আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পৃথিবী বুড়িয়ে যাচ্ছে পাড়ি জমাও মহাশূন্যে



পৃথিবী বুড়িয়ে যাচ্ছে পাড়ি জমাও মহাশূন্যে আসাদ জোবায়ের Posted by সাপ্তাহিক ২০০০ | ফিচার | বুধবার 8 সেপ্টেম্বর 2010 12:57 অপরাহ্ন ২৪ ভাদ্র ১৪১৭ মায়ান সম্প্রদায়ের কোনো কোনো পণ্ডিতের মতে, ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর পৃথিবীতে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটবে। হয়তো সেটাই হবে এই সভ্যতা ধ্বংস হয়ে নতুন সভ্যতার শুরু। মায়ান বর্ষপঞ্জিকার একটি চক্র শেষ হবে ওই দিন। এখান থেকেই এই ধারণা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ বিশ্বাস করুক আর না করুক চলচ্চিত্র পরিচালক রোনান্ড এমেরিক কিন্তু এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে ২০১২ নামের এক ছবি বানিয়ে ঠিকই কামিয়ে নিয়েছেন প্রায় ৭৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

এ তো গেল অবৈজ্ঞানিক এক ধারণার কথা। কিন্তু পৃথিবীর সমাপ্তি সম্পর্কে বর্তমান বিজ্ঞানীরা কী ভাবছেন? সম্প্রতি বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ ও পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলেছেন, আগামী ২শ বছরের মধ্যে এই পৃথিবী বসবাসের জন্য পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হবে এবং আমাদের মহাশূন্যে ছড়িয়ে পড়তে হবে। তা না হলে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না। কিন্তু মহাশূন্যে ছড়িয়ে পড়তে বললেই কী ছড়িয়ে পড়া সম্ভব? আর ২শ বছর পর সত্যই কী পৃথিবী বসবাসের জন্য অযোগ্য হয়ে যাবে? বিজ্ঞানীদের মধ্যে চলছে বিতর্ক। সেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার আগে দেখে নেয়া যাক এই বিশ্বলোক সৃষ্টির শুরুটা কেমন এবং শেষটাই বা কীভাবে হতে পারে? মহাবিস্ফোরণ থেকে মহাবিশ্ব : তারপর? আমাদের এই পৃথিবী এক সময় এ রকম ছিল না।

গোটা বিশ্বজগৎ ছিল একটা বিন্দুমাত্র। প্রচ- ঘন আর উত্তপ্ত সেই বিন্দু একদিন বিস্ফোরিত হয়ে ধীরে ধীরে আজকের এই বিশ্বজগৎ তৈরি হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এমনটিই বলছেন। আজ থেকে প্রায় ১৩.৭ বিলিয়ন বছর আগে এই বিস্ফোরণ হয়েছিল। ইংরেজিতে যাকে বলে বিগ ব্যাং।

বিজ্ঞানী এডুইন হাবল প্রথম বলেন, দূরবর্তী ছায়াপথসমূহের বেগ একসঙ্গে করে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এরা পরস্পর দূরে সরে যাচ্ছে। অর্থাৎ মহাবিশ্ব ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে। আপেক্ষিকতার সাধারণতত্ত্বের ফ্রিদমান-ল্যমেত্র-রবার্টসন-ওয়াকার নকশা অনুসারে এটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই তত্ত্বসমূহের সাহায্যে অতীত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সমগ্র মহাবিশ্ব একটি সুপ্রাচীন বিন্দু অবস্থা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। এ অবস্থায় সব পদার্থ এবং শক্তি অতি উত্তপ্ত এবং ঘন অবস্থায় ছিল।

