আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় মিলিয়ন ডলার পুরস্কার পাওয়ার কোন প্রস্তাব পেয়েছেন কি? যদি পেয়ে থাকেন তাৎক্ষনিকভাবে তা ডিলিট করুন। কিছু লোক এসব অফার পেয়ে উত্তর দেয় এবং শীঘ্রই তারা দেখতে পায় যে এই মিলিয়ন ডলার পুরস্কার লাভের জন্য তাকে অগ্রিম কিছু টাকা পরিশোধ করতে হবে। আজ পর্যন্ত পৃথিবীর কোন লোক এই মিলিয়ন ডলারের পুরস্কার পায়নি বরং লক্ষ লক্ষ লোক কয়েকশ মিলিয়ন ডলার হারিয়েছে, অনেক লোক আহত হয়েছে, অনেক লোক নিহত হয়েছে। বিষয়টাকে আপনি সাদামোটাভাবে চিন্তা করতে পারেন। আপনি জেনে আশ্চর্য হবেন যে পৃথিবীর এমন কোন দেশ নাই যেখানে এদের কার্যক্রম বিস্তৃত নেই।
পৃথিবীর এমন কোন সার্টিফিকেট , ব্যাংকের চেক, পাসপোর্ট, আইডি কার্ড, বিখ্যাত ব্যক্তিদের ছবি ও কণ্ঠস্বর নেই যা তারা নকল করতে পারেনা। ইন্টারনেটে এই ধরনের প্রতারণাকে অফাধহপব ভবব ভৎধঁফ বা ৪১৯ ভৎধঁফ বলে। এর অর্থ হচ্ছে অধিক টাকা পাওয়ার লোভে অগ্রিম কিছু টাকা পরিশোধ করে প্রতারিত হওয়া। নাইজেরিয়ার পেনাল কোডের ৪১৯ নং ধারাতে এ ধরনের সন্ত্রাসী এবং প্রতারণামূলক কার্যক্রম সম্পর্কে বলা হয়েছে। তাই এই ধরনের প্রতারনাকে ৪১৯ ভৎধঁফ বলে।
ইন্টারনেটের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো যেমন জরফিয়া, ইয়াহু মেসেঞ্জার, টুইটার, ফেইসবুক, ইউটিইব বা বিভিন্ন ই-মেইল একাউন্ট এর সদস্যরা যে কোন সময় এ ধরনের অপরিচিত কোন ব্যক্তির মেসেজ বা বন্ধুত্বের অনুরোধ পেতে পারেন। যদি আপনি ঐ ব্যক্তিকে ভালেভাবে না জেনেশুনে তার মেসেজের উত্তর প্রতি উত্তর দিতে থাকেন, তাহলে এক পর্যায়ে যে কোন সময় এ ধরনের প্রতারণার শিকার হতে পারেন। এ ধরনের ষড়যন্ত্রে পড়ে আপনি বেখেয়ালী এবং লোভী হলে টাকা হারানো বা আহত নিহত হওয়ার মাধ্যমে এ প্রতারণার শেষ পরিনতি ঘটতে পারে। তাই প্রতারিত হওয়ার আগেই সাবধানে থাকুন। আমাদেরকে এ সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোকে সাবধানে এবং নিরাপদে ব্যবহারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সুবিধা আদায় করতে হবে।
এ সমস্ত প্রতারকেরা আপনার কাছে সেলিব্রেটি, মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকার, সুনামি আক্রান্ত, বিধবা, ধনীর পুত্র বা কন্যা, ব্যাংকারস, আইনজীবি, মাইগ্রেশন করতে সুবিধা বঞ্চিত মেয়ে, প্রেমিক বা অন্য কোন পরিচয় ধারন করে মেইল বা মেসেজ পাঠাতে পারে। প্রতারকেরা আপনাকে চাকরি, লোন, ডোনেশন বা লটারীর টাকা দেয়ার অফার করতে পারে।
এসব প্রতারকদের প্রতারণার মূল তথ্য হলো ভূয়া তথ্য প্রদর্শণ করা। মিলিয়ন ডলার অর্থ যে তাদের অ্যাকাউন্টে আছে তা তারা প্রমাণ করে এবং তারা এও প্রমান করে যে এ সমস্ত অর্থ অতি শীঘ্রই আপনার অ্যাকাউন্টে আসছে। যেমন বিষয়টি এমন হতে পারে, আপনি যে মেয়েটির সাথে ইন্টারেনেটে পরিচিত হয়েছেন ।
রাজনৈতিকভাবে তার বাবা আইভরিকোষ্টের একজন উচ্চ পদস্থ ব্যক্তি ছিলেন। রাজনৈতিকভাবে তার বাবার হত্যাকান্ডের পর সে শরনার্থী হিসেবে সেনেগালে অবস্থান করছে। তার বাবা মৃত্যুর আগে ৮ মিলিয়ন ডলার ইংল্যান্ডের স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকে রেখে গিয়েছে। তার বাবার ভূয়া অ্যাকাউন্ট নাম্বার এবং লন্ডনের স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের ভূয়া ঋড়ৎবরমহ ঞৎধহংভবৎ ড়ভভরপবৎ এর ভূয়া ইমেইল এড্রেস যেমন ংঃধহফধৎফপযধৎঃবৎবফ@ুসধরষ.পড়স আপনাকে দেয়া হবে এবং অতি শীঘ্রই তার সাথে ফোনে বা ইমেইলে যোগাযোগ করতে বলা হবে। আপনি তাকে ফোন করলে তিনি আপনাকে আইনজীবির শরনাপন্ন হতে বলবে এবং আপনাকে আইভরিকোস্টের আইনজীবির ঠিকানা ও ফোন নম্বর দিয়ে দেয়া হবে, সেখান থেকে আইনজীবি কিছু গুরুত্বপূর্ন দলিলাদির জন্য আপনার কাছ হতে ২০০০/৩০০০ ডলার দাবি করতে পারে।
