বিস্ময় মুছে দিও না...
কিছুক্ষণ আগে দেখলাম সামু ব্লগে লগডইন আছেন ৩০০ জন ব্লগার। এটা দেখে বেশ ভালো লাগলো। আর সামুর এই ট্রিপল সেন্চুরিতে আমার উপহার স্বরূপ কয়েকটি কবিতা তুলে দিলাম। আপনাদের ভালো লাগলেই সার্থক হবো।
প্রার্থনার নতুন রীতি
প্রেম-আবেগে ভুলে যাবো নাম ঠিকানা
প্রেম-মাদকে বেঁচে রবো এই ভাবনা-
শব্দ ভারে জীবন সীমা কালিক পটে
সিসিফাসের পাথর ঠেলা সাঙ্গ কবে
নিষ্ফল প্রশ্নে
অভিধানের বদ্ধ ঘরে আবাস গড়ে
বাড়ছে বড়োই আয়ু জ্বালা।
সম্ভব অসম্ভবের মন্ত্র খোঁজে ধর্মগুরু
বিভেদ তন্ত্রের অনুসন্ধানে-
লালনেরা জাতি-ধর্ম মানে না
বোঝে না নির্বোধ অনুশাসন!
চমক কালের আলো চিনে
আমরা এখন পশুর রাজা
পথ চিনে পথ ভুলে কল্পঘোরে-
প্রাণ কেনো নিষিদ্ধ করে অরণ্যকামি স্বৈরতন্ত্র
জেনে গেছি খুব গোপনে
জীবন রসের মাদক পানে
মদের গেলাসে বুদ্বুদই সার
তলানিতে অসার তন্দ্রা
গাঁজার আসর মাতুক যতোই ভক্তি গানে
ধোঁয়ার চিত্র শুদ্ধ হয় না কোনো মতে-
মাতাল হতে মনচায়
তোমাকে বলি-
আসো, উড়ি প্রেম মাদক সেবনে
না, না, যান্ত্রিক ব্যাকারণে নয়
নয় কোনো আতঙ্কগ্রস্থ ধ্বনি
আমাদের স্বর হবে ভীতিকামি
স্বরলিপির মৃত্যু উৎসব।
ভণ্ড সাধুর বিভেদ তন্ত্রের মন্ত্রবিষে
জীবন তেজের ঘৃণা ছুঁড়ে
আমরা দু’জন গেয়ে যাবো যুগ্ন-স্বরে
সকাল-সন্ধ্যা নক্ষত্রের মতো
আলো হয়ে বোধের তলায়-
প্রেম-আবেগে ভুলে যাবো জানা-অজানা
প্রেম-বিভ্রমে মরে যাবো এই ভাবনা।
২৭/১১/১০
রান্নাঘরে যুদ্ধের মহড়া
রান্নাঘরের সেলফে অস্ত্রাগারে সাজানো অস্ত্রের মতো
সাজানো সারি সারি মশলার কৌটো
মশলার মিশেলে রান্না হবে নানাবিধ পুষ্টি উপাদান-
শক্তি উৎপাদনে রান্নার কারিগর ব্যাস্ত সারাদিন।
কার জন্য এমন সুস্বাদু খাবার,
সেকি দানব নাকি ভারবাহী পশু?
কেনো এমন শক্তির সমারোহ?
একি নির্মানের আয়োজন নাকি ধ্বংশের ডামাডোল?
ধ্বংশ- পৃথিবীর, মানবীর, সুন্দরের?
দেহ কাঠামো প্রদীপ বাহক জীবনের
তাকে জাগিয়ে রাখতে হয় শক্তির আঘাতে-
এ-যেনো স্রষ্টার নিকৃষ্ট চক্রান্ত!
দেহাধার ভাঙন পিয়াসী-
সুন্দরের ভাঙনে তার সুখ
শ্রমলবদ্ধ নির্মান বই শিল্প বোঝে না।
রান্নাঘরে চলছে যুদ্ধের মহড়া
উৎপাদিত হচ্ছে অঢেল শক্তি
এবার বাজবে সাইরেন চলবে তুমুল লড়াই
পশুর ভারী পায়ের তলায় পিষ্ঠ হবে এবার
বক্ষকাঁপা শিশুর মতো সন্ত্রস্ত
জীবন ধাত্রী রূপসীর বিস্ময়কর দেহলতা!