একদিন এই বিন্দু বিস্ফোরিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে মহাশূন্যে। গঠিত হয় গ্রহ, নক্ষত্র, গ্যালাক্সিসহ মহাশূন্যের সব সদস্য। কিন্তু এই অবস্থার আগে কী ছিল তা নিয়ে পদার্থবিজ্ঞানীদের মধ্যে কোনো ঐক্য নেই। অবশ্য সাধারণ আপেক্ষিকতা এর আগের সময়ের ব্যাখ্যার জন্য মহাকর্ষীয় অদ্বৈত বিন্দু নামক একটি শব্দের প্রস্তাব করেছে। কিন্তু এই প্রসারমান মহাজগতের শেষ কোথায়? একটা থেকে আরেকটা এভাবে বিচ্ছিন্ন হতে হতে কি হারিয়ে যাবে সবাই? ১৯৯০-এর দশকে মহাবিশ্বের মোট ভরঘনত্বের একটি বিস্তৃত পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়।

এই পরিসংখ্যান অনুসারে মহাবিশ্বের ভরঘনত্ব ক্রান্তিঘনত্বের মাত্র শতকরা ৩০ ভাগ। মহাজাগতিক ক্ষুদ্র তরঙ্গ পটভূমির পরিমাপ করার মাধ্যমে জানা গেছে যে, মহাবিশ্ব বিশেষভাবে প্রায় সমতলীয়। এ কারণে এর শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ শক্তিঘনত্বের কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। এই অদৃশ্য শক্তির রহস্য আজও উদ্ঘাটিত হয়নি। অদৃশ্য শক্তি আবিষ্কারের আগে বিশ্বতত্ত্ববিদগণ মহাবিশ্বের পরিণতি সম্পর্কে দুটি ধারণা পোষণ করতেন।

মহাবিশ্বের ভরঘনত্ব যদি ক্রান্তিঘনত্বের চেয়ে বেশি হয় তবে মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হয়ে একটি নির্দিষ্ট আকারে পৌঁছানোর পর আবার সঙ্কুচিত হতে শুরু করবে। তখন এটি আবার ঘন ও উত্তপ্ত হতে থাকবে এবং একসময় সেই আদি অবস্থায় পৌঁছে যাবে যে অবস্থায় মহাসঙ্কোচন শুরু হয়েছিল। অন্যদিকে এই ঘনত্ব যদি ক্রান্তিঘনত্বের সমান বা কম হয় তবে একসময় সম্প্রসারণ ধীর হয়ে যাবে, কিন্তু কখনই শেষ হবে না। মহাবিশ্ব যতই প্রসারিত হবে তত তার ঘনত্ব কমবে এবং এর ফলে আর নতুন তারা গঠিত হবে না। মহাবিশ্বের গড় তাপমাত্রা পরম শূন্যের দিকে অগ্রসর হবে এবং মহাহিমায়ন (নরম ভৎববুব) অবস্থার সৃষ্টি হবে।

এ সময় কৃষ্ণ গহ্বরসমূহ স্বতঃবাষ্পীভূত হবে। মহাবিশ্বের এনট্রপি বাড়তে বাড়তে এমন একটি বিন্দুতে পৌঁছবে যখন এ থেকে কোনো সুসংগঠিত শক্তি পাওয়া যাবে না। এই অবস্থার নাম মহাবিশ্বের তাপীয় মৃত্যু। উপরন্তু প্রোটন যদি অস্থিতিশীল হয় তাহলে হাইড্রোজেন (বর্তমান মহাবিশ্বের অন্যতম প্রাথমিক বেরিয়নিক নম্বর) অদৃশ্য হয়ে যাবে, রয়ে যাবে কেবল বিকিরণ। মহাবিশ্বের ত্বরণসহকারে সম্প্রসারণের ওপর আধুনিক পর্যবেক্ষণের ফলে আমরা জানতে পারছি যে, বর্তমান দৃশ্যমান মহাবিশ্ব আমাদের ঘটনা দিগন্তের বাইরে চলে যাবে এবং আমরা আর বর্তমান দৃশ্যমান স্থানগুলোকেও দেখতে পারব না।

