তারাঁদের ইসকুলে আমি এক লবন চাষীর ছেলে,ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদ! সে আমার মা...
রহমান মাসুদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি
ঢাকা: বোববার দুপুর দেড়টায় আইএসপিআরের সংবাদ সম্মেলন ডাকে আইএসপিআর। সেখানে আগের দিন খালেদা জিয়ার করা অভিযোগগুলো অস্বীকার করা হলো। সাংবাদিকদের বলা হলো, ‘মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রীর করা সব অভিযোগ অসত্য ও বানোয়াট। ’
সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হলো, ‘যদি তাই হয় তাহলে মিডিয়াকর্মীদের কেন শহীদ মঈনুল রোডের বাড়িতে নেওয়া হচ্ছে না। সেখানে গেলেই তো জানা যায় আসল ঘটনা কী?’
আইএসপিআরের পরিচালক শাহীনুল ইসলাম জানালেন, ‘শিগগিরই তা করা হবে।
’
সেখানে বসেই শুরু হলো সেনানিবাসের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ। আকারে ইঙ্গিতে জানানো হলো, আজই সাংবাদিকদের নেওয়া হবে ৬ মঈনুল রোডের বাড়িতে। এরপরই সাংবাদিকেদের অপেক্ষা করার পালা শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর গেটে। বেলা সাড়ে তিনটায় ৩০ সদস্যের সাংবাদিক প্রতিনিধিদলকে নিয়ে যাওয়া হয় মইনুল রোডের বাড়ির সামনে।
এবার বাড়ির মূল দরজায় অপেক্ষা।
স্টেশন সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) ওয়ালিউল্লাহ সাংবাদিকদের রেখে প্রথমে প্রবেশ করেন ১৬৮ কাঠা আয়তনের আলিশান বাড়িটিতে। ১৫ মিনিট পর তিনি ফিরে এসে বললেন, বাড়িতে প্রবেশের সময় সবার ক্যামেরা বন্ধ রাখতে হবে এবং দায়িত্বরত সেনা কর্মকর্তাদের ছবি তোলা যাবে না।
এরপর তিনি আবারও প্রবেশ করলেন বাড়ির ভেতর। আবারো ১০ মিনিট সাংবাদিকদের অপেক্ষা।
এবার তিনি এসে জানান, টেলিভিশনকর্মীদের সবার আগে প্রবেশ করানো হবে।
হলোও তাই। কিন্তু দায়িত্বরত মেজর সাঈদ কিছুক্ষণ পর সবাইকে বাড়ির ভেতর ডেকে নিয়ে যান।
বাড়ির মূল দরজা পার হওয়ার পর কিছুটা গেলেই হাতের ডান পাশে ঘাসের লনের পাশে এল আকৃতির গ্যারেজ। সেখানে রাখা আছে জিয়া পরিবারের ব্যবহৃত সাতটি মূল্যবান গাড়ি। যার নম্বরগুলো হলো ঢাকা মেট্রো ঘ-০২-০৯৩৯, ঢাকা মেট্রো চ-১৩- ৩০০২, ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-২৬০০, ঢাকা মেট্রো-গ-১১-২৬০০, ঢাকা মেট্রো-ক-০৩-৯৫৮৫ ও ঢাকা মেট্রো-চ-৫১-৬৭১৫।
বাড়িতে এখন জিয়া পরিবারের কেউ নেই। কিন্তু আছে কড়াকড়ি নিরাপত্তা। সাংবাদিকদের বাড়িতে প্রবেশ করানোর আগে আইএসপিআর’র উপ-পরিচালক ওবায়েদ সাংবাদিকদের অনুরোধ করে বলেন, ‘এটা সাবেক সেনাপ্রধান, রাষ্ট্রপতি, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান বিরোধী দলীয় নেত্রীর সাবেক বাসভবন। তাই বাড়িতে প্রবেশের পর এমন কিছু করা যাবে না যাতে তাদের অবমাননা হয়। ’
এরপর বাড়ির নীচতলার প্রতিটি ঘর সাংবাদিকদের ঘুরে ঘুরে দেখান মেজর সাঈদ ও অন্য সেনা কর্মকর্তারা।
