আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাশ্মীরি জনতার নতুন সংগ্রাম!!!

নিজের বিষয়ে কিছুই বলিবার নাই

আসসালামু আলাইকুম, কাশ্মীরের জনগণ আবার নতুন করিয়া জাগ্রত হইয়াছে। ভারতের আগ্রাসী শাসনের বিরুদ্ধে তাহারা জাগিয়াই ছিলো তবে এইবারের বহিঃপ্রকাশটা একটু অন্য ধরনের। এইবার যাহারা রাস্তায় নামিয়া আসিয়াছে তাহাদের বেশিরভাগই তরুণ প্রজন্মের আর সেই সঙ্গে মহিলাদের উপস্থিতি চোখে পড়িবার মতো। উহারও কারণ রহিয়াছে। তাহা বলিবার পূর্বে কয়কেটি কথা বলিয়া লইতে চাহিতেছি।

২. সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ সাহাব ''সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ'' ঘোষণা করিলে যে-কয়টি দেশ তাহাতে সুবিধা ভোগ করিয়াছে তাহার ভিতরে ভারত অন্যতম একটি। কাশ্মীরের আন্দোলনকে সে বিশ্ববাসীর নিকট সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা হিসাবে প্রচার করিয়াছে। পশ্চিমাবিশ্ব তাহা বিশ্বাসও করিয়াছে। কারণ আফগানিস্তানে যে-আগ্রাসী যুদ্ধ তাহারা চালাইতেচে তাহাতে জয়ী হইবার জন্যে ভারতের সহায়তা আর সমর্থন তাহাদের ভীষণ প্রয়োজন। সেই প্রয়োজনে তাহারা এতোদিন অন্ধ সাজিয়া থকিয়াছে।

হামাসের নির্বাচিত সরকারকে যাহারা অবৈধ বলিয়া রায় দিয়া থাকে তাহারা কাশ্মীরের স্বাধীনতা-সংগ্রামীদিগকে সন্ত্রাসী বলিয়া মানিয়া লইবেন তাহাতে অবাক হইবার কিছু নাই। ৩. কিন্তু গত জুন মাস হইতে কাশ্মীরের অবস্থা ধীরে-ধীরে পাল্টাইতে লাগিলো। কাশ্মীরের যোদ্ধাদের হাত হইতে আন্দোলনটা নিরস্ত্র প্রতিবাদী জনগণের হাতে চলিয়া আসিলো। সেই সাথে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর জুলুম আর অত্যাচার অণুঘটকের কাজ করিয়াছে। বিশেষ করিয়া সাম্প্রতিক সময়গুলিতে জিজ্ঞাসাবাদের নামে যেভাবে তরুণদিগকে হেনস্থা করা হইয়াছে তাহাদিগকে হত্যা করিয়া মৃতদেহ গুম করিয়া পেলা হইয়াছে তাহার নজির খুউব বেশি নাই।

। ভারত মুখে গণতন্ত্রের কথা বলিয়া থাকে। কিন্তু তাহার গণতন্ত্রের আসল চেহারাখানা কেমন তাহা মেঘালয়ের মানুষ জানে। তাহা অরুণাচলের মানুষ যেমন জানে তেমনি জানে কাশ্মীরের জনগণ। ৪. ধর্মের ভিত্তিতে ভারত-পাকিস্তান বিভক্ত হইয়াছে।

কিন্তু তাহার পরেও ৭৮%মুসলিম-অধ্যাষিত কাশ্মীর ভারতের কুচক্রান্তে ভারতের অধীনেই থাকিয়া গিয়াছে। এইটা লইয়া পাকিস্তান-ভারতের মধ্যে কম বিবাদ হয় নাই। একটা সময় ছিলো যখন কাশ্মীরের জনগণ পাকিস্তানের সহিত যুক্ত হইবার কথা ভাবিতো। এখন সময় পাল্টাইয়াছে। নতুন প্রজন্মের কাশ্মীরি জনগণ নিজেদিগকে স্বাধীন দেখিতে চাহিতেছে।

তাহারা ভারত বা পাকিস্তান--কাহারো সহিত থাকিতে রাজি নহে। তাহারা স্বাধীন সত্তা লইয়া একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হইতে চাহে। হাজার বছর ধরিয়া কাশ্মীরের জনগণ একটি স্বাধীন সত্তা লইয়া বসবাস করিতেছে। তাহার কাহারো অধীনে বসবাস করিতে রাজী ছিলো না। এখনো রাজী নহে।

৫. ভারত বরাবরই কাশ্মীরের আন্দোলনের নেপথ্যে পাকিস্তানের চক্রান্ত আবিষ্কার করিবার চেষ্টা করিতো। এইবারও করিয়াছে। কিন্তু এই সম্পূর্ণ নিরস্ত্র আন্দোলণের নেপথ্য তাহারা এইবার পাকিস্তানের যোগশাজস দেখিতে পায় নাই। উহা তাহাদের দুশ্চিন্তা বাড়াইয়া দিয়াছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ান-অফিসারদের বিরুদ্ধে কাশ্মীরের নারীদের উপর অকথ্য নির্যাতন তথা ধর্ষণের অভিযোগ সেই দেশের মানবাধিকার কমিশনের সদস্যবৃন্দই প্রকাশ্যে তুলিয়াছে।

