শেষ বলে কিছু নেই
১ম পর্বের লিঙ্ক
০২. ডিসকভারি অব কুলসুম
সপ্তাহ খানেক আগের কথা।
রাত একটা।
ঢাকার এক অভিজাত পাড়ায় মোড়ের এক চায়ের দোকানে চা শেষ করে উঠে দাঁড়ায় রমিজ। ওর পরনে জিন্স আর গেঞ্জি, কাঁধে ঝুলছে ক্যামেরা। রমিজের পাশে বসে থাকা হিমেল চায়ের কাপ শেষ করে কাপটা নামিয়ে রাখতে রাখতে হাঠাৎ খুব সতর্ক এবং নিচু গলায় বলে, ‘রমিজ, তাকা।
’ রমিজ চকিতে তাকায়। একটু তফতে রাস্তার ওপাশে একটা নীলগেটঅলা বাড়ির ভেতর থেকে বের হয়ে আসছে এক তরুণী; সোডিয়াম আলোয় তার হেঁটে আসা কেমন বিষণœ কেমন বিহ্বল দেখাতে থাকে। দৃশ্যটা ম্যাজিক রিয়ালিজম নয়, অ্যাবসলিউটলি রিয়েল, জানে রমিজ, অনেক দেখেছে। গেটের সামনে রিক্সা প্রস্তুত। তরুণী উঠতেই চালক প্যাডেল মারে, পারস্পরিক কোন সংলাপ হয় না, তরুণী এদিক ওদিক কোনদিক তাকায় না পর্যন্ত।
সমীকরণ মিলে গেছে। ‘শিকার মিল গিয়া’। রমিজ চাপা স্বরে উচ্চারণ করে, ‘মোটর সাইকেল স্টার্ট কর। ’
হিমেল রমিজের বন্ধু, ইউনিভার্সিটিতে একসাথে পড়েছে, এখন দামী ঠিকাদার। এ ধরনের অপারেশনে সে হিমেলকে সাথে নেয়, হিমেলের হিম্মত আছে।
রিক্সা কিছুদূর এগিয়ে গেছে। পিছু নেয় মোটর সাইকেল। পেছনে বসে রমিজ ডিরেকশন দেয়, ‘আস্তে আস্তে স্পিড বাড়া... মোড়ে গিয়ে ব্যাক করবি... ফিরতি পথে স্পিড কম রাখবি আমি কাজ সেরে ফেলব...’ ইত্যাদি।
ওভারটেকিঙের সময় রমিজ ঘাড় ঘুরিয়ে একবার মেয়েটিকে দেখে, আর দেখেই অস্বস্তিটা শুরু হয়; মনটা খুঁত খুঁত করতে থাকে। পাত্তা দেয় না ও।
ক্যামেরাটা বুকের কাছে নিয়ে রেডি করে। মোড়ে গিয়ে মোটর সাইকেল ব্যাক করে ফিরতি পথ ধরে।
এখন রিক্সা এবং মোটর সাইকেল মুখোমুখি। হাই মেগাপিক্সেলের ক্যামেরাটা তাক করে রমিজ। হুঁ হুঁ করে বাতাস বইতে থাকে।
বাতাসের ধাক্কায় ‘ক্লিক’ শব্দটা ও ছাড়া দ্বিতীয় কেউ শুনতে পায় না। শেষ মুহূর্তে মেয়েটি বিপদ টের পেয়ে দু’হাতে মুখ ঢেকে ফেলে। রাস্তার উল্টো দিক দিয়ে হোন্ডা বেরিয়ে যাচ্ছিল, অকস্মাৎ বিপদাক্রান্ত তরুণী প্রায় চেঁচিয়ে ওঠে, ‘রমজ ভাই-। ’
রমিজ স্থির হয়ে যায়। শিরদাড়া বেয়ে একটা সরিসৃপ যেন হামাগুড়ি দিয়ে নিচে নেমে যায়।
মুহূর্তের জন্য দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে, ও কি দাঁড়াবে না কি মঞ্চ থেকে পালাবে? সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, কিন্তু কিছু একট গন্ডগোলের আভাস পেয়ে হিমেল ততক্ষণে ব্রেক চেপে ধরেছে।
