আমি খুব সাধারন একটা মানুষ। সাধারন হয়েই থাকতে চাই
"মেয়েরা পর্দা রক্ষা করে না বলেই ধর্ষণের হার বাড়ছে" - এই ধারনা বিশেষ করে যে পুরুষেরা এই ধারনা পোষণ করে তাদের উদ্দ্যেশ্যে বলছি।
এরকম একটা কথা বলার বা ভাবার আগে আপনারা গোটা পুরুষজাতিকে তথা নিজেদের কতটা অপমান করছেন তা কি জানেন? আমি নারীবাদী নই, ইতিমধ্যে আমি মেয়েদের সঠিক পোশাক নিয়ে বেশ কিছু কথা বলেছি তা সবাই জানেন। এবং তার জন্য আমি বেশ সমর্থনও পেয়েছি। কিন্তু এই সমর্থনের এক অংশে আমার কিছু ভাইয়েরা যখন এই দোহাই দেয় যে মেয়েরা খোলামেলা পোশাক পরে বলেই ছেলেরা ধর্ষণ করে তখন আমার বড় দুঃখ হয়।
আমি সবসময় চেষ্টা করি ভদ্র ভাষায় কথা বলতে তবে আজকে যা বলব তা ভদ্রতার সীমা অতিক্রম করবে বলে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
ধর্ষণ চিরকালই একটা অপরাধ। কোন মেয়ে যদি আপনার গায়ে পড়ে, ঘাড়ে চড়ে বলে তাকে ধর্ষণ করতে তাহলে আলাদা কথা। পতিতা না হলে সেই পরিস্থিতি হবে বলে মনে হয়না। কিন্তু তার পোশাক আশাকে আপনি উত্তেজিত হয়ে তাকে গায়ের জোরে ধর্ষণ করে আপনার পুরুষত্ব দেখাবেন আর বলবেন, "সে তো ন্যাংটা হয়েছে মানে সে চেয়েছে" এটা একেবারেই ফালতু কথা, যুক্তিহীন, ভিত্তিহিন প্রলাপ!! ন্যাংটা হয়ে চাইলেই আপনার দিতে হবে?? কেন?? আপনার নিজের আত্মসম্মান বলে কিছু নেই?? নাকি নিজের পুরুষাঙ্গের জোর এতই বেশি যে নিজের মাথাও আর কাজ করে না??? তবে তো আপনার বোন, মা এবং আপনার কন্যা, এরাও আপনার সামনে নিরাপদ না, নারিদেহ তো নারীদেহই খুব একটা আলাদা তো না।
কাজেই নগ্নতার সামনে আসলেই যদি উত্তেজনার ধাক্কায় আপনার কাছে ধর্ষণ করা ১০০% জায়েজ মনে হয়, নিজের মা কে দিয়ে আগে শুরু করুন। কারন জন্মের পরে তার নগ্নতাই তো সবার আগে আপনি দেখেছেন তাইনা?
একটা মেয়ে বেপর্দা হোক, স্বল্পবসনা হোক তাকে কোন অবস্থায় কোন পরিস্থিতিতে ধর্ষণ করার অধিকার কারো নেই। আবারও বলি "কোন অবস্থায়, কোন পরিস্থিতিতে। " সে নগ্ন হয়ে চললে তাকে পাগলা গারদে রেখে আসুন, ধর্ষণ করবেন কেন????
মেয়েদের পর্দা মেয়েদের কাছে, ছেলেদের পর্দা ছেলেদের কাছে। মেয়েদের যেমন নিজেদের ভোগ্যপণ্যের মত প্রদর্শন করা উচিৎ না, ছেলেদেরও সেখানে নিজের উপর আত্মনিয়ন্ত্রন রাখা উচিৎ।
নাহলে ঐ মেয়েদের সাথে ঐ ছেলেদের কোন পার্থক্য নেই। দুইজনই বুদ্ধিবিবেকহীন প্রাণী ছাড়া অন্য কিছু না। সুস্থ স্বাভাবিক সমাজে এদের স্থান না হওয়াই মঙ্গল। মেয়েরা পর্দা করুক কি না করুক ছেলেদের তাকিয়ে থাকাই যেখানে জায়েজ না সেখানে অন্য কিছুর চিন্তা করার তো প্রশ্নই আসে না, ধর্ষণ তো অনেক পরের কথা!!!! আর আমাদের সমাজে ধর্ষিতার দোষ দেখে সবার আগে। দেখতে পারেন, তবে আল্লাহর বিচারে অপরাধ ধর্ষকেরই চিরকাল থাকবে।
যতই ধর্ষিতার পোশাকের দোহাই দেন, লাভ হবে না।
