বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৩০টি বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে সাউথ-ইস্ট ব্যাংকের স্থায়ী সম্পদের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। ব্যাংকটির মোট পরিশোধিত মূলধনের ৮৫ দশমিক ২৫ শতাংশই স্থায়ী সম্পদে বিনিয়োগ করা হয়েছে।
সাউথ-ইস্ট ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৮৭৩ কোটি টাকা। এই হিসেবে ৭৪৪ কোটি টাকা মূল্যের ভবন, ফ্লোর স্পেস বা জমির মতো সম্পদ কিনেছে ব্যাংকটি।
বেশি অর্থ স্থায়ী সম্পদে খাটিয়ে ফেললে উৎপাদনশীল খাতে ঋণ দেয়ার অর্থ কমে যায় বলে সম্প্রতি এ ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কোনো ব্যাংক তার পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশের বেশি অর্থ দিয়ে স্থায়ী সম্পদ কিনতে পারবে না।
ইতোমধ্যে যেসব ব্যাংক ওই সীমার বেশি সম্পদ কিনে ফেলেছে তাদের এখন আনুপাতিক হারে পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে হবে। তার আগ পর্যন্ত ব্যাংকগুলো আর কোনো স্থায়ী সম্পদ কিনতে পারবে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যেসব ব্যাংকের হাতে তাদের পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশের বেশি মূল্যের স্থায়ী সম্পদ রয়েছে, তাদের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মূলধন বাড়ানোর সুযোগ দেওয়া হবে। ওই সময়ের মধ্যে তারা তা করতে না পারলে সীমার অতিরিক্ত স্থায়ী সম্পদ ছেড়ে দিতে হবে।
সীমার অতিরিক্ত স্থায়ী সম্পদের মালিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে সিটি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৬৯৫ কোটি টাকা। ব্যাংকটির স্থায়ী সম্পদের পরিমাণ তাদের পরিশোধিত মূলধনের ৭৭ দশমিক ৮২ শতাংশ।
উত্তরা ব্যাংক তাদের ৩৬৩ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধনের ৭১ দশমিক ৭৯ শতাংশ, এবি ব্যাংক ৪৯৭ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের ৬৯ দশমিক ৬২ শতাংশ, ইস্টার্ন ব্যাংক ৬১১ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের ৬৩ দশমিক ৭২ শতাংশ, ব্যাংক এশিয়া ৬৯৩ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের ৫৮ দশমিক ৬২ শতাংশ, ডাচ-বাংলা ব্যাংক ২০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের ৫৬ দশমিক ১২ শতাংশ, আইএফআইসি ব্যাংক ৩৮০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের ৪৯ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের ৪৮ দশমিক ২৪ শতাংশ, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ৬৬০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের ৩৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ, যমুনা ব্যাংক ৪৪৮ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের ৩৩ দশমিক ৪০ শতাংশ, ঢাকা ব্যাংক ৫৪১ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের ৩১ শতাংশ এবং প্রাইম ব্যাংক ১ হাজার ২৯ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের ৩০ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ পরিমাণ টাকার স্থায়ী সম্পদ কিনেছে।
এসব ব্যাংককে এখন সীমার অতিরিক্ত থাকা স্থায়ী সম্পদ ধরে রাখতে হলে নিজেদের পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে হবে। সেজন্য তাদের রাইট শেয়ার বা বোনাস শেয়ার ইস্যু করতে হবে।
এতে ব্যাংকগুলোর আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করছেন।
ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক যে নিয়মের কথা বলেছে তা আমি পুরোপুরি সমর্থন করি। কারণ এক্ষেত্রে একটা নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। স্থায়ী সম্পদ কোনো ব্যবসা দেয় না। কিন্তু ঋণ যেমন ব্যবসা দেয়, তেমনি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও বাড়ায়।
”
তবে যেসব ব্যাংক ইতোমধ্যে বেশি পরিমাণ স্থায়ী সম্পদ কিনে ফেলেছে তাদের মাত্রা কমিয়ে আনার জন্য সময় দেয়া উচিৎ বলে মনে করেন ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির এই ভাইস চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, “পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো অথবা স্থায়ী সম্পদ বিক্রি সময় সাপেক্ষ বিষয়। এজন্য ব্যাংকগুলোকে সময় দিতে হবে। ”
এর আগে ২০১০ সালে ২৫ জানুয়ারি এবং ২০১২ সালের ৩০ জুলাই দুটি আদেশে বাংলাদেশ ব্যাংক স্থায়ী সম্পদে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের ওপর বিধিনিষেধ দেয়।
২০১০ সালের আদেশে বলা হয়, কোনো ব্যাংক জমি কেনায় বিনিয়োগ করতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে।
আর পরের প্রজ্ঞাপনে ভবন, ফ্লোর স্পেস বা দোকান কেনার ক্ষেত্রেও একই নির্দেশনা দেয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রবিধি ও নীতি বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ব্যাংকগুলোকে আমানতকারীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহের অনুমোদন দেয়া হয় তা দেশের আর্থিক উন্নয়ন তথা শিল্প-বাণিজ্যে বিনিয়োগের জন্য। কিন্তু ব্যাংকগুলো স্থায়ী সম্পদে বিনিয়োগ করায় সে উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।
এতে দুই ধরনের সমস্যা হচ্ছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। একদিকে জমি বা ফ্লোর স্পেসের দাম বেড়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে এ ধরনের সম্পদ নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীর হাতে কুক্ষীগত হচ্ছে।
রাজধানীর দিলকুশায় ইসলামী ব্যাংকের তিনটি নিজস্ব ভবন রয়েছে। আরও কিছু জায়গায় রয়েছে তাদের নিজস্ব ফ্লোর ও জমি।
পুরানা পল্টনে দৈনিক বাংলা মোড়ে আইএফআইসি ব্যাংকের ২১ তলা ভবন উঠছে, যার প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন ৮ হাজার বর্গফুট।
কারওয়ান বাজারে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউয়ে রয়েছে ব্যাংক এশিয়ার বিশাল জমি।
সাউথ ইস্ট ব্যাংকও টিসিবি ভবনের পাশেই তাদের প্রধান কার্যালয়ের ভবন নির্মাণ শুরু করেছে।
এসব ভবনে ব্যাংকের নিজস্ব কার্যালয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ফ্লোর ভাড়া দেয়া হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকগুলো এখন আর ভাড়া বাড়িতে শাখা খুলতে আগ্রহী নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা নিজস্ব জমি বা ফ্লোর স্পেসে শাখা খুলছে। এজন্য কোনো কোনো ভবনের একাধিক ফ্লোরও কিনে নিচ্ছে তারা।
এছাড়া কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঋণ গ্রহিতা অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে জামানত হিসাবে রাখা জমি বা ভবন নিলামের মাধ্যমে গ্রহণ করে ব্যাংক। পরে তা বিক্রি না করে নিজস্ব সম্পদ হিসাবে রাখছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।