আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্মৃতি কথা: ফার্মগেট আনন্দ সীনেমা হলের সামনে এক ভাসমান পতিতার খপ্পরে একদিন



২০০৮ সালের চৈত্র মাসের প্রখর রৌদ্দ উপেক্ষা করে এনজিও বিষয়ক বুর‌্যোতে আমার প্রতিষ্ঠানের কাজ নিয়ে গেছি। ১ ঘণ্টার মধ্যে কাজও শেষ করেছি। মৎস্য ভবনের সামনে তেমন ভালো রেস্টুরেন্ট বা হোটেল নেই। তাই বাসে চড়ে ফার্মগেটে আনন্দ সীনেমা হলের সামনে নামলাম। টাটকা পাকা পেপে এবং এক গ্লাস সরবত খেয়ে মনটা ফ্রেস করলাম।

মনে মনে ভাবলাম কিছুক্ষণ আড্ডা দিলে ভালোই হয়। তাই দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকা কিনলাম। সেদিন দৈনিক ইত্তেফাকের মহিলা অঙ্গন বিভাগে আমার একটি ফিচার ছাপা হয়েছিলো। মনটা আনন্দে ভরে ছিলো। কারণ, ওই পাতায় লেখা প্রকাশিত হলে ৩০০ টাকা কমপক্ষে সম্মানী পাওয়া যায়।

ফার্মগেটে প্রতিদিন হাজার হাজার নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, তরুণ-তরুণী কেনাকাটা, অফিস বা ডেটিং এর জন্য আসে। সে দিন খুব একটা ভীর ছিলো না। কারণ, হলো বেলা ১২ টা বাজছিলো। ওই সময় গরমে মানুষ অস্থির থাকে। কিছু কলেজ পড়ুয়া তরুণ-তরুণীরা টেম্পু থেকে নামছে।

তাদের গা থেকে ঘাম ঝরছে বৃষ্টির পানির মতো। দেখে কষ্টও অনুভব করছি। তাকিয়ে দেখলাম পরিচিত কাউকে পাওয়া যায় কি না। কিন্তু কোন পরিচিত বন্ধু বা বান্ধবী পেলাম না। মূহুর্তে মোবাইলে কল আসলো এক বন্ধুর।

সে জানাল, কেমন আছ দোস্ত। কোথায় আছো। আমি বললাম, ফার্মগেট আনন্দ সীনেমা হলের সামনে। কি করছো, বন্ধু জিজ্ঞাসা করলো। আমি বললাম, বিশ্রাম নিচ্ছি।

সে বললো, এখানে কেন বিশ্রাম। ফার্মগেট পার্কে যাও। আমি এক পা দু' পা করে গেলাম। দেখলাম, কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা বসে ডেটিং করছে। হাসি মজাক করছে।

একে অপরের মুখে বাদাম এবং বারোভাজা তুলে দিচ্ছে। গায়ে চিমটি কাটছে। হি!হি!হি! করে হাসছে। কেউ আবার বিশ্রি করে তাকাচ্ছে। দেখলাম ঘরিতে সোয়া একটা বাজছে।

তাই আবার রওয়ানা দিলাম আনন্দ সীনেমা হলের দিকে। কারণ, সেখান থেকে বাস যোগে উত্তরা যাবো। ১৫ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছি। কিন্তু বাস পাচ্ছি না। তাই বাসের ছাউনিতে গিয়ে বসলাম।

আমার বসার পর একজন উজ্জ্বল শ্যামলা মেয়ে আসলো। দেললাম তার চোখে মুখে কষ্টের ছাপ। মনে হচ্ছে বেচার খুব কষ্টে রয়েছে। নাকি কোন সমস্যা। সাধারণত: আমি কারো সমস্যা দেখলে এগিয়ে যায়।

দেখলাম মেয়েটি আমার গা ঘিসে বসার চেষ্টা করছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম বিনীত ভাবে, আপু কি সমস্যা আপনার। আপনার বাসা কোথায়। সে বললো, খাবা। আমি বললাম, কি খাওয়াবেন।

বোকা মানুষ ঢাকায় বাস করো বুঝো না। তারপরে বললো, আমার বাড়ি তোমার বাড়ির মধ্যে। আমি হতবাক হলাম। তারপরে দেখি, আরেকজন গোলাপী কালারের বোরকা পরিহিত সুন্দরী মহিলা আসলো। সেও একই কথা বলায়, আমি ভীষণ ভয় পেলাম।

কারণ, তারা যদি টান দিয়ে আমার পকেটের খাম নিয়ে নেয়, তবে আমার চাকুরি চলে যাবে। ওটা গুরুত্বপূর্ণ কাগজ। কিছুক্ষণ পর আমি হাটতে লাগলাম। দেখি তারাও আমার পিছনে পিছনে আসছে। পরে ওরা কিছুক্ষণ পর ফিরে গেল।

যাওয়ার সময়, এক অপরকে দোষারূপ করছে মানুষ চিনিসনা। ওইতো ভদ্র ছেলে। প্রথমজন বললো, তুই না আসলে সে আমাকে খেতো। দূর থেকে দেখি দু'জন কালো জাম্বু তরুণ এসে আলাপ করতে লাগলো। এর পর দেখি তারা নিরুদ্দেশ হয়ে গেলো।

এখন মাঝে মধ্যে আনন্দ সীনেমা হলের সামন দিয়ে গ্রীণ রোড বা নিউ মার্কেট গেল ওই দুজন দেহজীবীকে দেখি। ওরা আমার দিকে তাকায়। কিন্তু কথা বলার সাহস পায় না। পরে জানলাম, পত্রিকা বিক্রেতার কাছে। ওরা দেহজীবী।

ওদের নিয়ে কেউ সীনেমা দেখলে ২ শ টাকা দিতে হয়। বাইরে যৌন চাহিদা মিটাতে হলে ৫০০ টাকা ফি দিতে হয়। আমি সে দিনে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিলাম। মনে আসলে যেমন কষ্ট পায় তেমনি হাসিও পায়। তাই আপনাদের সামনে সিয়ার করলাম।

খারাপ ভাববেন না।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.