মৃত্যু জিনিষটা কি! এ নিয়ে গবেষনার শেষ নেই। মানুষ পৃথিবীর অনেক কিছুই জয় করেছে কিন্তু মৃত্যকে জয় করার স্বপ্ন এখনো স্বপ্নেই রয়ে গেছে। তবুও চেষ্টার শেষ নেই । মৃত্যুর চারিপাশ অসংখ্য রহস্য নিয়ে ঘেরা , তার অল্প কিছু আমরা জানি , আবার অনেক কিছুই জানি না। এই অজানা রহস্যের মাঝে পরম বিস্ময়কর জিনিষ রয়েছে যা আমাদেরকে জানতে আগ্রহী করে তোলে।
আর যখন জানাটাই তাৎপর্যময় ও গুরুত্বপূর্ণ তাহলে কথা না বারিয়ে আজ মৃত্যু সম্পর্কে ১৫ টি আকর্ষণপূর্ণ বিষয় নিয়ে সন্মানিত পাঠকদের সাথে নিয়ে আলোচনা শুরু করি।
১.শ্রবণশক্তির বিদায়ের মধ্যে দিয়ে মানুষের মৃত্যুর শেষপর্বের যবনিকাপাত ঘটে ।
মানুষ যখন মৃত্যুর শেষ ধাপে উপস্থিত হয় তখন তার জ্ঞানেন্দ্রিয় সমূহ একে একে দেহ থেকে বিদায় নেয়া শুরু করে। দৃষ্টিগোচর শক্তি, এরপর স্বাদ, ঘ্রাণেন্দ্রিয়, অনুভব করার শক্তি ( ত্বক ) এবং সবার শেষে শ্রবণশক্তি দেহ থেকে বিদায় নেয়।
২.মৃত্যুর তিনদিন পর দেহের এনজাইমগুলো একে অপরকে গ্রাস শুরু করে।
প্রাণীর দেহকোষে উৎপন্ন জৈব রাসায়নিক পদার্থ এনজাইম যা পাকস্থলিতে খাদ্যবস্তু পরিপাক করতে সাহায্য করে, মৃত্যুর তিনদিন পর এরা একে অপরকে গিলতে থাকে। ভেঙ্গে যাওয়া কোষগুলো নাড়িভুড়িতে বেঁচে থাকা ব্যাকটেরিয়ার আহারের বস্তুতে পরিনত হয় এবং এর প্রভাবে মরদেহে বিষাক্ত গ্যাস সৃষ্টি হয়ে দেহ ফুলে উঠে এবং সৃষ্ট গ্যাসের চাপে মনিকোঠা থেকে চক্ষু দুটি বাহিরে ছিটকে পরার উপক্রম হয় ।
৩.পুরুষ মানুষ কি মৃত্যুর পর নির্গত (শুক্রানু )করে?
মানুষ মারা যাবার পর তার মাংসপেশী ধীরে ধীরে শিথিলকরণ শুরু হয়। এই শিথিলকরণ ধাপটি মৃত্যুর কয়েক ঘন্টার ভেতর পুরুষের শুক্রাশয়কে প্রভাবিত করে। আর এর ফলে মৃতদেহের শুক্রাশয় থেকে শুক্রানু নির্গত হতে থাকে ।
৪.আজকাল মৃতদেহ পচনে কেন বিলম্বিত হয়?
