয়ে দেশে ফিরবেন এ সম্বন্ধে তিনি কিছু বলেননি। কেউ কিছু বলেননি। সবাই জানে তিনি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। কিন্তু তিনি নেত্রী হবেন এমনটা সত্য বলে প্রতীয়মান হলে তার সম্বন্ধে জল্পনা-কল্পনা শুরু হবে।

ইন্টারনেটে একটি নিবন্ধ দেখলাম যার শিরোনাম, ‘তারেক রহমান’স মাদার ইন ল’ : এ কিং মেকার’। এই নিবন্ধে লেখা হয়েছে যে, তারেক রহমানের শাশুড়ি মিসেস এম এ রহমান একজন অত্যন্ত উচ্চাকাক্সক্ষী মহিলা। তিনি অনেক রাজনৈতিক ও আর্থিক দেন-দরবারে তারেক রহমানকে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কথাটি লেখা হয়েছে তা হচ্ছে মিসেস এম এ রহমান ও তার কন্যা ডা. জুবায়দা রহমান দুজনেই জামাতে ইসলামের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। নিবন্ধটিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, ডা. জুবায়দা রহমান ছাত্রী জীবনে জামাতে ইসলামের সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং তাদের সভা-সমিতিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেছেন।

রাজনৈতিক আশ্রয়দান পাশ্চাত্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোর একটা ঐতিহ্য। একটু অন্যভাবে প্রাচীন গ্রিস ও মিসরেও এই ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন অফ হিউম্যান রাইটস আর্টিকল ১৪তে রাজনৈতিক আশ্রয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। নিজের দেশে রাজনৈতিক কারণে যদি কারো নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হয় তবে অন্য একটি দেশ তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে পারে। বিলেতে অতীতে কার্ল মার্ক্সকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়া হয়েছিল যার রাজনৈতিক আদর্শ বিলেত সরকারের আদর্শের মতো ছিল না।

হো চি মিনও বিলেতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। নিজের দেশে যার নিরপেক্ষতা বিঘিœত তাদের আশ্রয় দেয়া হয়। তিনি নিজের দেশে কারো নিরাপত্তাহীনতার কারণ কিনা সেটা আশ্রয় প্রদানকারী দেশ বিবেচনা করে না। বলা যেতে পারে যে, রাজনৈতিক আশ্রয়ের বহুবচন হচ্ছে শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়া। সবার নিশ্চয়ই মনে আছে যে, আমাদের মুক্তি সংগ্রামের সময় প্রায় এক কোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় পেয়েছিল এবং জাতিসংঘ তাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিল।

অন্যদিকে বর্তমান সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হতে পারেন বলে প্রচার কতটুকু সত্য? এ ঘটনাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে ব্যবহার করে দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ কিংবা বিরোধী দলকে নিষ্পেষণ করা হচ্ছে বলে প্রচারে নেমেছে বিএনপি; যা একেবারে হাস্যকর। আবার বর্তমান সরকারের কার্যক্রমকে ব্রিটেনের সরকার সমর্থন করছে না বলে প্রচারও ধান্দাবাজ ব্যক্তির নিজের আখের গোছানোর অপচেষ্টা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। বর্তমান অবস্থায় যদি তারেক জিয়া দেশে না ফেরেন তবে বিএনপির একটা লাভ হবে। হাওয়া ভবন, দুর্নীতি ইত্যাদি নিয়ে তারেক রহমানের যে দুর্নাম হয়েছে সে জন্য শুধু এ কথা বলে লাভ নেই যে, প্রমাণ কোথায়? রাজনীতিতে ‘পাবলিক পারসেপশন’ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই মুহূর্তে তারেক রহমান সামনে না এলে বিএনপি সমালোচনার হাত থেকে রেহাই পাবে।

সুত্র: ভোরের কাগজ সংবাদ সংবাদ২৪ নাগরিক ব্লগ  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।