আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিউবা থেকেও সমাজতন্ত্র বিদায় নিচ্ছে !



নতুনদেশ ডটকম শেষ পর্যন্ত ফিদেল ক্যাস্ট্রোর কিউবা থেকেও কি সমাজতন্ত্র বিদায় নিতে যাচ্ছে ? আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এখন এই বিষয়টি বেশ জোড়েসোড়েই আলোচিত হচ্ছে। কিউবার সাম্প্রতিক ঘোষনা এবং গণমাধ্যমে প্রকাশে খোদ ক্যাস্ট্রোর কিছু বক্তব্য এই জল্পনাকে আরো উসকে দিচ্ছে। ক্যাষ্ট্রো নিজেও বলেছেন, কিউবার মডেল অনেকাংশেই অকার্যকার হয়ে পড়েছে। সরকারি কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে, ১০ লাখেরও বেশি সরকারি কর্মচারীকে ছাঁটাই করা হবে। ১৯৬০-এর দশকের পর থেকে দ্বীপদেশটিতে এটিই সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক পদক্ষেপ।

কিউবার সরকারি শ্রম ফেডারেশন ঘোষণা করেছে, ‘বিভিন্ন কোম্পানি, উত্পাদনশীল প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সেবাখাত ও বাজেটের অধীনে থাকা বিভিন্ন সেক্টরের বিশাল বেতন কাঠামো ও ক্ষতি আমাদের রাষ্ট্র অব্যাহত রাখতে পারবে না ও উচিতও না। ’ ওই ঘোষণায় আরও বলা হয়, ‘অরাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চাকরির ক্ষেত্র বাড়ানো হবে, এর মধ্যে ভূমি ইজারা, সমবায় ও স্বকর্মে উত্সাহিত করা হবে। এগুলোতে লাখ লাখ শ্রমিক নিয়োজিত করা হবে। ’ প্রকৃতপ্রস্তাবে, গত এপ্রিলেই নাপিত ও চুল পরিচর্যাকারীদের ব্যক্তিখাতে রূপান্তর করার মধ্য দিয়ে এ পরিবর্তন শুরু হয়ে গেছে। সাবেক সরকারি চাকরিজীবীদের ৮৫ শতাংশ, যারা কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের জন্য কাজ করত তাদের সবার হাতে সব সেলুনের দায়িত্বভার তুলে দেয়া হয়েছে।

খরিদ্দারের কাছে তারা ইচ্ছামত চার্জ ধার্য করবে এবং কর দেবে। অংশীদারমূলক বাজার বিস্তৃত করা দূরে থাক, খরিদ্দারকে ভালো সেবা দেয়াও কিউবায় অপরিচিত। সংবাদপত্র গার্ডিয়ানকে ওই নাপিত বলেন, ‘আমি এর দায়িত্ব নিতে চাই না। কীভাবে এটা থেকে লাভ হবে তা আমি কেমন করে জানব? আমি সরবরাহকারীদের ঋণ পরিশোধ করব কীভাবে?’ এরকম হোক আর না হোক, চাকরি থেকে বিদায়ের পর কিউবার অনেক নাগরিকই এমন প্রশ্ন করতে থাকবেন। বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) কাছে ফাঁস হওয়া ২৬ পৃষ্ঠার পার্টির নথি থেকে জানা গেছে, খরগোশ পালন, ভবন রঙ করা, ইট তৈরি, আবর্জনা সংগ্রহ ও হাভানার উপসাগরে নৌযান চালানো ইত্যাদি ছাঁটাই হওয়া কর্মচারীদের জন্য নতুন কাজ হতে পারে।

কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তিখাতে সমবায় গঠন, অন্যগুলোর ক্ষেত্রে বিদেশি কোম্পানিগুলো ও যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ব্যবসায় উত্সাহিত করা হবে। কিছু ক্ষেত্রে ছোট ব্যবসা চালু করতেও উত্সাহ দেয়া হবে। কমিউনিস্ট পার্টির নথিতে স্বীকার করা হয়েছে, অভিজ্ঞতার অভাব, অপর্যাপ্ত দক্ষতা ও উদ্যোগ ইত্যাদির ফলে এ পদক্ষেপ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে। গত বছর বেকারত্ব ছিল ১ দশমিক ৭ শতাংশ, যাদের সরকারিভারে ২০ মার্কিন ডলার করে ভাতা দেয়া হতো। সেইসঙ্গে আছে রেশনের একটি বই, বিনা পয়সায় স্বাস্থ্য চিকিত্সা ও শিক্ষা।

