আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্যাংক ডাকাত-------- ধ্রুব নীল

পৃথিবীটাকে যেমন পেয়েছ তার থেকে সুন্দর করে রেখে যেতে চেষ্টা কর
পড়াশোনা করেছ? অবশ্যই করেছ। না করলে ব্যাংকে চাকরি পেতে না। পড়াশোনা করে থাকলে তোমার বোঝা উচিত ৯০ ডিগ্রি কাকে বলে। তাই না?' 'জি স্যার। ' 'ওহ, ইউ ইডিয়ট, স্যার বলবে না প্লিজ! শুনলে নিজেকে গর্দভ মনে হয়।

আর হ্যাঁ, যা বলছিলাম, ৯০ ডিগ্রি যদি বুঝে থাক, ঠিক সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাক। একদম খাড়া। দ্বিতীয়বার আর মুখে কিছু বলব না। কথা বলব নাইন এমএম পিস্তলটা দিয়ে। ' সব মিলিয়ে তিন মিনিট।

এ সময়ের মধ্যেই মুখোশ পরা পাঁচ ব্যাংক ডাকাতের কব্জায় চলে এসেছে ফাস্টমানি ব্যাংকের গুলশান শাখা। ম্যানেজারকে শাসাচ্ছিল ডাকাতদলের নেতা মেগাট্রন। দলের বাকি সদস্যরা তাকে আপাতত ওই নামেই ডাকছে। ভল্টের কম্বিনেশন মেলাতে ব্যস্ত একজন। বাকিরা অস্ত্র উঁচিয়ে এদিক-ওদিক টহল দিচ্ছে।

অস্ত্র হাতে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেগাট্রন। এ ব্যাংকের ম্যানেজারের সঙ্গে চুক্তিতে আসতে পারেনি সে। তা না হলে বরাবরের মতো আগেই ম্যানেজারের পরিবারের কাউকে কব্জা করে আরামসে কাজটা সারতে পারত। একেবারে ভল্টের কত টাকার জন্য কতগুলো ব্যাগ আনতে হবে, তাও ঠিক করে রাখে মেগাট্রন। নিরাপত্তার খাতিরে সেলফোনও ব্যবহার করে না তারা।

কাজে এতটুকু ফাঁক রাখতে চায় না সে। 'নিমো! নিমো! ১০ সেকেন্ড পেরিয়ে গেছে। আর কতক্ষণ!' 'এই তো বস...। লকারটা স্লো। প্রসেসিংয়ে সময় নিচ্ছে।

' নিমোর কথা শেষ না হতেই চেঁচিয়ে উঠল রাস্টি ছদ্মনামের আরেক ব্যাংক ডাকাত। সোজা পেঁৗছে গেল জানালার পাশে। উঁকি দিয়েই ফিরে এল ভল্টের কাছে। দ্রুত যেতে গিয়ে তারে পা পেঁচিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ল নিমোর পাশে। খেঁকিয়ে উঠল নিমো।

কম্বিনেশনটা ঘুরে গেছে। আবার গোড়া থেকে শুরু করতে হবে। 'বেজন্মা রাস্টি। ' এমন সময় ব্যাংকের পাশের রাস্তায় প্রচণ্ড শব্দে বেজে উঠল অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন। আর একটু পরই চেঁচিয়ে উঠল দলের আরেক ডাকাত ম্যাককুইন।

'মেগাট্রন, পুলিশ!' 'হোয়াট! ইম্পসিবল!' সঙ্গে সঙ্গে ম্যানেজারের মুখ বরাবর রিভলবারের হাতল চালাল। টেবিল আঁকড়েও ভারসাম্য রাখতে পারলেন না ভদ্রলোক। তাঁকে টপকে গিয়ে সিকিউরিটি ক্যামেরাগুলোয় ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিল সে। না, ক্যামেরার তার আগে থেকেই ছেঁড়া ছিল। ওর লোকরাই ব্যাংকে এসে ছোটখাটো কাজ সেরে গেছে।

অ্যালার্মগুলোও অফ করা। একটু পর সাইরেনের শব্দ কানে আসতেই সচকিত হলো মেগাট্রন। ব্যাংকের ভেতর শুয়ে থাকা কোনো কোনো গ্রাহক ফুঁপিয়ে উঠল। আপাতত তা নিয়ে ভাবছে না ডাকাতরা। সবাই বারবার মেগাট্রনের দিকে তাকাচ্ছে।

দ্রুত ভল্টের কাছে এগিয়ে গেল সে। নিমোর কলার ধরে টেনে নিয়ে গেল। 'আর সময় নেই। বেঁচে থাকলে আরো অনেক ব্যাংক আছে। টাকার অভাব হবে না।

চলো। ' 'বস দুটো মিনিট, অন্তত ডিনারের টাকাটা নিয়ে নিই। ' 'সরি বন্ধু। তোমাকে হারানো সম্ভব নয়। তুমি ছাড়া এঙ্পার্ট নেই।