২১/১১/০৯
সর্বভীতিবাদ
সুসংবদ্ধ আক্রমণে ইন্দ্রিয়রাগে আচড় কাটে
ভীতির নখর
প্রত্যহ ভীতি আসে সহজ নিয়মে
ভীতি আসে রূপের আড়ালে আবডালে-
ফুলের পাখায় কীটের ভীতি
পাখির গানে ভীতির সুর
গাছে-সবুজে শীতের ভয়
আমাদের কণ্ঠে ভীতির আওয়াজ।
কেননা, রূপ সে-তো স্থূল মানসের দাসী
যেনো পশুর নখে বিদ্ধ হওয়াই সারাৎসার।
মানুষ আগ্নেয়াস্ত্রকে কোলে তুলে আদর করে
পরমানু বোমাকে স্বোৎসাহে চুমু খায়
ভীতির সাথে করে আগ্রাসী সঙ্গম-
পোশাকের নিপুনতায় মানব শরীর
যন্ত্রের কাছে প্রাণ সমর্পিত
মুদ্রার ইমারতে বাড়ি-ঘর...
যেনো পোশাকে লুকালে মুক্তি
যেনো যন্ত্রই বোঝে প্রাণোস্পন্দন
যেনো মুদ্রা জানে জীবনের গতি।
প্রাণের প্রতি পদক্ষেপ ভীতির সঞ্চারি-
আলোতে ভয় - অন্ধকারে ভয়
রূপের ভয় - রূপহীনতার ভয়
মৃত্যুতে ভয় - বেঁচে থাকতে ভয়
সর্বত্র ভীতির অসভ্য শাসন।
সৃষ্টি সমারোহে ঊত্থিত আনন্দ
বিনাশী ভীতির বোতলে বন্দি-
যেনো পরমানু বোমার স্তুপের উপর দাঁড়িয়ে
হাসছে তুশি ডানা মেলার অবারিত ঢেউয়ে।
১৪/১১/০৯
আমার প্রিয় শিক্ষকবৃন্দ
আমার প্রিয় শিক্ষকবৃন্দ শিক্ষাদান করেন
শ্রেণী কক্ষে ঠেসাঠেসি করে বসা ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে
বিভিন্ন জটিল বিষয়ে বক্তৃতা প্রদান করেন-
কেউ শোনে কেউবা আত্মকেন্দ্রে ব্যাস্ত
তবুও তিনি নির্বিকার নিজের অভিনয়ে।
আমার প্রিয় শিক্ষকবৃন্দ সরকারি চাকুরে-
পড়ানোর মতো কেউ না থাকলেও আসতে হয় শ্রেণীকক্ষে
কেননা তিনি হুকুমের শিকলে প্যাঁচানো;
মুদ্রায় নির্মিত অবকাঠামোর অভ্যন্তরে
তার দিকে চেয়ে আছে মুদ্রা লোভী সজন
তাই সংসার ভারের তীব্র টানে
তাকেও পালন করতে হয় অবোধ হুকুম।
আমার প্রিয় শিক্ষকবৃন্দ ব্যাবসা বোঝেন না
শাসন করেন না, আঘাত করতে জানেন না
পেশী বড়াবার বদলে প্রজ্ঞা বাড়ান
ক্ষমতা চর্চার বদলে বোধির চর্চা করেন
পদলেহনের বদলে আপন পায়ে ভর সামলান
তাই তাকে বরণ করতে হয় নিয়মের শৃংক্ষল।
আমার প্রিয় শিক্ষকবৃন্দ শিক্ষাদান করেন
শ্রেণী কক্ষের উচ্চমঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেন
শিখান ভাষা ও ভাষার ক্রম-বিবর্তন,
সাহিত্য ও সাহিত্যের রূপরেখা এবং উদ্দেশ্য,
মানুষ ও মানবিক বৈশিষ্ট, জীবনের অর্থ,
শিখান শিল্প ও শিল্পের গুঢ় আনন্দ,
চেতনার বহুমাত্রিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত।
আমার প্রিয় শিক্ষকবৃন্দ নিপুন বাক্য ব্যায়ে
ছাত্র-ছাত্রীদের বোধের ঊন্মেষ ঘটান
শিখান পরাধিন জীবন কতোটা দুর্বিসহ,
প্রাণের বন্দি দশার ব্যাথাতুর আর্তচিৎকার
আর কাটিয়ে দেন একটি জীবন সম্পূর্ণ পরাধিন।
১৯/১১/০৯
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।