আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুরো কাজ না করে শতভাগ টাকা তুলে ব্যাপক লুটপাট ॥ এডিপি বরাদ্দের হাল-২ ## রংপুর দিনাজপুর গ্রামীণ কাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প



পুরো কাজ না করে শতভাগ টাকা তুলে ব্যাপক লুটপাট ॥ এডিপি বরাদ্দের হাল-২ রংপুর দিনাজপুর গ্রামীণ কাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ডিজিটাল দিনাজপুর॥ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) অধীনে দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি এত বেশি দুর্নীতিপ্রবণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে যে, প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিয়ে কাজ না করেই সরকারী কোষাগার থেকে টাকা উত্তোলন করে লুটপাট করছে। প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুযায়ী কাজ না করে এলজিইডির প্রকৌশলীদের ইচ্ছেমতো কিছু অংশ কাজ করে প্রকল্প মূল্যায়ন প্রতিষ্ঠানকে শতভাগ কাজ করা হয়েছে বলে প্রতিবেদন দাখিল করে চরম মিথ্যাচার করে ও প্রকল্পের শতভাগ বরাদ্দ উত্তোলন করে লুটপাট করছে। আবার মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে গেলে তাদের নয় ছয় বুঝিয়ে ধোঁকা দেয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এই অধিদফতরের অধীনে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোর ৫০ শতাংশের বেশি লুটপাট করার পরও প্রকল্প প্রসত্মাব (ডিপিপি) অনুযায়ী কাজ না করে প্রকৌশলীদের ইচ্ছামতো কাজ করছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

২০০৯ সালে সমাপ্ত বেশ কয়েকটি প্রকল্পে বাসত্মবায়ন, পরিবীৰণ এবং মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রকল্প মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এই ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন নিশ্চিত করার এখনই সময়। কিন্তু চরম দুর্নীতির কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। এলজিইডিকে স্থানীয় সরকারের উন্নয়ন দেয়ার পর এই চিত্র আরও বেড়েছে। এই লুটপাট থেকে বেরিয়ে আসতে হলে, স্থানীয় সরকার বিভাগকে শক্তিশালী করে আবারও এ বিভাগকে উন্নয়ন কাজের দায়িত্ব দিলে সুফল পাওয়া যাবে।

পাশাপাশি রাজনৈতিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০৯ সালে সমাপ্ত ১৬২ প্রকল্পের একটি প্রকল্প হচ্ছে 'বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। ' প্রকল্পটির অধীনে ৩৭ ইউপি কমপেস্নঙ্, ৮ গ্রোথ সেন্টার নির্মাণ, ২০০৭ সালের বন্যায় ৰতিগ্রসত্ম ১৩২ কিলোমিটার সড়কের পুনর্বাসন এবং প্রায় ১ হাজার ৪শ' মিটার ব্রিজ নতুন নির্মাণ এবং পুনর্বাসনের লৰ্যমাত্রা গ্রহণ করা হয়। ২০০২ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ১৩০ কোটি টাকা দিয়ে ৫ বছরে প্রকল্পটি বাসত্মবায়নের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়। ২০০৭ সালে প্রকল্পটি আবার তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সর্বশেষ সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে ১৪৪ কোটি টাকায় উন্নীত করার পাশাপাশি ২ বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়।

সে হিসেবে প্রকল্পটি ২০০৯ সালের জুন মাসের মধ্যে শেষ করার লৰ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এলজিইডিকে প্রকল্পটি বাসত্মবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়। এ প্রকল্প বাসত্মবায়নের শুরম্ন থেকে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাঃ নাসির উদ্দীন আহম্মদকে প্রেষণে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি ২০০২ সালের ১ জুলাই থেকে ২০০৯ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যনত্ম দায়িত্ব পালন করেন। এর পর থেকে প্রকল্পটির শেষ ছয় মাস প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন মতিয়ার রহমান।

আইএমইডি সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পরিচালক মতিয়ার রহমান প্রকল্পটির শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে আইএমইডিকে এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানান। পরিচালকের সেই তথ্যের ভিত্তিতে আইএমইডি চলতি ২০১০ সালের ৭ মার্চ প্রকল্পটি পরিদর্শনে যায়। পরিদর্শনে গিয়ে আইএমইডির পরিদর্শক বা ৩৭ ইউপি কমপেস্নঙ্রে মধ্যে মাত্র ২৬ কমপেস্নঙ্রে নির্মাণকাজ হয়েছে বলে দেখা যায়। আর সাতটি কমপেস্নঙ্রে আংশিক কাজ করে ফেলে রাখা হয়েছে। কিন্তু বাকি ৪ ইউপি কমপেস্নঙ্রে কোন হদিসই পাওয়া যায়নি।