আপনি যদি মিলিয়ন ডলারের পুরস্কারের আশায় ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের বা অন্য কোন মাধ্যমে তাদের কাছে টাকা পাঠান, তাহলে আপনি একজন মগু, গাধা, ভোম্বল দাস, বলির পাঠাতে পরিণত হবেন। আপনি তাদের সার্বিক কার্যক্রমে অবিশ্বাসের কোন চিহ্ন খুঁজে পাবেন না। কিন্তু টাকা দেয়ার পর বুঝতে পারবেন এটি ছিলো আপনার জীবনের সর্বনিকৃষ্ট ভুল। তারা যদি আপনার কাছে টাকা আদায় করতে না পারে, অবশেষে ক্ষতিপূরন দাবি করতে পারে।
আপনি যদি এ সমস্ত প্রতারকেদের সাথে ঠাট্টা তামাশার জন্য ই-মেইল আদান প্রদান করেন, তাহলে আপনি যেকোন সময় আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীেিদর তালিকায় অÍর্ভূক্ত হয়ে যেতে পারেন।
আপানি হয়তো আপনার সত্যিকার ই-মেইল আইডি, ফোন নাম্বার বা ছবি দিয়ে তাদের সাথে তথ্য আদান প্রদান করছেন। কিন্তু এ সমস্ত প্রতারকেরা কখনো নিজেদের সত্যিকার পরিচয় দিয়ে আপনার সাথে তথ্য আদান প্রদান করবেনা। এফবিআই, সিআইএ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এদের খুঁজে বেড়াচ্ছে। এফবিআইএর মতে নাইজেরিয়ার অনওয়াহারা ইন্টারনেট তথ্যাদি ব্যবহার করে প্রায় ৪৪ মিলিয়ন ডলার অর্থ চুরি করেছে। আইন প্রয়োগ করেও এ সমস্ত প্রতারণা বন্ধ করা কঠিন।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সচেতনতাই নিজেদেরকে এ সমস্ত প্রতারনার হাত হতে রক্ষা করতে পারে।
এ সমস্ত প্রতারকেরা অত্যÍ চালাক । তার প্রতারণা করার জন্য আপনার আবেগকে প্রভাবিত করতে পারে। তারা আপনাকে জানাতে পারে হয়তো তারা কোন ধর্মীয় গুরুর কাছে আশ্রয়রত অথবা সুনামি বা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে নিরূপায় অবস্থায় রয়েছে। এ পর্যায়ে আপনই তাকে সাহায্য করতে পারেন।
তাকে সাহায্য করলে তার জমাকৃত টাকা হতে আপনি মিলিয়ন ডলারের ভাগ পাবেন। মনে রাখবেন আপনার টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য তারা সবধরনের চালাকির আশ্রয় নিবে।
তার আপনার কাছে প্রথম ধাপ, দ্বিতীয় ধাপ, তৃতীয় ধাপ এভাবে অনেকগুলো ধাপে টাকা আদায় করতে পারে। এতগুলো টাকা আপনার কাছ হতে নেয়ার পরও আপনি কখনো মিলিয়ন ডলারের ছোয়া পাবেন না। যেমন সেনেগালের নেসী ডাবুর ভুয়া, নাম, ই-মেইল আইডি, ওেেয়বসাইট, ব্যরিষ্টার, ধর্মযাজক ব্যবহার করে $৭.৫ মিলিয়ন ডলারের লোভ দেখিয়ে ইন্টারনেট গ্রাহকদের কাছ থেকে ছলে বলে কৌশলে বিভিন্ন উপায়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা করে ।
একটি মানুষের পিছনে সে মাসের পর মাস লেগে থাকে। প্রয়োজনে ফোন করে এবং যত সংখ্যক প্রয়োজন তত সংখ্যক মেইল করে। যেমন সে মিলিয়ন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রƒতি দিয়ে কোন ভুয়া আইনজীবির মাধ্যমে পাওয়ার অব অ্যটর্নী, আইনজীবির কনসালটেশন ফি, ভিসা ফি, বিমান টিকেট ফি, হোটেল বুকিং ফি, এন্টি টেরোরিষ্ট ফরম ফি, নোটারি ষ্টাম্প ফি এবং অন্যান্য আরো কিছু প্রসেসিংয়ের জন্য মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার হাজার ডলার হাতিয়ে নিয়ে থাকে । এটা তো মাত্র একজন প্রতারকের কৌশলের কথা জানলেন। এভাবে হাজার হাজার প্রতারক সংঘবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া, প্রতারকদের নতুন নতুন কৌশলের