এর ফলে কী হতে পারে তা সঠিক জানা যায়নি। মহাবিশ্বের ল্যাম্ব ডা-সিডিএম নকশায় অদৃশ্য শক্তিকে একটি মহাজাগতিক ধ্রুবক হিসাবে দেখানো হয়েছে। এই তত্ত্বে বলা হয়েছে, মহাবিশ্বের কেবল মহাকর্ষীয়ভাবে সীমাবদ্ধ বস্তুগুলোই একসঙ্গে থাকবে, যেমন ছায়াপথ। অবশ্য মহাবিশ্বের প্রসারণ ও শীতলায়নের ফলে এদেরও তাপীয় মৃত্যু ঘটবে। অন্য একটি মতবাদ হচ্ছে ফ্যান্টম শক্তি মতবাদ।

এই মতবাদ অনুসারে ছায়াপথ স্তবক, তারকা, গ্রহ, পরমাণু বা ভরকেন্দ্র সবই এক সময় ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে এবং চিরপ্রসারণশীল মহাবিশ্বের এ অবস্থাকে বলা হচ্ছে বিগ রিপ। স্টিফেন হকিং ও তার সাম্প্রতিক মতামত স্টিফেন উইলিয়াম হকিং। বর্তমানে তার মস্তিষ্ক এবং একটিমাত্র আঙুল সক্রিয় থাকা এই সময়ের সবচেয়ে খ্যাতিমান মহাবিশ্বতত্ত্ববিদ, গণিতবিদ ও পদার্থবিজ্ঞানী। জন্ম ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি গ্যালিলিও গ্যালিলির জন্মের ঠিক ৩০০তম জন্মদিনে। তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের লুকাসিয়ান অধ্যাপক।

এর আগে সর্বশেষ এই পদে ছিলেন স্যার আইজ্যাক নিউটন। ২১ বছর বয়সে তিনি মটোর নিউরন রোগে আক্রান্ত হয়ে ক্রমেই ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। বর্তমানে তিনি হুইল চেয়ারে চলাফেরা করেন। আর কথা বলেন বিশেষ ব্যবস্থার কম্পিউটারের মাধ্যমে। গত অর্ধশতক ধরে তিনি তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানে বিচরণ করছেন।

তার বিখ্যাত বই ‘সময়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ (অ ইৎবধভ ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ঞরসব)। হকিং প্রথম অনিশ্চয়তার তত্ত্ব ব্ল্যাক হোল-এর ঘটনা দিগন্তে প্রয়োগ করে দেখান যে ব্ল্যাক হোল থেকে বেরিয়ে আসছে কণাস্রোত। এই বিকিরণ এখন ‘হকিং বিকিরণ’ নামে পরিচিত। তিনি রয়েল সোসাইটি অব আর্টসের সম্মানীয় ফেলো এবং পন্টিফিকাল একাডেমী অব সায়েন্সের আজীবন সদস্য। সম্প্রতি বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং আগামী দুই শতাব্দীর মধ্যে মহাকাশে মানব-বসত শুরু করার পক্ষে মত দিয়েছেন।

তিনি আরো জানিয়েছেন, এটা করা সম্ভব না হলে মানব-সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। গত ১০ আগস্ট ‘বিগ থিংক’ ওয়েবসাইটে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হকিং জানান, মানব-সভ্যতা বর্তমানে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে আছে। টিকে থাকতে চাইলে ভবিষ্যতে মানুষের বাসের জায়গা ‘অবশ্যম্ভাবীভাবে মহাকাশ’ বলে মত ব্যক্ত করেন এই মহাবিশ্বতত্ত্ববিদ। হকিং উল্লেখ করেন যে যুদ্ধ, সম্পদ ফুরিয়ে আসা ও জনসংখ্যার বৃদ্ধির মতো ঝুঁকিগুলো এটা বোঝায় যে, মানব জাতি যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে অধিকতর বিপদের মধ্যে আছে। তিনি বলেন, ‘আগামী কয়েক শত বছরের মধ্যে বিপর্যয় ঠেকানোটা যথেষ্ট দুঃসাধ্য হবে।