লেটস মুভ। কাম অন ম্যাক, ইভা! ইটস রানিং টাইম। কুইক!' দলের একমাত্র নারী সদস্য ইভা। এতক্ষণ কোনো কথা বলেনি। এবার সেও চেঁচিয়ে উঠল।

'ম্যাক তুমি একজনকে ধরে গেটের সামনে দাঁড়াও। আর নিমো তুমি বাকিদের নিয়ে পাশের বোর্ডরুমে যাও। প্ল্যান বি। প্ল্যান বি। আমাদের চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলেছে পুলিশ।

বেরোনো সম্ভব নয় মেগা। ' ইভার কথায় কান দিল না মেগাট্রন। গত দুই মাসে চারটি মিশনে সামান্য ঝামেলাও হয়নি। আর আজ একদম গোড়াতেই কেচে গেল। এত পুলিশের খবর পাওয়ার প্রশ্নই আসে না।

ভেতরের কেউ গোপনে ফোন করলেও এত দ্রুত পুরো ঢাকা শহরের পুলিশ তাদের ঘিরে ধরবে না। নিশ্চয়ই এটা ফাঁদ। ব্যাংকে আসা লোকগুলোর হাতে ডাক্ট টেপ লাগানো। সবাইকে বোর্ডরুমে নিয়ে যাচ্ছে নিমো। ম্যাক দরজার আড়াল থেকে উঁকি দিল।

দুটো বুলেট এসে কাঁচ ভেঙে দিতেই সরে এল। ইভার দিকে তাকাল মেগাট্রন। ভাবছে অন্য কিছু। দলের কেউ ফাঁদে ফেলেছে তাকে। হতে পারে দলেরই একজন।

দ্রুত ভাবতে চেষ্টা করল মেগাট্রন। দলের সবচেয়ে নতুন সদস্য নিমো। ছ'টা মিশনে সঙ্গে ছিল। সবচেয়ে পুরনো সদস্য ম্যাককুইন ওরফে...। সে বেইমানি করবে না।

আর ইভা তাকে মনে মনে ভালোবাসে, যদিও সে পাত্তা দেয় না। তবু তাকে আপাতত সন্দেহ করতে চাচ্ছে না মেগাট্রন। বাকি রইল রাস্টি। সে এসেছে টাকার জন্য। তাকে দলে নেওয়ার কারণ হলো সুপারবস মির্জা।

রাস্টি তার বিশ্বস্ত লোক। মির্জা নিশ্চয়ই বেইমানকে সঙ্গে দেবে না। 'মেগা অত ভেবো না। আমরা এখন বন্দিদের নিয়ে পালাব। ' 'তা সম্ভব নয় ইভা।

ওরা তা ভেবে রেখেছে। আই থিংক আমরা ফাঁদে পড়েছি। কেউ একজন। ' 'ওসব পরে ভাবলেও হবে। ' 'অবশ্যই, তবে কথা হলো পরে ভাবার জন্য আমরা বেঁচে নাও থাকতে পারি।

তুমি ধরতে পারছ না ব্যাপারটা? আমাদের ওরা মারতে চায় না। ' 'কারা?' 'বাইরে তাকিয়ে দেখ, সব স্পেশাল ফোর্স। সেরা এজেন্ট সবাই। আর মারার চেষ্টা থাকলে ওরা গ্রাহক সেজে ব্যাংকে এসে অনেক আগেই শ্যুট করত। সুতরাং ওই বাস্টার্ডগুলো আমাদের রিমান্ডে নিয়ে যেতে চায়।

কথা আদায় করতে চায়। কিন্তু আমি কিছুতেই তা হতে দেব না। ' 'হোয়াটস ইওর প্ল্যান? কী ভাবছ?' 'ভাবছি অনেক কিছু। সবাই জানে প্ল্যান বির কথা। আমি সব সময় নিজের জন্য একটা প্ল্যান রেখে দিই।

প্ল্যান সি। ' মেগাট্রনের কথায় ভরসা পাচ্ছে না ইভা। তার কথা মতো ম্যাক ও রাস্টি সবার চোখে টেপ লাগিয়ে দিল। নিমো এর মধ্যে ভল্ট খুলে কয়েকটা টাকার বান্ডিল ঢোকালো পকেটে। ' মেগাট্রন কিছু বলতে গিয়েও বলল না।

সুযোগের সদ্ব্যবহার হতে দেখলে তার ভালো লাগে বলেই হয়তো। 'ইভা, আমি নিশ্চিত ওদের কেউ একজন ফাঁসিয়েছে। এটা একটা ফাঁদ। ' ইভা কিছু বলল না। প্ল্যান সি কী, তা সে জানে না।

'তুমি পালানো নিয়ে ভাবছ! হা হা। আমার ওপর ভরসা নেই তোমার?' 'আমি কাউকে সন্দেহ করছি না। তুমি অন্যভাবে ভেবে দেখো। ' চিন্তার গাড়ি দৌড়াতে থাকলে প্রয়োজনের চেয়ে কম কথা বলে মেগাট্রন। নিজের একান্ত প্ল্যান সি অনুযায়ী কাজ শুরু করে দিল সে।

