আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিশর পরিস্থিতি কি বাংলাদেশকে কোন সিগন্যাল দিলো??

বিচ্যুত যৌবনে জোছনা আমায় করেছে উম্মাদ

মিশর থেকে কি শিখলাম আজকে একটা গুরুত্বপূর্ন বিষয় আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি ও এর ভবিষ্যৎ মোটেও শন্তিপূর্ন হবে বলে মনে হচ্ছে না। কেন জানি বার বার মনে হচ্ছে বাংলাদেশ মিশর কিংবা পাকিস্থান পরিস্থিতির দিকেই যাচ্ছে। তাই আমি ৩০ জুন থেকেই মিশর পরিস্থিতির দিকে খেয়াল রাখছিলাম। নির্বাচন পরিস্থিতি ও প্রস্তুতি আওয়ামীলীগ আর কয়েক মাসের মধ্যেই বাংলাদেশে একটা নির্বাচন হবার কথা।

কিন্তু পরিস্থিতি বলছে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর ব্যাপারে যেমন তৎপরতা অন্যান্য বার দেখা গেছে এবার সেরকম কিছু এখনো চোখে পড়ছে না। বরং নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয়ে জড়িয়ে পরছে। সরকারও আগামী নির্বাচনের পথ সুগম করার জন্য বিশেষ কিছু করছে না। বরং সরকারের কর্ম তৎপড়তা দেখে মনে হচ্ছে গড়ি মসি করে নির্বাচনের সময়টা আনা যায় কিনা। তারপর একটা জোড়াতালি দিয়ে নির্বাচনের ব্যাবস্থা করতে হবে।

যাতে করে তখন নির্বাচনটাই মুখ্য হয়। তত্বাবধায়ক সরকার ব্যাবস্থা মুখ্য না হয়। আর এজন্য আওয়ামিলীগ সরকার বিভিন্ন ইস্যু দিয়ে বিরোধী দলকে ব্যাস্ত রাখার চেস্টা করছে। আর ফের ক্ষমতায় আসার জন্য অতি অবশ্যই হাসিনা সরকার সব রকমের প্রচেস্টা চালাবে। বিএনপি কিন্তু বিরোধী দল বিএনপিরও কি সেরকম কোন প্রস্তুতি আছে।

বেগম জিয়ার পরে দলটির প্রধান নীতি নির্ধানকারী তারেক রহমান এখনো দেশে ফিরতে পারেন নি। মাথায় শত মামলার বোঝা নিয়ে ইদানিং যুক্তরাজ্য বিএনপির দু/একটা সভায় উপস্থিত থেকে নিজের আগমনী জানান দিচ্ছেন। আপাত মনে হচ্ছে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পূনর্ব হাল না হলে বিএনপি কোন ভাবেই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবে না। কিন্তু তত্বাবধায়ক সরকার কি আসবে? আওয়ামীলীগের বর্তমান অবস্থান বলছে এই ব্যবস্থা আর আসছে না। আর এজন্যই অত্যন্ত সুকৌশলে এই ব্যবস্থা রদ করা হয়েছে।

এই ব্যবস্থা পূনর্বহালের সম্ভাবনা আমি অন্তত দেখছিনা। যদি না বিএনপি চরম কোন আন্দোলন-সংগ্রাম করে সরকারকে বাধ্য করে তবেই কেবল মাত্র তত্বাবধায়ক সরকার বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফিরে আসতে পারে। কিন্তু বিএনপি কি পারবে? মনে হচ্ছে না। কারন বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের মনে ভয় ধরেছে। এই ভয় আওয়ামীলীগ খুব সুকৌশলে, সুচারুরূপে বিএনপি নেতা কর্মীদের মনে ধরাতে সক্ষম হয়েছে।

মানুষের কাছে রাজনীতি, দেশ, সমাজ, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন কায়েম করার চেয়ে নিজের জিবন রক্ষা করাটা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ন হয়ে পরেছে। কেইবা চায় বিনা বিচারে, বিনা উস্কানীতে, দিনে দুপুরে কিংবা রাতের কালো আঁধারে গুম হতে? ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমের ভাগ্য বরন করতে? কিংবা জামায়াত নেতাদের মতো, বা মাহমুদুর রহমানের মতো বছরের পর বছর কারাগের অন্ধ প্রকোষ্টে নির্যাতন ভোগ করতে? বিএনপিতে সেইরকম সাহসী রাজনীতিবিদের অভাব আছে বৈকি? যতদূর খবর আসে তাতে আমরা সবাই জানি বেগম জিয়া আন্দোলন করতে চান কিন্তু শীর্ষ নেতারা আন্দোলন বিমুখ। আন্দোলনের সম্ভাবনা ও ফালফল তারপরও যদি বিএনপি-জামায়াত শক্ত প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হয়, কিংবা ১/১১ পূর্ব সময়ে আওয়ামীলীগের মতো জ্বালাও পোড়াও সহিংস রাজনীতি না হোক এটলিস্ট ২০০১ সালের মতো আন্দোলন জমাতে পারে। তাহলেও সরকারের ভীত নাড়িয়ে সরকার কে কপোকাত করতে বড়জোর ৩দিন থেকে ১ সপ্তাহ সময় লাগবে। আর যদি বিএনপি-জামায়াত সেটা করতে সক্ষম হয় তখন আওয়ামীলীগের অবস্থান কি হবে? শত শত দুর্নীতি আর হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাত, হাজার হাজার মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা বা মৃত্যু এসব ব্যার্থতার বোঝা মাথায় নিয়ে কি আওয়ামীলীগ বিএনপির আন্দোলন জোড়দার হওয়ার সাথে সাথে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবে।