দীর্ঘমেয়াদে আমাদের এই পৃথিবীকে আঁকড়ে ধরে থাকার চেয়ে বরং মহাকাশে ছড়িয়ে পড়াটাই হচ্ছে একমাত্র সম্ভাবনা। ’ স্টিফেন হকিং বলেন, ‘গত কয়েক শত বছরে আমরা লক্ষ্য করার মতো উন্নতি সাধন করেছি। কিন্তু আমাদের যদি আগামী কয়েক শত বছর অগ্রসর হতে হয় সেক্ষেত্রে মহাকাশেই আমাদের ভবিষ্যৎ নিহিত। ’ নিজেকে একজন ‘আশাবাদী’ ব্যক্তি হিসাবে পরিচয় দিয়ে হকিং জানান, আগামী দুটি শতাব্দী বিপর্যয় ঠেকিয়ে দেওয়া গেলে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে প্রজাতি হিসাবে মানুষ নিরাপদ হয়ে যাবে। এলিয়েন থেকে সাবধান এলিয়েন অথবা এক্সট্রা টেরিস্ট্রিয়াল জীবন সম্পর্কে আমরা জানতে পারি সায়েন্স ফিকশন বা মুভি থেকে।

১৯০২ সালে ম্যারি ট্যাপন রাইট লেখেন এলিয়েন নামের একটি উপন্যাস। এরপর আরো সায়েন্স ফিকশন লেখা হয় এই নামে। ১৯৭৯ সালে রিডলি স্কটের পরিচালনায় মুক্তি পায় সায়েন্স ফিকশন হরর ফিল্ম ‘এলিয়েন’। ১৯৮৬ সালে জেম্স ক্যামেরন তৈরি করেন এর সিকুয়াল ফিল্ম। এরপর ই.টি, অ্যাভাটার, কই মিল গ্যায়াসহ অসংখ্য ফিল্ম ও উপন্যাস থেকে এলিয়েন বা এক্সট্রা টেরিস্ট্রিয়াল জীবনের একটা পরিষ্কার ছবির সঙ্গে আমরা পরিচিত হয়েছি।

কিন্তু আসলেই কি এই পৃথিবীর বাইরে মহাবিশ্বে আর কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব আছে? বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন আছে। তবে তা শুধু আন্দাজের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রমাণ করতে পারেননি কেউ। কিন্তু এই ধারণাগত প্রাণী থেকেই সাবধান থাকতে বললেন স্টিফেন হকিংয়ের মতো একজন মহান বিজ্ঞানী। তাহলে কি তিনি বিশ্বাস করেন যে এলিয়েন আছে? টাইম্স অব লন্ডনের ভাষ্যমতে, স্টিফেন হকিং নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করেন যে এই পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে পৃথিবীর মতোই একাধিক গ্রহ থাকা স্বাভাবিক।

যেখানে থাকতে পারে মানুষের মতোই কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব। এ বছরের এপ্রিলে হকিং ডিসকভারি চ্যানেলের একটি ডকুমেন্টারিতে বলেছেন, ‘মহাবিশ্বে আমাদের জানা মতেই ১০০ বিলিয়ন গ্যালাক্সি রয়েছে। এর প্রত্যেকটি আবার লাখ লাখ সূর্যের মতো নক্ষত্র ধারণ করে আছে। প্রত্যেকটি নক্ষত্রের চারপাশে আছে গ্রহ-উপগ্রহ। তাহলে পৃথিবীর মতো এ রকম প্রাণীর বাসযোগ্য গ্রহ অবশ্যই থাকতে পারে।

’ তিনি বিশ্বাস করেন কিছু বুদ্ধিমান প্রাণী পৃথিবীর বাইরে থাকতে পারে যারা মানব জাতির জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমাদের উচিত হবে না তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা। কারণ তারা এতে করে আমাদের পৃথিবীতে চলে আসতে পারে। এবং আমাদের অর্জনগুলো নষ্ট করে দিতে পারে। যেমন আমরা বিভিন্ন মুভিতে দেখি।

