চিকিৎসা বিজ্ঞানে সারোগেসি কথাটার সহজ অর্থ করা যেতে পারে অন্য মায়ের গর্ভ ব্যবহার করে সন্তান জন্মদান। যে মা গর্ভধারণে অক্ষম, এক্ষেত্রে তার ভ্রƒণ অন্য মায়ের গর্ভে স্থাপন করা হয়, সেখানেই বেড়ে উঠে তার সন্তান, কিন্তু জন্মের পর পর গর্ভধারিণী মায়ের কাছ থেকে শিশু চলে আসে ভ্রƒণ যার কাছ থেকে নেয়া হয়েছিল ওই মায়ের কাছে।
ধনী দেশগুলোর নিঃসন্তান দম্পতিরা এভাবে সন্তান নেয়ার জন্য এখন দলে দলে ভিড় করছেন ভারতে, কারণ সেখানে এ নিয়ে গড়ে উঠেছে বিরাট ব্যবসা। কিন্তু এ নিয়ে সেখানে তৈরি হচ্ছে নানা আইনি জটিলতা। আর সামাজিক সমস্যা তো আছেই।
মার্কিন নাগরিক ক্রিস্টাল অর্ধেক পৃথিবী পাড়ি দিয়ে ভারতের গুজরাটে এসেছেন নাইনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। কারণ নাইনার গর্ভে বেড়ে উঠছে ক্রিস্টালের যমজ সন্তান। ৫,০০০ ডলারের বিনিময়ে ক্রিস্টালের ভ্রƒণ নিজের গর্ভে ধারণ করতে রাজি হয়েছেন নাইনা। ধাত্রীর কাজ করে গত কয়েক বছরেও তার এতো আয় হয়নি, কাজেই নিজের গর্ভ ভাড়া দিতে নাইনার মনে কোনো দ্বিধা নেই।
নাইনা বলছেন, ‘প্রথম প্রথম বাচ্চা দিয়ে দিতে খুব কষ্ট হতো, কারণ অন্যের বাচ্চা হলেও তা যখন নিজের গর্ভে বেড়ে ওঠে, তার সঙ্গে একটা আবেগের সম্পর্ক তো গড়ে ওঠে।
’ কিন্তু জন্মের পর বাচ্চা দিয়ে দিতে হবে, সেটা তো আগেই ঠিক করা, আর এর জন্য অর্থও পাচ্ছেন তিনি, কাজেই নাইনার মেনে না নিয়ে উপায় নেই।
সন্তান নেয়ার জন্য এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো নাইনার সাহায্য নিচ্ছেন ক্রিস্টাল। তিনি বলেন, প্রথমবারের নির্ঝঞ্ঝাট অভিজ্ঞতার কারণে এবারো নাইনাকেই বেছে নিয়েছেন তিনি।
ক্রিস্টাল বলেন, ‘প্রথম সন্তান নেয়ার জন্য যখন নাইনার গর্ভ ভাড়া করেছিলাম তখন আমার অভিজ্ঞতা ছিল বেশ ইতিবাচক। সে কারণে আবার আমি এখানে এসেছি।
’
গুজরাটের ছোট্ট শহর ‘আনন্দ’ গত কয়েক বছরে হয়ে উঠেছে সারোগেট মাদার, বা গর্ভ ভাড়া দেন এমন মায়েদের বড় কেন্দ্র। নিঃসন্তান দম্পতিরা পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে এখানে ভিড় করছেন সারোগেট মায়েদের সাহায্য নিতে। গত ৭ বছরে এভাবে প্রায় ২০০ দম্পতিকে সন্তান নিতে সাহায্য করেছেন ডক্টর নয়না প্যাটেল। সারোগেট মায়েদের জন্য তিনি একটি হোস্টেল চালান এখানে।
ডক্টর নয়না প্যাটেল বলেন, এই প্রক্রিয়ায় সন্তান নেয়ার সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের সবার জন্যই এটি এক তীব্র আবেগময় অভিজ্ঞতা।
কখনো খুশির, কখনো দুঃখের, বিষাদের। কারো ক্ষেত্রে হয়তো গর্ভধারণ সফল হলেও বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে। কেউ হয়তো সফলভাবে পুরো প্রক্রিয়া শেষে সন্তানের জন্মে ভীষণ খুশি।
ভারতের মতো রক্ষণশীল সমাজে যে মহিলারা গর্ভ ভাড়া দেয়ার কাজ করছেন, তাদের ঝুঁকি অনেক। জানাজানি হলে সমাজে নানা গঞ্জনা আর একঘরে হওয়ার আশঙ্কা।
দীক্ষা গুরুং কয়েক বছর আগে এক জাপানি দম্পতির শিশু জন্ম দিয়েছেন। দীক্ষা বলছেন, তাদের সমাজে এটাকে অনৈতিক কাজ হিসেবেই দেখা হবে, কিন্তু তা সত্ত্বেও দীক্ষা আবারো তা করতে চান।
দীক্ষা বলেন, ‘অন্য অনেক অনৈতিক কাজের চেয়ে বরং সারোগেট মা হওয়া ভালো। এখানে তিনি অন্তত আরেকজনের উপকার করছেন, আর সন্তান জন্ম দেয়ার এই আনন্দের অংশীদার হচ্ছেন সবাই। ’
কিন্তু ভারতে সারোগেট মায়েদের ঘিরে এই ব্যবসা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, তৈরি হচ্ছে নানা জটিলতা।
এক জাপানি দম্পতি এভাবে সন্তান নেয়ার জন্য সাহায্য নেন এক সারোগেট মার, কিন্তু তাদের বিয়ে বিচ্ছেদের পর শিশুটিকে কেউ আর নিতেও আসেননি। এরকম পরিত্যক্ত শিশুদের নিয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন সমস্যা।
এই সমস্যা মোকাবেলায় সরকার নতুন আইন করেছে, যাতে সারোগেট মায়েদের অধিকার রক্ষার ব্যবস্থা থাকছে, সেই সঙ্গে সীমিত করে দেয়া হচ্ছে একজন মহিলা সর্বোচ্চ কতোবার এভাবে অন্যের সন্তান নিজের গর্ভে নিতে পারবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।