বিশ্বে আজকাল সংরক্ষণ করা খাদ্য গ্রহনের অভ্যাস বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর সংরক্ষণ করা খাদ্য গ্রহনের কারণেই মৃত্যুর পর মৃতদেহ পচনে বিলম্বিত হয়।
৫. তিনটি পরীক্ষিত তথ্য যা অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি ।
ক) পৃথিবীতে প্রতিবছর প্রায় ১০০জন লোক অসাবধানতাবশত পেন্সিল গলধকরন করে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়।
খ) বোতলের কর্ক খোলার সময় সেখানে ঘাপটি মেরে থাকা মাকড়সার কামড়ে মৃত্যু অসম্ভব কিছুই নয় ।
গ) প্রতিবছর প্রায় ২৫০০জন বাঁহাতি লোক ডান হস্তেচালিত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার কারনে মৃত্যবরণ করে।
৬.মানুষের শ্রোনী ও করোটি মড়া পোড়াবার চুল্লিতে অক্ষত অবস্থায় থাকতে পারে ।
মানুষের শ্রোনী ও করোটি ( দেহের হাড় যেখানে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম জমা থাকে ) শবদেহ পোড়াবার চুল্লিতে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাবার পরও অক্ষত থাকতে পারে। চুল্লির প্রচন্ড অগ্নিশিখা শ্রোনী ও করোটির আকারকে কেবলমাত্র ২৫ শতাংশ সংকুচিত করতে সমর্থ হয় ।
৭.বিখ্যাত যোদ্ধা আলেকজাণ্ডার দি গ্রেট এর অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া আজকের দিনে হলে খরচ হতো ৪২০০ কোটি টাকা ।
বিখ্যাত যোদ্ধা আলেকজাণ্ডার দি গ্রেট এর মৃত্যুদেহ বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যাবিলন থেকে মিশর পর্যন্ত সড়ক নির্মান করা হয়েছিল যা বর্তমান বাজারে তার অন্ত্যেষ্টিসংক্রান্ত কার্যে খরচ হতো ৪২০০ কোটি টাকা।
৮. পৃথিবীতে মানুষের আগমনের পর থেকে এ পর্যন্ত ১ লক্ষ মিলিয়ন লোক মৃত্যুবরণ করে।
একটি প্রাককলন অনুসারে জানা যায়,পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাবের পর থেকে এ পর্যন্ত ১লক্ষ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করে ।
৯.অক্সিজেনের অপ্রাতুলতাই সকল মৃত্যুর কারণ।
অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে সকল মৃত্যু ঘটে। অক্সিজেনের অভাবে শরীরের মাংসপেশী প্রণোদিত হতে বাধাগ্রস্থ হয়, ফলে অঙ্গবিক্ষেপ করার ক্ষমতা ক্রমশ হ্রাসপায় এবং শরীর প্রতিকুল অবস্থায় সঙ্গে কঠিন লড়াই করতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে মৃত্যু বরণ করে।
১০.যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু সংক্রান্ত কিছু ইন্টারেস্টিং তথ্য ।
যুক্তরাষ্ট্রে ৮০ শতাংশ লোকের মৃত্যু হাসপাতালে হয়ে থাকে । নিউইয়র্ক শহরে হত্যার চেয়ে আত্মহত্যার সংখ্যাই বেশী। সানফ্রান্সিসকোর শহরের একটি সেতুতে এযবত কমপক্ষে ১২১৮ জন লোকের মৃত্যু সংঘটিত হয়েছে।
১১.বিখ্যাত বিজ্ঞানী টমাস আলফা এডিসনের শেষ নিশ্বাস বোতলে ধারণ করা হয় ।
১৯৩১ সালে বিজ্ঞানী টমাস আলফা এডিসনের মৃত্যুর সময় ফোর্ড গাড়ী কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা হেনরি ফোর্ড বিজ্ঞানী এডিসনের শেষ নিশ্বাসটি একটি বোতলে ধারণ করেছিলেন।
১২.জনপ্রিয় স্টার ট্রেক ছবির নির্মাতা জেনে রদ্দেনবারীর দেহাবশেষ মহাশুন্যে সমাধিস্থ করা হয়।
আমরা যারা ৭০ দশকের পূর্বে জন্ম নিয়েছি তারা হয়ত অনেকেই কিংবদন্তি সিরিজ ছবি স্টার ট্রেক এবং ছবির নির্মাতা জেনে রদ্দেনবারীর নাম শুনে থাকবেন। এই জেনে রদ্দেনবারীরই হচ্ছেন প্রথম ব্যক্তি যার দেহভস্ম-ছাই রকেটে ভরে মহাশুন্যে ছড়িয়ে দেয়া হয়।
১৩.কোনো নির্দিষ্ট অসুখ শরীরের হাড়কে সবুজাভ করে।
এমন কিছু মরণঘাতী অসুখ আছে যার কারণে দেহে পুজ নিসৃত হয় এবং রোগীর মৃত্যুর পর এই পুজ হাড়ের রং পরিবর্তন করে হাড়কে সবুজাভ করে দেয় ।
১৪.মানুষের মৃতদেহ সমাধিস্থ করার রীতি প্রচলন হয়েছিল ৩ লক্ষ ৫০ হাজার বছর আগে ।
সম্প্রতি স্পেনের অতাপয়ের্কা নামক স্থানে ১৪ মিটার ভু-গর্ভস্থে হোম হিদেল্বার্গজেনিস প্রজাতির ২৭ টি হোমিনিড ফসিলের সন্ধান পাওয়া যায়। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর এই ফসিলগুলোর বয়সকাল সাড়ে তিন লক্ষ বছর এবং এরা নেদারল্যাণ্ড বাসীদের পূর্বপুরুষ বলে প্রমাণ পাওয়া যায় ।
১৫. জাপানের নারা অঞ্চলে এক বৌদ্ধ পুরোহিতের চিতা ১১৩০ বছর ধরে প্রজ্বলিত ছিল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।