আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অর্থ হাতিয়ে নেওয়া এমএলএম কম্পানি ডেসটিনি



বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এমএলএম কম্পানি ডেসটিনির ট্রি প্লান্টেশন নামে একটি প্রজেক্ট রয়েছে। এ প্রজেক্ট কৃত্রিম বনায়নের স্লোগান দিয়ে খাগড়াছড়ি, নাইক্ষ্যংছড়ি অঞ্চলে প্রাকৃতিক বনের জায়গা কিছু মানুষের কাছ থেকে দলিল করে নিয়েছে এবং বড় একটি অংশ দখল করে নিয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় বন বিভাগ মামলাও করেছে। কিছুতেই কিছু করা যাচ্ছে না। কারণ কাঁচা টাকায় ম্যানেজ হয়ে যাচ্ছে সব কিছু।

ট্রি প্লান্টেশনের একটি কৌশলের কথা উল্লেখ করা যাক। তারা গর্বের সঙ্গে জানিয়ে থাকে, প্রতিটি বৃক্ষের জন্য বীমা থাকবে। এমনই কৌশল সেখানে রাখা হয়েছে যে এ বীমা থাকা-না থাকায় কিছু আসে যায় না। কারণ যদি অগি্নকাণ্ড বা দাঙ্গায় বৃক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলেই বীমার টাকা পাওয়া যাবে। বাংলদেশে বনে দাবানল হয় না, এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলো দাঙ্গা-হাঙ্গামা করতে বনে যায় না।

একমাত্র ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যার বিপরীতে বৃক্ষের বীমা করা সংগত। অথচ এই তিনটি দুর্ঘটনার একটির কথাও উল্লেখ নেই! অর্থাৎ তাদের প্রদত্ত শর্ত অনুযায়ী পরিষ্কার যে গাছ প্যাকেজের গ্রাহকরা ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও রোগের কারণে গাছ নষ্ট হলে কোনো ক্ষতিপূরণ পাবে না! বিএনপি আর আওয়ামী লীগ যদি বাস ভাড়া করে মারামারি করতে নাইক্ষ্যংছড়ি বা খাগড়াছড়ি যায় এবং গাছ এলাকায় ঢুকে মারামারি করে সেগুলো ধ্বংস করে, তাহলেই তার দায় কম্পানির। দেখেছেন প্রতারণার ধরন! কম্পানির যাঁরা 'লিডার' আছেন তাঁরা সমগ্র পৃথিবী ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিনা পরিশ্রমে 'বুদ্ধি খাটানো' অর্থে। অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোতে বাংলাদেশি টাকার এক কোটিরও কম পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করলে নিয়ম অনুসারে স্থায়ীভাবে সেখানে থেকে যাওয়া যায়। জানতে চাই, ট্রি প্লান্টেশনের আট হাজার টাকা মূল্যের প্যাকেজ কিনেছেন লাখ লাখ মানুষ।

সাধারণ মানুষের শত শত কোটি টাকা চলে গেছে এই 'লিডারদের' হাতে। তাঁরা সরে পড়লে প্যাকেজ ক্রেতারা কার কাছে চাইবেন এই টাকা? ডেসটিনি নিবন্ধনের শর্তে বলেছে, এটি একটি পণ্য বিপণন কম্পানি। পণ্য ক্রয় ছাড়া আপনার এখানে সদস্য হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু তারা একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে যেটি গড়ে উঠবে সৌদি আরবের জামিল স্টিল কনস্ট্রাকশন কম্পানির তত্ত্বাবধানে। এটি হবে ৪০ তলাবিশিষ্ট বিশাল বাণিজ্যিক প্রকল্প।

রিয়েল এস্টেট বিজনেসের আদলে ডেসটিনি খুলনা ও বরিশালসহ দেশের কয়েকটি স্থানে বিশাল প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করেছে। কোন নিবন্ধনের বলে? শের সবচেয়ে 'সফল' ডেসটিনির বর্তমান কর্তৃপক্ষ শ্রীলঙ্কার বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক নারায়ণথাসকে নিয়ে ১৯৯৯ সালে জিজিএন নামক প্রতিষ্ঠানটি শুরু করে। কারখানা স্থাপন, টাওয়ার বিল্ডিং তৈরি, ব্যাংক, মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক স্থাপন_এসব স্বপ্ন দেখিয়ে প্রেজেন্টার, লিডার, ট্রেইনাররা (কিছুই না, যেকোনো এমএলএম কম্পানির এসব পদবির লোকেরা আসলে শিকার ধরার জাল) পিরামিড স্কিম শুরু করে। মাত্র ৫ শতাংশ মানুষ ৪৮ হাজার টাকার পানি শোধন মেশিন ক্রয় করেছিল। বাকি পরিবেশকরা যোগ দেন এক হাজার ৫০০ টাকার একটি রসিদ, একটি বিজনেস সেন্টার, ৫০০ ভিজিটিং কার্ড, পানি টেস্টার, ফটোকপি রাখার ফোল্ডার ও চামড়ার তৈরি একটি অফিস ব্যাগ_সব মিলে ধরা হয়েছিল তিন হাজার টাকা।

আপলাইন বলে যাঁরা ছিলেন তাঁরা এ ব্যবসা থেকে পেয়েছিলেন সপ্তাহে ছয় হাজার থেকে ৪৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে অসংখ্য মানুষ মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছিল। হঠাৎ এ ব্যবসা লাটে তুলে দিয়ে হোতারা আবার শুরু করেন নিউওয়ে নামের একটি ব্যবসা। তারপর ডেসটিনি। (লেখাটি, সাংবাদিক মহসীন হাবিব এর একটি কলাম হতে সংকলিত)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।