জলিল স্যার ইংরেজীর ক্লাশ নিচ্ছেন হঠাৎ রীতার মোবাইলে একটি কল ভেসে আসলো মহুর্তের মধ্যে রীতা হাউ মাও করে কাঁদতে লাগলো। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই সে চেয়ার থেকে পড়ে গেল। ফয়সালের পাশে রীতা বসাছিল। ফয়সাল তাকে উঠালো এবং রীতা কি হয়েছে! রীতা কি হয়েছে! রীতা অস্পষ্ট কন্ঠে বললো বাবা হার্ট এ্যাটাক করেছে এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজে আনার পর ডাক্তার তাঁকে মৃত ঘোষণা করেছে। ফয়সাল আর কোন কথা না বলে একটি হলুদ টেক্সি ভাড়া করে রীতাকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে গেল এবং রীতার পিতার লাশ নিয়ে বাসায় পৌঁছ করে রীতাকে সন্তনা দিয়ে গভীর রাতে বাসায় ফিরলো।
রীতার মা ৭ (সাত) বছর আগে ক্যান্সারে আক্রন্ত হয়ে অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। তাদের সংসারে একমাত্র কর্মম ছিল পিতা। তিনি একটি সরকারী অফিসে পিয়ন হিসাবে কর্মরত ছিলেন। এই সামান্য আয় দিয়েই রীতাদের সংসারের খরচ চলতো। রীতারা ৭ (সাত) বোন।
কোন ভাই নেই। রীতা সবাইর বড়। এখন তাদের কি হবে। এই ভাবতে ভাবতে ফয়সাল ঐ দিন আর রাত্রে ঘুমাতে পারেনি। ফয়সালের পিতা জয়েন্ট সেক্রেটারী তাদের অর্থের কোন অভাব নেই।
রীতা ভাল ছাত্রী। তাই ফয়সাল সিদ্ধান্ত নিল তাকে সংসার থেকে যে টাকা পয়সা দেয় সে টাকা থেকে বাঁছিয়ে রীতার পড়া লেখার খরচ ও তার সংসারের খরচ চালাবে সে। তার সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরের দিন রীতাদের বাড়ীতে ফয়সাল গেল এবং রীতাকে তার পরিকল্পার কথা জানালো। রীতা আবেগে আনন্দিত হয়ে বললো ফয়সাল ভাই তাহলে আমি পড়তে পারবো? আমি আগামিকাল থেকে তাহলে ইউনির্ভাসিটিতে যাবো? ফয়সাল বললো হ্যাঁ অবশ্যই যাবে। রীতা নিয়মিত কাশ করছে এবং মাষ্টার্স ফাইনাল পরীায় জি.পি.এ ৩.৯৫ পেয়েছে।
ফয়সালও ভাল করেছে সে জি.পি.এ ৩.৮০ পেয়েছে। ফলাফল নিয়ে দুই জনই ক্যাম্পাস থেকে বের হচ্ছে। হঠাৎ রীতা বললো ফয়সাল আগামী কাল বিকালে ধানমন্ডির লেক পাড়ে আসবে তোমার সাথে একটু কথা আছে। ফয়সাল হ্যাঁ আসবো।
বিকাল ৫টায় ফয়সাল আসলো রীতাও যথা সময়ে আসলো।
দুই জনই কথা বলছে রীতা বললো চলো আজ চাইনিজ খাবো। ফয়সাল বললো চলো যাই। দুই জনই চাইনি খেয়ে বের হলো। রীতা বললো একটি থ্রি পিছ কনবো। ফয়সাল বললো হ্যাঁ ঠিক আছে।
দোকানে গিয়ে রীতার ২ (দুই)টি থ্রি পিছ পছন্দ হলো প্রতির দাম ৩২০০/-ফয়সাল দুইটি কিনে দিলো এবং রীতার অন্যান্য সকল বোনের জন্য একটি করে থ্রি পিছ কিনে দিলো। মার্কেট থেকে বের হতেই রীতা বললো আমার এক জোড়া সেন্ডেল কিনলে ভাল হয় ফয়সাল সাথে সাথেই ক্রয় করে দিল। ইতো মধ্যে ফয়সালের টাকা শেষ বাবার জন্য ঔষধ নিয়ে যেতে বলেছে শুধুমাত্র ঔষধ ক্রয় করার মত টাকা আছে। এমন সময় রীতা ১ (এক) প্যাকেট চকলেট ক্রয় করতে চাইলে ফয়সাল বললো রীতা টাকা নেই পরে ক্রয় করে দিবো। রীতা বললো দেখি দেখি তোমার মানি ব্যাগ দেখি, ব্যাগ খুলে দেখলো ৩০০/- আছে।
