বেশ আগে টিভি সিরিজ ম্যাকগাইভার যাঁরা দেখেছেন, প্রযুক্তিবিদ্যায় পারদর্শী সেই দুর্ধর্ষ স্পাইটির মতো যন্ত্রপাতি নিয়ে নানা কিছু করার ইচ্ছা নিশ্চয়ই অনেকের জেগেছে। শখের বশে কেউ হয়তো কাজেও লেগে গেছেন। স্ক্রু ড্রাইভার হাতে নিয়ে ‘খুটুরখাটুর’ করতে করতে কখনো নষ্ট রেডিওটা মেরামত করে ফেলেছেন, কখনোবা সচল টিভিটাকে অচল করে ছেড়েছেন! যন্ত্রপাতি নিয়ে আপনার ‘অপারেশন’ সফল কিংবা বিফল যা-ই হোক, কিছুটা শেখা যে হয়েছে, তা নিশ্চয়ই অস্বীকার করবেন না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রকৌশল নিয়ে যাঁদের কাজ করার ইচ্ছা, ‘শেখার আগ্রহ’ই হতে পারে তাঁদের সাফল্যের প্রধান বটিকা!
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই মূলত যন্ত্রপ্রেমীদের প্রথম পছন্দ। তবে মোটা মোটা বই, তার ভেতর জটিল সব সমীকরণ আর সূত্রের ছড়াছড়ি কারও কারও ভালো না-ও লাগতে পারে।
একেবারেই হাতে-কলমে শেখার আগ্রহ যাঁদের, সরকারি-বেসরকারি প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোতে আছে সে সুযোগ। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলো থেকেও পাওয়া যাবে হাতে-কলমে কাজ করার দীক্ষা ও সনদ। বিভিন্ন কল-কারখানাগুলোতে আছে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকসে দক্ষ মানুষের ব্যাপক চাহিদা। পাশাপাশি স্বাধীনভাবেও কাজ করা সম্ভব। প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্নাতক প্রকৌশলীরা মূলত ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকেন।
হাতে-কলমে কাজ করা ও শেখার সুযোগ ইলেকট্রিশিয়ানরাই বেশি পান। অন্যরকম গ্রুপের চেয়ারম্যান, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান বললেন, ‘এখন প্রচুর নতুন কারখানা হচ্ছে। প্রতিটা কারখানাতেই ইলেকট্রিশিয়ান প্রয়োজন হয়। বাসাবাড়ির কাজের জন্যও ইলেকট্রিশিয়ান দরকার। তবে দেশের বাইরেও ইলেকট্রিশিয়ানদের চাহিদা বেশি।
কেউ যদি কাজ শিখে দেশের বাইরে গিয়ে সেটা প্রয়োগ করতে পারেন, আমার মনে হয় তিনি সফলতা পাবেন। ’
পূর্ব রামপুরায় যন্ত্রপাতি মেরামতের দোকান খুলে বসেছেন মোহাম্মদ মামুন। স্বনামেই তাঁর দোকান, ‘মামুন ইলেকট্রনিকস’। কথায় আছে, ‘প্রয়োজনই উদ্ভাবনের জনক’। মামুনের কথা শুনে মনে হলো, প্রয়োজন শুধু উদ্ভাবনই নয়, উদ্ভাবকেরও জন্ম দেয়।
ছোটবেলায় ক্রিকেট খেলার পাগল ছিলেন মামুন। একবার বাংলাদেশের খেলার সময় টেলিভিশনটা বিগড়ে গেল। চামচ দিয়ে অ্যানটেনা বানিয়ে কীভাবে সে যাত্রা টিভি মেরামত করেছিলেন, বলছিলেন সেই গল্প। মামুন আরও বললেন, ‘আমি পড়ালেখা করছি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। যন্ত্রপাতি নিয়ে নাড়াচাড়া করি অনেক ছোটবেলা থেকেই।
এক খালাতো ভাই আছে ইলেকট্রিশিয়ান, তাঁর সঙ্গে থাকতে থাকতেই কাজ শিখছি। এখন ফ্যান থেকে শুরু করে কম্পিউটার পর্যন্ত যেকোনো যন্ত্র মেরামত করতে পারি। ’ আগ্রহকে পুঁজি করে কাজ করতে করতেই শিখেছেন মামুন। তবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিখতে চাইলে দেশে সে ব্যবস্থাও আছে। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এবং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অধীনে জেলাভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন মেয়াদি কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে পারেন। এ ছাড়া বেসরকারিভাবেও কিছু প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রনিকস-সংক্রান্ত শিক্ষা দিয়ে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কোর্স সম্পর্কে জানতে পত্রিকার বিজ্ঞাপনগুলোতে চোখ রাখতে পারেন। চাইলে নীলক্ষেতে বইয়ের দোকানগুলোতে খোঁজ করেও ইলেকট্রনিকস সম্পর্কে ধারণা অর্জনের বই পাবেন।
ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে যন্ত্র প্রকৌশলে পড়ালেখা করেছেন মুসাব্বির হোসাইন।
এখন একটি সিমেন্ট কারখানায় রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগে কাজ করছেন। বললেন, ‘সত্যি কথা বলতে পড়ালেখাটা খুব একটা আনন্দদায়ক ছিল না। পরীক্ষার চাপ, নম্বরের টেনশনে মজা পাওয়ার সুযোগ কই? কিন্তু কাজ করতে এসে এখন খুব ভালো লাগছে। অনেক কিছু শিখছি। ’।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।