আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আড়ি পেতে শোনা



আড়ি পেতে অন্যমানুষের কথা শোনা অনৈতিক। তবুও কয়েকটি দেশের মানুষের বাসে-ট্রামে-পাবে-চাখানায়-পানের দোকানে কিছু নির্দোষ কথোপকথন পর্যবেক্ষণ শেষে তাদের সামাজিক মানস সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। জার্মান দুই মাঝবয়েসী লোকের কথোপকথনের বিষয় ছিল আবহাওয়া। ইউরোপে গরম বাড়ছে এই বিষয়ে আধঘণ্টা আলোচনা শেষে একজন ট্রাম থেকে নেমে যায়। অন্যজন সুডুকু খেলতে থাকে আপন মনে।

দুই ফ্রেঞ্চ মাঝবয়েসী মহিলা আলোচনা করছিলেন মেক আপ নিয়ে। কাকে কোন ধরণের মেকাপ মানাবে তা নিয়ে খুব সিরিয়াস চেহারা করে আলাপ করছিলেন ট্রামে। দুই স্প্যানীশ তরুণ আলোচনা করছিল উইকেন্ড প্ল্যান নিয়ে। কিছু বাড়তি পয়সা জোগাড়ের জন্য কয় ঘণ্টা বেশী কাজ করা দরকার হিসাব কষছিল দুজন। কথা বলছিলো ক্যাফেতে বসে।

ডাচ যুগলকে দেখেছিলাম এবার ছুটিতে কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায় তা নিয়ে ঘন্টাখানেক ঝগড়া করতে। পশ্চিমা মেয়েরা ঘুরতে যাবার ব্যাপারে বেশ সেনসিটিভ। ফলে আলোচনা তিক্ত হয়ে ওঠে। পশ্চিমে আজকাল বেশীর ভাগ সম্পর্ক ভেঙ্গে যাবার কারণ হলিডে প্ল্যানের বাজ়েট বিপর্যয়। দুজন টোগোর বাদামী তরুণ আলোচনা করছিল জিনিসপত্রের দাম নিয়ে।

দুই আফঘানের গল্প শুনেছিলাম রসনা বিলাস নিয়ে। দুই ইরানী তরুণ-তরুণীর কথোপকথনে কিভাবে এমেরিকায় সেটল করা যায় তার শলাপরামর্শ চলছিল। পরের কথা শুনে বেড়ানো আমার কাজ নয়। এটি নিজের সংস্কৃতির সঙ্গে অন্যদেরটা একটু তুলনা করে সভ্যতার কোন স্তরে আছি তা একটু দেখে নেয়া আরকি। দুনিয়ার সব মানুষকে দেখলাম জেনেরিক বিষয় নিয়ে মোটামুটি মাথা ঠান্ডা রেখে গল্প করতে।

আর দক্ষিণ এশীয়,বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের দুজন একজায়গায় হলে অবশ্যই অনুপস্থিত লোকজন নিয়ে আলোচনা করে। পরচর্চা-পরনন্দা-কুতসা। ঝাঁঝর সূঁচকে তোতা পাখির মতো বলে যাচ্ছে ওই সূঁচ তোর পেছনে ছিদ্র। গোটা দুনিয়ার মানুষ নিজের চরকায় তেল দিচ্ছে। আমরা পরের চরকায় তেল দিতে দিতে নিজেদের চরকাগুলো ঘ্যার ঘ্যার করছে।

দক্ষিণ এশীয় সামাজিক মানসের এই অন্যলোককে নিয়ে ভেবে কথা বলে নিজের সময়-ক্যালরী নষ্ট করার কারণ অনুসন্ধানে দুটি চরণ পেলাম, আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসেনাই কেহ ধরণী মিছে সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা অপরের পিছে। সম্ভবত এই বিষয়ে ভাবসম্প্রসারণ মুখস্ত করে আমরা ক্যানিবাল হয়ে উঠেছি। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রানাস্তির বোঁচা হয়ে চলেছি। অবশ্য উন্নাসিকতার পিনোকিও নাক লাগিয়ে আমরা তা লুকোতে চাই। বিনোদন দিতে চাই ঘটনাহীন নিশ্চল সমাজে।

ভাবখানা এমন আমি আর আমার পিটচুলকানোর সখা সখি ছাড়া বাকি সবাই ভুল। আর গোলকের বাকি মানুষ, নো দাই সেলফ বা নিজেকে জানো সারাংশ শিখে,নিজের কাজ নিজে করে,লাইনে দাঁড়িয়ে শৃঙ্খলার পরিচয় দেয়। যে কারণে প্রতিদিন একটু একটু করে অগ্রসর হয় পশ্চিমা সমাজ। আর আমরা পেছন দিকে দৌড়াতে দৌড়াতে পৌছে যাই অন্ধকার যুগে। বুঝে না বুঝে হয়ে উঠি ডারউইনের জেলিফিস আবা্রো।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।