আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আপনার বাবাকে বাবা বলার আগে আপনার বাবা-মায়ের বিয়ের কাবিননামা দেখেছেন যে সব ঠিক আছে কিনা?

শ্বাস-প্রশ্বাসে আছে স্বাধীনতা, চিন্তায় মানবতা... আপনার বাবাকে বাবা বলার আগে আপনার বাবা-মায়ের বিয়ের কাবিননামা দেখেছেন যে সব ঠিক আছে কিনা? কখনও কি কোন স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে দেখেছেন- স্কুলের লিগ্যাল পেপারস এবং শিক্ষকদের সার্টিফিকেট ঠিক আছে কিনা? বাসে ওঠার আগে দেখতে চেয়েছেন ড্রাইভারের ড্রাইভিং লাইসেন্স? ডি.পি.এস. করার আগে ব্যাঙ্কের লাইসেন্স? কোন প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর আবেদন করার আগে ঐ প্রতিষ্ঠানের লিগ্যাল কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা জেনেছেন? সবার জীবনের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কারণ এমন ফাদে আপনিও পড়তে পারেন। তাই প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন এবং আপনার মতামত জানাবেন। একটু ভেবে দেখুন- আর ভেবে দেখার মতই বিষয়। কখনও কি আপনার বাবাকে বাবা বলার আগে আপনার বাবা-মায়ের বিয়ের কাবিননামা দেখেছেন যে সব ঠিক আছে কিনা? এই প্রশ্ন কাউকে যদি করেন তাহলে হয়তো আপনাকে শুধু উত্তরই দেবে না উত্তর সহ কিছু উত্তম-মাধ্যম ও দেয়ার সম্ভাবনা আছে! আর সরল উত্তর পেলেও সেটা আপনার কপালের জোর! কখনও কি কোন স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে দেখেছেন- স্কুলের লিগ্যাল পেপারস এবং শিক্ষকদের সার্টিফিকেট ঠিক আছে কিনা? বাসে ওঠার আগে দেখতে চেয়েছেন ড্রাইভারের ড্রাইভিং লাইসেন্স? ডি.পি.এস. করার আগে ব্যাঙ্কের লাইসেন্স? কোন প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর আবেদন করার আগে ঐ প্রতিষ্ঠানের লিগ্যাল কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা জেনেছেন? আর জানতে চাইলে আপনার চাকুরী হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? বাংলাদেশের কয়জনই বা তা দেখে? হয়তো আমার এই অদ্ভুদ প্রশ্ন শুনে আপনি অবাক হচ্ছেন কিন্তু আপনি জানেন কি এই অতি সাধারণ প্রশ্নগুলো আপনার জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে? হ্যাঁ, আমিও আপনার সাথে একমত- যদিও প্রত্যেকটা প্রশ্ন খুবই ছেলেমানুষি কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ! আমি যদি একজন সন্তান হিসেবে আমার বাবা-মায়ের ওপর এতটুকু বিশ্বাস না রাখতে পারি তাহলে আমি মানুষের কাতারে পড়ি কিনা সন্দেহ। ঠিক তেমনি লেখা পড়া করতে গেলে শিক্ষকদের ওপর, বাসে উঠলে ড্রাইভারের ওপর, ডি.পি.এস. করতে গেলে ব্যাঙ্কের ওপর, চাকুরী করতে গেলে সরকারী পরিচালক প্রসাশনের প্রতি বিশ্বাস রাখা দেশের নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব।

আর এসব জায়গা ঠিক রাখাটা আপনার-আমার-আমজনতার কাজ নয়। যেমনি ভাবে আপনার বাবা-মার বিয়ের কাবিন নামা ঠিক করা আপনার দ্বারা সম্ভব নয়... এবার আসি আসল কথায়। মাঝে মাঝেই দেখতে পাই আমাদের (সবদার ডাক্তার) সরকার বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে দূর্নীতির অভিযোগে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ বা স্থগিত করে দেয়। কিন্তু একটি প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দিলে কি শুধু ঐ প্রতিষ্ঠানটাই বন্ধ হয় নাকি ঐ প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত হাজার হাজার বা লাখ লাখ মানুষের রুটি রোজগারও বন্ধ হয়? সরকারকে "সবদার ডাক্তার" বলার কারণ পরে ব্যাখ্যা করছি। এখন সেই প্রতিষ্ঠান আসলেই দূর্নীতি করেছে কিনা সেটা প্রমান সাপেক্ষ ব্যাপার।

কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো কোন গোডাউনের দারোয়ান থাকা সত্যেও ঐ গোডাউনে চুরি হলে এটার দায় শুধু চোরের উপরই পরে না, দারোয়ানের ওপরও পরে। এবং স্বভাবতইঃ চোরের আগে দারোয়ানের বিচার করা হয়; সেটাই উচিৎ! প্রতিষ্ঠান দূর্নীতি করে আর "সবদার ডাক্তার" সরকার, যার প্রতি বছর বা মাসে এ সমস্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ড যাচাই-বাছাই করার দায়িত্ব ছিল, সে ঘুমায়! আর হঠাৎ একদিন কোন মিডিয়া যখন দূর্নীতির অভিযোগ নিয়ে রিপোর্ট করে তখন সরকারও সুরে সুর মিলিয়ে "চোর চোর" বলে চিৎকার শুরু করে। ভাবতে অবাক লাগে সম্প্রতি ডেসটিনি সহ যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকার দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তারা কিন্তু একদিনে কেউ এতো টাকার দূর্নীতি করেনি। (আদৌ দূর্নীতি করেছে কিনা- সেটাই প্রমান হয় নি যদিও! কারণ, নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত এর আওতাভুক্ত! তবু ধরে নিলাম দূর্নীতি হয়েছে। কিন্তু সেটাও তো) দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ধরে করেছে।

হঠাৎ করে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক, দুদক, এন.বি.আর. এর কাছে এমন কি ওহি নাজিল হলো যে এতো বছরের দূর্নীতি সব একদিনে ধরা পরে গেল! আর সাথে সাথে সেটার সমাধানের চেষ্টা না করে "সবদার ডাক্তার"রা সব এমন ভাবে চিকিৎসা শুরু করলো যে রুগিকেই আর বাচানো যায় না! আর এই চিকিৎসার শিরোনামটা থাকে খুব আকর্ষনীয়! বলা হয়- "প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, গ্রাহক, ক্রেতা পরিবেশকদের স্বার্থ রক্ষা করার স্বার্থে..." যদিও বাস্তবতা পুরোই উল্টো! ডেসটিনির ক্রেতা পরিবেশকদের স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের যে ভূমিকা তাতে ছোট বেলার "সবদার ডাক্তার" কবিতাটা মনে পড়ে যায় বার বার। ডেসটিনির বিরুদ্ধে অভিযোগটা ছিল কয়েকটি মিডিয়ার। দুদক, বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক বা এন.বি.আর. এর নয়। (আর মিডিয়া সম্পর্কে কি বলবো? বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ডা. জাকির নায়েক তার একটা লেকচারে বলেছেন- "বর্তমান বিশ্বের বেশির ভাগ মিডিয়া ভিলেনকে নায়ক আর নায়ককে ভিলেন, সাদাকে কালো আর কালোকে সাদা করছে!" তার কিছু প্রমাণও তিনি তুলে ধরেন... সে অনেক কথা। এই সব হলুদ সাংবাদিকতা নিয়ে আরেকদিন আলোচনা করা যাবে) তার পরের ঘটনা সবার জানা।

দুদকের দীর্ঘ তদন্তে জানা গেল ডেসটিনি গ্রুপের ৩৭টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র ২টি (ট্রি-প্ল্যান্টেশন ও মাল্টিপারপাস) কোম্পানির বিরুদ্ধেই শুধু অভিযোগ। কিন্তু "সবদার ডাক্তার চিকিৎসা" পদ্ধতি অনুসারে জব্দ করা হলো সব ব্যাঙ্ক একাউন্ট! জব্দ করা হলো সব সম্পদ (তবুও অভিযোগ- টাকা পাচার!) কি আজব বিচার! আবার বলা হচ্ছে- "ক্রেতা পরিবেশকদের স্বার্থ রক্ষা করার স্বার্থে...!!!" এ যেন গাছের গোড়া কেটে ডাল-পালার চিকিৎসা হচ্ছে! ডেসটিনি যদি গাছ হয় তবে এর ৪৫লক্ষ ক্রেতা পরিবেশক তার ডাল-পালা। পদ্মা সেতুর দূর্নীতির ব্যাপারে দুদক চেয়ারম্যান একবার বললেন- "তদন্ত চলবে আর পদ্মা সেতুর কাজও এগিয়ে যাবে। " তাহলে ডেসটিনির ব্যাপারে কি এটা হতে পারতো না? দুদকের চেয়ারম্যান-এর প্রতি আমার প্রশ্ন রইল। (যদিও জানি উত্তর নাই!) শুরুর প্রসঙ্গে আসা যাক।