কিউবার অনেক নাগরিক কম পরিশ্রম করেন। তাদের ক্ষেত্রে পুরনো একটি প্রবাদ বেশ মানানসই : ‘তারা আমাদের পয়সা দেয়ার ভান করে আর আমরা কাজ করার ভান করি। ’ সমাজতান্ত্রিক মানুষ গড়ে তোলার জন্য চে গুয়েভারার স্বপ্ন কেবল নৈতিক বিষয়েই পরিণত হয়েছে। বৈষয়িক প্রণোদনা অনেক আগেই পরিত্যক্ত হয়েছে। চলতি সপ্তাহে বিস্তৃত আকারে সরকারি ঘোষণা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

২০০৮ সালে ভাই ফিদেল ক্যাস্ট্রোর কাছ থেকে ক্ষমতা নেয়ার পর রাউল ক্যাস্ট্রো এমনই ভেবেছিলেন। গত মাসে জাতীয় সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমাদের এই ধারণা মুছে ফেলতে হবে, বিশ্বে কিউবাই একমাত্র দেশ যেখানে মানুষ কোনো কাজ না করেই বেঁচে থাকতে পারে। ’ ওই নথির তথ্য অনুযায়ী চিনি, গণস্বাস্থ্য, পর্যটন ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের শ্রমিকরা ছাঁটাইয়ের প্রথম পর্যায়ে পড়বেন। সর্বশেষ পর্যায়ে আছে বেসরকারি বিমান চলাচল ও পররাষ্ট্র সম্পর্ক ও সমাজসেবা মন্ত্রণালয়। বিকাশ-ব্যাহত বেসরকারি খাতকে শক্তিশালী করতে কিউবার নাগরিকদের পশুপালন, শাকসবজি চাষ, ট্যাক্সি চালনা, গাড়ি মেরামত, মিষ্টি ও শুকনো ফল তৈরি এবং ভবন নির্মাণ কাজকে উত্সাহিত করা হবে।

হাভানায় আয়োজিত একটি মধ্যাহ্নভোজ শেষে আটলান্টিক ম্যাগাজিনের প্রতিনিধি ড্যানিয়েল গোল্ডবার্গকে ফিদেল ক্যাস্ট্রো বলেন, ‘কিউবার মডেল এমনকি আমাদের জন্যও কাজ করছে না। ’ একই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কিউবার পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞ জুলিয়া সোয়েইগ। তিনি বলেন, ক্যাস্ট্রো তার দেশের নাগরিকদের উদ্দেশে এ মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, ‘তিনি বলতে চেয়েছিলেন, যদিও আমরা আমাদের মডেল পরিবর্তন করছি। এর অর্থ এই নয় যে, আমরা মার্কিন পুঁজিবাদ আমদানি করছি।

’ সোয়েইগ বলেন, ক্যাস্ট্রোর ঘন ঘন জনসম্মুখে এসে মন্তব্য করা স্বতঃস্ফূর্ত ব্যাপার। তার মন্তব্য উত্তরসূরি ভাই রাউল ক্যাস্ট্রোর অর্থনৈতিক সংস্কার কৌশলের সঙ্গে বেশ যুত্সই। দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে। কিউবান মডেল নিয়ে ফিদেল ক্যাস্ট্রোর সংশয় : এদিকে ফিদেল ক্যাস্ট্রো এক মার্কিন সাংবাদিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘কিউবান মডেল’ অকার্যকর হয়ে গেছে। একথা বলে তিনি পঞ্চাশ বছরের অধিককাল আগে তার বিপ্লবের মাধ্যমে প্রবর্তিত এই কমিউনিস্ট অর্থনৈতিক মডেলের ব্যর্থতার কথা প্রকারান্তরে স্বীকার করলেন।

এখনো কিউবান মডেল অন্যদেশে চালু করা যায় কি না। দি আটলান্টিকের সাংবাদিক জেফ্রি গোল্ডবার্গের এ প্রশ্নের উত্তরে ক্যাস্ট্রো বলেন, কিউবান মডেল আমাদের জন্য আর মোটেও কাজ করছে না। গোল্ডবার্গ ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর তার সঙ্গে এই সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ উল্লেখ করেন। ২০০৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণের সময় ক্যাস্ট্রোর ছোট ভাই এবং উত্তরসূরী প্রেসিডেন্ট রাউল ক্যাস্ট্রো অসংখ্য বক্তৃতায় একই কথা বলেছেন। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, সরকারের উচিত রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি পুনর্বিবেচনা করা ইতিমধ্যে অর্থনীতিতে কিছু কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে।

কৃষক এবং নাপিতদের জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগের অনুমতি দেয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক ইস্যুতে দু’ভাই বিভক্ত হওয়ায় এবং ফিদেল ক্যাস্ট্রো রাউলের কৃত পরিবর্তনকে সমর্থন না করায় এ ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরে ফিলেদ ক্যাস্ট্রো প্রকাশ্যে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো সযত্নে এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।