যে মুখ নিয়ত পালায়......। ।
উত্তর আফ্রিকার পূর্বপ্রান্তের মরুভূমি ঘেরা কোন দেশের খোজ যদি জানতে চান তাহলে বলা যায় মিশরের কথা। ইংরেজিতে ঈজিপ্ট বাংলায় মিশর । দেশটি নীলনদ, পিরামিড, ও তাদের রাজা বাদশাদের মমির জন্য বিখ্যাত।
শুনছি ঈজ়িপ্টে প্রথম জ্যামিতি চর্চা শুরু হয়। নীল নদের কারনে প্রতি বছর বন্যায় ঘরবাড়ি জায়গা জমি সব ভেসে যেত। তাই জমি মাপজোকের প্রয়োজনেই সেখানে জ্যামিতি অর্থাৎ ভূমি পরিমাপ ব্যবস্থার সুত্রপাত হয়। আমার একই কারন ই মিশরের লোকেরা দলবেধেঁ থাকতে উদ্ভুদ্ধ হয়েছিল। এক সাথে থাকলে যে কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগই সহজে মোকাবেলা করা যায়।
পিরামিড
মিশরের রাজাদের বলা হত ফেরো। এটা ছিল তাদের উপাধি। যেমন আমাদের বর্তমান প্রধান্মন্ত্রী শেখ হাসিনার উপাধি দেশরত্ন এবং সাবেক প্রধান্মন্ত্রীর উপাধী জননেত্রী । মিশরের প্রজাগন তাদের ফেরো বা ফারাও দের দেবতাজ্ঞানে পুজা করত। রাজা বাদশাদের মধ্যে একটি মুদ্রাদোষ লক্ষ্য করা যায়।
তারা ক্ষমতায় গেলেই তাদের মধ্যে বিচিত্র খেয়াল এবং খায়েশের উদ্ভব হয়। যেমন আমাদের জননেত্রী প্রায় ১০৩ জন সঙ্গীসাথী নিয়ে বিদেশ ভ্রমন করে এলেন এবং প্রায় বারশ কোটি টাকা দিয়ে একটা বিমান বন্দরের নাম পাল্টালেন। এটাও এক ধরনের বিচিত্র খেয়াল। মিশরের ফেরোদের তেমনি ইচ্ছা ছিল তাদের নশ্বর দেহ যেন মৃত্যু পরবর্তী সময়ে অবিনশ্বর থাকে। এ ব্যাপারে তারা এক আশ্চর্য পদ্ধতি আবিষ্কার করল।
যেই পদ্ধতির মাধ্যমে মৃতদেহকে অনেক অনেক দিন অবিকৃত করে রাখা যায়। এভাবে অবিকৃত অবস্থায় করে রাখাকে বলা হত মমি বা মামী। এখন প্রশ্ন হল প্রাচীন লোকগুলো মমি তৈরীর কৌশল কীভাবে জানল? পিরামিড নামক উচু যে বস্তুগুলোর মধ্যে মমি রাখা হত সেই পিরামিড গুলো তৈরী করার আগ থেকেই তারা মমি তৈরী করা জানত। কেউ কেউ মনে করেন ভীনগ্রহের প্রানীরা একবার পৃথিবীতে এসেছিল এবং তাদের আগমন ঘটেছিল এই মিশরে। ফলে মমি এবং পিরামিড বানানোর কৌশল মিশরের মানুষেরা তাদের কাছ থেকে শিখে নেয়।
হতে পারে এটা কিছু কল্পনাবিলাসী মানুষের ভাবনা কিন্তু কিছুই অসম্ভব নয়। জগতের খুব সামান্যই মানুষ জানে , অনেক কিছুই এখনো অজানা।
মমি
মমি
এখন আসা যাক পিরামিডের কথায়। পিরামিড প্রায় পাচঁ হাজার বছর আগ থেকেই বানান হয়। আগেই বলেছি এগুলো ছিল সমাধি মন্দির।
তৃতীয় রাজবংশের প্রথম ফেরো জোসেফের জন্য প্রথম পিরামিড নির্মিত হয়। মরুভুমির প্রান্তের পাহাড় থেকে পাথর কেটে এগুলো বানানো হয়। । মিশরীয়রা মনে করত যতদিন রাজাদের দেহ রক্ষা করা যাবে ততদিন তারা স্বর্গে বাস করবে। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী এখনো তাদের অনেক রাজা স্বর্গে আছেন।
