আমি বড় উগ্র, বড় আগ্রাসী হয়েছি হায়েনার উৎসাহে
কিছুক্ষণ আগে অর্নব আর্কের একটি পোস্টে কথা দিয়েছিলাম ইভ টিজিং নিয়ে ছোট্ট একটা পোস্ট দিব, তাই দিলাম।
মূল কথাঃ
আমরা এখন একটা রব তুলেছি ইভ টিজারদের হটাও, মা-বোনদের বাচাও।
বাংলাদেশের বিখ্যাত গায়ক জেমসের একটা গান আমি বহুবার শুনেছি। তা হল " প্রভাতে ফুটে ফুল সাঁজে যায় ঝরে" শিরোনামে, প্রভাতে যে ফুলটি ফুটছে সে সাঁজের বেলায় ঝরে যায় কারণ এরই মাঝে সে বেশ প্রতিকূল পরিবেশে অনাকাংখিত তাপ, চাপ, বাতাসের তোড়, পতঙ্গের পদচারণা প্রভৃতি বৈপরিত্ব আচরণ সহ্য করে তাই তার আয়ুষ্কাল কমে যায়। মেয়েরা ফুলের মতই, তারাও আর্লি লাইফে ফুলের সুন্দর (মনের দিক থেকে) থাকে।
যখনই সে বড় হয়, তার বাইরে পদচারণা বাড়ে তখন সে দেখে দুনিয়া টা কত সুন্দর! বুঝে না যে এই সৌন্দর্য তাকে টেনে নিয়ে গহ্বরে ফেলবে। বড় বড় কর্পোরেট কোম্পানি গুলোর সৌন্দর্য বাড়ানোর বিজ্ঞাপণ, জনপ্রিয়তার আকর্ষন, মোহনীয়তা অর্জন, সুন্দরী প্রতিযোগিতা, ইত্যাদি ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের টেনে বের করা হয় সুন্দর মনের ঘরটি থেকে। ছুড়ে দেয়া হয় পিচ্ছিল উঠনে, যেখানে সে পিছলে পড়বেই আগে বা পরে। এই অন্ধকার গহ্বর, যেখানে আছে কেবলই মোহ, নেশা, মাদকতার হাতছানি। নেই কোনো সৃস্টির উল্লাস।
চারপাশের এই অমোঘ টান সে উপেক্ষা করতে পারে না, যা আমাদের মতই কিছু লম্পট বস্তুবাদী, ভোগবাদী, টাকার মালিক, লালসায় অন্ধ পুরুষেরই ছুড়ে দেয়া অস্ত্র।
ব্যাস কাজ শেষ, বাকিটা হাতে পাবার জন্য্ অপেক্ষা। থাক ওরা অপেক্ষায়, আমরা এখন পরে কি হয় সেটা শুনি।
তো মেকানিজম টা বললাম, সঠিক বেঠিক জানি না, কেবল জানি এভাবেই শুরু। সবার কপালে সবকিছু জুটে না।
তারপরও সবাই তার পরিবেশ-প্রতিবেশে জমজমাট থাকতে চায়। তাই একটা মেয়ে যখন বয়োপ্রাপ্ত হয় তখন সে দেখে কে তাকে নিয়ে ভাবছে, তাকে নিয়ে ভাবুকদের সংক্যা কত, ইত্যাদি ইত্যাদি। এভাবে সে অন্য মেয়েদের থেকে এগিয়ে থাকাটাকে প্রাধান্য দেয়। না পারলে শুরু হয় একটু একটু করে আকর্ষন করবার চেষ্টা। এতে তার কিছু না কিছু অবমুক্ত করতে হয় যা একটা ছেলেকে প্রবলভাবে টানে।
ছেলেটি উগ্র হয়, মেয়েটিও তাকে নিয়ে খেলে ঠান্ডা মাথায়, এই খেলার ব্যাপারটি নাকি সহজাত। এভাবে একজন নাচিয়ে দিয়ে যায় আর ছেলেটি তা মেটাবার চেষ্টা করে অন্যকে দিয়ে। নিউক্লিয়ার রিএকশন যেমন নিয়ন্ত্রণ না করলে অপরিমেয় বিস্ফোরণ ঘটায় তেমনি পুরুষের মাঝে কামনার বিষ্ফোরণ ঘটে। আর এই বিষ্ফোরণ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়লেই তা চারপাশে ছড়িয়ে দুমরে মুচরে দিতে চায় সব। ক্ষতিটা হয় তখনই।
জ্ঞানগর্ভ আলোচনা এখানেই শেষ।
উদাহরণ(বাস্তব):
১. আমার নিজের অভিজ্ঞতা। প্রভূর কৃপায় আমি দেখতে খারাপ না, এক্সট্রা যেটা আছে সেটা হল চেহারায় নাকি আকর্ষণ করবার কি একটা আছে (অবশ্যই এটা মেয়েদের মন্তব্য)। তো একদিন সকালে ক্লাস না থাকায় বাসার নিচে গলির মোড়ে চা খেতে গেলাম। বেশ ভীড় রাস্তায়।
অনেক ছেলে মেয়েই যাচ্ছে। তেমনি একটা রিকশা করে মা মেয়ে যাচ্ছে, মেয়েটি দেখতে সুন্দর। অবাক করা ব্যাপার হল মেয়েটি তার মার ওপার থেকে আমার দিকে এমন একটা দৃস্টি নিয়ে তাকিয়ে ছিল যে আমি টাস্কি না খেয়ে পারলাম না। পুরুপুরি আহ্বানমূলক চাহনি, পাশে মা নির্বিকার!!
