আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গুজরাটের দাঙ্গায় মুসলমানদেরকে পুড়িয়ে মারার নায়ক এর বিস্ময়কর ভাবে ইসলাম গ্রহণ!

মামা ভাগ্নে যেখানে আপদ নাই সেখানে । ২০০০ সালের দাঙ্গায় আমাদের আট বন্ধুর একটি দল ছিল যারাএ দাঙ্গায় অত্যন্ত উৎসাহ ভরে অংশ নিতাম। আমাদের এলাকায় পশুত্ব ও বর্বরতার উলঙ্গ নৃত্য চলছিল। আমাদের গ্রাম থেকে ১৫ কি.মি. দূরেসুন্দরপুর গ্রামে ৬০/৭০ জন লোককে জীবন্ত পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। আমরাও তখন যৌবনের উন্মাদনায় বাহাদুরী ভেবে এতে অংশগ্রহণ করেছিলাম।

আমাদের বাড়ির কাছেই গ্রামে একটি ছোট্ট মসজিদ ছিল। লোকে বলত এটি এক বিরাট ঐতিহাসিক মসজিদ। পীর হামদানী নামে একজন বড় পীর এটি নির্মাণ করেছিলেন। গুজরাটের লোকেরা তাঁর হাতে মুসলমান হয়েছিল। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, আমাদের গ্রামের এই মসজিদটি ধ্বসিয়ে দিতে হবে।

আমরা আট বন্ধুএই উদ্দেশ্যে যাই। বহু চেষ্টা সত্ত্বেও আমরা মূল মসজিদ ধ্বসাতে পারলাম না। মনে হচ্ছিল আমাদের কোদাল লোহার নয়, কাঠের তৈরি। নিরুপায় হয়ে আমরা বাইরের দেয়াল ভাঙতে শুরু করলাম। যা মাত্র বছর কয়েক আগে গ্রামের লোকেরা গেঁথেছিল।

এই দেয়াল ধ্বসিয়ে আমরা ভাবলাম যে, এইমসজিদজ্বালিয়ে দিতে হবে। পেট্রোল আনা হল। পুরনো কাপড়ে পেট্রোল ঢেলে মসজিদ জ্বালাবার জন্য আমাদের এক সাথী আগুন ধরালে সেই আগুন তার নিজের কাপড়েই লেগে যায় এবং সেখানেই পুড়ে মারা যায়। আমি এই দৃশ্যে দেখে ভয় পেয়ে যাই। আমরা সাথীরা চেষ্টা চালাই অন্তত কিছুটা হলেও মসজিদের ক্ষতি করতে।

সপ্তাহ খানেকের মধ্যে আমার আরও চার বন্ধু আকস্মিকভাবে একের পর এক মারা যায়। তাদের মাথায় ব্যথা হত। এরপর সেই ব্যথায়ছটফট করে মারা গেল। আমি ছাড়া আর দুই বন্ধু পাগল হয়ে যায়। আমি ভীতহয়ে পড়ি।

ভয়ে-আতংকে আমি পালিয়ে বেড়াতে থাকি। রাতের বেলায় আমি সেই ভগ্ন প্রায় মসজিদে গিয়ে কাঁদতাম যে, হে মুসলমানদের ভগবান! আমাকে ক্ষমা করে দাও। মসজিদের মেঝেয় মাথা ঠুকতাম আর কাঁদতাম। এ সময় আমি অনেক স্বপ্ন দেখি এবং স্বপ্নে স্বর্গ-নরক (জান্নাত ও জাহান্নাম) দু'টোই দেখতাম। একবার দেখি, আমি নরকে।

সেখানে একজন দারোগা আছে। সে আমার ঐ সব সাথীকে যারা মসজিদ ধ্বসাতে আমার সাথী ছিল তার জল্লাদদের দ্বারা শাস্তি দিচ্ছে। আর শাস্তি হল এই!লম্বা লম্বা লোহার কাঁটার জাল। এর ওপর ফেলে তাদেরকে টানা হচ্ছে। এতে করে তাদের শরীরের চামড়াও মাংস ঘাড় থেকে পা পর্যন্ত খুলে যাচ্ছে।

এরপর আবার ঠিক হয়ে যাচ্ছে। এরপর আবার তাদের উল্টো করে টাঙানো/ লটকানো হল এবং নিচে আগুন জ্বালানো হল, যা মুখ থেকে ওপর পর্যন্ত গ্রাস করল। দেখলাম, দু'জন জল্লাদ তাদেরকে হান্টার দিয়ে পিটাচ্ছে আর তারা কাঁদছে, চীৎকার করছে আর বলছে, আমাদের মাফ করে দাও। আমরা আর কোন মুসলমানকে মারব না, কোন মসজিদ ধ্বসাবো না। দারোগা তখন উত্তেজিত হয়ে বলছে, তওবার সুযোগ শেষ হয়ে গেছে।