আমি অন্তত এটা বিশ্বাস করিনা। আপনাদেরকে ভাবতে হবে এই সরকারের আমলে যেসব অর্বাচীনেরা অবিবেচকের মতো মানুষ হত্যাসহ নির্যাতন, সহিংসতার সাফাই গেয়ে গেছে তারা কি সহজেই মুক্তি পেয়ে যাবে বিএনপি-জামায়াত-হেফাজতের লাখো লাখো নির্যাতিত নিষ্পেষিত গনহত্যার শিকার মানুষদের হাত থেকে। সাহারা, বেনজির, হাসান মাহমুদ, র‌্যাব জিয়াউর রহমান, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল, হানিফ, ইনু, মহিউদ্দিন আলমগীর সহ প্রায় প্রত্যেকটি থানার ওসি, এসি, ডিআইজি এদেরকে কি বিনা বিচারে মানুষ হত্যার মতো অপরাধের সাথে জড়িত থাকার পরও কি ছেড়ে দেওয়া হবে। সোজা উত্তর না। মিশর পরিস্থিতি কেন গুরুত্বপূর্ন আর তখনই মিশর পরিস্থিতি আমাদের রাজনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠবে।

তাই গতকাল মিশরে যা ঘটেছে তা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। গতকালের রাবা স্কোয়ারের গনহত্যার মধ্যে আমাদের মতো দেশে যেখানে উগ্র অসহনশীল সেকুলার ও ননসেকুলারদের মধ্যে একটা বিরাট রাজনৈতিক মতপার্তক্য রয়েছে তাদেরকে অনেক কিছুই মুখস্ত করে রাখতে হবে। বাংলাদেশ পরিস্থিতি সেদিকে গেলেও আমি অবাক হবো না। কারন ক্ষমতা যদি আওয়ামীলীগকে ছাড়তেই হয় তাহলে এক শ্রমিক নেতা আমিনুল হত্যা, শেয়ার বাজার, কিংবা শাপলা চত্বর গনহত্যআ দিয়েই গোটা আওয়ামিলীগকে ধরাশায়ী করা সম্ভব। কারন এই সব মানবতা বিরুধী অপরাধ ও দুর্নীতির সাথে আওয়ামীলীগ ও এর অংগ সংগঠনের শীর্ষে অবস্থানরত আগা-গোড়া প্রায় সবাই কোন না কোন ভাবে জড়িত রয়েছে।

তাই আওয়ামীলীগ কেন নিজেদের অস্তিত্বের জন্য এত বড় রিস্ক নিতে যাবে। ক্ষমতা যদি ছাড়তেই হয় তাহলে তৃতীয় কারো কাছে ক্ষমতা ছাড়তে হবে, যাতে করে অন্তত পক্ষে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসতে না পারে। এতে করে নিদেনপক্ষে আওয়ামীলীগ নিজের জিবন বাঁচাতে পারবে। আর তখনি তার তন্ন তন্ন করে খুঁজবে একজে আব্দুল ফাত্তাহ আল সিসিকে। কেবল মাত্র বাংলাদেশের ভবিষ্যত সিসি ই আওয়ামীলীগ কে দিতে পারে নিঃশংক রাজনীতি, গনহত্যা ও দূর্নীতি থেকে বেঁচে যাওয়ার নিশ্চয়তা।

পাশাপাশি ইন্ডিয়া, রাশিয়া সহ আওয়ামীদের দীর্ঘদিনের বন্ধুরা ডেমক্রেসি রিস্টরেশনের জন্য নতুন মিলিটারী বা তৃতীয় শক্তির সরকারকে বৈধতা দিবে। এমনকি মার্কিন যুক্ত রাস্ট্রও দেবে কারন লাখো লাখো ডলার বিনিয়োগ হচ্ছে আমেরিকা-বৃটেনকে ম্যানেজ করার জন্য। এবং কাজও হচ্ছে। যদি তৃতীয় শক্তি আসে আর একজন সিসি যদি ২/৪ বছরের জন্য বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসেন তবে, এর প্রধান শিকার হবেন বিএনপি-জামায়াতরর লোকজন। তবে জামায়াতই বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

কারন জামায়াতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য ৭১এর পটভূমিই যথেষ্ট। আর সেই তৃতীয় শক্তিকে বাহবা ও সমর্থন জানাবে প্রথম আলো গোস্ঠির সুশীল সমাজ ও গনজাগরন মঞ্চ। সেই শিকারের ভয়াবহতা রাবা স্ক্য়ার কিংবা আন্নাহদা স্কয়ারের মতো হবে কিনা জানিনা তবে শাপলা চত্বরের মতো যে হতেও পারে এটা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই বাংলাদেশে রাজনীতির এই কঠিন সময়ে চোখ কান খোলা রেখে, দেশ ও জাতিকে উদ্ধার করতে দরকার একজন গভীর চিন্তাশীল সাহসী রাজনীতিকের উত্থান।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।