ব্যাপারে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অনভিজ্ঞতা, মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে এ সমস্তত প্রতারকগন নতুন দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে ভালোভাবে টার্গেট করেছে । কারন তারা মনে করে এ দেশের লোকদের ইন্টারনেটে প্রতারনা সম্পর্কে স্বল্পজ্ঞান থাকার কারনে খুব সহজেই এদের প্রতারিত করা সম্ভব। বাংলাদেশের গনমাধ্যমগুলো এখনো এ ব্যাপারে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারেনি। আশা করি ভুক্তোভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি ফেলে এই বিষয়টি একটি জাতীয় সমস্যায় পরিনত হতে পারে। সেই পর্যায়ে যাওয়ার আগে এখন থেকেই ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলে দেশীয় অর্থ বিদেশে পাচার হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
ইন্টারনেট ব্যহারকারীদের চিন্তা করা উচিত কেন একজন আপরিচিত লোক আপনার সঙ্গে পরিচিত হতে চাইবে, কেন আপনার সাহায্য চাইবে, কেন আপনার জীবন সঙ্গী হতে চাইবে, কেন আপনাকে মিলিয়ন ডলারের স্বপ্ন দেখাবে, কেন আপনাকে অ্যাডভান্স ফি পরিশোধের কথা বলবে। চিন্তা করুন এ বিশ্বাসের ভিত্তি কী। কেন আপনিই শুধু তার সবচেয়ে কাছের মানুষ, পৃথিবীতে কী আপনি ছাড়া কোন মানুষ নেই। চিন্তা করুন পাঁচ হাজার টাকা উপার্জন করতে আপনার কতটুকু পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়, কোটি টাকা উপার্জন করতে আপনার কতটুকু পরিশ্রমের প্রয়োজন। আপনি সেই পরিশ্রম করেছেন কি, নাকি বিনাশ্রমে বা স্বল্প শ্রমে আপনি মিলিয়ন ডলার বা কোটি টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছেন।
চিন্তা করুন আপনি আধিক টাকা পাওয়ার লোভে অ্যাডভান্স ফি পরিশোধ করে প্রতারিত হলে আপনার এবং আপনার পরিবারের ভবিষ্যৎ কি হবে। চিন্তা করুন এ ধরনের কাজের আইনি ভিত্তি কি? প্রতারিত হলে আপনার ক্ষতিপূরনের দায়ভার কেউ গ্রহণ করবে কি? এ সমস্ত প্রশ্নগুলো চিন্তা করলে আপরি আপনার করনীয় বুঝতে পারবেন। বুঝতে পারেবেন জেনে শুনে বুঝে বা না জেনে শূনে বুঝে এ ধরনের কাজে জড়িত হলে আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে বোকা লোকদের দলে দলভ’ক্ত হবেন। আপনার উচিত আপনার পরিবার আতœীয়স্বজন ও বন্ধুদের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার কারীদের এধরণের প্রতারণা সম্পর্কে সচেতন করা।
আপনি যদি তাদেরকে আপনার ইমেইল আইডি, ফোন নাম্বার, ব্যাংকের একাউন্ট নাম্বার, বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা দিয়ে দেন, তাহলে বুঝবেন আপনি মস্তবড় শিকারের জালে পতিত হয়েছেন।
তারা হয়তো আপনার কম্পিউটারকে ভাইরাস ও মেলওয়ার থেকে প্রটেকশনের ফরম পূরণ করিয়ে আপনার ইমেইল এড্রেস নিয়ে যাবে।
প্রতারকেরা কখনোই তাদের অরিজিনাল ছবি আপনরা কাছে পাঠায় না। এ সমস্ত সুন্দর মনোহরিণী ছবিগুলো বিভিন্ন মডেল এজেন্সী এবং ম্যাগাজিন থেকে সংগ্রহ করা হয়। আপনাকে ইন্টানেটে যদি কখনো অধিক টাকার প্রলোভন দেখিয়ে কোন সুন্দরী মেয়ের ছবি পাঠায় আপনি প্রতিকারের জন্য উপদেশ চেয়ে সরংংুড়ঁহম@নরঃঃবহঁং.পড়স এ ঠিকানায় পাঠাতে পারেন। এ ক্ষেএে এরা স্পাপিং এর জন্য প্রতারনাকারীর অ্যাকাউন্ট নষড়পশ করে দিতে পারে।
অথবা আপনি যঃঃঢ়://৪১৯.নরঃঃবহঁং.পড়স/ এ গিয়ে এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেতে পারেন বা উইকিপিডিয়াতে গিয়ে অফাধহপব ভবব ভৎধঁফ বা ৪১৯ ভৎধঁফ লিখে সার্চ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে পারেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।