মৃত্যুর পর আর কোন তওবাহ নেই। এ ধরনের ভয়াবহ ওভীতিকর দৃশ্য প্রত্যেক দিন দেখতাম। ভয়ে ও আতংকে আমি তখন পাগলের মত হয়ে যেতাম। এরপর স্বপ্নে আমাকে স্বর্গ (জান্নাত) দেখানো হত। দেখতাম, দুধের বড় পুকুর বরং তার চেয়েও প্রশস্ত বড় নদী।

সেই নদী দিয়ে দুধের স্রোত বয়ে যাচ্ছে। সুদৃশ্য সেই স্রোত। একটি নদী মধুর। একটি ঠাণ্ডা পানির। এত স্বচ্ছ ও সুনির্মল যে, এতে আমি আমার ছবি দেখছি।

আরেকটি নদী শরাবের। আমি বললাম, শরাব তো খারাপ জিনিস। আমাদের পরিবারে শরাব খুব খারাপ মনে করা হয়। উত্তর আসল, এ পাক-পবিত্র ও সুগন্ধিযুক্ত শরাব। এ পান করে কেউ উন্মত্ত হয় না, নেশাগ্রস্ত হয় না।

একবার দেখলাম খুব সুন্দর গাছ। এত বিরাট ও বিশাল যে, হাজার হাজার লোক তার ছায়ায় স্থান পেতে পারে। কখনো খুব সুন্দর বাগান দেখতাম এবং সব সময় সেখান থেকে আল্লাহু আকবার! আল্লাহু আকবার! ধ্বনি তিনবার ভেসে আসত। আমার ভাললাগত না। আমি সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহু আকবার না বললে আমাকে তুলে স্বর্গ থেকে বাইরে ছুঁড়ে ফেলা হত।

আমার ঘুম ভেঙে যেত। দেখতে পেতাম বিছানার নিচে পড়ে আছি। একবার আমি স্বর্গ দেখলাম। আমি তখন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বললাম। সেখানে বহু বালক-বালিকা।

তাঁরা আমার খেদমতে লেগে গেল। এভাবে অনেক দিন অতিবাহিত হয়। গুজরাটে দাঙ্গা হতে থাকে। কিন্তু এবার আমার ভেতর থেকে মনে হত যেন আমি মুসলমান। যখন মুসলমানদের এসব দাঙ্গায় মারা যাবার খবর পেতাম আমি মনে খুব দুঃখ পেতাম।

মনটা খুব ব্যথিত হত। একবার বিজাপুর যাই। সেখানে একটি মসজিদ দেখতে পাই। সেখানকার ইমাম সাহেব ছিলেন সাহারনপুরের। তিনি মাওলানা কালীম সাহেবের সঙ্গে হরিয়ানা কাজ করেছেন।

আমি তাঁকে আমার অবস্থা গোড়াটাই খুলে বলি। তিনি বলেন, আল্লাহ আপনাকে ভালবাসেন। তিনি যদি আপনাকে ভাল না বাসতেন তাহলে আপনার সাথীদের মত আপনাকেও জাহান্নামে জ্বালাতেন। আপনি তাঁর রহমতের মূল্য দিন, কদর করুন এবং ইসলাম কবুল করুন। তিনি বললেন, বাবরী মসজিদ শহীদ করতে সর্বপ্রথম যে দুই যুবক কোদাল চালিয়েছিল তারা আমাদের মাওলানা (কালীম সিদ্দিকী) সাহেবের হাতে মুসলমান হয়েছেন।

সম্ভবত আপনাকেওআল্লাহপাক হেদায়াত দানপূর্বক সত্যিকারের পথের ওপর আনতে চান, এখন আর দেরি করা উচিত নয়। হরিয়ানার দুই-একজন ডাকাতের মুসলমান হবার কাহিনীও তিনি আমাকে শোনান। স্বপ্ন দেখার আগে ইসলামের কথা শুনলে ক্ষুদ্ধ ও উত্তেজিত হতাম। ঠাকুর কলেজে কোন মুসলমানকে ভর্তি হতে দিতাম না। কিন্তু জানি না কেন, ইসলামের সব কিছুই এখন ভাল লাগতে লাগল।

বিজাপুর থেকে বাড়ি এলাম এবং সংকল্প নিলাম আমাকে মুসলমান হতে হবে, অন্যথায় আমার সাথীদের মত আমাকেও নরক যন্ত্রণায় শাস্তি ভুগতে হবে। আমি আহমদাবাদ জামে মসজিদে যাই ও ইসলাম কবুল করি। আমিন আরমুগান নামে একটি দাওয়াতী ম্যাগাজিনে সাক্ষাৎকারে গুজরাটের সুহায়ল সিদ্দিকী (যুবরাজ সিংহের) ইসলাম গ্রহনের কাহিনী। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।