আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের ইউনুস নৃত্য!

বিপুল জনপ্রিয় এই বাংলা ব্লগে নতুন এলাম। সবাইকে শভেচ্ছা!

প্রথমে "বিডিনিউজ টুয়েন্টি ফোর" বোমা বানানোর মালমসলা সর্বসাধারনের ব্যাবহারের জন্য সাজিয়ে রেখেছিল। তারপর সে সকল মালমসল্লা ব্যাবহার করে বোমা বানানো ও বোমা ফাটানোর হুড়োহুরিতে প্রথমে পত্রিকাওয়ালা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো, তারপর ব্লগ ও আন্তর্জালিক বিভিন্ন সাইট, অতঃপর সর্বসাধারন মায় দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত যেন দিওয়ালী উৎসবের বাজী ফাটানোর আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠলো। কয়েকদিন খুব চললো এ নিয়ে, তারপর হরিষে বিষাদ। মানুষকে পচানো এবং তাকে নিয়ে ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ করায় একপ্রকার আনন্দলাভ হয়, উপরন্তু সে মানুষটি যদি হয় অপছন্দের কেউ, তাহলে আনন্দের আর সীমা পরিসীমা থাকে না, ব্যাপক আনন্দে হৃদয়মন তিড়িংবিড়িং করে নাচতে থাকে।

ইউনুস কি হাসিনার অপছন্দের মানুষ? একেবারে অপরিণত একটি সংবাদের ত্বড়িৎ প্রতিক্রিয়ায় হাসিনা যে সকল নিন্দাবাক্য যে ভাবে উচ্চারণ করলেন, তাতে বোঝা যায় ইউনুস সম্পর্কে হাসিনার অনুরুপ একটি পূর্ব সিদ্ধান্ত ছিল। হাসিনা সরকারের প্রথম টার্মে সিটিসেলের মনোপলি ভেঙ্গে গ্রামীনফোনকে সর্বব্যাপী করার পেছনে ব্যাক্তিগতভাবে ইউনুসের উপস্থাপনা এবং হাসিনার সরকারী আনুকূল্য প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল বলে শোনা যায়। হাসিনা সরকার পতনের পর ইউনুস নাকি একটি মিশন নিয়ে দেশে দেশে বক্তৃতা দিয়ে বেড়িয়েছেন, হাসিনা সরকারের দুর্নীতি নাকি ছিল সে সকল বক্তৃতার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। গ্রামীনফোনকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার ক্ষেত্রে সরকার কি দুর্নীতি করেছিল, জনান্তিকে হাসিনা একবার ইউনুসের উদ্দ্যেশ্যে সে প্রশ্নও রেখেছিলেন। বিএনপি যখন ইয়াজুদ্দিন-হাসান-আজিজ গংদের সামনে রেখে নির্বাচন করে ফেলার তোড়জোরে ব্যাস্ত, ইউনুস তখন যেনতেন প্রকারে সেই নির্বাচন হওয়া উচিৎ, এমন ফতোয়া দিয়ে আওয়ামী মহল থেকে আরও দূরে সরে যান।

হাসিনার ইউনুস বিরাগ সেসবেরই ফলস্রুতি, নাকি নতুন অন্য কোন অজানা কারন এর পিছনে আছে, তা জানার জন্য বোধ হয় আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে বিএনপিও যে ইউনুসের ব্যাপরে উচ্ছসিত ছিল তা নয়, গোড়া থেকেই তাদের সন্দেহ ছিল বিশেষ কোন উদ্দ্যেশ্য হাসিলের জন্য ইউনুসকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। ইউনুস যখন রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টায় ছিলেন, সে সন্দেহের সত্যতা তারা বুঝতে পেরেছিল। আর বলিহারি যাই আমাদের সংবাদকর্মীদের বিবেচনাবোধ দেখে। সংবাদ সন্মেলনটি ছিল প্রধানমন্ত্রীর কয়েকদিনব্যাপী তিনটি দেশ সফরের প্রাপ্তিযোগ বর্ণনা সংক্রান্ত বিষয়ে, কিন্তু পত্রিকায় সে সংক্রান্ত কোন প্রশ্নোত্তর তেমনভাবে দেখা গেল না, অথচ গুরুত্বের বিবেচনায় সে বিষয়টিরই অগ্রাধীকার পাওয়ার কথা।