বুঝলাম সে মজা নিচ্ছে!!!
২. এটাও আমার দেখা। আমি যে প্রাইভেট ইউনিভারসিটিতে পড়ি সেখানে একটা প্রোগ্রাম ছিল, সেই প্রোগ্রামের কালচারাল ফাংশানের ফ্যাশান শোতে আমি বাঙ্গালী জমিদারদের পোশাকের রিপ্রেজেন্ট করেছিলাম।
তা ছিল ধূতি-পাজামা। শো শেষে বাইরে এসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম রাস্তার ধারে। পাশ দিয়ে যাওয়া রিকশায় দুটো মেয়ে ছিল। একজন খুব সুন্দর হয়া সত্বেও হেব্বি মেকাপ নেয়া। মেকাপড মেয়েটির দিকে তাকানোর পর সে যা দেখালো তাতে আমরা সবাই থ।
সুজাসুজি ফ্লাইং কিস্। বুঝলাম এটাও ছেলেদের উত্তেজিত করে মজা নেয়া।
৩. এটা আমার ভারসিটির এক ছোট ভাইয়ের বলা গল্প। সে এক দিন ধানমন্ডি ৩২ এ আড্ডা দিচ্ছিলো তার বন্ধুদের সাথে। সেখানে এক মেয়েকে তার ভালো লাগে।
ছোট ভাইটি সেই মেয়ের সেল ফোন নাম্বার কালেক্ট করেছিল কিভাবে সেদিন জানেন, বলি শুনুন। মেয়েটির সাথে তার প্রেমিকও ছিল, সে যখন দেখলো একটি ছেলে তাকে দেখছে তখন বয়ফ্রেন্ড থাকা সত্বেও সে তার কাছ থেকে কোনো এক ছুতোয় উঠে আসলো। আমার সেই জুনিয়র কে অবাক করে দিয়ে চোখ ইশারা দল শুক্রাবাদ বাস স্টান্ডের টিকেট কাউন্টারের কাছে যেতে। ব্যাস, বাকিটা বলার প্রয়োজন নেই বলেই মনে করি।
উদাহরণ এইরকম আরো আছে, দেবার সময় নেই।
এখন কথা হল বখাটেদের গীত গাইতে আসিনি আমি এখানে। বলতে চাইছি ঐ কুত্তা গুলো সুযোগ কিভাবে পায় তা। সমাজের এই ক্ষতের জন্ম অনেক আগেই, তখন কেউ তা দেখেনি। কিন্তু তার ফল এখন অনেক নিরিহ মেয়ে কে ভোগ করতে হচ্ছে। যারা ঘরের বাইরে চলাফেরা করেন তারা বলুন তো সারাদিনে দেখা কয়টা মেয়েকে আপনার ঠিক মন থেকে অপসংস্কৃতির অসভ্য থাবার কবল মুক্ত মনে হয়?
দোষটা ঠিক ছেলেদের তো নয়ই বরং সবটা ঐ বখাটে গুলোরও নয়।
দোষ এই দেশের সমাজ কর্তাদের, নীতিপ্রণয়নকারিদের। সেই সব ক্ষমতাবানদের যারা ক্ষমতার স্বাদ ধরে রাখবার জন্য ঐ কুত্তাগুলো পুষে।
কিন্তু আপনার, আমার প্রতিবাদ যখন এক হবে, যখন লাখো প্রাণ জাগবে সত্যিকার প্রতিরোধে, যখন আমার বোন, কন্যাদের প্রাণে জাগিয়ে দিতে পারবো যে তুমি একজন বাঙ্গালী নারী, তোমার সৌন্দর্য এই বাংলার প্রকৃতির মধ্যেই খোজ, সাদা চামড়ার নোংরা উচ্ছিষ্ঠে নয়, আমাদের ছেলে গুলো যখন বুঝবে এদের উপর অত্যাচার-নিপীড়ণ করার জন্যই আজো আমরা ঐ সব পাক হায়েনা এবং তাদের দোষরদের খোজে ফিরি শাস্তি দেবার জন্য.....................তখনই কেবল সত্যের জয় হবে, ইভটিজার নামের কুত্তা গুলো সাহস পাবে না আমাদের মা-বোন-কন্যাদের উত্ত্যক্ত করতে। সমাজের রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ভুল-ভ্রান্তি হয়ে থাকলে আগাম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।