সমাজে ধর্মান্ধতা থেকে নাস্তিকতা ঢের ভাল !
জানি এখনই আমাকে অনেকে নাস্তিক বলে গালিগালাজ শুরু করে দিবে। দিতে পারেন তাতে আমার কোনো ক্ষতি নাই তবে পক্ষান্তরে আপনি নিজেই নিজেকে ধর্মান্ধ হিসেবে প্রতিপাদন করবেন আপনারই কাছে।
আমি নাস্তিকতা মোটেও সমর্থন করি না। কোনো মুসলমানই তা করে না এবং বরং এর উল্টোটা করে। আর সেটা হল ঘৃনা।
আমিও ঘৃনা করি যখন নাস্তিক অপরের বিশ্বাস নিয়ে গালিগালাজ করে। কিন্তু প্রতুত্তরে তাদের গালিগালাজ করি না কারণ আল্লাহ তা করতে বলেন নাই। আল্লাহ বলেছেন-
(হে মুহাম্মদ (দঃ) তুমি সহনশীল (ক্ষমাশীল) হও, সৎকাজের আদেশ দাও ও মুর্খদের এড়িয়ে চলো।
সুরা - আল আরাফ , আয়াত ১৯৯
দয়াময় আল্লাহর বান্দা তো হচ্ছে তারা যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং যখন জাহেলরা (অজ্ঞরা) তাদের (অশালীন ভাষায়) সম্বোধন করে, তারা প্রশান্তভাবে তাদের সালাম দিয়ে উত্তর দেয়
সুরা আল ফোরকান - আয়াত ৬৩
“‘তারা আল্লাহ তায়ালার বদলে যাদের ডাকে, তাদের তোমরা কখনো গালি দিয়ো না, নইলে তারাও শত্র“তার কারণে না জেনে আল্লাহ তায়ালাকেও গালি দেবে, আমি প্রত্যেক জাতির কাছেই তাদের কার্যকলাপ সুশোভনীয় করে রেখেছি, অতঃপর সবাইকে একদিন তার মালিকের কাছে ফিরে যেতে হবে, তারপর তিনি তাদের বলে দেবেন, তারা দুনিয়ার জীবনে কে কী কাজ করে এসেছে’ (সূরা আল আনআম-১০৮)। ”
বরং আমি তাদের সাথে যুক্তি তর্ক করি যতটুকু আমার জ্ঞান আছে এবং সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করি না।
কারণ আল্লাহ বলেছেন -
হে নবী, আপনি মানুষকে আল্লাহর পথে প্রজ্ঞা ও সদুপদেশ দিয়ে আহ্বান করুন েএভং কথনো তর্কে যেতে হলে তাদের সংগে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট বিনয়ের সাথে যুক্তি তর্ক করুন, আপনার মালিক (আল্লাহ) ভালো জানেন কে বিপথগামী ও যে হেদায়েতের পথে রয়েছে তার সম্পর্কে তিনি সবিশেষ অবহিত আছেন
সুরা আন-নাহল, আয়াত ১২৫
একইভাবে কোনো ন্যায়বিচার এর সময় যদি আমার পাশে কোনো নাস্তিক দাড়ায় তাহলে আমি সেই ন্যায়বিচার থেকে সরে আসব না যেরকম শিবিরা অপপ্রচার চালাচ্ছে শাহবাগের আন্দোলন থেকে সরে আসার প্রতি। কারণ আল্লাহ বলেছেন-
কোন সম্প্রদায়ের শত্রুতা যেন তোমাদের কখনো প্ররোচিত না করে ন্যায়বিচার বর্জন করতে । ন্যায়বিচার করবে । ন্যায়বিচার করাই তাকওয়ার নিকটতম ( সুরা মায়িদা ; আয়াত ৮ ) ”
“‘যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং কখনো তোমাদেরকে তোমাদের ঘরবাড়ি থেকে বিতারিত করেনি তাদের প্রতি দয়া দেখাতে ও ন্যায় আচরণ করতে আল্লাহ তায়ালা কখনো নিষেধ করেনি, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন’ (সূরা আল মোমতাহেনা-৮)
কিন্তু প্রশ্ন হল আমি কেন বললাম সমাজে ধর্মান্ধতা থেকে নাস্তিকতা ভাল ?