আগের দিন বিরোধীদলীয় নেত্রী এ দরজার নেট ও গ্রিল কেটে প্রবেশের কথা বলেছিলেন। তবে এমন কোনো চিহ্ন চোখে পড়েনি।
ভবনে প্রবেশের পর বাম পাশে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ড্রইং রুম আর ডান পাশে ডাইনিং। ড্রয়িং রুমের সামনে দুইটি ডাবল সিটের সোফার সঙ্গে ছয়টি সিঙ্গেল সিটের সোফা। অন্য পাশে বিশাল সাইজের সেন্টার টেবিল এবং ডায়নিং রুমে ১০ চেয়ারের টেবিল।
এরপর আর একটি বসার ঘরও দামী আসবাবে সাজানো। প্রায় প্রত্যেক ঘরেই রয়েছে নানা আকারের কাগজের কার্টনে প্যাক করা এবং নম্বর দেওয়া প্যাকেট।
এরপর বাম দিকে মোড় নিয়ে এগোলে আর একটি বড় আকারের বসার ঘর। এটাও মূল্যবান বিদেশি আসবাব-শোভিত। এ ঘরের সঙ্গেই খালেদা জিয়ার শয়নকক্ষ।
ঘরের দরজার চৌকাঠে শাবল জাতীয় কিছু দিয়ে আঘাতের (ভাঙ্গার) স্পষ্ট চিহ্ন। মনে হলো, কয়েকটি স্থানে সাদা রঙের আস্তর বুলোলেও দুইটি আঘাতের চিহ্ন সুস্পষ্ট।
বেগম জিয়ার ঘরের পুরু বাদামী কার্পেটের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে খাটের, সোফার, দরজা-জানালার পর্দা, এমনকি সকল আসবাবের রঙ। বাথরুমে রাখা আছে ছোট ফ্রিজ। যাতে সাজানো আছে জুস, বিস্কিট, চকলেটসহ কয়েক প্রকার দামী খাবার ও পানীয়।
ফ্রেশরুমে ছোট এক বইয়ের তাক। যা নানা ধরনের দেশি-বিদেশি ম্যাগাজিন, বইয়ে ঠাসা। এর মধ্যে একটি আছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে লেখা ‘বর্ষকন্যা’। আছে স্টিম বাথ, শাওয়ার ও দামী বাথটাব।
বেগম জিয়ার শোয়ার ঘরেও আছে নানা ধরনের পত্র-পত্রিকা ও বই।
আছে আলাদা স্টাডি রুমও।
এ বাড়ির অন্য ঘরগুলো দোতলায়। কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী বাড়ি ছাড়ার আগে দোতলা সম্পূর্ণ তালাবদ্ধ করে গেছেন বলে বাংলানিউজকে জানান সেনা কর্মকর্তা সানজিদা।
বাড়ির ভেতরে কোথাও নেই এ বাড়ির স্টাফদের থাকার স্থান। অথচ খালেদা জিয়া আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, স্টাফরা এ বাড়িতেই স্থায়ীভাবে থাকতেন।
বেডরুমের বারান্দায় ঝুলছিলো শুকাতে দেওয়া শাড়িসহ অন্যান্য কাপড়।
বাগানের দোলনার নিচে জন্মেছে ঘাস। পচন ধরেছে বসার কাঠের আসনটিতে। বাগানের এক পাশে অনেকগুলো অনাদৃত টব। দেখেই বোঝা যায়, এগুলোতে যতœ বোলানো হয়নি অনেকদিন।
এর গাছগুলোও যেনো মৃত প্রায়। পড়ে আছে অব্যবহৃত দুইটি বাথটাবও।
এক সময় সদা প্রাণচঞ্চল এ বাড়িটিতে এখন সুনসান নীরবতা। জিয়া পরিবারের ৪০ বছরের ইতিবৃত্ত যে বাড়িটির প্রতিটি ইটের সঙ্গে ওৎপ্রোত, সে ইতিবৃত্তের আপাত যবনিকা ঘটে গেছে শনিবার নানা নাটকীয়তায়। বাংলাদেশের ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী ৬ শহীদ মঈনুল রোডের এ বাড়িটি একদিনের ব্যবধানে আজ জিয়া পরিবারের কাছে হয়ে গেছে কেবলই স্মৃতি।
বাংলাদেশ সময় ১৯৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১০
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।