মাসুদ কামাল হিন্দোল, প্রাইমখবর
নাঈমুল ইসলাম খান দৈনিক আমাদের অর্থনীতি ও ইংরেজি দৈনিক আওয়ার টাইমের সম্পাদক। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে এম এ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন দৈনিক আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ এবং আমাদের সময়ের। কলাম লেখার পাশাপাশি নিয়মিত টিভি টকশোতে আলোচক হিসেবে অংশ নেন। সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন প্রাইমখবর ডটকমের মাসুদ কামাল হিন্দোলের সঙ্গে।
প্রাইমখবর ডটকম : বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী ?
নাঈমুল ইসলাম খান : ঘটনা অনেক কিন্তু এগুলো বেসিক্যালি আগামীতে যে নির্বাচন হবে সেই নির্বাচনকে ঘিরেই মূলত সব সঙ্কট। সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং এ বিচার করতে গিয়ে আরও নতুন নতুন উপসঙ্কট এসেছে। এভাবেই বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা যায়।
প্রাইমখবর ডটকম : সাংবাদিক পেটানোর দায়ে অনেক নাটকীয় ঘটনার পর গোলাম মাওলা রনি গ্রেফতার হয়েছেন। পুরো ঘটনাটি কে আপনি কীভাবে দেখছেন ?
নাঈমুল ইসলাম খান : এটা অত্যন্ত অন্যায়।
এটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের সাংবাদিকদের ওপর নানারকম হুমকি-ধামকি নিপীড়ন এগুলো আছে। এগুলোর সঙ্গেই সাংবাদিকতা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। আমি মনে করি, রনির এ ঘটনার পর সাংবাদিকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া হয়। প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে যেকোনো কারণেই হোক সরকারও এটাকে প্রশ্রয় দেয়নি।
আওয়ামী লীগের মধ্যে রনির ভূমিকা অপছন্দ করে এরকম একটা গ্রুপ হয়তো আছে। আইনের প্রয়োগটা হঠাৎ অবাক করা নিরপেক্ষ পুলিশি অ্যাকশন দেখিয়েছ। আদালত জামিন দিয়েছেন আবার তা বাতিলও করেছেন। এগুলো স্বাভাবিক না আবার এমন একটা অস্বাভাবিক ঘটনা যা আবার আমাদের প্রত্যাশিত। হঠাৎ পাওয়াটাও আমরা এপ্রিশিয়েট করবো।
এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি হোক সেটাও চাইব না। আমরা চাইব যে, আইন তার স্বাভাবিক গতিতেই চলুক। অপরাধীর বিচার হোক। এটা নিয়ে রাজনীতি হোক সেটা আমরা চাইব না।
প্রাইমখবর ডটকম : আগামীতে ক্ষমতায় গেলে নতুনধারার রাজনীতি করবে বিএনপি- এ নতুনধারা বলতে বিএনপি কী বোঝাচ্ছে ?
নাঈমুল ইসলাম খান : বিএনপি কী বোঝাচ্ছে তারা যে সেটা স্পষ্ট করেছে তা নয়।
নির্বাচনের আগে মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য উদ্দীপক অনেক কথা বলে থাকে এটা তারই অংশ। সামনে তারা আরও অনেক চমৎকার প্রতিশ্রুতি দেবেন। অতীতে আওয়ামী সরকারও ক্ষমতায় আসার আগে তারা গুণগত পরিবর্তন করবেন এরকম অনেক কথাই তারা বলেছেন। বহুলাংশেই আমরা সেগুলো বাস্তবায়িত হতে দেখিনি। তারপরেও আমরা নাগরিক হিসেবে আশা করব আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের আচরণ, চিন্তা-ভাবনা, দেশের প্রতি তাদের ভালোবাসা এগুলোর আমূল পরিবর্তন আসবে।
তারা আরও স্বচ্ছ, আরও গণতান্ত্রিক, সুশাসন কায়েম করবেন এগুলো আমরা আশা করব। আমরা আরও আশা করব বিএনপি বা আওয়ামী লীগ পরবর্তী টার্মের জন্য যে সব প্রতিশ্রুতি দেবে বিগত দিনের মতো প্রতারণা হবে না। এটা তারা আন্তরিকভাবেই পালন করবে।
প্রাইমখবর ডটকম : আওয়ামী লীগের সঙ্গে কি জামায়াতের কোনো আঁতাত হতে পারে, আপনি কী মনে করছেন ?