একজন নাস্তিকের ব্লগ কয়জন পড়ে? ১০ জন বা ২০ জন বা উর্দ্ধে ১০০ জন। তাতে কি বা আসে যায় সমাজের ধর্মীয় মূল্যবোধের? আর যখন সেই নাস্তিকতা কে এক শ্রেনীর সুবিধাভোগী মিডিয়া ফলাও করে এবং পারলে আরো বানিয়ে প্রচার করে (যেমন করেচে আমার দেশ পত্রিকা এবং জামাতি ছাগু ) আর এর ফলে ধর্মান্ধ মুসল্লীরা নাশকতা করতে থাকে তখন কাদের দোষ আপনি বেশি দিবেন ? নাস্তিকতার ব্লগে ইফেক্ট কতটুকু আর ধর্মান্ধতার ইফেক্ট কতটুকু তা তো সবাই দেখলে শুক্রবার।
মসজিদে নামাজের গালিচায় আগুন দিল, ধর্মীয় গ্রন্থ পুড়িয়ে দিল, ককটেল পকেটে নিয়ে নামাজ পড়ল, মসজিদের ভিতর ইট জড়ো করে মসজিদ কে রণক্ষেত্র বানাইল, পতাকা পুড়িয়ে দিল, শহীদ মিনার ভাঙ্গল আর অথচ তারা ভুলেই গেল যে "ফিতনা ফ্যাসাদ হত্যার চেয়ে জঘন্য". তারা ভুলেই গেল যে "দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ। " আর এভাবেই ছাগুরা সাধারণ মুসল্লিদের ব্যবহার করে বোকা বানায় ছেড়ে দিল !
তাই আমি বলব ধর্মান্ধতা সমাজের অনেক বড় শত্রু।
এবার আসি আবার ব্লগার রাজীব হত্যার পর কিছু বিষয় নিয়ে। এ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে তাই বেশি কিছু বলব না। বলব শুধু যখন দেখি অনেক আন্দোলনকারী রাজিবের জানাজা পড়াতে তারা শাহবাগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
তাদের জন্য আফসোস হয় এবং দুঃখ হচ্ছে এটা বলতে যে আপনারাও তবে তাদের মতই ধর্মান্ধতার পরিচয় দিলেন।
একটিবার যদি ইতিবাচক ভাবে ভাবেন তাহলে বুঝতে পারবেন। আরে ভাই কয়টা নাস্তিকের সারা জনমের ভাগ্য হয় যে জানাজা পড়ানোর ? তাও এত মানুষের? ১ বার না বরং ২ বার ? এটাকে এভাবে দেখুন যে হয়ত এটা আল্লাহর একটা নিদর্শন নাস্তিকদের জন্য। এটা হয়ত ছিল তার তাকদীরে? তা না হলে একটা নাস্তিকের জানাজায় কিভাবে এত মানুষ হয় যদি আল্লাহর ইশারা না থাকত ? হয়ত সে নাস্তিক ছিল কিন্তু তাকে নির্মম ভাবে ৭ বার কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে আর তাই হত আল্লাহ তার তকদিরে এটা রেখেছে। নিশ্চই আল্লাস সবিশেষ অবহিত।
আমি জানি না কিন্তু এটা নিয়ে যারা বিতর্ক করে আন্দোলন থেকে সরে এল তাদের সিদ্ধান্ত এবং চিন্তায় গলদ আছে।
পবিত্র কুরানে আল্লাহ বলেছেন-
"যদি কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করা হয় তাহলে সেই ব্যক্তির সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয় এবং তার পূর্ববর্তী গুনাহ সমূহ হত্যাকারীর উপরে বর্তাবে এবং নিশ্চই সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে। "
সবই আল্লাহর ইচ্ছা। আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুক যদি আমি ভুল কিছু বলি কিন্তু এতটুকু জানি যে ধর্মান্ধ হয়ে দেশের স্বার্থে যে আন্দোলনে নেমেছি তা শুধু একজন নাস্তিকের জানাজা পড়ানোতে ভেস্তে যেতে পারে না।
আর একটি ব্যাপার অনেকে বলেন।
এটা আরো বড় ধর্মান্ধতার পরিচয় বলে আমি মনে করি। অনেকে বলেছেন- হিন্দু , বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নিয়ে কিভাবে জানাজা হয় ?