নোবেলপ্রাপ্তি আমাদের মত একটি দেশের জন্য বিশাল এক প্রাপ্তি সন্দেহ নেই, এ ক্ষেত্রে ব্যাক্তিগত প্রাপ্তির চেয়ে অনেক বড় হয়ে দেখা দেয় জাতীয় প্রাপ্তির বিষয়টি, ব্যাক্তির অর্জনকেও তাই জাতীয় অর্জন হিসেবেই গন্য করা হয়। অধ্যাপক ইউনুসের নোবেলপ্রাপ্তি কতটা আমাদের জাতীয় প্রাপ্তি হয়ে উঠেছিল সে বিষয়টি বেশ প্রানিধানযোগ্য। তিনি যে নোবেল পেতে পারেন, আগে থেকেই সে আভাষ পাওয়া যাচ্ছিল। যখন পেলেন, বাংলাদেশের অনেকেই তখন বিস্মিত হয়েছিলেন, কারন ক্ষুদ্রঋন নামক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে সামনে রেখে তিনি নোবেল পেয়েছিলেন শান্তিতে। অর্থনীতিতে কেন নয়? এটা যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের যুগান্তকারী কোন মডেল নয়, নোবেলের কর্তাব্যাক্তিরা কি তা বুঝতে পেরেছিলেন? তাহলে শান্তিতেই বা কেন? গ্রামীন ব্যাংকের কার্যক্রম দেশে শান্তির কি নহর বইয়ে দিয়েছিল? হয়তো এসব প্রশ্নের উদয় হয়েছিল বলেই ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ঘনিষ্ট জনাকয়েক অর্থনীতিবিদ ছাড়া সর্বমহলে তেমন বাঁধভাঙ্গা উচ্ছাস পরিলক্ষিত হয় নি, কারনে অকারনে বাঙালীর উচ্ছাসপ্রিয়তার বৈশিষ্টের সংগে যা মোটেই সাজুয্যপূর্ণ নয়।

হাসিনা গণমানুষের নেত্রী। তাঁর নিজের এবং তাঁর দলের একটি আলাদা হিসেব থাকলেও বিডিনিউজের সংবাদের সূত্র ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ইউনুস বিষয়ক যে সকল মন্তব্য প্রকাশিত/প্রচারিত হয়েছে তার বক্তব্যও তার অধিকাংশের অনুরুপ। তবে যে সংবাদের সূত্র ধরে হাসিনা এমন সব মন্তব্য করেছেন, সে সংবাদের উৎসস্থলে যে ভিন্নস্রোত বইতে পারে সে সম্পর্কে কি হাসিনার কোন পূর্বানুমান ছিল না? নাকি সেখানেও রয়েছে ভিন্ন কোন হিসাব নিকাশ? গুরুত্বপূর্ন সব ব্যাক্তিত্বের গুরুগম্ভীর কথাবার্তার পাশে আমার মনে ছোট্ট দুটি প্রশ্ন জেগেছে- ১. সংবাদটি প্রথম প্রকাশ পেয়েছিল নরওয়ের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টিভিতে, সে অর্থে সেটা নরওয়ে সরকারেরই ভাষ্য। একটি অসত্য ভাষন কেন তারা প্রচার করলো? ২. ইউনুস গ্রামীন ব্যাংক থেকে গ্রামীন কল্যান ট্রাষ্টে টাকা স্থানান্তরের সময় কারন হিসেবে যা উল্লেখ করেছিল, করের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তা করা হয়েছিল, বাংলাদেশকে ছলাকলার মাধ্যমে ন্যায্য কর থেকে বঞ্চিত করা ইউনুস এবং নোরাডের জন্য আদৌ সত্যনিষ্ঠ ছিল কি?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.