কথা প্রসঙ্গে বলি মিশরীয় এই ফারাও রা ছাড়া আরো ছয়টি মৃতদেহ এখনো সংরক্ষিত আছে,তাদের কবর দেয়া হয় নি। এগুলো হচ্ছে
তেলু মানব
তোলুঁ মানুষ, জাটল্যান্ড, ডেনমার্ক , কিছু লোক কয়লার খনিতে এই মৃতদেহ অবিকৃত অবস্থায় পায় ১৯৫০ সালে। ধারনা করা হয় খ্রিস্টজন্মের চারশ বছরত আগে এরা বাস করত।
বকস্টেন মানুষ, ভারবার্গ, সুইডেন ,১৯৩৬ সালে বকস্টেনের মৃতদেহটি আবিষ্কৃত হয় একটি কয়লা খনিতে। ধারনা করা হয় লোকটা বেঁচেছিল ১৪শ’ শতকে।
জিনজার, লন্ডন, চুলের এবং শরীরের চামড়ার রঙ আদার মত। তাই নাম রাখা হয়েছে জিনজার। ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত।
হুয়ানিতা, দ্য আইস মেইডেন, পেরু, এটি একটি ইনকা মেয়ের মৃতদেহ। পাচশ বছর বয়স।
একে বলা হয় বরফকুমারী।
লেনিন, মস্কো ,পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মমি ধরা হয় লেনিনের মৃতদেহকে। রাশিয়ার লেলিনকে মমি করে রাখা হয়েছে আগামীদিনের কমরেড দের অনুপ্রানিত করার জন্য।
কো সামুই, থাইল্যান্ড : ইনি থাইল্যান্ডের একজন মৃত মঠসন্ন্যাসী। তার দেহ ও রাখা হয়েছে মমি করে।
আমরা যদি আমাদের রাজা/রানীদের(আমাদের দেশে এখনো গনতন্ত্ররুপে রাজতন্ত্র চলছে) মমী করে রাখা যেত তাহলে বনেক ভাল হত বলে মনে হয়। অনেক দিন পর বিদেশ থেকে দর্শনার্থী আসত দেখার জন্য। তাতে দেশের কিছু লাভ হত। যারা জীবদ্দশায় দেশের শুধু ক্ষতিই করেছেন তাদের মৃতদেহ যদি কিছু দেশের কিছু উপকার করে তাহলে মন্দ হয় না।
মিশরীয়রা গদের আটার সাথে রান্নাঘরের চুলার উপরে যে কাল কাল জিনিস মাকড়শার জাল বা ইত্যাদিতে ঝুলে থাকে ওগুলো মিশিয়ে তৈরী করল কালি।
প্যাপাইরাস নামক নলখাগড়া থেকে কাগজ তৈরী করে ফেলল। তাদের লেখার রীতি ছিল চিত্রঙ্কন পদ্ধতিতে। মিশরীয়দের মধ্যে অনেক ক্রিয়েটিভিটি ছিল বোঝা যায়।
স্ফিংকসের মূর্তি
চতুর্থ রাজবংশের এক ফেরোর নাম ছিল খাফরে। একদা এক অদ্ভুদ খেয়ালের বশবর্তী হয়ে তিনি মস্ত বড় এক পাহাড় কাটিয়ে নির্মান করলেন অতি আশ্চর্য জনক এক মূর্তি।
আশ্চর্যজনক কারন মূর্তিটার শরীরটা সিংহের কিন্তু মাথা মানুষের। এটাই প্রসিদ্ধ স্ফিংক্সের মূর্তি।
আমাদের দেশের দুই রানীর মত মিশরের ও এক রানী ছিলেন। উনি ক্লিওপেট্রা।
ক্লিওপেট্রা
সিজার এবং ক্লিওপেট্রা
ক্লিওপেট্রার পাথরে খোদাই করা ছবি
ক্লিওপেট্রা
ডেথ অফ ক্লিওপেট্রা
টলেমি বংশের শেষ শাসক।
তিনি রোম সেনাপতি মার্ক এন্টনির সাথে প্রনয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তাদের প্রেম উপাখ্যান নিয়ে অনেক কথা প্রচলিত আছে। শেক্সপিয়ার তাদের নিয়েই লিখেছিলেন “এন্টনি এন্ড ক্লিওপেট্রা”। আফসোস আমাদের দুই রানী নিয়া কেউ কিছু লিখলো না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।