ফয়সাল বললো বাবার জন্য ঔষধ নিতে হবে তাই এই ৩০০/- রেখেছি। মহুর্তে মধ্যে রীতা রেগে গিয়ে বলতে লাগলো হ্যাঁ বুঝতে পেরেছি বুঝতে পেরেছি আর বলতে হবে আমাকে বুঝাতে হবে না আমি আর এখন ছোট নয়, মিথ্যা বলে লাভ নেই আমি তোমার কোন কিছু চাই না নিয়ে যাও তোমার জিনিস এই বলে সব কিছু রাস্তায় পেলে দিয়ে দ্রুত রীতা চলে গেলো। ফয়সার হতবম্ব। তারপরও নিজের রাগকে সামলিয়ে পিছু পিছু গেলো। রীতাকে আর খুঁজে পাওয়া গেলো না।
অগত্যা ফয়সাল রীতার বাসয় গেলো এবং সব কিছু বাসায় পৌঁছ করে দিয়ে আসলো আর বললো রীতা তুমি অহেতুক আমাকে ভুল বুঝো না।
ফয়সাল বাসায় আসতে আসতে ভাবলো রীতা এমন করলো কেন। তাহলে কি রীতা এতো খারাপ। আবার ফয়সাল নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিলো না ও মেয়ে মানুষ হয়তবা আমার উপর অধিক অধিকার খাটাতে গিয়ে এমন করেছে।
রীতাকে ফয়সালের ভাল লাগে তাই সে তাকে স্ত্রী হিসাবে ঘরে আনার সিদ্ধান্ত নিল।
কিন্তু ফয়সালের ফ্যামিলি কোন অবস্থায় তা মেনে নিবে না। এই ভেবে সে একবার আগায় আবার পিছায় কিন্তু আবেগ ও প্রেম কোন কিছুই মানে না।
সে দিন ছিল শুক্রবার সকাল ১১টায় ফয়সাল রীতাদের বাসায় গেল এবং তাকে স্ত্রীর মর্যাদায় ঘরে তোলার প্রস্তাব দিলে রীতা মহা খুশি। যে কথা সে কাজ দুই জনই কাজী অফিসে গিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করলো। ইতিমধ্যে ফয়সালের ফ্যামিলিতে জানাজানি হয়ে গেলে ফয়সালে মা খবর শুনে বহুশ হয়ে যায়।
ফয়সালের মামা রফিক সেও প্রেম করে বিয়ে করায় এই বিষয়টি তিনি খুব ভালভাবে মধ্যস্ততা করে ফয়সালের মা ও বাাবকে বুঝিয়ে তাদেরকে বাড়ীতে উঠার সুযোগ করে দেয়।
ফয়সালদের জয়েন্ট ফ্যামেলি। তাঁর বড় ভাই ও ভাবী ও তাঁদের এক ছেলে, এক মেয়ে এবং বাবা ও মাকে নিয়ে তাদের সংসার। বাবা জয়েন্ট সেক্রেটারী বড় ভাই ডাক্তর ভাবী কলেজের শিকিা। ফয়সালের কোন চাকুরী নেই, স্ত্রী রীতা ও বাসায় থাকে বিধায় তাকে বাসার কিছু কাজ কর্ম করতে হয়।
বড় ভাইর ছেলে জামিলের জন্মদিন উপলে বাড়ীতে অনেক আয়োজন, অনেক মেহমান সকলেই খুশি। ফয়সাল তার জন্ম দিন উপলে একটি দামি খেলনা নিয়ে আসলো। কিন্তু বাসায় এসে দেখে রীতা তার কে মন খারাপ করে বসে আছে। ফয়সাল ঘরে ডুকেই কি হয়েছে রীতা কি হবে তোমাদের ঘরের কাজে মেয়ে আমি। তুমি আমাকে স্ত্রীর মর্জাদা দিয়ে ঘরে তোলোনি বরং কাজের মেয়ে হিসাবে ঘরে এনেছো, আমি এই সংসারের কেউ না, সকাল থেকে আমি কাজ করে যাচ্ছি আর তোমার ভাবী মেম সাহেবতো নতুন বউ সেজে ছেলকে নিয়ে ঘুরা ফেরা করছে।