নাঈমুল ইসলাম খান : আমি আঁতাতের সম্ভাবনা বাস্তবে খুব একটা দেখি না। আবার প্রকাশ্য আঁতাত হওয়া প্রায় অসম্ভব।
গোপন আঁতাত কার্যকর করাও সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ আর জামায়াত ঐক্যজোট হচ্ছে এটাও কল্পনা করা যায় না। আঁতাত হলে আ’লীগের ভেতরেই বিদ্রোহ হবে। গোপন আঁতাত করলে তার ফল ভোগ করা যায় না। গোপন আঁতাতে ভোটের প্রচারণা করার সুযোগ নেই।
আর ১৮ দলীয় জোট থেকে যদি জামায়াতকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচন করে তাতে লাভ হবে না। এতে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা হারাবে ।
প্রাইমখবর ডটকম : নির্বাচন কমিশন কারো সঙ্গে আলোচনা না করে আচরণবিধি সংশোধনের খসড়া করেছে। অনেকেই ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
নাঈমুল ইসলাম খান : আমার মনে হয় না এতে ইসির নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
আমাদের বুঝতে হবে ইসি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাদের কাজ করতে হয় সংবিধান অনুসারে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনেক দলের বিভিন্ন মত আছে। এজন্য মাঝে মাঝে ইসি ভুল বোঝাবুঝির শিকার হয়। এখন তারা যে আচরণবিধির কথা আলোচনা করছে এটা বর্তমান সংবিধানে আছে।
দুই একটা উদাহরণ দিয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতিত্তের অভিযোগ করা আমি সংগত মনে করি না।
প্রাইমখবর ডটকম : হেফাজতে ইসলামের প্রধান আল্লামা শফী এখনো আলোচনার তুঙ্গে। ‘তেঁতুল’ তত্ত্বের পর এবার তার ‘উলঙ্গ’ তত্ত্ব আলোচিত।
নাঈমুল ইসলাম খান : আমি আল্লামা শফীর কোনো মতামতের অনুসারী না। একজন ক্রিশ্চিয়ান মিশনারী যদি দেশে দেশে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন মানুষকে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করেন।
আমরা কি এটাতে বাধা দেই। এক্ষেত্রে ইসলামী উদ্যোগও আছে। অনেককে মুসলমান বানানোর চেষ্টা। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি তার এরকম তত্ত্ব দেওয়ারই কথা । এটাই তার কাজ।
তেঁতুলতত্ত্ব এসটাবলিস্ট করতে তিনি কি কারো ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন? তখনই আমি বলব তাকে গ্রেফতার করতে। আল্লামা শফীর কোনো প্রভাব নেই আমাদের জীবনে। এগুলো আমাদের সবকিছুই স্থূলভাবে দেখার চেষ্টা। গ্রামীণ নারীরা এনজিওতে কাজ করছেন। গ্রার্মেন্টসে যে ৩০ লাখ নারী কাজ করছেন শফী সাহেব কি বাঁধা দিয়ে রেখেছেন।
মুখেতো মানুষ অনেক কিছুই বলেন। আমাদের চেষ্টা করতে হবে মাদরাসা শিক্ষা আধুনিকায়নের।
প্রাইমখবর ডটকম : ছোট হয়ে আসছে আওয়ামী লীগের পৃথিবী। আওয়ামী লীগ কি পারবে ঘুরে দাঁড়াতে?
নাঈমুল ইসলাম খান : ঘুরে দাঁড়ানো বলতে যদি এটা বোঝায় যে, আগামী নির্বাচন আবার ক্ষমতায় আসতে পারবে কী-না। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আওয়ামী লীগের সুযোগ আছে।
আবার ব্যক্তিগতভাবে এটাও মনে করি আওয়ামী লীগ সে সুযোগ সম্ভবত কাজে লাগাতে পারবে না। মনে হচ্ছে; তারা অত্যন্ত অগোছালো। তারা সাফার করবে এটা আমার আশঙ্কা।
প্রাইমখবর ডটকম : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, আমার কাছে তথ্য আছে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে। আপনার মন্তব্য বলুন।
নাঈমুল ইসলাম খান : আমি তার বক্তব্য থেকে যদ্দুর বুঝি, এটা তার বাংলা ভাষার ওপরে দখলের দুর্বলতার প্রকাশ। কথাটা যখন আমি নিউজে শুনেছি তখনই আমার মনে হয়েছে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সহযোগী সংগঠনগুলো নানানরকম সার্ভে করে। ওই সার্ভে থেকে হয়তো তাদের তথ্য উপাত্ত আছে যেটা ইন্ডিকেট করে আওয়ামী লীগের পক্ষে আগামী নির্বাচনে জয়ী হওয়া সম্ভব। এই যে আমি কথাটা বললাম এটা তার বাংলায় দখলের দুর্বলতা বা চর্চার দুর্বলতা হেতু। সংক্ষেপে বলতে গিয়ে তিনি ইংরেজি স্টাইলে এমন একটা কথা বলেছেন সেটা তার বিরোধীরা ব্যবহার করছে।
আমি মনে করি জয়ের উচিত আগে স্ক্রিপ্ট তৈরি করা এবং ভালোভাবে সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নেওয়া। কারণ তিনি বাংলায় এতোটা স্বচ্ছন্দ নন। যতোটা স্বচ্ছন্দ হলে রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া যায়। আমার মনে হয় এটা প্রস্তুতি নিয়ে লিখিত বক্তব্য দেওয়া উচিত।
প্রাইমখবর ডটকম : হেফাজত ও শাহবাগ রাজনীতির নতুন অঙ্ক এবং একই সঙ্গে আতঙ্ক ।
আপনি কি মনে করছেন ?
