বান্দরবান হতে এস আলম পরিবহনে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম গত ১৫ অক্টোবর, সকাল ৯:১৫ এর বাসে। বাস যথারীতি এসে থামলো চট্টগ্রাম অলংকার এর মোড়। সেখান হতে এক অসহায় বৃদ্ধ বাসে উঠলেন। জীর্ন শীর্ন শরীর। পরনে জামা কাপড় পরিস্কার, কিন্তু খুবই করুন দশা।
কিছুক্ষণ পর কন্ট্রাক্টর টিকেট দেখতে চাইলো। তিনি টিকেট দেখাতে পারলেন না। কোথায় যাবে জিজ্ঞাসা করতেই সে বলল, আমি ঢাকা যাব। কন্ট্রাক্টর খুব কড়া হয়ে বলল, আপনার যা আছে বের করেন, তা না হলে আপনাকে এখনই বাস হতে নামায়ে দেয়া হবে। হামকি ধামকি দিল।
বৃদ্ধ লোকটি মাত্র পঞ্চাশটি টাকা দেখাতে পারলো আর কোন টাকাই দেখাতে পারলো না। তাকে টেনে ধরা হলো এবং এখনই পারে তো বাস হতে ধাক্কা দিয়ে নামায়ে দিবে। বাসের সবাই বৃদ্ধ লোকটির সাপোর্ট করলে। সবাই বলল, কেন এস আলম পরিবহন অনেক নামী দামী। তার অনেক টাকা আছে।
সেক্ষেত্রে এই অসহায় লোকটির নিকট হতে কিছু টাকা নাই বা নিল ইত্যাদি। কন্ট্রাক্টর কিছুতেই থামছে না। সে বের করেই দিবে। বলছে ওনি টাকা না দিলে আমার চাকরি চলে যাবে ইত্যাদি। আমি মনে মনে ভাবলাম, যদি শেষ রক্ষা নাই হয় আমি দিব, কারণ কত টাকাইতো কতভাবে খরচ করি।
যাইহোক এক সময়ে ড্রাইভার এবং কন্টাক্টর রাজি হলো। ভাল লাগলো এই ভেবে যে বৃদ্ধ লোকটিকে বাস হতে নামায়ে দেয় নাই। লোকটি সাথে কোন লাগেজ নেই, এক কাপড়। হেলান দিয়ে যে বসতে হয় সিটে তাও জানে না। আমি বার কয়েক বলার পর সিটে হেলান দিয়ে বসলো।
লোকটিকে দেখে কেন জানি না খুব বাবার কথা মনে পড়ছিল। মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
একটা কুমিল্লার চৗদ্দগ্রামে একটা রেস্টুরেন্টে এসে গাড়ী থামলো। রেস্টুরেন্টটির কথা মনে করতে পারছি না। যাইহোক সেই লোকটিকে কন্ট্রাক্টর বাস হতে নামাল।
সকলেই বাস হতে নেমে। কিছু খেল। আমি খেতে যাওয়ার সময় খেয়াল করলাম, ৩টি এস আলম পরিবহন বাস থেকে আছে। খাওয়ার পর সবাই বাসে উঠলো, কিন্তু ঐ বৃদ্ধ লোকটি আর উঠল না। বাসের কিছু লোক অনুরোধ করল উক্ত লোকটিকে খোঁজ করার জন্য।
তিনি খোঁজ করলেন, কিন্তু কোথাও পেল না। কোথায় হারিয়ে গেল লোকটি? নাকি অন্য কোন বাসে উঠে পড়েছে? সেই সময় অন্য দুটি এস আলম পরিবহন আর দেখা গেল না। সবাই বলাবলি করছিল, আহ্ যদি আবার চট্টগ্রামের বাসে উঠে থাকে তাহলে আর উনার ঢাকায় যাওয়া হবে না। তারপর লোকটির সাথে মাত্র ৫০ টাকা আছে। আমার মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল।
মনে হলো এই ভাবেই মনে হয় অনেক লোক হারিয়ে যায়। প্রিয়জনেরা তার আর খোঁজ পায় না। লোকটির জন্য দোয়া করতে থাকলাম। যেখানেই থাক যাতে নিরাপদে থাকে। বাসের অন্য লোকগুলোও উক্ত লোকটির কথা বলতে লাগলো।
আর আফসোস করতে থাকলো। আমার এই ভেবে একটু ভাল লাগলো যে উক্ত দরিদ্র বৃদ্ধ লোকটির কথা ভাবার মতো লোক এখনো রয়েছে জগৎ সংসারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।