আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নগ্ন ভিডিও মোবাইল থেকে মোবাইলে

কোন কোন সময় আমি একা হয়ে যাই

চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে নগ্ন ভিডিও। ইন্টারনেট, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দ্রুত ছড়াচ্ছে তরুণ সমাজের কাছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এ নিয়ে মাতামাতি বেশি। ক্লাস চলাকালেও পিছনের বেঞ্চে বসে কয়েকজন মিলে দেখছে এসব ভিডিও। দেশের মনোবিজ্ঞানীরা বলেছেন, নৈতিকতা হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে।

এখনই এসব রোধ করা না গেলে তরুণ সমাজকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। বলেছেন, তরুণ সমাজকে নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। আমরা নৈতিক অবক্ষয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছি। তিনি বলেন, তথ্য প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে।

একথা সত্য মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ছাড়া আমরা চলতে পারবো না। আবার তরুণ সমাজকেও রক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এটি ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের যে কোন একটা পথ বের করতে হবে এসব রুখতে। তিনি বলেন, জগতে ভাল-খারাপ দু’টোই আছে।

খারাপকে বিজয়ী হতে দেয়া যাবে না। এজন্য ছেলে-মেয়েদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ তৈরি করতে হবে। ওদিকে নগ্ন ভিডিও নিয়ে এখন আর রাখঢাক নেই। শিক্ষাঙ্গন, মার্কেট, রেস্তরাঁয় প্রকাশ্যে দেখাদেখি হচ্ছে। চায়না মোবাইল সহজলভ্য হওয়ায় ব্লুটুথের মাধ্যমে এক মোবাইল থেকে আরেক মোবাইলে ছড়িয়েও দেয়া হচ্ছে।

১৯শে আগস্ট টিভি অভিনেতা অপূর্ব ও প্রভা বিয়ে করার পরের দিন থেকে আলোচনায় প্রভা’র ভিডিও। রোববার থেকে আরেক টিভি অভিনেত্রীর নগ্ন ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে মোবাইল ফোন থেকে আরেক মোবাইল ফোনে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, শহরে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একটা বড় অংশ পর্নোগ্রাফি বা ব্লুফিল্ম দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। দেশের শতকরা ৭৭ ভাগ কিশোর পর্নোগ্রাফির দর্শক। মোবাইল ফোন, সাইবার ক্যাফে ও বাসায় ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে শিশু-কিশোররা পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হচ্ছে।

কর্মজীবী ও পথশিশুরা সিডি’র পর্নোগ্রাফি দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। অনেক পথশিশু অর্থের বিনিময়ে পর্নোগ্রাফিতেও অভিনয় করছে। অনেকে আবার পর্নোগ্রাফি বিক্রিও করছে। গবেষণা থেকে জানা যায়, স্কুলগামী শিশুরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি ব্যবহারকে সবচেয়ে নিরাপদ ও সহজ মাধ্যম বলে মনে করে। গবেষণায় বলা হয়েছে, স্বভাবতই শিশু-কিশোরীদের চাহিদা বেশি থাকায় নানা প্রলোভনে তাদের এ কাজে আনা হচ্ছে।

মনোবিজ্ঞানীরা বলেছেন, শিশুদের পর্নোগ্রাফির বিষয়টি আশঙ্কাজনকভাবে বাড়লেও সমাজ সে ব্যাপারে সতর্ক নয়। যেসব শিশু পর্নোগ্রাফি দেখছে ও পর্নোগ্রাফির পণ্য হচ্ছে তারা সমাজের জন্য বড় হুমকি হয়ে দেখা দেবে। শহর-উপশহরের সাইবার ক্যাফেগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম চালু করতে হবে। যেসব ক্যাবল অপারেটর অশালীন ছবি প্রদর্শন করছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার এবং স্থানীয় জনগণকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। উপার্জনের পেছনে ছুটতে গিয়ে অভিভাবকরা সন্তানদের প্রতি ঠিকমতো নজর দিতে পারছেন না।

স্কুলগুলোর ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের বহু নারী-পুরুষের একান্ত সম্পর্কের দৃশ্য ভিডিও এবং স্থিরচিত্র আকারে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রীর নগ্ন ভিডিও ব্লগে ছেড়ে দেয় কে বা কারা। এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের মোবাইলে ওই সাইটটির ঠিকানা এসএমএস করা হয়। ২০০৮ সালে দেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের সঙ্গে এক ছাত্রীর যৌন সম্পর্কের দৃশ্যাবলী ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া হয়।

২০শে আগস্ট থেকে টিভি অভিনেত্রী প্রভা’র নগ্ন ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন মাধ্যমে। রোববার ছাড়া হয় আরেক টিভি অভিনেত্রীর নগ্ন ভিডিও। মুহূর্তেই মোবাইলে ছড়িয়ে পড়ে দেশ-বিদেশে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী আমিনুল ইসলাম বলেন, নৈতিক শিক্ষার অভাবেই এসব হচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার যত বাড়ছে নৈতিক শিক্ষা তত কমে যাচ্ছে।

এছাড়া আমাদের সামাজিক শাসন ব্যবস্থা শিথিল হয়ে পড়েছে। নিম্নবিত্তের শিশু-কিশোরদের জীবন এক কথায় দুর্বিষহ। উচ্চবিত্তের পরিবারে বাবা-মা চাকরি কিংবা ব্যবসায়িক ব্যস্ততায় ছেলে-মেয়েদের প্রতি যত্নবান নন। অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। শিশু-কিশোররাই আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ।

যদি তাদের নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয় হয়, তারা যদি অবাধ যৌন জীবনের আসক্ত হয়ে পড়ে সেক্ষেত্রে দেশের পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক পরামর্শ কেন্দ্রের সিনিয়র পরামর্শক সালেহ সিদ্দিকী বলেন, নৈতিক মূল্যবোধ বাড়াতে না পারলে তরুণ সমাজকে রক্ষা করা কষ্টকর হবে। তিনি বলেন, সামপ্রতিক এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যা সত্যিই বিস্ময়কর। যৌথ পরিবার প্রথা ভেঙে যাওয়ায় শহরমুখী মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা বাড়ছে। লেখক: সোলায়মান তুষার (মানবজমিন)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.