আমার যা মনে হয় তা হল আল্লাহ এদের মাথায় মগজের বদলে আরেকটা পুরুষাঙ্গ দিয়েছে এবং ঐ পুরুষাঙ্গই তাদের ইচ্ছা অনিচ্ছা কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রন করে। মগজ বলে কোনদিন ওখানে কিছু নেই, কোন এক কালে থেকে থাকলেও পরবর্তীতে তারা তা পার্থিব পাশবিক আনন্দের প্রলোভনে নিজেরাই ধ্বংস করেছে। ধর্ষণের স্বপক্ষে যারা এসব খোঁড়া যুক্তি দেয় তাদের চেয়ে কাপুরুষ আর কেউ নেই। তাও বা বলি কীভাবে?? এরা তো পা থেকে মাথা পর্যন্ত বিশাল আকারের একটি "পুরুষাঙ্গ"!! এদের কি কাপুরুষ বলা মানায়??? এই মস্তিস্ক বিবর্জিত পুরুষ নামক পুরুষাঙ্গ থেকে মুত্র আর বীর্য ছাড়া অন্য কোন কিছু নিঃসৃত হয়না।
না বিবেক, না আত্মসম্মান, না বুদ্ধি। ছয় ইঞ্চি আকারের একটা অঙ্গের জন্য নিজের মানবিক বিচারবুদ্ধি, আত্মসম্মান, বিবেক সব জলাঞ্জলি দিয়ে নিজেদের সুপুরুষ দাবী করেন এরা। করুণা হয় আমার এদের প্রতি। কবে তোমাদের চেতনা আসবে?? যদি আসলেই মস্তিস্ক থেকে থাকে, সেটার ব্যাবহার করতে শিখুন। উত্তেজক রসের অজুহাত দিবেন না, কারন যতই রস পড়ুক আপনি কি করবেন তা সম্পূর্ণ আপনার নিয়ন্ত্রনে।
আপনার কর্ম পুরোটাই আপনার নিজের সিদ্ধান্তে। কেউ আপনার সামনে নগ্ন হলেই আপনিও তার উপর ঝাপিয়ে পড়বেন এই যদি আপনার যুক্তি হয় তবে হয় নিজের দৃষ্টি নিয়ন্ত্রন করুন রাখুন (যা আপনার অবশ্য করনীয়) আর তা সম্ভব না হলে মানসিক রোগের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হোন। উল্টাপাল্টা খোঁড়া যুক্তি দিয়ে পুরো পুরুষ জাতিকে অপমান করবেন না।
আমি চরম চরিত্রহীন পুরুষ যেমন দেখেছি, যারা রাত্রে পর্ণ ছবি দেখে আর দিনের বেলা কন্যার বয়সী মেয়েদের সাথে সুযোগ নেবার চেষ্টা করে, আবার আমি এমন পুরুষও দেখেছি যাদের সামনে কেন, গায়ের উপরে সবচেয়ে যৌনাবেদনময়ী নারীও চেপে বসলে তারা ছুঁয়ে দেখবে না। উত্তেজনা হবে, পুরুষাঙ্গের বৃদ্ধিও হবে কিন্তু কামলীলায় লিপ্ত হবে না কারন তাদের মস্তিস্ক বলে একটা বস্তু আছে যা জানে কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল।
কেউ ন্যাংটা হলেই তাকে আমার ধরতে হবে, খেয়ে ফেলতে হবে আঁচড়ে কামড়ে এই রকম অসুস্থ মানসিকতা যাদের আছে তাদের চিকিৎসা প্রয়োজন।
কাজেই নারী ও পুরুষ উভয়কেই বলি আপনার মাথায় মস্তিস্ক বলে একটা জিনিস আছে। সেখানে বিবেক ও আত্ম মর্যাদা ও আত্মসম্মান বলে কিছু বিষয় আছে, সেটা ব্যাবহার করুন। মনে রাখবেন আপনি সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। আপাদমস্তক একটা যৌনাঙ্গ হয়ে থাকার জন্য আপনার জন্ম নয়।
আমি মেয়েদের ব্যাপারে যেমন বলেছি আত্মসম্মান বৃদ্ধি করা দরকার, তেমনি পুরুষদেরও বলছি, নিজেকে আর নিচে নামাবেন না। নিজেকে একটা ভোগ্যবস্তু হিসাবে যেসব নারীরা চিন্তা করে ও যেসব পুরুষ সুযোগ পেলে ভোগ করাকেই নিজের পৌরুষের সার্থকতা মনে করে তাদের মানসিকতার পরিবর্তন হওয়া খুবই প্রয়োজন। তা নাহলে মেয়েরাও পথে ঘাটে ছেলেদের ধর্ষণ করে বলবে, ঐ ছেলেটি এত কামোদ্দিপক ছিল, আমি সামলাতে পারিনি। কাজেই সবাই সময় থাকতে ভাল হন।
অনেক কঠিন কথা বললাম।
আমার যুক্তিতে কেউ ভুল খুজে পেলে অবশ্যই বলবেন, কিন্তু অযথা অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য করবেন না। আর করলে অপমান হবার মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই করবেন।
সবাই ভাল থাকুন।
-ডাঃ নাজিয়া হক অনি
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।