পঙ্খিরাজে চাদেঁর দেশে
‘আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, পবিত্র সত্বা তিনি যিনি এ যানবাহনকে আমাদের বাধ্যগত করে দিয়েছেন, অন্যথায় একে আমরা বাধ্য করতে পারতাম না। আমরা নিশ্চয় আমাদের প্রতিপালকের কাছে প্রত্যাবর্তন করব। হে আল্লাহ! আমরা তোমার নিকট আমাদের এই সফরে নেকী, তাক্বওয়া এবং তোমার পছন্দের আমল প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের জন্য এই সফরকে সহজ করে দাও এবং এর দূরত্ব সংকুচিত করে দাও। হে আল্লাহ! আমাদের সফরে তুমি আমাদের সঙ্গী এবং আমাদের পরিবারের জন্য তুমি আমাদের স্থলাভিষিক্ত।
হে আল্লাহ! সফরের কষ্ট, খারাপ দৃশ্য এবং পরিবার, ধনসম্পদ এবং সন্তান সন্ততির ক্ষতি দেখা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি। ’
এই দোয়া পড়ে আজ ২রা অক্টোবর ২০১০ রোজ শনিবার বিকাল ১৯:২৫ ঘটিকায় হিথরো বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমানে দীর্ঘ সফরে বের হব! অবশ্যি এটা শুধু সফর নয় বরং ফরজ কর্ম সম্পাদন করার উদ্দেশ্যে বায়তুল্লাহ যাত্রা। হে আল্লাহ! আমি হাজির, বলে তাঁর দরবারে উপস্থিত হব। দীর্ঘ সফর এজন্য হবে আমি প্রথম লন্ডন থেকে বাংলাদেশে যাব। সেখানে কিছুদিন অবস্থান করে আমার আম্মাকে নিয়ে প্রভূর ডাকে হাজির দেব, যদি তিনি তৌফিক দেন! আবার মক্কা -মদিনায় সপ্তাহ চারেক অবস্থান করে বাংলাদেশে ফিরে যাব।
দেশে সপ্তাহ দু’য়েক থেকে আবার লন্ডনে ফিরে আসব আমার পরিবারের কাছে। এসব সম্ভব হবে যদি একমাত্র মহান আল্লাহ ইচ্ছা হয়! আর যদি সকলের দোয়া থাকে। আমি এই মাস দুয়েক ব্যস্থতার জন্য ব্লগে আমার প্রিয় লেখাগুলো মিস করব! সকলের সাথে নিজের মতামত শেয়ার করার হয়তো সুযোগ হবে না। মন কিছুটা আনচান করবে।
তাই সকলের কাছে সবিনয় দোয়া প্রার্থী, যাতে আল্লাহর হুকুম যথাযথ ভাবে সম্পন্ন করতে পারি! এতৌফিক যেন তাঁর অধম বান্দাকে নিজ গুনে দান করেন।
তাহলে প্রতিটি পদক্ষেপ স্ন্দুর ও স্বার্থক হবে। প্রতি ক্ষেত্রে আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভ করে নিজেকে ধন্য করব! আর সফর শেষে সকলের সাথে সবকিছু শেয়ার করব ইনশাআল্লাহ! যেভাবে অতীতে ‘নবীর দেশে মজনু বেশে’ প্রবন্ধে শেয়ার করেছিলাম। উক্ত প্রবন্ধের কিছুটা আবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি!