’ মহাশূন্যে বসতি : বাস্তবতা কতটুকু? পৃথিবীর বাইরে বসতি স্থাপন করতে হলে কয়েকটি সমস্যার অবশ্যই সমাধান করতে হবে। প্রথম যে সমস্যার সমাধান করা দরকার তা হলো কোথাই আমরা যাব, চাঁদে, মঙ্গলে, বুধে, শুক্রে নাকি এই সৌরজগতের বাইরে কোথাও? এর পরের প্রশ্ন আমরা সেখানে কীভাবে যাব, খাদ্যসহ জীবন ধারণের বিভিন্ন উপকরণ কোথায় পাওয়া যাবে, শক্তির উৎস কী হবে, যোগাযোগ ব্যবস্থা কী হবে, মহাজাগতিক রশ্মি থেকে বাঁচার উপায় কী হবে? এই প্রশ্নগুলোর প্রত্যেকটিরই যৌক্তিক সমাধান দরকার। তা না হলে এটা শুধু সায়েন্স ফিকশনের পাতাতেই থেকে যাবে চিরদিন। আর জেম্স ক্যামেরন ও এমেরিকের মতো চলচ্চিত্রকারগণ একের পর এক ছবি বানিয়ে যাবেন এই ধারণাকে পুঁজি করে। সৌরজগতেই যদি হয় আবাসন সৌরজগতে চাঁদ পৃথিবীর নিকটতম প্রতিবেশী হওয়ায় চাঁদেই প্রথম হাত বাড়িয়েছে মানুষ।

বসতি স্থাপনের প্রশ্নেও চাঁদকেই অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে। চাঁদ পৃথিবীর কাছাকাছি হওয়ায় অনেকটা নিরাপদ মনে করে মানুষ। কারণ চাঁদ থেকে পৃথিবীতে যোগাযোগ করতে সময় লাগে মাত্র ৩ সেকেন্ড। অ্যাপোলোতে চড়ে চাঁদে যেতে সময় লাগবে মাত্র ৩ দিন। যেকোনো সময় পৃথিবী থেকে শক্তি সরবরাহ করা যাবে।

কিন্তু তাই বলে কী দীর্ঘ সময়ের জন্য চাঁদে বসবাস করা যাবে? পৃথিবী থেকে সরবরাহকৃত খাদ্য এবং শক্তি দিয়ে বড়জোর চন্দ্রভ্রমণ করে আসা যাবে। চন্দ্রপৃষ্ঠের আকর্ষণবলে মানুষ সেখানে অবস্থান করতে পারলেও সেখানে নেই অক্সিজেন। ঘাটতি আছে হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, কার্বনের মতো অতিপ্রয়োজনীয় উপাদান। তা ছাড়া এটা একটা মরুভূমি ছাড়া কিছুই নয়। চাঁদে অভিযানের পর পরই মানুষ মঙ্গলের দিকে হাত বাড়িয়েছে।

বেশকিছু মহাকাশযান সেখানে পাঠানো হলেও মানুষকে এখনো পাঠানো হয়নি। মঙ্গলে বসতি স্থাপনের ব্যাপারে চলছে ব্যাপক গবেষণা। সেখানে বাতাস, পানিসহ পৃথিবীর বিভিন্ন উপাদান থাকায় মানুষ এ ব্যাপারে বড়ই আশাবাদী। এখানে অতীতে কিছু প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। এখনো সেখানে কোনো প্রজাতির বসবাস থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে পৃথিবীর চেয়ে এখানে তাপমাত্রা যথেষ্ট কম। বাতাস যথেষ্ট হালকা। পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠের ০.৮ শতাংশ মাত্র। মঙ্গলপৃষ্ঠের আকর্ষণবল পৃথিবীর অভিকর্ষবলের চেয়ে ৩ গুণ কম। মেরুর আকর্ষণও কম।

