একেবারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অঙ্কের শিক্ষকের হিসাবের সপ্তাহ, অর্থাৎ রোববার থেকে শনিবার তক সাত দিন হিসাব করলে আমাদের এ লেখার হিসাব মিলবে না। মাস্টার মশাই নির্ঘাত ফেল করাবেন। অধমের সপ্তাহ বড় দাগের। ঈদের একটু আগে আর একটু পরে তা সাত দিন হতে পারে, হতে পারে ১০ দিন। এসব দিন নিয়ে ঈদের সপ্তাহ।
সপ্তাহটার শুরু ঈদের তিন-চার দিন আগে। ঈদ হলো ৯ তারিখে। চলল আরও দুই দিন, অর্থাৎ আগস্ট মাসের ১০ ও ১১ তারিখ তক। অবশ্য সরকারি হিসাবে অফিস খুলেছে ১১ তারিখ। ঈদের পর অফিস খোলার দিনই যে বাঙালি মুসলমানকে অফিসে আসতে হবে, এমন কথা কোনো হাদিসে আছে বলে জানা নেই।
ধীরে-সুস্থে দুই-চার দিন পর আসবেন। এসব দিন মিলিয়েই ঈদের সপ্তাহ। বড় দাগে।
ঈদের সপ্তাহের শুরুতেই চারদিকে হইহই-রইরই। ঢাকাজুড়ে সরকার তার সাড়ে চার বছরের জীবনের সাফল্যগাথা ঝুলিয়ে দিয়েছে পথ-ঘাটে, আমাদের সবার চোখের সামনে।
দুর্মুখের ভাষায়, ঢাকা শহরের সব বড় বিলবোর্ড চলে গেল সরকারের সাফল্যগাথার দখলে। বলা বাহুল্য, একেবারে সব কটি নয়, কিছু বিলবোর্ড রেহাই পেয়েছে। মোদ্দাকথা, ঢাকা শহরের বড় বিলবোর্ডগুলোর বিরাট অংশ সরকারের সাফল্যগাথায় উদ্ভাসিত হয়ে পড়ল এই ঈদ মৌসুমে।
বিগত বিএনপি সরকার কত কম কাজ করেছে আর এই সরকার কত বেশি করেছে, সেদিকে বিশেষ কেউ নজর দিল না। বরং সবাই প্রশ্ন তুলতে শুরু করল, কার বিলবোর্ডে কে কীভাবে এত সব সাফল্যগাথা সেঁটে দিল।
যারা এগুলো ভাড়া করেছিল নিজেদের পণ্যের বিজ্ঞাপনের জন্য এবং টাকাপয়সা খরচ করেছিল, তাদের সেসব বাণিজ্যিক চুক্তির কী হলো। তাদের চুক্তি কি বাতিল করল? আরও বড় কথা, কেউ কি তাদের কিছু আদৌ জিজ্ঞাসা করেছিল কি না। সরকারি গুণগানের জন্য বিলবোর্ডের ভাড়ার টাকা কে দিল, কাকে দিল, কীভাবে দিল। আরও হাজারো প্রশ্ন। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি থেকে কি এমন নতুন একটা উপসর্গ যোগ হলো—বিলবোর্ড দখলবাজি।
ইত্যাদি, ইত্যাদি।
ঈদের রাতে যাঁরা ঢাকায় ছিলেন, অর্থাৎ গ্রামের বাড়ি যাননি, তাঁদের অনেকে বাসায় পরিবার ও নিকট আত্মীয়স্বজন মিলেমিশে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেছেন। এসব ঘরোয়া দাওয়াতে সরকারের ঈদের এই ‘বিলবোর্ড উপহার’ কেউ গ্রহণ করেছে বলে মনে হয় না। ঢাকা শহরের বর্তমান ১০ শতাংশ সরকারের কট্টর সমর্থক-বাসিন্দা ছাড়া।
অধম অবশ্যই গুনে দেখিনি—৮ শতাংশ না ২০ শতাংশ, নাকি ১০ শতাংশ।
এটা স্রেফ ধারণা। কেউ যদি বলে যে ধারণাটা ভুল, তাহলে তার সঙ্গে তক্ক করব না। সবার ধারণার স্বাধীনতা আছে। যেমন প্রধানমন্ত্রীর আজকাল প্রায় বোধ হয় ধারণা হচ্ছে, দেশে অসাংবিধানিক সরকার এসে পড়ল বোধ হয় অথবা আসতে পারে অথবা আসার পাঁয়তারা হচ্ছে অথবা আনার বা আনানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শব্দ, ভাষা বা আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেন।
অর্থাৎ এটা নির্ঘাত তাঁর ধারণা। তাই বলছিলাম, সবার ধারণার স্বাধীনতা আছে।
সরকার ও সরকারি দলের প্রধান সমস্যা হলো, তারা মনে করে জনগণ ফ্লাইওভার, বিদ্যুৎ ইত্যাদি পেলেই খুশি হবে। আইনের শাসন সম্পর্কে জনগণের তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই। এখানেই বিকট ভুল, জনগণ ফ্লাইওভার, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, ঈদে যানজটহীন বাড়ি যাওয়া, কম দামে জিনিসপত্র কেনা—এসব কিছুই চায়।
কিন্তু চায় আইনের শাসনের কাঠামোর মধ্যে।
সরকারের সাফল্য নিঃসন্দেহে আছে। কিন্তু এই সাফল্যের বয়ানটা আইনসিদ্ধ হয়নি। বিলবোর্ড দখল করে সাফল্যগাথা গাইবেন আর জনগণ তা দেখে-পড়ে বাহবা দেবে, সেদিন এখন আর নেই। সবাই দেখবে এটা আইনসিদ্ধ হয়েছে কি না।
যেহেতু জনমনে ধারণা জন্মেছে যে এটা ‘বিলবোর্ড দখল’, সেহেতু সাফল্যের বয়ান কেউ শোনেনি। প্রায় সবাই সমালোচনা করেছে ‘বেআইনি’ কাজটাকে। বেচারা সরকার আর সরকারি দল। সম্পূর্ণ ভাষাহীন বা নির্বাক। কোনো ব্যাখ্যা-বিবৃতি চোখে পড়েনি বা কানে শুনিনি।
বিলবোর্ডগুলোয় সরকারের সাফল্যগাথা যত বেশি দিন ঝুলবে, সরকারি দলের জনসমর্থন তত দিন ধরে কমবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।