অর্থমন্ত্রণালয় নতুন বাজেটের যে রূপরেখা চূড়ান্ত করেছে তাতে বলা হয়েছে, এবার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) হবে ৬৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার। আর সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হবে ৫৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
বাজেটে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হবে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি বাজেটেও একই লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে। গড় মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামিয়ে আনারাও ঘোষণা দেয়া হবে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে আসা বাজেটের রূপরেখায় দেখা যায়, আগামী বাজেটে আলোচিত পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ছয় হাজার ৮৫২ কোটি টাকা।
এরমধ্যে স্থানীয় মুদ্রায় রাখা হয়েছে এক হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। বিদেশি মুদ্রায় ৬০ কোটি ৮০ লাখ ডলার বরাদ্দ থাকছে এই সেতুর জন্য।
আগামী ৬ জুন জাতীয় সংসদে মহাজোট সরকারের শেষ বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
নতুন বাজেটের আকার কেমন হবে জানতে চাইলে শনিবার দুপুরে নিজ দপ্তরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মুহিত বলেন, “বাজেটের আকার এখনও চূড়ান্ত করিনি, কাজ চলছে।
তাজিকিস্তানের দুসানবেতে আইডিবির বৈঠক শেষে দেশে ফিরে বাজেটের কাজ চূড়ান্ত করবো। ”
“তবে এটা বলতে পারি আগামী বাজেট দুই লাখ কোটি টাকার বেশি হবে। যেহেতু চলতি বাজেটই এক লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। সেহেতু নতুন বাজেট অবশ্যই বেশি হবে। ”
সেটা দুই লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার ছাড়িয়ে যাবে কিনা- এ প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, “যেতে পারে।
কয়েকটা দিন অপেক্ষা করেন জানতে পারবেন। ”
১৮ থেকে ২২ মে দুসানবেতে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হবে।
রূপরেখার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৬৭ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা।
ঘাটতি মোকাবিলায় বিদেশি উৎস থেকে ২১ হাজার ১১০ কোটি টাকা আসবে বলে ধরা হয়েছে। আর অভ্যন্তন্তীণ উৎস্ থেকে ৩৫ হাজার ১৮০ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হবে।
নতুন বাজেটে চলতি মূল্যে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে জিডিপি প্রাক্কলিত করা হয়েছে ১১ লাখ ৮৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
২০১২-১৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট
চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল এক লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে এক লাখ ৮৯ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হবে।
চলতি বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল এক লাখ ৩৯ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটেও তা একই রাখা হচ্ছে।
চলতি বাজেটে এডিপির আকার ধরা হয়েছিল ৫৫ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৫২ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হবে।
সামগ্রিক ঘাটতি ধরা ছিল ৫২ হাজার ৬৮ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমে ৪৯ হাজার ৬৬০ কোটি টাকায় নেমে আসবে।
নতুন বাজেটের অগ্রাধিকার
বিদ্যুৎ, জ্বালানি, সড়ক, রেলপথ, বন্দরসহ ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নকে নতুন বাজেটে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
এছাড়া মানবসম্পদ উন্নয়ন, কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন, কর্মসৃজন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্ঠনী জোরদার করা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়াকেও নতুন বাজেটে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
মহাজোট সরকারের গত চার বাজেটেও এই খাতগুলোকে আগ্রাধিকার দেয়া হয়েছিল।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন
রূপরেখায় বলা হয়েছে, আগামী বাজেট হবে গত চার অর্থবছরে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের যে বুনিয়াদ রচনা করা হয়েছে তা সংহত করার এবং আগামী সরকারের জন্য উন্নয়নের দিকনির্দেশনামূলক একটি বাজেট।
গত চারটি বাজেট সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে যে সব প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে তার বাস্তবায়নের একটি চিত্রও নতুন বাজেটে উপস্থাপন করা হবে।
রেলওয়ে খাতের উন্নয়নে নতুন বাজেটে একটি রূপরেখা তুলে ধরা হবে।
নতুন বাজেটের চ্যালেঞ্জ
নতুন বাজেটে আটটি চ্যালেঞ্জের কথা বলা হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রাজস্ব খাতে পরিকল্পিত সংস্কার কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, পদ্মা সেতুসহ সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর জন্য অর্থ সরবরাহ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, কৃষি ও খাদ্যখাতে ভর্তুকিসহ কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় হ্রাস এবং প্রয়োজনে কৃচ্ছতাসাধান।
এছাড়া জ্বালানি খাতে স্বয়ংক্রিয় মূল্য সমন্বয় প্রদ্ধতি বাস্তবায়ন, মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখা, বিদেশি অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ এবং বৈদেশিক মুদ্রার কাঙ্খিত স্তর এবং বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখাও আগামী বাজেটের অন্যতম চ্যালেঞ্জ বলে অর্থমন্ত্রণালয়ের রূপরেখায় উল্লেখ করা হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।