আমি এই সংসারে থাকবো না, তুমি থাকো তোমার সংসার নিয়ে ইত্যাদি বলতে বলতে হাউ মাও করে কাঁদছে। ফয়সাল বললো রীতা তুমি কাঁদছো কেন আমি দেখছি কি হয়েছে। হ্যাঁ তুমি বেশ দেখেছো দেখতে দেখতে আমার জীবনটা ধ্বংস করে দিয়েছো, তোমার কারণে আজ আমার এই করুণ পরিনতি তুমি কোন দিন আমার হৃদয়ে কোন অনুভূতিকে দাম দাও নাই, তুমি আমার কোন কথারই পাত্তা দাও না বরং আমি এই সংসারে শুধু খেটে গেলাল আমার কোন অধিকার এই সংসারে নেই। আমি চলে গেলাম তুমি থাকো তোমার ভাবী ও মা বাবাকে নিয়ে। এই বলে রীতা পরনে থাকা পুরান কাপড় নিয়ে ঘর থেকে বের হতে উদ্যোত হয়।
ফয়সাল তাকে বুকে ঝড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে এবং বলে রীতা মনে রেখে সে দিনের কথা যখন কাশে তোমার একটি মোবাইল ফোনে তোমার পিতার মৃত্যুর খবর আসলো আর আমি তোমাকে সাথে নিয়ে গেলাম। বিশ্বাস করো রীতা তোমাদের পরিবারের সে অসায়ত্বকে আমি আমার হৃদয় থেকে উপলব্দি করে তোমাকে নয় শুধু তোমার পরিবারকে আমি ভাল বাসতে থাকি এবং আমার এই ভাল বাসা কোন কৃত্রিম ছিল না। আমি তোমাকেও হৃদয়ে অনুভূতি থেকে ভালবেসেছি বিধায় তুমি আমার ঘরে একজন সত্যিকারের স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে তোমাকে ঘরে তুলেছি। আজ তুমি আমাকে ভুল বুঝতে এইটি হবে সত্যি নির্মম আঘাত। রীতা তুমি ঘর থেকে বের হবে না।
আমি সব কিছু দেখছি। তুমি শান্ত থাকো! রীতা শান্ত থাকো! রীতা আমার ভালবাসার প্রতি আঘাত দিও না। রীতা একটু শান্ত হলে ফয়সাল তাকে শুয়ে দিয়ে ঘর থেকে বের হলো। কি হয়েছে মা রীতার মন খারাপ কেন। মা েেপ গিয়ে বললো কি হবে তুমি জমিদারের মেয়ে ঘরে এনেছো সে কোন কাজ করবে না এবং কোন খোজ খবরও নেবে না।
ঐ সমস্ত বাবুআনা বউ আমার দরকার নেই, তুমি তোমার বউকে নিয়ে থাকো আমার সংসারে তোমাদের দরকার নেই। বাড়ীর দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে ফয়সালের বড় বোন রুমি তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চলে যাচ্ছে। ফয়সাল পিছন থেকে আপা থামো! আপা থামো! কিন্তু রুমি থামছে না। ফয়সাল দৌড়ে গিয়ে আপা কি হয়েছে বল? না কিছুই হয়নি আমি আর কোন দিন এই বাড়ীতে আসবো না। এখন আর এই বাড়ীতে আমার কোন অধিকার নেই।
এই বাড়ীর মালিক এখন তোমার বউ। এই বলে রুমি একটি সি.এন.জি ডাক দিয়ে উঠে চলে গেল।
ফয়সাল বাক রুদ্ধ, শরীরে কোন শক্তি নেই, কি করবে কোন দিকে যাবে বুঝে উঠতে পারছে না। তাহলে কি সব দোষই আমার? আমি কেন রীতার সংসারের হাল দরতে গেলাম? আমি কেন অসহায় রীতাকে পড়ার খরচ দিতে গেলাম? আমি কেন রীতাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে ঘরে তুললাম। ভাবতে ভাবতে ফয়সাল পুকুর পাড়ে গিয়ে বসলো।
