সুন্দরবন, দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি, ক্ষুদ্র ও প্রন্তিক কৃষকের অধিকার, বনজীবীদের অধিকার ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে একত্রিত হওয়ার আহ্বান!
সকাল ৮:০০টায় হাঁসফাঁস করতে করতে মোহাম্মদপুর টাউন হলের সামনে পৌঁছাই। বাসের চেহারা দেখেই আতঙ্কিত। ওঠা তো দুরের কথা, ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারবো না। মফস্বলের মানুষ তো! সিএনজিতে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই বলে মনে হলো। খুঁজতে শুরু করি।
প্রথমে ‘এই, যাবে নাকি?’ ঢঙে, এরপর ‘মামা, যাইবেন?’ সবশেষে ‘কাকু-ভাইয়া, আমাকে একটু পৌছে দিবেন?’ - এই স্টাইলে শুরু করি। কিন্তু কোনো অনুনয়-বিনয়ে গলে না মহান সিএনজি-পাইলটের মন। দুই-একজন ড্রাইভার মনে মনে ভাবেন, ‘দ্যাখ শালা কতো দাম!’ আর মুখে বলেন ‘২০০ ট্যাকা দিবেন!’। সরকারি কর্মকর্তার মতো গাম্ভীর্য্য তাঁর মুখে। ‘সালাম দিয়ে কথা বলা উচিৎ ছিলো’ - মনে মনে ভাবি।
১ ঘণ্টা অরণ্যে রোদন করার পর আমার মনে হয়, জীবনে আর গুলশান যাওয়া সম্ভব নয়। আশাভঙ্গ, হতাশা আর বিবমিষা নিয়ে দাঁড়াই ‘তরঙ্গ’ সিটিং সার্ভিস (!)-এর সামনে। সামনে দূ-উ-র, দূ-উ-র পর্যন্ত দী-ঈ-র্ঘ লা-ই-ন। সুতানটি সাপের মতো চিকন লম্বা লাইন চলে গেছে গলির মধ্যে। গলি হয়ে উপগলি, তস্যগলির মাথায় কোথায় যে লাইনের শেষ, ঈশ্বর জানেন।
হিমালয় থেকে সুন্দরবন। ‘কিছুদিন পর রিক্সায় করে লাইনের শেষ মাথায় যেতে হবে!’ - আমার সঙ্গী কাজল বলে ওঠে। এক নোংরা ডাস্টবিনের পাশে আমরা ঝাড়া ২০ মিনিট দাঁড়িয়ে। কখন বাস আসে, কখন যায়, জানি না।
শোনা যায়, সরকার যানজট নিরসনের কথা সিরিয়াসলি ভাবছে।
এলিভেটর এক্সপ্রেস, পাতাল রেল, ফ্লাইওভার ব্লাহ ব্লাহ ব্লাহ। এইসব দানবীয় প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় রাস্তার উপর ইট-সিমেন্ট-রড-ক্র্যাশিং মেশিন-বোল্ডার-শ্রমিক-রিক্সা-পথচারী-বাস-প্রাইভেট কার মিলে যে জট তৈরি হবে সেটি কি ভাবা হয়েছে? এগুলো নির্মাণ করতে যে সময় লাগবে তার মধ্যে ঢাকা শহরে কতো নতুন মানুষ আসবে? এখনই এ শহরের লোকসংখ্যা প্রায় ২ কোটি। আরও ১ কোটি বাড়বে আগামী ৫ বছরের মধ্যেই। আর মফস্বলের কতোজন উঠতি পুঁজিপতি, কতোজন মধ্যপ্রাচ্য আর শান্তিবাহিনী ফেরত পয়সাঅলা এই শহরে নতুন বাড়ি তুলবে, তার কোনো হিসাব আছে? কতো বেকার শুধু বেঁচে থাকার জন্য ঢাকামূখী হবে আছে তার হিসাব? তবু ভাবতে ভালো লাগে, পাতাল রেল হবে! পুরো জাতি এক রোমান্টিক ভাবালুতায় ভুগতে থাকি। গাঁজা খাবার পর যেমন ভাব আসে!
দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমি স্বপ্ন দেখতে শুরু করি।
ঢাকায় এখন আর কোনো যানজট নেই। সবাই হয় সাইকেলে নয় তো পাবলিক বাসে করে কয়েক মিনিটেই গুলশান থেকে লালমাটিয়া বা শ্যামলী পৌঁছে যাচ্ছে। নতুন কোনো প্রাইভেট কার আমদানির অনুমতি মিলছে না গত ১০ বছর হলো। গার্মেন্টস্সহ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো চলে গেছে বিভিন্ন জেলাশহরে। জেলাশহরে বসেই আমদানি-রপ্তানি, বিদ্যুৎ-টেলিফোনের সব সমস্যা সমাধান করতে পারছেন; ই-মেইলেই সরকারি সিদ্ধান্ত জানা যাচ্ছে, ওয়েবসাইট থেকেই নেয়া যাচ্ছে সব ধরণের দাপ্তরিক সেবা।
কারোরই আর ঢাকায় আসতে হয় না, ফলে ব্যাপক হারে কমে গেছে ঢাকার জনসংখ্যা। সাতক্ষীরা, সুনামগঞ্জ, যশোর, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ ও নীলফামারী হয়ে উঠেছে শিক্ষাশহর। কেননা ঢাকা শহর থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে সব বিশ্ববিদ্যালয়। রাজধানীতে লেফট-রাইট করার কোনো ‘মহাদেশ’ বরাদ্দ নেই। একটি বহুতল ভবনে কাজ করছেন কয়েকজন পাইক-বরকন্দাজ।
এ সবকিছুর জন্য দরকার ব্রিটিশ কলোনীর হ্যাঙওভার কাটিয়ে ওঠা। প্রতিমূহুর্তে ক্ষমতা হারানোর ভয় থেকেই বোধ হয় ব্রিটিশরা দেশের সব ক্ষমতা, সব সম্পদ এক জায়গায় পুঞ্জিভুত করার নীতি নিয়েছিলো। আর তা-ই করে আসছি এই স্বাধীন দেশেও। এখান থেকে বেরিয়ে, রোমান্টিকতা ত্যাগ করে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করার আশা নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখতে থাকি।
বলাবাহুল্য, এটি একটি দিবাস্বপ্ন।
আর সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ রয়েছে, ‘দিবাস্বপ্ন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।