এসব ইউপি সেন্টারের জন্য প্রকল্পে ১১ কোটি ১০ লাখ টাকার বরাদ্দ ছিল। কিন্তু এলজিইডি ৭টি কমপেস্নঙ্রে আংশিক এবং ৪টি কমপেস্নঙ্ তৈরি না করেই শতভাগ কাজ করা হয়েছে উলেস্নখ করে শতভাগ অর্থই তুলে নেয়। আইএমইডির হিসাব অনুযায়ী কোন কাজ না করেই এ প্রকল্প পরিচালক প্রায় অবৈধভাবে ২ কোটি ২ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। প্রকল্পটির অধীনে গ্রামীণ কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে গিয়ে বিক্রি করার সুবিধা সৃষ্টির জন্য ৮টি গ্রোথ সেন্টার নির্মাণ করার কথা প্রকল্পে নির্দেশ ছিল। কিন্তু সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় যে, ৮টি গ্রোথ সেন্টারের মধ্যে মাত্র ১টি সেন্টার সম্পূর্ণ আর দু'টি সেন্টারের আংশিক নির্মাণ করা হয়েছে।

আইএমইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী এ ৰেত্রে মাত্র প্রায় ৩১ লাখ টাকা ব্যয় হলেও দেখানো হয়েছে শতভাগ বা ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এ ৰেত্রে প্রায় ৯০ শতাংশ অর্থই লুটপাট করা হয়েছে। এদিকে ওই এলাকার ২০০৭ সালের বন্যায় ৰতিগ্রসত্ম ১৩২ কিলোমিটার রাসত্মা পুনর্বাসনের জন্য নির্দেশ না থাকলেও বাসত্মবে তার কিছুই দেখা যায়নি। তবে প্রকল্প বহির্ভূত কিছু গ্রামীণ রাসত্মা নির্মাণ করেছে বলে দাবি করেন প্রকল্প পরিচালক। এতে ৪২ লাখ টাকারও বেশি অর্থ ব্যয় করা হয়েছে বলে উলেস্নখ করা হয়।

এ ৰেত্রে নির্বাহী বিভাগের কোন রকম অনুমোদন ব্যতিরেকেই এ বিপুল পরিমাণ সরকারী অর্থ এলজিইডি ব্যয় করেছে বলে উলেস্নখ রয়েছে। বন্যায় ৰতিগ্রসত্ম রাসত্মা পুনর্বাসনের জন্য ডিপিপিতে ৫৭টি স্কিম পুনর্বাসনের নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু বাসত্মবে মাত্র ১৯টি স্কিম বাসত্মবায়ন করা হয়েছে। অর্থাৎ এৰেত্রেও প্রায় ৬৫ শতাংশ সরকারী অর্থ লুটপাট করা হয়েছে। আইএমইডির প্রতিবেদনে এলজিইডির এসব লুটপাটের অর্থ ফিরিয়ে নেয়ার জন্য সংশিস্নষ্ট কর্মকর্তাকে বিচারের মুখোমুখি করার পাশাপাশি উন্নয়ন কর্মকা-ে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য জবাব চাওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথম প্রকল্পটির পরিচালক নাসির উদ্দীন আহম্মদ জনকণ্ঠকে বলেন, প্রকল্পটি শেষ হওয়ার পরপরই তিনি অবসরে চলে গেছেন। এখন তাঁর এ সবের কিছুই মনে নেই। এ সময় তার কাছে দুর্নীতি সম্পর্কে জানতে চাইলে কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। সংশিস্নষ্টদের মতে, নাসির উদ্দীন আহম্মদ প্রায় সাড়ে আট বছর ধরে প্রকল্পটির পরিচালক ছিলেন। প্রকল্পটির যত সমস্যা ও দুর্নীতি হয়েছে তার সব কিছুই তার আমলে সংঘটিত হয়েছে।

প্রকল্পের প্রতিবেদন দাখিলকারী পরিচালক মতিয়ার রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সফল হওয়া যায়নি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, বিশ্বব্যাংকের পরামর্শেই দেশের এ খাতটি দুর্নীতিপরায়ণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগে দেশের সকল উন্নয়ন কর্মকা- স্থানীয় সরকারের অধীনে বাসত্মবায়ন করা হতো। তখন এত দুর্নীতি এবং নিম্নমানের কাজ কোনটাই হতো না। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে যেদিন থেকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের অধীনে করা হয়েছে সে দিন থেকেই দুর্নীতি বেড়ে গেছে বলে মনে করেন তিনি।

তবে রাজনৈতিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে আবারও খাতটিকে স্থানীয় সরকারের অধীনে নিয়ে গেলে দেশের উন্নয়ন কর্মকা-ে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। সূত্র :: জাফর আহমেদ,দৈনিক জনকন্ঠ, ০৭ নভেম্বর'২০১০ Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.