প্রকৃতির সৌন্দর্যমন্ডিত দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে থাকলো ফয়সাল। দুই চোখ বেয়ে অঝোরে অশ্র“র শ্রোতধারা প্রবাহিত হতে থাকলো ফয়সালের। অনেকন কাঁদার পর ফয়সাল নিজেকে একটু হালকাবোধ করতে লাগলো। আস্তে আস্তে বাসায় গেলো। বাসায় গিয়ে দেখে রীতা ঘুমিয়ে আছে।
নিথর তার দেহ, কোন শব্দ নেই, রীতা উঠ! রীতা উঠ! কোন শব্দ নেই। ইতিমধ্যে রীতা অনেক গুলো ঘুমের টেবলেট খেয়েছে। ফয়সাল বুঝতে পেরে তাকে দ্রুত হাসপালে নিয়ে গেলো। ডাক্তার বললো আর একটু দেরী হলে রীতা মারা যেত। তাকে ওয়াশ করে ঔষধ দিলো রাত্রিতে হাসপাতের বারান্দায় ঘুমালো ফয়সাল।
সকাল ১০টার দিকে রীতাকে নিয়ে বাসায় পৌছলো। রীতাকে রুমে রেখে ফয়সাল বাতরুমে যায়। বের হয়ে দেখে রীতা গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছে। ফয়সাল লাফ দিয়ে টেবিলে উঠে রশি খুলে দেয়। ফলে অল্পের জন্য রীতা আবারও বেঁচে যায়।
ফয়সাল রীতাকে বুঝাতে থাকে এবং সিদ্ধান্ত দেয় তোমার পছন্দমত কোন বাসা ভাড়া নিয়ে আমরা দুই জন একা থাকবো। তারপরও তুমি আমাকে ভুল বুঝ না রীতা। প্রয়োজনে আজই এই বাসা থেকে আমরা চলে যাবো, তবুও তুমি ইচ্ছে করে আমাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করো না। তবে মনে রাখবে রীতা এই অ-প্রত্যশিত আচরণ কারো কোন তি করবে না বরং তোমার আমার দাম্পত্য জীবন তছনছ হয়ে যাবে। যে তি আমাদের হবে তা কোন দিন আর ফিরে পাওয়া যাবে না।
এই সব বুঝিয়ে ফয়সাল বাজারে গেল বাজার করতে। এসে দেখে রীতা নেই। এই ফাঁকে রীতা তাদের বাড়ীতে চলে যায়। রীতার এক মামা ছিল এডভোকেট। রীতার তার সহযোগিতায় ফয়সালের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয়।
মামলার আর্জিতে রীতা উল্লেখ করে ফয়সাল তাকে মারধর করে এবং তিন ল টাকা যৌতুক দাবী করে যৌতুকের দাবী অনুযায়ী রীতা অনেক কষ্ট করে এক ল টাকা যোগার করে ফয়সালের হাতে তুলে দেয়। এর পর কিছুদিন নির্যাতন বন্ধ থাকে তার পর আবার বাকী দুই ল টাকার জন্য তাকে মারধর করে বাড়ী থেকে বের করে দেয়।
পরের দিন ফয়সাল ঘুম থেকে উঠে বের হচ্ছে এই সময় বাড়ীর দরজায় দেখে পুলিশ। ফয়সাল কোন কিছু বুঝার আগেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে এবং থানায় নিয়ে যায়। পরের দিন জামিনের জন্য আদালতে উঠলেও বিচারক তার জামিন না মনজুর করে।
তাকে জেলখানায় পাঠিয়ে দেয়। ফয়সাল এখন জেলখানার জানালা দিয়ে বাহিরের প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে তার কি অপরাধ? সে জানেনা তার অপারাধের কথা! সে জানেন না কি কারণে সে জেলে আছে? ফয়সাল ভাবতে থাকে যে সমাজে পুরষ নির্যাতিত সে সমাজ ভাঙ্গতে হবে। নতুন সমাজ গড়তে হবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।