সত্য ও সুন্দরের পক্ষে এবং মিথ্যার বিপক্ষে ৩১৮...
নোয়াখলী সম্বন্ধে আমার তেমন কোন পরিষ্কার ধারণা ছিল না। তবে অনেকের মুখেই শুনতে পেরেছি ওখানকার ভাষাও যেমন বিদঘুটে, মানুষের মেজাজও তেমন খিটখিটে। ভদ্রোচিত ব্যবহার এরা করতে জানে না। কিন্তু আমার মনে হয় ভাল-মন্দ সব জায়গাতেই আছে, কোথাও বেশী আবার কোথাও কম শুধু নোয়াখালীর দোষ কেন?
এই ভাল-মন্দের প্রশ্নটাই আমার মনে একটা নিরব তোলপাড়ের ছায়াপাত করত প্রায়ই। যদি কোনদিন নোয়াখালী যেতাম, স্বচক্ষে দেখতাম, স্বকর্ণে শুনতাম, তবে বুঝতে পারতাম কথাটুকু কতটুকু সত্য।
একদিন আমার সে সুযোগ এসে গেল। নেত্রকোনা থেকে আমাকে বদলী করা হল নোয়াখালীতে। যেতে হল সেখানে, তবে সপরিবারে নয়। কারণ বিতর্কিত একটি জায়গা নোয়াখালী। পরিবার সাথে করে গেলে কোন ফ্যাসাদে আবার পড়ে যাই তার ঠিক নেই।
এই মহাযাত্রা নিয়েই আমি এই প্রবন্ধটি তোমাদের সামনে তুলে ধরছি, পড়ে দেখতে পার। আশা করি তোমাদেরও এইটি মোটামুটি ধারণা হবে নোয়াখালী ব্যাপারে।
একদিন আমি কিশোরগঞ্জ থেকে ছিকস্ ডাউন চিটাগাং মেইল ট্রেনে সকাল সাতটায় রওনা দিলাম নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে। সঙ্গে ছিল একটি মাত্র বেডিং। এই যাত্রার শুরু থেকে নোয়াখালী পৌছার পর কয়েক মাসের অভিজ্ঞতা থেকেই কিছু কিছু ঘটনা লিখছি।
এখানে আমার ট্রেনটি কুমিল্লা স্টেশন ছেড়ে যতই এগুচ্ছি ততই যাত্রীদের ভাষার ও কথায় নোয়াখালী রেশ মনে হচ্ছিল। ফেরীওয়ালারও দুচারটে ছাড়া বাকীগুলো ছিল নোয়াখালী বা তার আশে পাশের এলাকার।
যাত্রীদের হৈ চৈ, ফেরীওয়ালাদের হাক ডাক আর ভ্যাপসা গরম সবমিলে এক অসহনীয় পরিবেশের মধ্যে বসে হাঁপাচ্ছিলাম। এরি মধ্যে এক দাঁতের ক্যানভাছার আমার সামনে এসে দাঁড়াল, বেশ চড়াগলায় হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলছিল-
আচ্ছালামু আলাইকুম, হেডিও ভাই সাহেবান, আই আনহের লাই ইগগা খুব ভালা দাঁতের হাউডার আনছি। এই হাউডার দি দাঁত মাইজলে দাঁতের হোকা মরি যায়।
দাঁত দুধের মত হরিষ্কার অয়। কোন বিষ বেদনা থাকে নো। আঁর ইগগা কৌটার দাম দুই টিয়া মাত্র। আনহেরা কেউ নিবেদ নি ইগগা কোট। অনেক চেঁচামেচির পরও একটি কৌটাও বিক্রয় করতে না পেরে আবার বলতে লাগলো-
আনহেরা আর হাউডার কিনেন।
আইজেরা লাই আই দুইটিয়ার জাগায় দেড়টিয়া করি দিলাম হত্তেক কৌটা। তয় নিতেন নো কিল্লাই?
হায়! এত অনুরোধ করার পরও কেউ একটি কৌটাও নিতে চাইল না। এতে সে রেগে গিয়ে বলল-
থেথি ইয়ানে কি হকির হেছেনজার উইটছেনি, ইগগা কিনবার লাই হুনদের মদে জোর নাই। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, হেডিও হুজুর! হেথায় কেও আর ইগগা ওষুদ কিনলনো। আনহে ইগগা কৌটা নেন দয়া করে।
ভাবলাম অতন্তঃ একটি কৌটা না নিলে হয়ত তার ব্যর্থতার সমস্ত ক্ষোভ আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে কোন বেখাপ্পা কথা বলে বসে তার ঠিক নেই। তাই একটা কৌটা নিয়ে নিলাম। এবার সে খুশী হয়ে বলল, জওরী জওর ছেনে তোয়ারা মণ্ডু ছেন।
দুর্ভাগ্যবশতঃ ঐদিন একটি রেলওয়ে পুল মেরামতে থাকায় আমাদের ট্রেনটি...। চলবে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।