বিশেষজ্ঞদের অভিমত
এখানে ক্লিক করুন@ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে এসইসি
মার্জিন ঋণ সুবিধা বন্ধ করার ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মার্চেন্ট ব্যাংকার্স কর্মকর্তা ও শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর লাইসেন্স প্রাপ্তির অন্যতম শর্ত হলো পোর্টফোলিও ম্যানেজ করা। অর্থাৎ ব্যবসায়িক কর্মকা-ের ক্ষেত্রে লোন দেয়া। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় না নিয়েই সংসদীয় কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী মার্জিন-ঋণ বন্ধ করে দেয়া হলে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
অন্যদিকে শেয়ারবাজারে মার্জিন ঋণ বন্ধের প্রস্তাব নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছে সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)।
একদিকে ঋণ বন্ধের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ, অন্যদিকে মার্চেন্ট ব্যাংকারসহ বাজার সংশ্লিষ্টদের বিরোধিতার কারণে ঋণ বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি। এ অবস্থায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মতামতের ভিত্তিতেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, শেয়ার সরবরাহ বাড়াতে প্রথম দফায় জুনের মধ্যে ২৬টি সরকারি কোম্পানির শেয়ার বাজারে আনার ঘোষণা দেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে তালিকাভুক্ত কোম্পানির আরও শেয়ার ছাড়ার ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। তাই আবারও সরকারি শেয়ারবাজারে আসতে বিলম্ব হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাজারের লেনদেন ও সূচকের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সঙ্গে এসইসি’র এক বৈঠকে বাজারে অপ্রয়োজনীয় তারল্য প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজ থেকে বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ দেয়া বন্ধ করার সুপারিশ করেন অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি আহম মুস্তফা কামাল।
সূত্র মতে, সংসদীয় কমিটিতে আলোচনার পর শেয়ারবাজারে মার্জিন ঋণ বন্ধ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। তবে সংসদীয় কমিটির লিখিত সুপারিশ পাওয়ার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে এসইসি’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এসইসি’র সদস্য মনসুর আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটি মার্জিন ঋণ বন্ধের সুপারিশ করেছে।
তবে এ ব্যাপারে এসইসি এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শেয়ারবাজারে তারল্য প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগের ঝুঁকি কমাতে মার্জিন ঋণ বন্ধের সম্ভাব্যতা নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই আলোচনা করছে এসইসি। তার সূত্র ধরেই গত মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। পরে পুঁজিবাজারে তারল্য প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে মার্জিন ঋণ বন্ধের বিষয়ে এসইসিকে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার দেয়া হয়। সংসদীয় কমিটির ইতিবাচক মতামত পাওয়ার পর বুধবার কমিশনের বাজার পর্যালোচনা কমিটির সভায় স্বল্প সময়ের মধ্যে ঋণ বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার পক্ষে মত দেন এসইসি’র একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
তারা মার্জিন ঋণকে বাজারে তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি এড়াতে সাময়িকভাবে ঋণ বন্ধের প্রস্তাব করেন। তবে কেউ কেউ ঋণ বন্ধ করা হলে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর ব্যবসায়িক কর্মকা-ের বিষয়টি সামনে এনে এসইসি’র সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতের যাওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। এ কারণে ঋণ বন্ধের বিষয়টি চূড়ান্ত না করে অর্থমন্ত্রীর মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
জানা গেছে, মার্জিন ঋণ বন্ধের বিষয়ে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো যেসব কাজের জন্য লাইসেন্স পেয়ে থাকে তারমধ্যে পোর্টফলিও ব্যবস্থাপনা অন্যতম।
আর গ্রাহকদের মার্জিন ঋণ প্রদান করা পোর্টফলিও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ ও আয়ের একটি বড় ক্ষেত্র মার্জিন ঋণ। বিনিয়োগের এ সুযোগ বন্ধ হয়ে গেলে অধিকাংশ মার্চেন্ট ব্যাংকের আয় ও মুনাফা ব্যাপক মাত্রায় কমে যাবে। এ কারণে ঋণ বন্ধের উদ্যোগ ঠেকাতে এসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি আরিফ খান বলেন, মার্জিন লোন বন্ধের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বিএমবিএ’র সঙ্গে আলোচনা করবে বলে আশা করছি।
তবে মার্জিন ঋণ বন্ধের প্রস্তাব সম্পর্কে আমরা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আগামী সপ্তাহে এ ব্যাপারে বৈঠক করে এসোসিয়েশনের সিদ্ধান্ত জানানো হবে। তিনি বলেন, এটি করা হলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। তার মতে, এসইসি কয়েক দফায় মার্জিন ঋণ কমালেও বাজারের ওপর তেমন প্রভাব পড়েনি। সেক্ষেত্রে মার্জিন ঋণ বন্ধ করলেও বাজারে বড় কোনও প্রভাব পড়বে না।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, মার্জিন ঋণ বন্ধ করা হলে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে এটা সত্য। সংসদীয় কমিটি এ ব্যাপারে সুপারিশ করতেই পারে। কিন্তু সব কিছু বিবেচনা করে এসইসিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সিইও সালাহউদ্দিন আহমেদ খান বলেন, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো মূলত প্রধান ব্যবসাই হলো পোর্টফোলিও গঠন করা। এটা বন্ধ করা হলে ব্যবসায়িকভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
মাঝে মাঝে বাজার কারেকশন হচ্ছে। এইভাবে কারেকশন হলে বাজার এসইসি’র নিয়ন্ত্রণে আসবে। সংসদীয় কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে এসইসিকে আরও ভাবতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সূত্র জানা যায়, বর্তমানে এসইসি থেকে লাইসেন্স নিয়ে ৩১টি মার্চেন্ট ব্যাংক ইস্যু আনা, পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট এবং আন্ডাররাইটার হিসেবে কাজ করছে। একটি মার্চেন্ট ব্যাংক শুধু পোর্টফোলিও ম্যানেজার হিসবে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছে।
এদিকে মার্জিন ঋণ বন্ধের খবর বাজারে ছড়িয়ে পড়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঋণ বন্ধ নিয়ে ইতোমধ্যে নানা ধরনের গুজবও ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এখনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় মার্জিন ঋণ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন অনেক বিনিয়োগকারী। কারণ ঋণ বন্ধ হলে আগের ঋণগুলো কীভাবে সমন্বয় করা হবে সে বিষয়ে পরিষ্কার কোনো ধারণা পাচ্ছেন না তারা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।