উহার আগে কাশ্মীরি নারীদের উপর এই অভিযোগকে ভারত সরকার একেবারেই উড়াইয়া দিয়াছিলো। আন্তর্জাতিক মাধবাধিকার সংস্থাও এই অভিযোগ করিয়াছে। সবচাহিতে বড়ো কথা এই অভিযোগের কথা স্বীকার করিয়াছে ভারতের সেনাবাহিনীর বেশ কিছু সিনিয়র অফিসার যাহারা সদ্য অবসর লইয়াছে। আর এইসব কারণেই এইবারের আন্দোলনে নারীদের উপস্থিতি খুউব বেশি। কাশ্মীরের নারীগণ নিজেদের ইজ্জত নিয়া বাচিতে চাহেন।

৬. এই দিকে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীও বমিয়া নাই। তাহারা কাশ্মিরের গণ-আন্দোলন দমাইবার জন্য নানাপ্রকার ব্যবস্থা নিতেছে। যাহার মধ্যে একটি হইতেছে কথায়-কথায় কার্ফু-ঘোষণা আর আন্দোলনকারীদের উপর গুলি বর্ষণ। গত জুন হইতে এই পর্যন্ত প্রায় ১০০জনেরও অধিক মানুষ নিহত হইয়াছে। যাহাদের প্রত্যেকেই কাশ্মীরি মুসলমান।

( সূত্র :বিবিস; এফ পি) নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সদস্যও এইবার নিহত হয় নাই। এই প্রেক্ষাপটে ভারত সরকার দিল্লীতে সর্বদলীয় আলোচনার নামে সময়ক্ষেপন করিবার কৌশল গ্রহণ করিয়াছিলো। সেইখানে কাশ্মীরের জনগণকে শান্ত থাকিবার কথা বলা হইলেও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কিন্তু শান্ত ছিলো না। গত শনিবার (১৮/৯/২০১০) ফায়াজ আহমদ নামে ১৭ বছরের এক তরুণের মৃতদেহ নদী হইতে উদ্ধার করিবার পর বিক্ষোভরত মানুষ আবারও রাস্তায় নামিয়া আসিয়াছে। ফায়াজ ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হইয়াছিলো।

তাহার মৃতদেহ গুম করিবার উদ্দেশেই নদীতে ফেলিয়া দেওয়া হইয়াছিলো বলিয়া সন্দেহ করা হইতেছে। ফায়াজের হত্যাকান্ডে বিক্ষোভরত জনতার উপর ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনি বিনা উস্কানিতে আবারও গুলিবর্ষণ করিয়াছে। তাহাতে একাধিক মানুষ নিহত হইয়াছে। ৭. সারা দুনিয়ার মানুষ এখন দেখিতেছে কাশ্মীরের নিরস্ত্র জনগণের আন্দোলন। বেকায়দায় পড়িয়া ভারত সরকার এখন কাম্মীরে সরবদলীয় প্রতিনিধি দল পাঠাইয়াছে পরিস্থিতি শান্ত করিবার উদ্দেশ্যে।

কিন্তু কাশ্মীরের রাজনৈতিক দলগুলি এই প্রতিনিধ দলের সদস্যদের সহিত আলোচনা করিতে অস্বীকৃতি জানাইয়া দিয়াছে। প্রতিনিধি দল যখন শ্রীনগরে তখনও সেইখানে কার্ফু বলবদ ছিলো। আর রাস্তায় ছিলো বিক্ষুব্ধ জনতার মিছিল। রাজনৈিতক বিশ্লষকগণ কহিতেছেন গত ২০ বছরের ভিতর এই প্রথম কাশ্মীরের আন্দোলন এতোটা প্রছন্ডতায় পৌছিয়াছে। আগের আন্দোলনগুলির চাহিতে এই আন্দোলন একদিকে যেমন নিরস্ত্র মানুষের আন্দোলন তেমনি তাহার গতিবিধিও অনেক বেশি উত্তপ্ত।

৮. ভারত সরকার একদিকে সিকিম লইয়া সত্যজিৎ রায়ের নির্মিত প্রামাণ্য চিত্রটির উপর নিষেধাজ্ঞা তুলিয়া নিয়াছে। আবার অন্রদিকে প্রকৃত তথ্য প্রচার করিবার জন্য কাশ্মীরের সাংবাদিকদিগেক নানারকম হুমকী-ধামকি প্রয়োগ করিতেছে। এইটা নতুন কিছু নহে। ভারত সর্বদাই দ্বৈত নীতি প্রয়োগ করিতে পারদর্শী। কিন্তু সত্য চরম কথাটা এই যে কাশ্মীরের জনগণকে আর বেশিদিন দাবাইয়া রাখা যাইবে না।

বসনিয়া স্বাধীন হইয়াছে। কসোভো স্বাধীন হইয়াছে। কাশ্মীরও স্বাধীনতার পথে অগ্রসর হইতেছে। ৯.সশস্ত্র আন্দোলনকে দমাইবার অস্ত্র এই দুনিয়ায় অনেক রহিয়াছে। কিন্তু নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের দমন করিবার অস্ত্র কাহারো নাই।

আধিপত্যবাদী ভারতেরও নাই। কাশ্মীরের বীর জনতার সংগ্রাম সফল হউক। পরম করুণাময় তাহাদিগকে সহায়তা করুন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।