ধরুন, কিছু ছাত্র একটা বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স করার পর জানতে পারলো- তাদের প্রতিষ্ঠানটি ভুয়া ছিল! কাজেই তাদের সার্টিফিকেটগুলোও ভুয়া! তখন এই ছাত্রগুলোর কি হবে? "একটি প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর সরকারের চোখের সামনে দিয়ে চলছে- সরকার কিছুই বলছে না" এটাই তো ঐ ছাত্রের জন্য বড় ডকুমেন্টস! এই ছাত্রগুলোর দায়িত্ব কে নেবে? আমাদের একজন শিক্ষক ছিলেন যিনি পরীক্ষার খাতায় পৃষ্ঠা গুনে নাম্বার দিতেন। আমরাও ভাল লেখার চেয়ে পৃষ্ঠা ভরাতে বেশী আগ্রহী হলাম। কিন্তু বোর্ড পরীক্ষায় গিয়ে যখন ধরা খেলাম তখন কিন্তু সব দোষ আমাদেরই পড়লো! এখানে কি আমাদের শিক্ষকের কোন দোষ ছিল না? আরেকটা গল্প বলি- এক লোক অফিসিয়াল কাজে বিদেশ যাবার জন্য বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বাসার নাইট গার্ড বললঃ স্যার, শুনলাম আপনি আজ বিদেশ যাচ্ছেন। কিন্তু আমি কাল রাতে স্বপ্নে দেখলাম আপনি যে বিমানে যাবেন সেটা এক্সিডেন্ট করছে! ভদ্রলোক তার কথা শুনে সেদিন আর কোথাও গেল না এবং সেদিন খবরে দেখলেন সত্যি সত্যি তার ফ্লাইট-এর বিমানটি এক্সিডেন্ট করেছে! ভদ্রলোক তখন তার নাইটগার্ডকে ডেকে ধন্যবাদ জানালেন এবং সেই সাথে তাকে একটা রিজাইন লেটার ধরিয়ে দিলেন! কারণ, নাইট গার্ডের কাজ রাতে বাড়ি পাহারা দেয়া- ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখা নয়! তাই আজ ডেসটিনি যদি দূর্নীতি করে থাকে তবে তাকে দূর্নীতি করার সুযোগ দেয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিচার হয়া উচিৎ আগে! কারণ, আজ শুধু ডেসটিনি নয়, এমন আরও অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা দিনের পর দিন ব্যাবসা করে যাচ্ছে। আর এগুলো দেখে যখন কোন নিরীহ মানুষ এর সাথে জড়িয়ে পড়ছে তখন তাকে "লোভী-চোর-বাটপার-বোকা" ইত্যাদি নানান বিশেষণে আখ্যায়িত করা হচ্ছে যেন সকল দোষ এর একারই! তাহলে মানুষ কাকে বিশ্বাস করবে? এভাবে এক সময় মানুষের মধ্য থেকে যদি বিশ্বাস জিনিসটাই উঠে যায় তখন সমাজে কি ভয়ঙ্কর চিত্র তৈরী হবে ভাবুন একবার! কাজেই যারা আজ এই নিরীহ মানুষগুলোর ওপর এই অন্যায় দোষারোপ ও নিদারুন শাস্তি ভোগ দেখে মজা নিচ্ছেন তারা প্রস্তুত থাকুন... কাল আপনার পালা! যেখানে জাতি স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডের কলঙ্ক এখনও মুছতে পারেনি; সেখানে স্বধীনতার পর আজ নতুন করে এতোগুলো (৪৫লাখ মানুষের পরিবার) মানুষের ওপর এই মানবধিকার লঙ্ঘনের কলঙ্ক কবে মুছবে? কিভাবে মুছবে? যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল সে ক্ষতি পূরণই বা করবে কি দিয়ে??? সরকারের কি সেদিকে কোন খেয়াল আছে? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.