কি উপহার দেয়া যায়? চিন্তাটা সকাল থেকেই মাথায় ঘুরছিল। টাকা পয়সা আমার খুব খারাপ নাই। শাড়ী, গয়না তো অনেক দিয়েছি। নতুন কিছু একটা করতে ইচ্ছে করছে। মনে একটা আইডিয়া এসেছে।
ভাবছি কোন কবিকে দিয়ে একটা কবিতা লেখাবো? উদীয়মান দুএকজন কবির নামও জোগাড় করলাম, পরিচিত একজন প্রকাশককে ফোন করে। তবে এখনও ফাইনাল করিনি প্ল্যান। অন্য কিছু পছন্দ হলে সেটাও করতে পারি। আপাতত কাজ কবিগুলোর লেখা কিছু কবিতার বই কেনা।
নিউ মার্কেটে যাওয়ার পথে পোস্টার টা চোখে পড়ল।
‘ইউরেকা’ বলে লাফিয়ে উঠতে যেয়েও নিজেকে শান্ত করলাম। এখনই এতো উতলা হওয়া ঠিক হবে না। আগে সেখানে যাই। কতটা অথেনটিক কে জানে। তবে এমন কিছু হওয়া একেবারে অসম্ভব মনে হচ্ছে না।
আগেও হয়তো ছিল, তবে এখন এঁরা প্রকাশ্যে এসেছে। রীতিমত অফিস নিয়ে কাজ করছে। অফিসে গিয়ে বাকীটা কনফার্ম করতে হবে। আপাতত কবিতা প্রোজেক্ট স্থগিত রাখলাম। যদি পোস্টারে দাবী করা এদের বক্তব্য ঠিক হয়, তবে নিঃসন্দেহে আমি জন্মদিনের গিফট পেয়ে গেছি।
ঠিকানা টুকে নিলাম। ফোন নম্বর ও আছে দেখি। ফোনে অ্যাপয়ন্টমেন্ট নিব? নাকি সরেজমিনে দেখে আসবো? নিজেই যাই। কেমন যেন একটা এক্সাইটমেন্ট ফিল করছি। কাজটা করতে পারলে একটা ব্রেকিং নিউজ হবে, সন্দেহ নেই।
টাকা যাই লাগুক, ঢালবো। তবে আগে যাচাই করে দেখতে হবে পার্টি কেমন। সত্যিই কাজটা করতে পারবে? নাকি বাক সর্বস্ব?
গাড়ি ঘোরাতে বললাম। অফিসে ফোন করে জানিয়ে দিলাম আজকের সব অ্যাপয়ন্টমেন্ট ক্যান্সেল করতে। খুব একটা ক্ষতি হবে না।
রিয়েল এস্টেটের বিজনেসটা তো আসলে লোক দেখানো। আর সেখানেও কাজতো তেমন কিছু করি না। লোক দেখানো বিজনেস তো রাখা হয়েছে ব্ল্যাক মার্কেটিং এর স্মাগলিং এর টাকা সাদা করার জন্য। একবার পলিটিক্সে নামতে পারলে আর সমস্যা হবে না। বাকী কালো টাকার ও একটা গতি হয়ে যাবে।
দুই দলের সঙ্গেই কথা চলছে। ব্যবস্থা একটা কিছু হয়ে যাবে।
স্যার, এখন কোন দিকে যাব।
পৌঁছে গেছি। এখন বাড়ির নম্বর দেখে খুঁজে বের করতে হবে।
গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। কোথায় গাড়ী রাখতে হবে দেখিয়ে দিলাম। অফিসটা মনে হচ্ছে গলির ভেতরে। শুধু বাড়ির নম্বর আছে। রাস্তার দুধারে বাড়ির নম্বর দেখতে দেখতে এগোলাম।
মনে একটা সন্দেহ কাজ করছিল, এমন একটা কাজ কেউ সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে করবে? আবার ভাবলাম, ক্ষতি কি। সবাই তো জানি এদের অস্তিত্ব। আগে গোপনে, লুকিয়ে কাজ করতে, আর এখন করতে চায় প্রকাশ্যে।
নাহ, যা ভেবেছিলাম তা না। খুব ভীতু পার্টি এঁরা না।
বেশ বড় করেই সাইনবোর্ড লিখেছে। বাড়ীটাও পুরনো ধাঁচের না। নতুন। রীতিমত নিয়ন সাইনে সাইনবোর্ড বানিয়েছে। রাস্তায় ইচ্ছে করেই কারো কাছে ঠিকানা জানতে চাই নি।
তবে ঠিকানাটা পেয়ে ভালোই লাগছে। এখন কাজটা করাতে পারলেই হয়। সাইনবোর্ডটার দিকে আবার তাকালাম। বেশ বড় অক্ষরেই লেখা ‘হরতাল সেন্টার’। নীচে ছোট হরফে লেখা, ‘সপ্তাহের যেকোনো দিন এবং যেকোনো দৈর্ঘ্যের হরতাল করানো হয়’
২
নতুন দল?
না।
পুরনো সব দলেরই তো হরতাল করিয়েছি। আপনাকে তো দেখিনি।
আমি কোন দলেরই না।
তাহলে? সুশীল সমাজ?
দল ছাড়া কেউ হরতাল ডাকতে পারে না?
পারবে না কেন? স্বাধীন দেশ। গণতান্ত্রিক দেশ, যে কেউ হরতাল ডাকতে পারে।
সেজন্যেই আসা।
বেশ তো। আমারা বেশ অনেকগুলো হরতাল এর পুরোটার দ্বায়িত্বেই ছিলাম। আমাদের ক্যাটালগও আছে। দেখবেন?
