আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের সরকারগুলো কি শেখ সাহেবের মত জাতীয়তাবাদী নয়?

থেমে যাবো বলে তো পথ চলা শুরু করিনি।

যারা বলেন শেখ সাহেব ভারতের লোক ছিলেন, তারা ভুল বলেন। ইনি ছিলেন সাচ্চা জাতীয়তাবাদী। তাঁর কঠোর অবস্থানের ফলেই ভারত অনেক কিছু মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল সে সময়কার নবীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের কাছে। আজ চল্লিশ বছর হয়ে গেল।

বর্তমান নেতৃত্বের কেউই শেখ সাহেবের উচ্চতায় উঠতে পারেন নাই। নীচের লেখাটিতে তেমনই এক শেখ সাহেবকে তুলে ধরা হয়েছে। [ পুরোটা পড়তে যান Click This Link ] 'ভারতের চাপের কাছে নতি স্বীকার করল সরকার' শিরোনামে প্রথম পৃষ্ঠায় দুই কলামে বড় হরফে সংবাদ পরিবেশন করেছে দেশের একটি দৈনিক। পত্রিকাটি চরম সরকারবিরোধী হিসেবে পাঠক মহলে পরিচিত। সময় ও সুযোগ পেলে সরকারকে বাপান্ত করতে ছাড়ে না।

তবে এটাও ঠিক সরকার সমর্থক এবং সরকারবিরোধী পত্রিকার পাতায় এবং টিভি চ্যানেলে নৌ ট্রানজিট ফি আদায়ের সংবাদটি বিভিন্ন কলেবরে এসেছে। বিষয়টিকে পল্লবিত ও ধোঁয়াশাচ্ছন্ন করে তোলার সুযোগ করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কিছু ব্যক্তির পরস্পরবিরোধী বক্তব্য-বিবৃতি প্রদান। বিরোধী দল তাদের কাজের অংশ হিসেবে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চাইবে এটা স্বাভাবিক। সরকার কোন বিবেচনায় বিরোধীদের হাতে ইস্যু কিংবা তূণে তীর তুলে দেয় সেগুলো আমাদের বোধগম্য নয়। নৌ ট্রানজিট ফি আদায়ের ব্যাপারে সরকার কিছুদিন আগেই একটি নীতিমালা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করে এবং তা কার্যকরও হয়।

ভারতীয়রা তারপর সে নিয়মে ফি প্রদান করে আসছে। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে নৌ ট্রানজিট দেওয়া শুরু হয়েছে সেই ১৯৭২ সাল থেকে। গত বছর বাংলাদেশ ও ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সামগ্রিক ট্রানজিট বিষয়ে সমঝোতা হওয়ার ফলে বিষয়টি নতুন গতি লাভ করে। ট্রানজিট এখন শুধু নৌপথ নয়, সড়ক ও রেলপথে দেওয়ার বিষয়েও অনেকটা চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানা যায়। এমন একটি সময়ে ভারতীয় জাহাজের ট্রানজিট ফি দিতে অস্বীকৃতি এবং সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টিতে সাময়িক ছাড় দেওয়ার ঘোষণা পুরো বিষয়টিকে অস্পষ্ট করে তুলছে।

অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেছিল সর্বভারতীয় ভিত্তিতে, বিশেষ করে পূর্ববঙ্গ ছিল মোটামুটি কলকাতামুখী এবং সিলেট ছিল আসামমুখী। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। উত্তরে 'চিকেন নেক' এর মাধ্যমে কোনোভাবে স্থলপথে যোগাযোগ অব্যাহত থাকে। পাকিস্তান-ভারতের অব্যাহত বৈরীতার ফলশ্রুতিতে এই অঞ্চলে স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ১৯৭১ সালে ভারতের সক্রিয় সাহায্য নিয়ে পাকিস্তানের দখলমুক্ত হয়ে আমরা স্বাধীনতা লাভ করি।

তখন থেকেই ভারত বাংলাদেশের ভেতর দিয়েই ট্রানজিট লাভ করার চেষ্টা করে আসছিল। ১৯৭২ সালে নৌ ট্রানজিট চুক্তিটি চালু হওয়ার পর থেকে সব সরকারের আমলে তা নবায়ন করা হয়। গত চলি্লশ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের টানাপড়েন এবং উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে ট্রানজিটের বিষয়টি আর এগোয়নি। ভারতীয়দের ট্রানজিট ফি দিতে অস্বীকৃতি বাংলাদেশকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য-ব্যাখ্যা জনগণকে আরও বিভ্রান্ত করে।