রমিজ বলে, ‘তুই একটু দূরে গিয়ে দাঁড়া, মেয়েটি আমার পরিচিত। ’ শেষ মুহূর্তে মেয়েটিকে চিনতে পারে রমিজ।
প্রায় পাঁচ বছর পর তার গ্রামের কুলসুমকে এভাবে এখানে দেখে বিস্ময়ে প্রায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে রমিজ। বিস্ময় সচরাচর জাগে না ওর, একটা প্রথম শ্রেণীর জাতীয় দৈনিকের ক্রাইম রিপোর্টার হওয়ার সুবাদে অসংখ্য বিস্ময়কর ঘটনা ঘাটতে হয় ওকে।
তথাপি কুলসুম গাঁয়ের জলপদ্ম, এখন শহরের রাস্তায় দলিত হচ্ছে। সাত-আট বছর হয়ে গেল রমিজ তার পরিবারকে পাকাপাকিভাবে গ্রাম থেকে শহরে এনে রোপণ করেছে, গ্রামের সাথে যোগাযোগ এখন অত্যন্ত ক্ষীণ, তবু গ্রামের খবর যতটুকু রাখে তাতে মনে হয় ইদ্রিসের সাথে কুলসুমের বিয়ে হয়েছিল বছর দুয়েক আগে। সেই কুলসুম আজ হঠাৎ রমিজের ক্যামেরায় ঢুকে পড়েছে “রাতের পাখিরা” বা “ভাসমান ওরা সব” ধরনের একটা কাভার স্টোরির ছবি হতে।
কুলসুম বলে, ‘রমিজ ভাই শুনেছি তুমি খুব বিখ্যাত সাংবাদিক। আমার একটা অনুরোধ ছবিডা ছাইপো না।
ছবিডা ছাপা হলে আমার খুব ক্ষতি হবে। ’ খুব শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলার চেষ্টা করে কুলসুম।
রমিজ এ প্রসঙ্গে না গিয়ে ভিন্ন প্রসঙ্গ টেনে বলে, ‘তোমার না ইদ্রিসের সাথে বিয়ে হয়েছিল ?’
‘হ’।
‘তাহলে ?’
‘পালাইছি। ’
‘কেন ?’
‘উপায় ছিল না যে-’
‘উপায় ছিল না ?’
হা, আমি সুখি হতি চেয়েছিলাম।
ও একটা মরা ঘোড়া। ’
‘মরা ঘোড়া’ শব্দ-বন্ধটি রমিজের মাথার ভেতর মিজাইলের মত বিস্ফোরিত হয়; বিস্ফোরণের টুকরা টাকরা চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ইদ্রিস কোন অর্থে মরা ঘোড়া ? কমজোরি ? নপুংশক?
‘জীবন্ত ঘোড়ার সন্ধান পেয়েছ?’
‘না। পুরুষ হয় মরা ঘোড়া, না হয় নেকড়ে। তয় এখন আমি সুখে আছি।
স্বাধীন। নিজেই মত কামাই করি, খাই। ’ একটু দম নিয়ে কুলসুম স্পষ্ট স্বরে বলে, ‘রমিজ ভাই, আমি কিছুদিনের মধ্যে ফিল্মে নামতেছি, ছবিটা ছাপলে আমার কেরিয়ারের ক্ষতি হবে। ’
রমিজ কিছুক্ষণ ভাবলেশহীন ভাবে দাঁড়িয়ে থেকে অবশেষে বলে, ‘ঠিক আছে। শোন কুলসুম, আমি দু’চারদিনের মধ্যে গ্রামে যাব।
জমিজমা নিয়ে কিছু ঘাপলা আছে, মিটিয়ে আসতে হবে। ইদ্রিসের সাথে নিশ্চয় আমার দেখা হবে। কিছু বলব ওকে?’
‘না। ’
‘কিচ্ছু না ?’
‘না। আচ্ছা ও কি আবার বিয়ে করেছে, জানেন ?’
‘জানিনে।
’
চলবে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।