‘বক্ষে আমার কা’বার ছবি
চক্ষে মোহাম্মদ রাসুল।
শিরোপরি মোর খোদার আরশ
গাই তারি গান পথ-বেভুল’।
কাজী নজরুল ইসলামের এই সঙ্গিতটি হৃদয়ের তারে তারে নিত্য বাজে।
আর সুদূর মক্কা মদিনার মুসাফির হতে ব্যাকুল হই! হারমাইন শরিফের জিয়ারত মুমিনের জীবনে সবচে’ বড় আকাংখা। আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলমানের উপরই হজ্জ্ব ফরজ। কুরআন শরিফে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর উদ্দেশ্যে বায়তুল্লাহর হজ্জ্ব সম্পাদন করা মানুষের উপর ফরজ, যার সেখানে পৌঁছার সামর্থ্য আছে। ’ পৃথিবীর মূল শহর হল মক্কা শরিফ। এই শহরে নবী শ্রেষ্ট হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর উপর প্রথম ওহী অবতীর্ণ হয়।
ইসলামের আলো এখান থেকেই প্রথম দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। মক্কা শরিফে ইবাদতের জন্য প্রতিষ্টিত বিশ্বের সর্বপ্রথম ঘর কাবাশরিফ। আল্লাহ পাক বলেন, ‘নিশ্চয় মানব জাতির ইবাদতের জন্য তৈরী প্রথম ঘর হল এই মক্কার ঘর, যা নিখিল সৃষ্টির জন্য মঙ্গলময় ও পথনির্দেশক, তাতে সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ রয়েছে, তন্মধ্যে অন্যতম হল মাকামে ইব্রাহিম। যে সেথায় প্রবেশ করল সে নিরাপদ হল’। আল্লাহর পবিত্র গৃহ কাবা শরিফ ও রাসূল (সা.) স্মৃতিধন্য মদিনা শরিফ দেখার ইচ্ছা অন্তরে অহর্নিষ।
একটি কবিতায় লেখেছিলাম,
প্রভূ প্রেমের স্বর্গ সুধা কখন পাব নিজ হাতে
ডাক আসবে হারমাইন শরিফের জিয়ারতে!
পবিত্র ভূমি একবার যদি দেখি নয়ন ভরে,
রিক্ত হৃদয়ে ব্যথা বেদনা যাবে মুহুর্তে ঝরে।
চোখে মুখে মাখব মদিনার ধূলি, পথের মাটি
নবীর কদমের পরশ যেথায় লেগেছে হাঁটি।
প্রভুর কাছে প্রত্যহ অন্তরের অন্তীম প্রার্থনা,
আমার যেন মৃত্যু হয়না, না দেখে মক্কা মদিনা।
আমার একান্ত বিশ্বাস এই তামান্না প্রত্যেক মুমিনের অন্তরে। আশা-নিরাশার বালুচরে দীর্ঘদিন সাঁতার কাঁটি।
আমি কি কখনো বাইতুল্লাহ ও রওজাশরিফ জিয়ারত করতে পারব! সেই অভাবনীয় সুযোগ আমার জীবনে কি আসবে! যতদিন যায় মনের এই বাসনা প্রবল থেকে প্রবলতর হয়। হজ্জ্ব যাত্রীদের সাথে দেখা হলে বলি আমার জন্য দোয়া করবেন হারমাইন শরিফে যেন শীঘ্রই যেতে পারি! এক সময় নিজের সাথে বিদ্রোহ ঘোষণা করি। আমি আর কোনদিকে পা বাড়াবনা, যদি সুযোগ হয় মক্কা মদিনা যাব!
আমার সেই প্রার্থনা অবশেষে কবুল হয়। হারমাইন শরিফ জিয়ারতের সুযোগ হয় ২৭ এপ্রিল ২০০৬ সালে। হিথ্রো বিমান বন্দর থেকে কাতার এয়ারলাইন্সে যাত্রা শুরু করি।
রাত সাড়ে নয়টার সময় ফ্লইট হয়। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ আরাধনা, শ্রেষ্ঠ সাধনা সফলতার দোর গোড়ায় পৌঁছে। আনন্দের সীমা-পরিসীমা হারিয়ে ফেলি। খুশির আমেজে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে ‘আয় কে যাবে সঙ্গে আমার নবীর দেশে আয়..’। (সংক্ষেপিত)
আমি জানি এই সফরকালে আমার ছেলে মুসতাকিম আমাকে খুব মিস করবে।
যেহেতু তার ভূবনের সিংহভাগ জুড়ে এখনো আমি। তবুও প্রভূর ডাকে সাড়া দিতে মন অস্থির। আমার মাকে নিয়ে আল্লাহ ডাকে সাড়া দিতে পারলে আমার জীবন স্বার্থক হবে! আব্বা শারীরিক ভাবে অসুস্থ। তাঁর পাশে যদি কিছুদিন থাকতে পারি, মনেে কিছুটা হলেও আত্মতৃপ্তি পাব। যেভাবে ২০০৪ সালে তাঁর সাথে দিল্লি হসপিটালে মাস খানিক থেকে কিছুটা সেবা করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে হয়েছিল।
এজন্য নিজের পরিবার ছেড়ে মা-বাবার পাশে থাকাটা আমার কাছে পরম আনন্দের।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।