আমি জানি না সেই সমাবেশে কোনো হিন্দু বা অন্য ধর্মের কেউ জানাযায় দাড়িয়েছিল কিনা। কিন্তু যদি দাড়িয়েও থাকে তাহলে তো সেটা আমাদের মুসলমানদের জন্য গর্ব! এভাবে কেন দেখেন না আপনারা যে একটা হিন্দু আল্লাহর কাছে প্রাথর্না করছে , সে তো আর জানত তা যে মৃত ব্যক্তি আস্তিক না নাস্তিক। সেসব চিন্তা না করে সে অন্য ধর্মের হয়েও মুসলমানের সাথে নামাজ পড়তে দাড়িয়ে গেছে। আর এটা নিয়ে ধর্মান্ধরা কাদা মারামারি করে।
হায়রে মুসলমান ! অন্য ধর্মের কেউ তোমার কুরআন পড়লে, কথায় কথায় ইনশাল্লাহ আর ভগবান না বলে আল্লাহ বললে তোমাদের ভাল লাগে অথচ জানাজায় দাড়াইলে তোমাদের যত আপত্তি ! আসলে ছাগুদের খপ্পরে পড়ে শেষ পর্যন্ত নিজের মগজটাই তোমাদের ছাগুদের মতই হয়ে গেছে আর তাই তাদের প্ররোচনায় ফাদে পা দিলা !
আর পুরুষের সাথে নাকি নারী ছিল তাই জানাজা হবে না !! নারী তো আর জানাজায় অংশগ্রহণ করে নাই, তাদের উপস্থিতি ছিল সেই ময়দানে আর এতে জানাজা হবে না এটা কোথায় লিখা আছে শুনি ? মন গড়া ফতোয়া কাদের সিদ্দিকীর মত? ওই লোক তো এক মুখে দু'কথা বলে। এই লোকের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এপিক যে কথাটি সাজে তা হল: ( 'একজন রাজাকার সবসময়ই রাজাকার কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধা চিরজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয়'- হুমায়ুন আজাদ)
আর একটি ব্যাপার বুঝলাম না ! সবাই বলছেন ৩ তাকবির ৩ তাকবির ! সবাই কি কাদের সিদ্দিকীর কথায় কান দিয়ে বসে আছে নাকি ? আরে ভাই আজকাল ফেসবুকে কতকিছু অপপ্রচারিত হয়। আমাদের উচিত যাচাই করে দেখা। এ লিংক এ দেখুন কয় তাকবির দিল !
https://www.youtube.com/watch?v=CZGXOkHmfE0
যে জানাজা পড়িয়েছে সে একজন ড: এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম। তার থেকে কি ছাগুদের জ্ঞান বেশি হয়ে গিয়েছে ? না আমার আপনার ? তাই যারা এসব কে ইস্যু বানিয়ে আন্দোলন পন্ড করতে চাইছে বা সরে এসেছে তারা শিবির এর অপপ্রচারে পা দিয়েয়্ছে।
তাই সবশেষে বলব ধর্মান্ধতা নিপাত যাক কারণ ধর্মান্ধতা সমাজে নাস্তিকতার জন্ম দেয়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।