আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কয়েনের পেছনে টাকার ছুট!



ক টাকা মূল্যমানের একটি ধাতব মুদ্রা (কয়েন) নিয়ে দেশজুড়ে হইচই শুরু হয়েছে। নানা গুজবের কারণে বিভিন্ন স্থানে বেশি দামে মুদ্রাটি কেনাবেচা হয়েছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কেনাবেচার সময় আটকও হয়েছে ১৬ জন। এই ধাতব মুদ্রার প্রধান উপাদান তামার দাম আন্তর্জাতিক বাজারে খানিকটা বেড়ে যাওয়ার খবরে একটি চক্র এ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। যদিও ইতিমধ্যে বিশ্ববাজারে তামার দাম কমতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, এক টাকার এই মুদ্রার ওজন মাত্র চার গ্রাম। তিনটি ধাতব উপাদানে তৈরি এই মুদ্রায় তামার পরিমাণ ৬৯ শতাংশ, দস্তা ৩০ শতাংশ ও টিন ১ শতাংশ। এই হিসাবে এক টাকার এই মুদ্রায় তামা আছে মাত্র ২.৭৬ গ্রাম, দস্তা ১.২০ গ্রাম ও টিন ০.০৪ গ্রাম। মুদ্রাটি তৈরিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের খরচ পড়েছিল মাত্র ৭৮ পয়সা। নানা গুজবের কারণে এই ধাতব মুদ্রা গতকাল মঙ্গলবারও ১০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রির খবর পাওয়া গেছে।

তবে এই তথ্যের মধ্যেও গুজবের প্রভাব থাকতে পারে। কারণ বেশি দামে কয়েন কিনেছেন এমন কারও স্বীকারোক্তি পুলিশের সূত্রে পাওয়া যায়নি। ঢাকার পল্লবী থেকে পুলিশ গতকাল তিনজনকে আটক করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতে তাদের ছেড়েও দিয়েছে। পল্লবী থানার পুলিশ জানিয়েছে, কয়েন কিনছেন এমন খবরের ভিত্তিতে ওই তিনজনকে আটক করা হলেও তাদের কাছে কিছু পাওয়া যায়নি। তেজগাঁও রেলস্টেশন এলাকা থেকে র‌্যাব-২ মুদ্রা কেনাবেচার অভিযোগে মোখলেস নামের একজনকে ধরে তেজগাঁও থানায় সোপর্দ করেছে।

মুদ্রা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তামার দাম যেটুকু বেড়েছিল, তাতে এই মুদ্রা থেকে যে তামা পাওয়া যাবে, তার সঙ্গে এই হুজুগে কেনাবেচা ও লাভ-লোকসানের হিসাব মিলছে না। তা ছাড়া এই মুদ্রা থেকে তামা আলাদা করার প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল এবং সাধারণ কোনো প্রক্রিয়ায় এটা সম্ভবও নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক দাসগুপ্ত অসীম কুমার প্রথম আলোকে বলেন, বেশি দামে এক টাকার মুদ্রা কেনার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। অযথা কিছু মানুষের মধ্যে হুজুগ তৈরি হয়েছে। তিনি এই মুদ্রা বেশি দামে কিনে প্রতারিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

১৯৯৮-৯৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক এই ধাতব মুদ্রাটি বাজারে ছাড়ে। ২০ কোটি পিস তৈরি করলেও এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হেফাজতে ১৬ হাজার পিস মুদ্রা রয়ে গেছে। বাকি মুদ্রা বর্তমানে বাজারে সচল আছে। ইন্টারনেট থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, কয়েক বছর ধরেই আন্তর্জাতিক বাজারে তামার দাম বাড়ছিল। কিন্তু কয়েক দিন ধরে দাম আবার কমতে শুরু করেছে।

চীন বিশ্বে তামার বড় আমদানিকারক দেশ। সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে দেশটি আমদানি কমিয়ে দেওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে তামার দাম পড়তে শুরু করেছে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্লুমবার্গ বিজনেসউইকের তথ্যমতে, গতকাল প্রতি পাউন্ড তামার দাম ছিল ৩ দশমিক ৭ ডলার। তবে দেশের বাজারে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, এই তামার মুদ্রা গলিয়ে সোনার খাদ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, পাশের দেশে পাচার হচ্ছে, জিনের বাদশার কাছে নিয়ে গেলে সোনায় রূপান্তর করা যায়, এমনকি এতে সোনার উপাদানও রয়েছে বলে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আর কিছু লোক লোভে পড়ে এই মুদ্রা বেশি দামে কিনছে।

দেশের বিভিন্ন জেলায় বিশেষ করে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও ফেনী থেকে মুদ্রা কেনাবেচার খবর পাওয়া গেছে। কেনাবেচার সময় পুলিশ কমপক্ষে ১৬ জনকে আটক করেছে। এর মধ্যে ঢাকার মিরপুরের পল্লবী থেকে আটক করা হয়েছে তিনজনকে। চট্টগ্রামে মুদ্রা কেনাবেচার সময় সাতজনকে আটক করা হয়েছে। নগর ও জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিটি মুদ্রা ৩০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম শাখার মহাব্যবস্থাপক মো. নওশাদ আলী চৌধুরী বলেন, ‘এটা স্রেফ হুজুগ। এই মুদ্রা বেশি দামে কেনার কোনো কারণ নেই। ’ এ ছাড়া কুমিল্লার লাকসাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা ও নবীনগর, ফেনী ও ফেনীর পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, নোয়াখালীর চাটখিল ও চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থানে এক টাকার ওই মুদ্রা ১০ থেকে ৩০০ টাকায় কেনাবেচার খবর পাওয়া গেছে। নবীনগর, ছাগলনাইয়া ও চাটখিলে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায় পুলিশ বেশ কিছু কয়েনসহ দুই শিশুকে আটক করেছে।

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বিভিন্ন উপজেলায় সতর্কতামূলক মাইকিং করা হয়েছে Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।