আমাকে কি করতে হবে?
ডিপেন্ডস, কেমন হরতাল চাইছে, আমাদের কতটুকু কাজ দিবেন, এসবের ওপর।
মানে?
মানে অর্ধদিবস না পূর্ণ দিবস।
পূর্ণ দিবস ই করেন।
ওয়েল। মিডিয়া কি আপনি হ্যান্ডল করবেন?
একটু বুঝিয়ে বলবেন?
মানে হরতাল অ্যানাউন্স, মিডিয়া কাভারেজ এসব কি আপনি করবেন?
এসব ভালো হ্যান্ডল করতে পারবো বলে মনে হয় না।
দেন আমাদেরকে দিতে পারেন।
আমরা আজকাল এসব ও হ্যান্ডল করি। বেশ এক্সপেরিয়ন্সড স্পোক্সম্যান আছে আমাদের। চার্জ ও খুব বেশী না।
চার্জ নিয়ে ভাববেন না।
তাহলে আর চিন্তা কি? হরতাল অ্যানাউন্স, প্রেস কনফারেন্স, টিভি আর পত্রিকায় রিপোর্টিং সব আমরাই ম্যানেজ করব।
কবে করতে চান।
আগামী কাল।
আগামীকাল? নো প্রবলেম। দেন আজকে কিছু ভাংচুর করাতে হবে।
আজকে কেন?
এটাই তো এখন ট্র্যাডিশান।
হরতাল এর আগের দিন কিছু ভাংচুর না করলে সবাই বুঝে যায়, যারা হরতাল ডেকেছে তার ড্যাম সিরিয়াস। ফলে পরের দিন গাড়ি বের করে না।
সেটাই যদি নিয়ম হয়, করুন।
না করলেও হয়, তবে সেক্ষেত্রে মানুষ ভাববে দুর্বল পার্টি। খুব পাত্তা দিবে না।
সবাই গাড়ী বের করবে, বাস ও চলবে। প্রেস্টিজ পাংচার।
বেশ।
কতগুলো ভাঙতে হবে?
মোটামুটি ভালো ইম্প্রেশান পড়ে।
ওকে।
আগের দিন গোটা বিশেক ভাঙ্গি। আর হরতালের দিন আরও গোটা পঞ্চাশেক।
যা ভালো মনে করেন।
লাশ?
লাশ?
বারে। লাশ না পড়লে তো নিউজে আসবে না।
শুধু আহত হলে দেখা যাবে হরতালের খবর আসছে তিন নম্বরে।
বেশ। দুএকটা লাশ ও দেন।
খুব এক্সাইটিং করে মারবো? জীবন্ত পোড়ানো।
জীবন্ত?
হ্যাঁ।
বাসের দরজা বন্ধ করে ভেতরে আগুন লাগিয়ে দেয়া।
বেশী হয়ে যায় না?
তা হয়। বাট পাবলিসিটি ভালো হয়। ব্রেকিং নিউজ তো হয়ই এমনকি সন্ধ্যা থেকে একেবারে লীড নিউজ হয়ে থাকে।
আর কোন অপশান?
কক্টেল কিংবা হাত বোমা দিয়েও লাশ করা যায়।
ইমপ্যাক্ট অতো ভালো হয় না।
বেশ। আমি আসলে খুব জমজমাট একটা হরতাল চাচ্ছি।
হয়ে যাবে। কোন টেনশান করবেন না।
আমাকে আর কিছু করতে হবে?
না। আমরাই সব করব। কিছুক্ষণ পরেই প্রেস কনফারেন্স করে ফেলব। সব বড় পত্রিকায় চলে আসবে। টিভি চ্যানেল গুলোতেও ব্রেকিং নিউজ করিয়ে দিব।
চেক চলবে?তাহলে পুরোটাই দিয়ে দিতাম একসঙ্গে।
চলবে। আমি পুরো ডিটেলস টা তাহলে আবার বলি। আজকে থাকছে হরতাল অ্যানাউন্স, বিশটা গাড়ী ভাংচুর, গোটা দশেক কক্টেল চার্জ।
হতাহত?
হতাহত কালকে।
দুটো লাশ। তার ভেতর একটা অন্ততঃ জ্বলন্ত পুড়িয়ে মারা। আহত পঞ্চাশ। গাড়ী ভাংচুরও পঞ্চাশ, তার ভেতর অন্ততঃ দশটা বাস। কক্টেল আর হাতবোমা ত্রিশ চল্লিশটা হলেই হবে।
আর কিছু?
মিডিয়া?
সেসব তো থাকবেই। সব পত্রিকার হেডলাইন হবে। টিভি চ্যানেল গুলো সারাদিন কাভার করবে। লাইভ রিপোর্টিং তো থাকবেই। টক শো লাগবে?
এসব ও পারবেন?
কি চাই শুধু বলুন।
সুশীল সমাজকে দিয়ে সাপোর্ট ও করিয়ে দিতে পারবো। লাগবে?
না। ওটা বেশী বেশী হয়ে যাবে।
বেশ তাহলে ওটাই ডিল থাকলো। ও, হ্যাঁ।
হরতালের কারণ?
আমার ওয়াইফের কালকে বার্থ ডে। ওকে একটা হরতাল গিফট করতে চাই। অসুবিধা হবে?
নো প্রবলেম। বরং ভালোই হবে। হরতাল ডাকবার নতুন একটা ট্র্যাডিশান শুরু হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।