ওয়াকিটকিতে নির্দেশ পেঁৗছে দিল সবার কানে কানে। 'নিমো তুমি বোর্ডরুম থেকে চার বন্দিকে আলাদা করো। আর ইভা তুমি একজন মেয়ে বন্দি খুঁজে নাও। নাইলন ব্যাগটাও নাও। ।

রাস্টি, ম্যাক তোমরা দুজন নিমোর সঙ্গে যাও। বন্দিদের পোশাক পরে নাও জলদি। যাদের পোশাক পরবে তাদের হাত-পা-মুখ যা যা পারো বেঁধে রাখবে। আর মুখোশ পরিয়ে দিতে ভুলো না। ওভার।

' 'তোমাদের পালানোর পথ নেই। তোমরা সারেন্ডার করো। আমরা ঘিরে ফেলেছি। আর ১০ মিনিট...। মাইকে পুলিশের ঘোষণা শুনে বিড়বিড় করে গালি দিল মেগাট্রন।

'আমরা পালানোর পথ খুঁজছি? গর্দভের দল। ' ১০ মিনিটের মধ্যে সব বন্দির চোখ আর হাত-পা বাঁধা হয়ে গেল। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে ধরে বাথরুমে নিয়ে গেল। পর্যায়ক্রমে পাঁচ বন্দির সঙ্গে পোশাক অদল-বদল করে ফেলল পাঁচ ডাকাত। এরপর দ্রুত অস্ত্রগুলো ফেলে দিয়ে বোর্ডরুমে ঢুকে পড়ল পাঁচ ডাকাত।

নিজেরাই নিজেদের মুখ ও হাতে টেপ মুড়ে দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল। প্ল্যান সি অনুযায়ী এখন আর তাদের ভয় নেই। একটু পর পুলিশ ঢুকল ভেতরে। কিন্তু বাকি সবার সঙ্গে সাধারণ বন্দি হয়েই কাঁদো কাঁদো চেহারায় বেরিয়ে গেল পাঁচজন। পাঁচ ঘণ্টা পর।

গোপন আস্তানায় বসে আছে পাঁচ ব্যাংক ডাকাত। মেগাট্রনের পাশে ইভা। বাকিরা সামনে। হাতে একটা চকচকে শটগান আঁকড়ে মেগাট্রন তাকাল রাস্টির দিকে। 'রাস্টি পুরোটা সময় তোমাকে বেশ অস্থির দেখাচ্ছিল।

' 'বস, আমি টাকা দেখলে স্থির থাকতে পারি না। আর ব্যাংক মানে তো টাকার খনি। কোটি কোটি টাকা। ' ভুল ধরিয়ে দিল নিমো। 'বস, অস্থির লোকগুলোর কাছে লাখ টাকা আর কোটি টাকার তফাত নেই, নাকি পুলিশের কাছে টাকার অফার পেয়েছে?' নিমোর খোঁচা গায়ে মাখল না রাস্টি।

সে আড় চোখে তাকাল ইভার দিকে। 'ওকে বুঝলাম, রাস্টি অস্থির। ম্যাককুইন তুমি গতকাল বললে কেন এ ব্যাংকটাই তোমার পছন্দ। হোয়াই?' 'আমাকে ইভা বলেছে একটু হাই-ফাই ব্যাংক পছন্দ করতে। আর বস যেটাই পছন্দ করি না কেন, ওরা তো খবর পেয়েই যেত।

' কথাটা বলে ম্যাককুইন অন্যদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে নিল। সে কাউকে সন্দেহ করছে কী করছে না তা বোঝার উপায় নেই। নিমো বলল, 'কিন্তু বস, ইভা হাই-ফাই ব্যাংক পছন্দ করে না। সে পছন্দ করে টাকা। হা হা হা।

তা না হলে ১০-২০ লাখ টাকা বাদ দিয়ে কোটি টাকার পেছনে দৌড়ায়?' চেঁচিয়ে উঠল ইভা। 'তোমরা কেউ এখানে চকোলেট কিনতে আসোনি! আর এই চান্সে একেকজন লাস ভেগাসে গিয়ে শ্যাম্পেন ওড়াতে তোমরা। বেকুবের দল!' 'হা হা হা। দেখলেন বস। দেড় শ কোটি টাকার জন্য কেমন খেপে উঠল।

বিলিয়ন হলে তো আমাকে মেরেই ফেলত। ' 'ম্যাক, তুমি পুলিশ আসার কথা টের পেলে কী করে?' 'আমার কাছে কল এসেছিল বস। আননোন কলার। ' চোখ কুঁচকে ফেলল মেগাট্রন। ম্যাক নিয়ম ভাঙল কেন বুঝতে পারল না।

সন্দেহের তীরটা টান টান করা আছে। লোড করা আছে শটগান। তবে কার বরাবর তাক করে ট্রিগারে চাপ দেবে বুঝতে পারছে না। এবার পাঠক বলুন, কে বেইমানি করেছে ব্যাংক ডাকাত মেগাট্রনের সঙ্গে? কী করে নিশ্চিত হবেন?'
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.