এজন্য এখানে বিকিরণ ও সৌর ঝড় হয় অতিমাত্রায়। এ অবস্থায় মঙ্গলগ্রহে নিরাপদভাবে মানুষ বসবাস করতে পারবে বলে বিজ্ঞানীরা ভরসা করতে পারছেন না। টেরিস্ট্রিয়াল বা পার্থিব গ্রহের মধ্যে বাকি থাকে বুধ ও শুক্র। সম্প্রতি আবিষ্কার হওয়া আয়নিত পানি বুধ গ্রহে বসতি স্থাপনের ক্ষীণ আশা জাগাতে পারে। তবে দিনের বেলা বুধ গ্রহের অতি তাপমাত্রা মানুষ কীভাবে মোকাবেলা করবে এটাই হচ্ছে বড় প্রশ্ন।

আর শুক্রে বসতি স্থাপনের এখনো কোনো চিন্তা করতে পারছে না মানুষ। কারণ এখানকার বায়ুম-লের চাপ পৃথিবী থেকে ৯০ গুণ বেশি। এছাড়া তাপমাত্রা ৪০ থেকে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একেকটা দিন পৃথিবীর ১১৬ দিনের চেয়েও বড়। আবহাওয়াম-লের প্রায় সবটাই কার্বন-ডাই-অক্সাইডে ভরপুর।

অক্সিজেন আছে মাত্র ০.৪ ভাগ। খুব অল্প পরিমাণে আছে হাউড্রোজেন ও নাইট্রোজেন। পৃথিবীতে আবহাওয়ার সামান্য তারতম্য হলেই ঘটে যায় নানান দুর্যোগ। সেখানে এমন এক আবহাওয়ায় মানুষ কীভাবে বসবাস করবে? এই যদি হয় আমাদের প্রতিবেশী উপগ্রহ ও পার্থিব গ্রহগুলোর অবস্থা, তাহলে গ্যাসীয় গ্রহগুলো যেমন বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুনের অবস্থা আর নাইবা আলোচনা করলাম। সৌরজগতের বাইরে বসতি স্থাপন বিজ্ঞানী হকিং-এর পরামর্শ হচ্ছে সৌরজগতের বাইরে অন্য কোনো নক্ষত্রের কোনো গ্রহে থাকতে পারে পৃথিবীর মতো বাসযোগ্য পরিবেশ।

সেখানেই গ্রহণ করা যেতে পারে ভবিষ্যৎ আবাসন প্রকল্প। কিন্তু আসলেই কি অন্যকোনো নক্ষত্রজগতে যাওয়া সম্ভব? স্টিফেন হকিংয়ের মতামত যতই চমকপ্রদ হোক না কেন, বাস্তবতা কিন্তু অনেক দূরে। সৌরজগতের বাইরে সবচেয়ে নিকটতম নক্ষত্র হচ্ছে প্রক্সিমা সেন্টরাই। প্রক্সিমা সেন্টরাই একক কোনো নক্ষত্র নয়। আলফা সেন্টরাই সেন্টারাস নামক নক্ষত্রপুঞ্জের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত তারকা সিস্টেমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল এবং রাতের আকাশের চতুর্থ উজ্জ্বলতম নক্ষত্র।

এটি একটি তিন তারকা সিস্টেম। মহাকাশের দক্ষিণ গোলার্ধের সর্ব উত্তরের সীমা নির্ধারণকারী হিসাবে সুপরিচিত এই তারকা সিস্টেমটি; কিন্তু এটি এতটাই দক্ষিণ ঘেঁষে অবস্থিত যে উত্তরের প্রায় কোনো স্থান থেকেই এটিকে দেখা যায় না। এতে তিনটি নক্ষত্র থাকলেও দুটি নক্ষত্র এতই কাছাকাছি থাকে যে, এদের পৃথক হিসাবে চিহ্নিত করা যায় না, ফলে এই দুটিকে একত্রে একটিমাত্র নক্ষত্র হিসাবে ধারণা করা হয়। এই নক্ষত্রদ্বয়কেই বলা হয় প্রক্সিমা সেন্টরাই। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব ৪.২ থেকে ৪.৪ আলোকবর্ষের মতো।

ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের জ্যোতির্বিদ ক্যাথরিন ফ্রিজ বলেন, অর্থাৎ আপনি যদি আলোকের গতিতে ওই নক্ষত্রজগতে যেতে চান তাহলে আপনার সময় লাগবে প্রায় সাড়ে ৪ বছর। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের বর্তমান যে রকেট দিয়ে মহাশূন্যে অভিযান চালানো হয় তার গতি আলোকের গতির দশ হাজার ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ এই রকেট দিয়ে প্রক্সিমায় যেতে সময় লাগবে প্রায় ৫০ হাজার বছর। কোনো মানুষ কি জীবিত থেকে ওখানে পৌঁছতে পারবে? বিজ্ঞানী ফ্রিজ বলেন, ‘আপনি যদি আলোকের গতিসম্পন্ন কোনো রকেট পেয়েও যান তাহলেও আপনার মৃত্যু হবে মহাজাগতিক বিকিরণে। ’ অন্যদিকে, যদি প্রযুক্তির এমন উন্নতি হয় যে আলোকের গতিতে ভ্রমণ করা যাবে এবং মহাজাগতিক বিকিরণ থেকেও সুরক্ষা পাওয়া যাবে, সেক্ষেত্রে বিজ্ঞানী ফ্রিজ বলেন, ‘তাহলে আলোকের গতিতে পাঁচ বছরের একটি ভ্রমণে পৃথিবীর এক হাজার বছর ভবিষ্যতে যাওয়া সম্ভব।

’ টরন্টো ইউনিভার্সিটির মহাকাশতত্ত্বের অধ্যাপক জয়াবর্ধনে রায় বলেন, ‘হকিং-এর এই আবেদন একটি ধারণামাত্র। আমাদের সবচেয়ে নিকটের নক্ষত্রে আমরা যদি আলোকের গতিতেও যাই তবুও আমাদের সময় লাগবে কয়েক বছর। ’ কল্পবিজ্ঞান তবে ভরসা কল্পনাবিলাসী বিজ্ঞানী আর সায়েন্স ফিকশন থেকে বাইরের নক্ষত্রজগতে যাওয়ার জন্য দুটি ধারণা পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে অ্যালকিউবির্য়াস ড্রাইভ, যাকে ওয়ার্প ড্রাইভ স্পেসটাইমও বলা হয়। এটি একটি কাল্পনিক গাণিতিক মডেল, যাতে সময় ও দূরত্ব উভয়ই এক এককে প্রকাশ পায়।

এই মাধ্যমে আলোকের গতির চেয়ে বেশি গতিতে নক্ষত্রে যাওয়া সম্ভব বলে ধারণা করা হচ্ছে। কল্পবিজ্ঞানে যা ব্যবহৃত হয়ে থাকলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ এখনো অনিশ্চিত। দ্বিতীয় ধারণাটি দিয়েছেন বিজ্ঞানী ড. রবার্ট ফরওয়ার্ড। এটাকে বলা হচ্ছে ‘প্লাংক স্কেল ব্রিজ’। প্লাংক স্কেল হচ্ছে কণিকা পদার্থ বিজ্ঞানের তথা কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের একটি স্কেল।

কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের মাধ্যমে অতিবৃহৎ বস্তুর অবস্থান ও পরিমাপ করা যায়। ড. ফরওয়ার্ড একটি বৃহৎ প্লাংক স্কেল ব্রিজের কল্পনা করেন। ব্রিজটির দুটি মুখ থাকবে, যার এক মুখ থাকবে গন্তব্যস্থানে। প্রবেশমুখ দিয়ে কাউকে প্রবেশ করালে সঙ্গে সঙ্গে গন্তব্যমুখ দিয়ে সে বের হবে। আসলে তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন দুটি গর্ত তৈরি করার, যার একটি দিয়ে প্রবেশ করতে হবে আর একটি দিয়ে বের হতে হবে।

চমৎকার আইডিয়া! কল্পবিজ্ঞানের এই দুটি ধারণা দেখে সাধারণ মানুষ পুলকিত হলেও বিজ্ঞানীরা বড় চিন্তিত এই ভেবে যে, কে তৈরি করতে পারবে এমন ওয়ার্প ড্রাইভ অথবা প্লাংক স্কেল ব্রিজ?

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.