থেমে যাবো বলে তো পথ চলা শুরু করিনি।
খবরে বেরিয়েছে [ প্রথম আলো, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১১; ‘হাসপাতালে না গিয়ে নয়জন চিকিৎসক বেতন তুলছেন’ ] যে চিকিৎসকরা হাসপাতালে না যেয়েই বেতন তুলছেন।
আমাদের দেশের চিকিৎসক যারা হন, তাদের আর যে উদ্দেশ্যই থাকুক না কেন, গ্রামের মানুষদের চিকিৎসা দেওয়ার কোন উদ্দেশ্য না লক্ষ্য থাকে না। তারা শহুরে বালক-বালিকা, তাদের লক্ষ্য যেনতেন ভাবে একটি সরকারী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়া, তারপর পরীক্ষায় পাশ করে বিসিএস দেওয়া, আর বিসিএস না হলে ‘প্লাব’ বা ‘ইউএসএমএলই’ দিয়ে উন্নত কোন দেশে হিজরত করা।
এমন একদল নবীন চিকিৎসকদের মাঝে সরকার কি খুঁজে পেল, তাই এখন প্রশ্ন সাপেক্ষ হয়ে দাড়াচ্ছে।
হঠাৎ করে গেল বছরে গ্রামে-গঞ্জে ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হল। বলা হল তারা গ্রামের মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিবেন। আমরা আমাদের সমাজের এইসব নাক-উঁচু চিকিৎসকদের কম-বেশি চিনি।
টিপিক্যাল এই সব ডাক্তারদের নেওয়া হল গ্রামে। বলা হল গ্রামের মানুষদের সাথে থাকতে হবে।
আরে ভাই, এইটা কি উত্তম কুমারের সিনেনা নাকি যে নায়ক সেবাধর্মে উজ্জীবিত হয়ে গ্রামে চলে যাবে? উত্তম কুমারের সিনেমায় নায়কদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, কিন্তু মেয়েদের ব্যাপারে কিছুই বলা হয় নাই। আমাদের পত্রিকার খবর মোতাবেক জানা যাচ্ছে আমাদের সমস্যা সেই নায়িকাদের নিয়েই – আর কি বলতে হবে ভেঙ্গে – উনারা মহিলা ডাক্তার।
যখন কোন ব্যাপারে অংশগ্রহনের কথা আসবে, তখন কিন্তু ছেলে-মেয়ে সমান। কিন্তু সুবিধা আদায়ের ক্ষেত্রে কিন্তু বলবেন ‘আমি স্ত্রী-লিংগ’, অতএব ‘আমাকে লিংগভিত্তিক সুবিধা দিন’। তাই নওরিন, সিলভিয়া, জেসমিন, সালমা, শারমিন, নুসরাত প্রমুখের গ্রামে যেয়ে কাজ করাটা এখন লিংগভিত্তিক সুবিধা আদায়ের পর্যায়ে চলে গেছে।
এক চিকিৎসক সিলভিয়ার স্বামী বলেছেন, ‘মফস্বলে একজন নারী চিকিৎসকের একা অবস্থান করা নিরাপদ নয়’। এই স্বামী ভদ্রলোক বা এই চিকিৎসকের পিতা-মাতাদের কি জানা ছিল না যে এই মেয়েটি যদি সরকারের এই চাকুরিতে যোফ দেয় তা হলে তাকে গ্রামে যেয়ে থাকতে হবে, গ্রামের মানুষদের সাথে থেকে তাদের চিকিৎসা সেবা দিতে হবে? তারা জানতেন।
কিন্তু তারা এইটাও জানতেন, এই চাকুরিটা হচ্ছে দলীয় লোকদের জন্য প্রযোজ্য, তাই চাকুরীস্থলে না থাকলেও কোন সমস্যা হবে না। এই সব চিকিৎসক যারা এডহক ভিত্তিতে চাকুরি পেয়েছে, তারা কিন্তু ধরাধরি করেই চাকুরি পেয়েছে। তাদের এমনও গালভরা কথা শোনানো হয়েছে যে, তাদেরকে বিসিএস করে দেওয়া হবে।
তাই স্বাচিপ নেতাদের একান্ত লোকেরাই নিয়োগ পেয়েছে।
এখন যা হবার তাই হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা চিঠি দিবেন, সাত ঘাট ঘুরে সে চিঠি যখন স্বাস্থ্য দপ্তরের কানাগলি ঘুরে ফিরবে, ততদিনে হয়ত সিলভিয়া বা নওরিনরা তাদের অন্য কোন ব্যবস্থ করে ফেলবে। মাঝখান থেকে সরকারের একগাদা টাকা জলে যাবে এই শ্বেহস্তীগুলোকে পুষতে।
দলবাজি করে কি আর দেশের স্বাস্থ্য সেবা চলে রে ভাই? দেশ চালাতে দরকার ভাল মানুষের।
দেশ চালাতে দরকার নিজ নিজ দায়িত্ব আর কর্তব্য পালন করতে পারে এমন লোকেদের। যে দলই সরকারে যাক না কেন, তারা এই সব দায়িত্ব আর কর্তব্য পালন করা লোকেদের ঠেলে সরিয়ে দিচ্ছে। ফলে আমরা ক্রমাগত অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।