নাঈমুল ইসলাম খান : অঙ্ক এবং আতঙ্ক দুইটাই ঠিক। আবার এটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। শাহবাগের পরে হেফাজতের আবির্ভাব। একটা আরেকটাকে নিউট্রালাইজ করে ফেলেছে। শাহবাগ চলে গেল আওয়ামী লীগের ভাগে আর হেফাজত চলে গেল বিএনপির ভাগে।
এটা নিউট্রাল হয়ে গেছে। আসলে শাহবাগ যেভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল তখন মনে হচ্ছিল তারা সারা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে। সে অবস্থান শাহবাগ হারিয়েছে। এবং হেফাজতের আবির্ভাবের কারণে বিএনপির পক্ষে তারা তাদের আলোড়ন তৈরি হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে একটা নিউট্রাল সিচুয়েশন।
কেউ কাউকে পরোয়া করতে হয় না। যে যার অবস্থানে আছে। আবার তারা স্থিতাবস্থায় চলে যাবে।
প্রাইমখবর ডটকম : আপনি কি মনে করেন সন্ত্রাসবিরোধী আইন রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হবে ?
নাঈমুল ইসলাম খান : যে কোনো আইনই রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হয়। আবার অরাজনৈতিকভাবেও ব্যবহার হয়।
সন্ত্রাসবিরোধী আইন যে শুধু সরকারই ব্যবহার করে তা নয়। অনেক বিত্তশালী নাগরিকও অন্য নাগরিকের ওপর তা ব্যবহার করেন। নারী নির্যাতন আইন গ্রামে-গঞ্জে, শহরে-বন্দরে অপব্যবহার হয়। কাউকে শিক্ষা দিতে হলে পুলিশের সহায়তায় একজনকে জেলে পাঠানো, টাকা খরচ করানো, মানে হেনস্থা করা। যে কোনো আইনের অপব্যবহার হতে পারে।
বিচারব্যবস্থা এক অর্থে স্বাধীন হয়েছে। সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করার চর্চা তারা এখনও করতে পারেননি। এর জন্য সময়েরও প্রয়োজন রয়েছে। আমার মনে হয় ধীরে ধীরে আমরা একটা ভালো বিচারব্যবস্থা পাব যেখানে অপব্যবহার রোধ হবে।
প্রাইমখবর ডটকম : অনেকেই মনে করছেন তৃতীয় শক্তি ক্ষমতায় আসবে।
তাহলে কি আবারও সামরিকবাহিনীকে আমরা দেখতে পাব নতুন কোনো ফর্মে ?
নাঈমুল ইসলাম খান : তৃতীয় শক্তি বলতে যদিও নানানরকম ব্যাখ্যা করা যায়। আমাদের দেশে তৃতীয় শক্তি বলতে সেনাবাহিনীকে ইঙ্গিত করেই আলোচনা করা হয়। সেনাবাহিনী আবারও ক্ষমতায় আসবে কী-না আমি জ্যোতিষীর মতো বলব না। আমার মনে হয় সেনাবাহিনী যতো না ক্ষমতায় আসতে চায়, তার চেয়ে অনেক বেশি সিভিল সোসাইটির একটা অংশ বা রাজনীতিবিদরা চান। সেনাবাহিনীর কোনো উচ্চাভিলাসি অফিসার যতো না চান, তার চেয়ে অনেক বেশি চান সিভিল সোসাইটির একটি অংশ এবং রাজনীতিকদের একটি অংশ।
সেনাবাহিনী ক্ষমতায় এলে আমি বিস্মিত হব না, অবাক হব না। সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আসবে না, এটা বলারও সুযোগ নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।