হয়তো আমি কোন কিছু সম্পর্কে নিশ্চিত নই
এই দেশ কিংবা এই ভাষা হইতে সাধুরীতি পুরোপুরি পরিত্যজ্য হইয়াছে কিনা তাহা বুঝিতে পারিতেছি না; কিন্তু নানান মাধ্যমে বাংলা ভাষার অন্যতম এই রীতিটির অনুপস্থিতি মাঝেমধ্যে বেশ পীড়াদায়ক বলিয়া মনে হয়। কিছুকাল পূর্ব পর্যন্ত দেশের দুইটি নামকরা সংবাদপত্র তাহাদের সম্পাদকীয় ভাষায় সাধু ভাষারীতি প্রয়োগ করিত, কিন্তু তাহারাও সেইটি পরিত্যাগ করিয়াছে। তাহাদের এই আনুষ্ঠানিক পরিত্যাগের মাধ্যমে বাংলা ভাষা হইতে সাধু ভাষার ব্যবহার একেবােরেই বিলুপ্ত হইয়া গেল কিনা, তাহাই এখন প্রশ্নের বিষয়, উদ্বেগের বিষয়।
কোনোই সন্দেহ নাই যে, সাধু ভাষা মানুষের মুখের ভাষা নহে। কিংবা কাব্য-কবিতায় সাধু ভাষা মাঝেমধ্যেই বেমানান লাগে।
আবার ইহাও সন্দেহ নাই যে, সাধু ভাষা অনেক ক্ষেত্রেই নিজ গুণে উদ্ভাসিত। আমরা কি বঙ্কিমচন্দ্রের লেখায় এক শক্তিশালী সাধু ভাষার সন্ধান পাই নাই? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হস্তের লেখনীতে কি সাধু ভাষার রূপ আমরা দেখিতে পাই নাই? বক্তব্য প্রকাশে দৃঢ়তায় সাধু ভাষাকে অনেক পণ্ডিত বেশ শক্তিশালী বলিয়া মনে করিতেন। কিন্তু যেই ভাষারীতির সহিত দৈনন্দিন জীবনের সম্পর্ক ক্ষীণ, সেই ভাষারীতি আস্তে আস্তে দুর্বল হইয়া পড়ে। আমাদের সাধু ভাষারীতির ক্ষেত্রেও তাহাই ঘটিয়াছে বলিয়া মনে হয়।
কিন্তু ভাষার বৈচিত্র্যে বিশ্বাসী বলিয়া এবং ব্যক্তিগতভাবে সাধু ভাষার একজন অনুরাগী হওয়াতে এই রীতিটিকে কিছুতেই ভুলিতে পারি না।
কিয়ৎকাল পূর্বে যখন মাঝেমধ্যে ‘আমার ব্লগ’ নামক ব্লগ সাইটখানাটিতে লিখিতাম, তখন সেইখানে ঘোষণা দিয়াছিলাম যে, সেইখানে শুধু সাধু ভাষারীতিতেই লিখিব। কিন্তু নানান কাজের চাপে, মূল নিকে সক্রিয়া হওয়াতে এবং ব্লগটি পছন্দ না হওয়াতে সেইখানে লেখালেখি আর চালাইয়া যাইতে পারি নাই। সামহোয়্যারে আমি লিখিতেছি অনেক দিন ধরিয়া এবং আমার ব্লগ লেখালেখির শুরুও এইখান হইতেই। সেই হেতু সিদ্ধান্ত লইয়াছি যে, এখন থেকে সামহোয়্যার ব্লগে যাহা লিখিব, তাহার সবই হবে সাধু ভাষারীতিতে লেখা। এমনকি এখন হইতে মন্তব্যও করিব সাধু ভাষায়।
এই ব্লগে আমার কিছু সুহৃদ রয়েছেন, রয়েছেন বিদগ্ধ পাঠক-পাঠিকাও; যাহাদের নিকট হইতে আমার একটি প্রত্যাশা রহিয়াছে। প্রত্যাশাটা এই- সাধু ভাষায় লিখিতে গিয়া ভাষারীতিতে কোথাও যদি ভুল করিয়া থাকি, তাহলে তাঁহারা যেন ভুলগুলো ধরাইয়া দেন। আমরা দৈনন্দিন জীবনে লেখালেখিতে নানান ভুল করিয়া থাকি, সাধু ভাষায় চর্চা না থাকায় এইখানে ভুলের মাত্রা আরেকটু বেশি হইবে- তাহাই স্বাভাবিক। আপনাদের সহযোগিতা এই ভুল শুধরাইতে সহায়তা করিবে। আরেকটি বিষয় এইখানে বলিয়া রাখা ভালো- আমি কেবল ক্রিয়াপদে সাধু রীতি প্রয়োগ করিতে ইচ্ছুক নহি, বরং ভাষার সবক্ষেত্রেই সাধুরীতি প্রয়োগ করিতে চাহি।
‘ঝড় উঠিয়াছে’ না বলিয়া ‘ঝটিকা উঠিয়াছে’ বলিতেই এখানে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করিব। সেইহেতু ক্রিয়াপদ ছাড়াও অন্য কোথাও যদি সাধুরীতির অন্যথা ঘটিতেছে বলিয়া আপনাদের কাছে মনে হয়, তাহা হইলে তাহা জানাইলে সেইরূপে শুধরাইয়া লইব। এই লেখাখানি পড়িবার জন্য এবং ভবিষ্যতে সহায়তা করিবার আপনাদের সকলকে আগাম ধন্যবাদ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।