প্রবল সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিকশিত হওয়া দু'টো সমাজ - কিউবা ও বাঙলাদেশ। বাঙলাদেশের নেতা শেখ মুজিবের সাথে যখন দেখা হয়েছিল কিউবার নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো বলেছিল "আপনি কারাগারে আর আপনারা নামেই স্বাধীন হয়ে গেল একটা দেশ! আপনাকে ও আপনার জণগনকে অভিনন্দন!" তো চলুন এতগুলো বছর পর দেশ দু'টোর বর্তমান অবস্ত্থার মোটাদাগে একটু তুলনা করা যাক:
বাসস্থান
কিউবার শতকরা ৮৫ জন মানুষের নিজের বাসস্থান আছে। বাকী ১৫ শতাংশ মানুষ সরকারী আবাসনের আওতায় বাস করে, যেখানে তারা তাদের বেতনের মাত্র ১০% ভাড়া হিসেবে দেয়।
আর বাংলাদেশে? শুধু ঢাকা শহরেই শতকরা ৩০ এর উপরে মানুষ বাস করে বস্তিতে যেখানে জীবনের ন্যুনতম মানও নেই এবং এগুলোর মালিকও তারা নিজেরা নয়। ঠিক কি পরিমান মানুষ বাঙলাদেশে গৃহহীন তার কোন সঠিক হিসাবও নেই।
চিকিৎসা:
কিউবাতে চিকিৎসকের সংখ্যা পৃথিবীতএ সবচেয়ে বেশি - প্রতি ১৭০ জনে একজন। বাঙলাদেশে প্রতি ৩৮০০ জনে একজন চিকিৎসক। ২০০৭ সালে সিডর আক্রান্ত বাঙলাদেশে সবচেয়ে আগে মেডিকেল টীম পঠিয়েছিল কিউবা।
শিক্ষা
কিউবার ৯৯.৯ শতাংশ মানুষ শিক্ষিত। বাঙালাদেশে ৪৮ শতাংশ।
এখানে একটু টীকা দেয়া দরকার - বাঙলাদেশের ৪৮ শতাংশের মধ্যে পরে অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন সকলেই, কিন্তু কিউবার হিসেবে ন্যুনতম যারা নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছে শুধুমাত্র তারাই পড়বে তাদের শিক্ষিতের দলে। কিউবার নাগরিকদের জন্য শিক্ষা পুরোপুরি ফ্রী! প্রাথমিক স্তর থেকে পিএইচডি পর্যন্ত! আর বাঙলাদেশে শিক্ষার সমান্তরাল তিনটি ভয়াবহ ধারাই তৈরি হয়ে গেছে। বাঙলাদেশের শিক্ষা এখন সম্ভবত সবচেয়ে বড় বানিজ্য।
কর্মসংস্থান
কিউবার মাথাপিছু বাৎসরিক আয় $৯৫০০, বাঙলাদেশে মাত্র $১৫০০। কিউবার সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ আয়ের মাঝে তফাৎ চার গুনেরও কম।
অর্থাৎ সবচেয়ে কম উপার্জনকারীর আয় যদি ১০০ টাকা হয় তাহলে যে সবচেয়ে বেশি উপার্জন করে তার আয় ৪০০ টাকারও নীচে। এটি সম্ভব হয়েছে সম্পদের সুষম বন্টনের মাধ্যমে। বাঙলাদেশে সম্পদের কোন বন্টন নেই যার ফলে আয়ের ব্যাবধানেরও কোন কোন গ্রহনযোগ্য হিসেব নেই। যদিও পে-স্কেল বলে চাকুরীজীবীদের জন্য একটা ব্যবস্থা আছে, কিন্তু সমগ্র দেশের জন্য সেটা প্রযোয্য নয়। গার্মেন্টসের কর্মীরা যেখানে মাসে তিন হাজার টাকা উপার্জন করেন সেখানে একজন ডাক্তার আয় করেন দু'লাখ টাকা।
বাঙলাদেশে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান দিন দিন বেড়েই চলেছে।
সবচেয়ে বড় যে তফাৎটা উল্লেখ করা উচিৎ সেটা হচ্ছে, রাষ্ট্রব্যবস্থা! কিউবা একটি সমাজবাদী রাষ্ট্র যেখানে নীতি নির্ধারিত হয় দশের জন্য। আর বাঙলাদেশ চলছে লগ্নিভিত্তিক একটিপুঁজিবাদী ব্যবস্থা যেখানে নীতি নির্ধারিত হয় ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীবিশেষের জন্য।
অথচ বাঙলাদেশও হতে পারত সমাজবাদী কিউবার মতই একটি সুষম উৎপাদন ও বন্টনের দেশ যদি মুক্তিযুদ্ধের চারটি মূলনীতিতে পরিচালিত হত রাষ্ট্রনীতি; '৭২ এর সংবিধানই বাঙলাদেশকে দিতে পারত একটি সফল রাষ্ট্র।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।