প্রথম দিন এক মন্ত্রী বললেন, ট্রানজিট ফি'র বিষয়টি আমরা বিবেচনা করে দেখছি, আপাতত এই ফি প্রযোজ্য হবে না। দ্বিতীয় দিন এনবিআর'র চেয়ারম্যান বললেন, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এই ট্রানজিট ফি অবশ্য প্রদান করতে হবে। ট্রানজিট ফি প্রত্যাহারের কোনো প্রশ্নই আসতে পারে না, তবে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই ট্রানজিট ফি আদায় আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ট্রানজিট বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছিল এবং আশা করা যায় সব প্রস্তুতি শেষ করেই ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। একইভাবে ধারণা করা যায়, ট্রানজিটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফি বিষয়েও একটি সিদ্ধান্ত হয় এবং উভয় দেশ ফি'র পরিমাণ বিষয়েও একমত হয়।

স্বাধীনতার পর এ পানি বন্টনের এই অমীমাংসিত বিষয়টির সমাধানে বঙ্গবন্ধু দ্রুত পদক্ষেপ নেন এবং ভারতের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। স্বাধীন বাংলাদেশে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়ে নতুন মনমানসিকতা নিয়ে কাজ শুরু করলেও, ভারতীয় আমলাতন্ত্র ষাটের দশকের মনমানসিকতা নিয়ে পানিবন্টনের ব্যাপারে ইতিবাচক ভূমিকা দেখাতে ব্যর্থ হয়। নানারকমের টালবাহানা করে দীর্ঘসূত্রতার পথ অবলম্বন করে। বঙ্গবন্ধু সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখানোর জন্য মিসেস গান্ধীর ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। যুগ্মসচিব আসাফদ্দৌল্লাহ এ সময় কিছুদিনের জন্য এই মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ছিলেন।

তরুণ এই সিএসপি অফিসার ছিলেন খুবই দৃঢ়চেতা, চৌকস ও খাঁটি দেশপ্রেমিক। সে সময়ে অতিরিক্ত জেলা জজ আসাফদ্দৌল্লাহ পাকিস্তানের শাসাকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেও বঙ্গবন্ধুকে জামিন দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষায় এই আসাফদ্দৌল্লাহই ভারতীয়দের সাথে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন বলে কিছু ভারতীয় পত্রিকায় তার সমালোচনা হচ্ছিল। এ বিষয়ে তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বঙ্গবন্ধু বললেন, 'দেশের স্বার্থরক্ষায় তুই তোর অবস্থানে অনড় থাকবি, এক ফোঁটাও ছাড় দিবি না। মনে রাখিস, আমি কারো নুন খাইনি, কারও গুণ গাওয়ার প্রয়োজনও নেই।

আর যদি কোনো সমঝোতা করতেই হয়, সেটা রাজনৈতিক পর্যায়ে আমিই করব। আমি বন্ধুত্বও চাই, ভারতের কাছ থেকে পানির ন্যায্য হিস্যাও চাই। ' পরে তিনি তা করেওছিলেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়েই বাংলা-ভারত সম্পর্কের এই তিক্ত অধ্যায়টির ইতি টানার উদ্যোগ নেন। ২১ বছরে ভারতীয় রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে নেতিবাচক মনোভাব পুঞ্জিভূত হয়েছিল, তার একক প্রচেষ্টায় তা দূরীভূত হয়।

সৌভাগ্যবশত ভারতীয় রাজনীতিতে এই সময় কয়েকজন বয়োজ্যেষ্ঠ এবং বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ সক্রিয় ছিলেন, যাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত জানাশোনা ছিল। পররাষ্ট্র এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ছাড়াও এ কাজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যিনি সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেন তিনিও আসাফদ্দৌল্লাহর মতো দক্ষ, চৌকস এবং বিচক্ষণ সিভিল সার্ভেন্ট ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। এই চুক্তির ফলে এখনও বাংলাদেশ তার পানির হিস্যা পাচ্ছে। এভাবেই শেখ হাসিনা পেশাদার ভারতবিরোধীদের কাছ থেকে একটি অস্ত্র কেড়ে নিলেন। [ ঈষৎ সংক্ষেপিত ]


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।